নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘না,না এই মেয়েকে আমি বিয়ে করবো না।অসম্ভব।চেহারা কেমন?দেখছ!আমার সাথে একেবারেই মানাবে না’-হইচই করে রুম থেকেই বের হয়ে গেল কামাল।
গেল মাসে বত্রিশ পার হল কামালের। একটা ফুড সাপ্লাইয়ের ব্যাবসা করে,পাশাপাশি আরেক বন্ধু মিলে দোকান দেবার ধান্দায় আছে।জমানো টাকা খাটিয়েছে শেয়ারে,শেয়ারে লোকের কপালে হাত,কিন্ত কপালের আরেক নাম গোপাল,কামালের জন্য শেয়ার অনেক কিছু।যে টাকা লাভ হয় তাই সে শেয়ারে ইনভেস্ট করে।স্বভাবে চরিত্রে কামাল চিরকালই একটু গোয়াড়। কিন্তু,তিন বোনের মধ্যে ছোটজন হওয়ায় তার এসব গোয়ার্তুমি,আবদার মেনে নেওয়া হয়েছে।দেখতে শুনতে চেহারায় স্বাস্থ্যে বেশ।
এবারের সম্বন্ধটি অনেক গুছিয়ে আনা হয়েছে।আত্নীয়ের মধ্যেই সম্পর্ক।মেয়ের বাবা কলেজের শিক্ষক।মেয়ে ও বিএ পাশ করবে সামনে।দেখতে মোটেই খারাপ নয়।ফ্যামিলির সবাই একদেখায় পছন্দ করেছে কিন্তু কামালের কি সে ঘাটতি লেগেছে কে জানে,তার অভিযোগ মেয়ের নাক বেশি মোটা,আর ঠোঁট-ও।এসব শুনে বোনেরা হাসে।আদরের ছোট ভাইটিকে সময় নিয়ে বুঝায়।
কঠিন বরফ গলে যায়,এতো মানুষের মন। একটা সময় কামালের মন কিছুটা গলে।
পরিবারের শেষ বিয়ে।তার উপর একমাত্র ছেলের।আয়োজন রীতিমত যাকে বলে বর্ণাঢ্য।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে কামাল তার নববধূকে দেখার জন্য ঘোমটা তুলল।
‘ধূর’-বিছানা থেকেই উঠে গেল।
বউয়ের চোখে বিস্ময়,তার চেয়েও বেশি ভয়।
‘ঘুমাও তুমি!’-বলে চিৎকার দিয়ে উঠল রীতিমত।বউটি শুয়ে পড়ল,কিন্তু ঘুমালো কিনা বলা যায় না।
বউটি ভাল মানুষ।কামালের এইরকম আচরণের প্রতিবাদে মনে যাই থাকুক,কাউকে কিছু বলল না।
খারাপ ব্যাবহার চলতে লাগল,এবং মনে হয়ে আরো চলত।কিছুটা ভাটা যে পড়ল তার কৃতিত্ব দেয়া যায় কামালের শ্বশুরকে।কারণ তিনি কন্যার শোকে হোক বা অন্য কোন কারণে হোক ষাট বছরের মাথায় দেহত্যাগ করলেন।এই অবস্থায় বউটির প্রতি সল্প হলেও একটা মায়া জন্মালো কামালের। সেই মায়া কিছুটা ভালোবাসার রূপ নিল।কথায় সেই আগের মত ধমক-ধামক থাকলেও বউটিকে সময়-সুযোগে কাছে টেনে নেয়।কথার অত্যাচার অন্যভাবে ভুলিয়ে দেয়।
এভাবেই কথার অত্যাচার আর মাঝে মাঝে সুবিচার করে সংসার চলছিল। শেয়ারের লাভ বাড়ছিল।
বছর ঘুরে গেলে কামাল জানতে পারল সে বাবা হতে যাচ্ছে।কথার অত্যাচার যা ছিল তাও পুরোপুরি পরিহার করল সে। যুক্ত হল বিশেষ কিছু বিশেষণ।আদর করে বউদের স্বামীরা বিভিন্ন যেসব নামে ডাকে সেরকম,এখানেও কৃতিত্ব বউটির নয় অনাগত সন্তানটির,এটা বুঝার অপেক্ষা রাখে না।
যথাসময়ে বাচ্চা হল।বাবা হবার আনন্দে বিভোর কামাল অপারেশান থিয়েটারের সামনে দোয়াদরূদ পড়ে যাচ্ছে। আল্লাহ ছেলেটি যেন সহী সালামতে আসে,আল্লাহ।
সুস্থ ভাবেই পৃথিবীতে আসল,তবে ছেলে নয়,ভুবন আলো করে একটি মেয়ে। খবর শুনে কামালের মুখ কালো হয়ে গেল। বছরখানেকের আদর-সুবিচার এবার কড়ায়-গণ্ডায় উশুল করে নিতে লাগল।যার ফলে বউটি বাচ্চা হবার আগে যেমন সুস্থ ছিল,বাচ্চা হবার পরে রীতিমত বিপরীত অবস্থা।
কথায় আছে একবার না পারিলে নাকি শতবার দেখতে হয়।কামাল পূর্ণ উদ্দ্যমে দ্বিতীয়বার চেষ্টা নিল।কিন্তু শেয়ারে যেমন তার ভাগ্যদেবী সুপ্রসন্ন এখানে কামালের ইচ্ছেমত মিলছেনা হিসেব।ফলাফল স্বিতীয় সন্তানটি মেয়ে।
