নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই রিকশা! - ডাক দিয়ে রিকশাটা কে থামায় লোপা। রিকশাওলার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে খুব বিরক্ত ।
চৈত্রের শেষের কড়ারোদে লোপার কপাল ঘেমে উঠেছে ।
লোপার একটা অভ্যাস আছে, ভাড়া ঠিক না করে রিকশায় উঠে যাওয়া,আজকেও উঠে গেল । অবশ্য গন্তব্যের নাম আর মাঝে আরেকজায়গায় রিকশা থামাতে হবে সে কথা বলেই নিয়েছে। রিকশার হুড ঢাকা ছিল, কিন্তু তাতে গরম টা যেন আরো বেশিই লাগছে
- 'মামা,রিকশার হুড উঠাই দেন'
রিকশাওলা যেন শুনেও শুনেনা । আজবতো-মনে মনে বিরক্ত না হয়ে পারে না লোপা । আবার বলে । এইবার, রিকশাটা হুট করে একপাশে নিয়ে গিয়ে থামায় রিকশাওলা । জায়গাটায় মানুষজন খুব বেশি চলাচল করছে না ।
এদিক সেদিক তাকায় লোপা । নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে চালকের আসন থেকে নামে লোকটি । এগিয়ে আসে ওরদিকে । চাহনি টা কেমন যেন! ধড়াস করে ওঠে লোপার বুক।মুহুর্তে ওর দৃষ্টি পড়ে নিল লোপা ।
ওর খুব আতংক হতে থাকে, এই রাস্তাটা কেমন যেন অচেনা লাগছে,অথচ এই রাস্তা দিয়ে আগেও চলাচল করেছে । দেখল, রিকশাওলার একটা লম্বা হাত ক্রমে এগিয়ে আসছে , মনে, হল একটা চিৎকার দিবে লোপা ।
ঠাস করে হুড টা ফেলে দিল,তারপর আবার চালাতে শুরু করল রিকশা ।
এখনো ভয় কমেনি । ব্যাগ হাতড়ে পানির বোতল বের করে প্রায় অর্ধেক এক নিঃশ্বাসে শেষ করে লোপা ।
'এতক্ষণ ধরে তোকে ডাকলাম,খেয়াল করলি না কেন?'
'আসলে,জায়গাটা ভাল মত চিনি না তো'
'আমি তো মোড়েই ছিলাম,তোর দিকে কয়েকবার হাতও নাড়ালাম,তুই খেয়ালই করলি না । যাইহোক,কেমন লাগছে?'-বলে তামান্না লোপার বাহুতে চাপ দেয় ।
'কিছুই লাগছে না'
'মানে? প্রথম দেখা তোদের দুইজনের, কিছুই লাগছে না?নাকি লজ্জায় বলছিস না?'
না, লজ্জায় নয় ,আসলে মনে মনে অনেক খুশি, সেটা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না লোপার । অনেকদিনের ফোনালাপ আর দূর থেকে যোগাযোগের পর,একটা মানুষকে সামনাসামনি দেখা- এনিয়ে মনে মনে বেশ উৎকন্ঠিত লোপা, সেটা ওর মনেও যেমনি,ওর সাজেও প্রকাশ পাচ্ছে তেমনি । মা তো বলছিলেন,কোথায় যাওয়া হচ্ছে,এত সাজগোজ? ক্লাসপার্টি বলে পার পাওয়া গেছে। আচ্ছা, সুমনএর কি পছন্দ হবে এই সাজ? এই আয়োজন,এইসব মনে মনে তোলপাড় সৃষ্টি করলেও লোপা বাইরে সেটা প্রকাশ করতে নারাজ। পাছে মুখরা বান্ধবীটি এইসব নিয়ে আবার গোটাক্লাসে কৌতুক করবে । এর চেয়ে নীরব থাকাই শ্রেয় । সুমনের জন্য একটা গিফট আছে সাথে, ওর ব্যাগে । ছেলেদের জন্য ভাল একটা গিফট কী হতে পারে,তা নিয়ে কম সময় ব্যায় করেনি সে । শেষমেশ একটা বাদামী রঙের মানিব্যাগ কিনেছে , বাদামী রঙটা যে সুমনের প্রিয় তাও কৌশলে জেনে নিয়েছিল লোপা ।
সেদিন রাতে । বিছানায় শুয়ে আছে লোপা ।
তামান্নার ফোন । ধরতে ইচ্ছে করছে না । ফোন বেজেই চলছে । বেজেই চলছে । অবশেষে ফোন রিসিভ করে কানে নিল লোপা ।
'সমস্যা কী তোর?'
'কোন সমস্যা নেই।'
'সমস্যা নেই মানে? তুই সুমনকে অপমান করলি কেন?'
'হাহ, আমি কিছুই করিনি ।অপমান করার মত কাজ করে থাকলে অপমানিত হয়েছে ... '
'কী করেছে?'
তারপর, তামান্না আর লোপার মধ্যে বেশ খানিকক্ষণ তর্কাতর্কি চলল । তামান্নার মতে একটা সিলি-তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে লোপার মাথা ঘামানো মোটেই ঠিক হচ্ছে না ,লোপার উচিত সুমনকে অবশ্যই স্যরি বলা ,আর এসব তো হতেই পারে ইত্যাদি ইত্যাদি ।
না, লোপার মতে এসব মোটে তুচ্ছ ব্যাপার নয় । তামান্নার মত করে ও ভাবতে পারছে না । ও মনে করেছে সুমনের সাথে সম্পর্কের ইতি টানার জন্য ঐব্যাপারটা যথেষ্ট ।
বিকেলে লোপা আর সুমনকে রেখে তামান্না বিদেয় নেয় । ওরা দুজনে মানে, লোপা-সুমন বসে মুখোমুখি । সুমনকে প্রথম দেখেই ভাল লাগে লোপার । ছবিতে যেমন সামনেও তেমনি । বিশেষ করে ভাল লাগে ওর হাসি । টুকটাক কথাবার্তার ফাঁকে ড্রিংক্স-স্ন্যাক্স অর্ডার করে সুমন । লোপা সুযোগ খুঁজতে থাকে ওর ব্যাগ থেকে গিফট টা বের করে দেওয়ার । কথাবার্তার এক ফাঁকে ব্যাগের চেইন খুলে বের করতে থাকে,ঐ মুহুর্তে হঠাৎ চোখ পড়ে সুমনের দিকে । সুমন তৎক্ষণাৎ চোখ সরিয়ে নেয় ।
গিফট টা ততক্ষণে টেবিলের উপরে এনে রেখেছে লোপা । কিন্তু,মাথার ভিতরে অন্য চিন্তা গ্রাস করেছে তাকে,সুমনের এই চাহনিটা খুব পরিচিত মনে হয় তার,ঠিক এরকমই - হ্যাঁ-হ্যাঁ-কোনো সন্দেহ নেই । আজকেই ,সেই রিকশায়,সেই রিকশাচালকটি । কোন পার্থক্য নেই । সেই একই দৃষ্টি । সেই দৃষ্টির ভাষাও অভিন্ন । কেবল মানুষটা ছাড়া ।
(সমাপ্ত)
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:৫৭
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ভালো লাগল গল্প। ছাড়া ছাড়া লেগেছে। মনোযোগ ধরে রাখতে পেরেছি গল্পে কিন্তু অনেক কষ্টে।