এবার কামাল আর পারলো না।ডিভোর্স চাই,ডিভোর্স।
বউটি আগে শান্ত হয়ে থাকলেও এখনের কথা ভিন্ন,দুটি সন্তানের জননীকে অনেক সুদূরপ্রসারী ভাবনা ভাবতে হয়।আগের মত শান্ত থাকল না সে,প্রতিবাদ করে বসল।আত্নীয়-স্বজন দের বলল। কামালের বোনেরা আবার বসল কামালকে বোঝাতে।
সবকথা কামালের মাথায় ঢুকেনা।তার একটাই ইচ্ছা ডিভোর্স।এই মেয়েকে বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল না।এখন আবার দু দুটো মেয়ে।না কামাল পারবে না।
আলোচনা অমীমাংসিত থেকে যায়। কামাল কথা দেয় না যে সে এই সংসার করবে।
এর মাঝে বড় মেয়েটি বাবা বাবা,বলে কামালের কোলে উঠতে চায়।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ... কি ইচ্ছে করে কামাল নিজেও জানে না,খুব রাগ হয়।আবার কোলেও নেয়।মাঝে মাঝে অকারণেই ধমক লাগায়।
বউটি বেশি প্রতিবাদ করে না।কোলে নিচ্ছে এটাই তার মতে বেশি।
শেয়ার,দোকান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে কামাল।ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছে।
দুই মেয়েকে এক প্রকার ওদের মা ই দেখছে।বড় করছে। উপার্জন টা বাদে।
সময়ের নিয়মে সময় গড়িয়ে যায়।কামালের সংসারে মন বসতে থাকে ধীরে ধীরে, ডিভোর্সে কথা আর তোলে না। বড় মেয়ে স্কুলে যায় এখন।ছোটটিকেও স্কুলে দেবার সময় আসল।
কামাল কাছে ডাকে বড়মেয়েকে এই ইরা,এদিকে আয়।
বড় মেয়ে ইরা। মেয়ের নামধাম কি রাখবে সে ব্যাপারে কোন আগ্রহ ছিল না কামাল-এর।যে যেটা মনে হয় দিয়েছে।মা দিয়েছে,খালারা রেখেছে,ফুফুরা রেখেছে।
ইরা তার বাবার কাছে এসে দাঁড়ালো।এই মানুষ টা তাকে ছোটবেলা থেকেই অকারণে বকে,মেজাজ খারাপ বেশি থাকলে গালে থাপ্পড় ।মারাটা গায়ে লাগে,কিন্তু কষ্ট লাগে কথাগুলো শুনতে।একটা সময় খুব খারাপ লাগত,কিন্তু এখন সহ্য হয়ে গেছে।
‘কি বাবা?’
‘এবার কোন ক্লাসে উঠলি?’-বাবার কন্ঠে নরম সুর।
‘ফোর,বাবা’ –বাবার মন ভালো নাকি বুঝা যাচ্ছে না।
‘ফোরে উঠছেন উনি এখনো ছোটদের ড্রেস পরে আছেন।যা! চেনজ কর এগুলো... দেখতে তো চেহারা মোটেই ভালো না’-কথার সুর নরম থেকে ঝটিতে এত পালটে যাবে বুঝতে পারেনি ইরা।চোখে পানি এসে যাচ্ছিল প্রায়।
ঝাঝের মত কথাগুলো কানে বাজতে থাকে ইরার। ঢোক গিলে উঠে আসা কান্নাটা দমায়। তারপর,আস্তে করে চলে যায়। বাথরুমে। (চলবে)
২| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৩২
নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: ভালো লাগলো ।
শুভেচ্ছা
৩| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৫
আমি সৈকত বলছি বলেছেন: চলুক.......
ভালো লাগলো।
পরের অংশের অপেক্ষায় থাকলাম।
৪| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৫
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: চলুক
৫| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:১৭
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
ভাল লাগছে। চলুক।
তবে কাহিনী দ্রুত শেষ করতে চাইছেন মনে হয়?
৬| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৪৮
ঢাকাবাসী বলেছেন: ভাল লাগছে।
৭| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৪৭
হতাস৮৮ বলেছেন: অসাধারণ ধারাবাহিক...
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:২১
মামুন ইসলাম বলেছেন: চলুক