নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডাঃ মুকিতের ডেস্ক

শামস্ মুকিত

একজন ডাক্তার, এন্ট্রাপ্রেনিয়র, রিসার্চার। ক্যান্সার এবং কগনিটিভ সায়েন্স নিয়ে কাজ করতে ভালবাসি।

শামস্ মুকিত › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুগল্প "ঘাঁ"

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:০৭

মাথায় হাত দিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় বসে ছিল শিমুল মিয়া। খবরটির জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না সে। মাথায় যেন পাথর মেরেছে কেউ।

অথচ শুরু হয়েছিল ছোট্ট একটা ঘা দিয়ে। তার একমাত্র ছেলে মনসুরের জন্য বাজার থেকে বাতাবী লেবু কিনে এনেছিল সেদিন। ঝাল মরিচ দিয়ে বাতাবী লেবু খুব পছন্দ করে মনসুর। অভাবের সংসারে ছোট ছোট উপলক্ষ গুলোই সুখের অনুষংগ। বর্গা নিয়ে জমিতে বাধাকপি চাষ করে আর কতটুকুই বা বেশি করতে পারে সে।

"আহ" হঠাৎ ককিয়ে উঠল মনসুর। তার জিভের বামপাশে ছোট একটা ঘা। ব্যাথায় সারাদিন আর কিছু খেতে পারল না সে। আর দেরি করে নি শিমুল মিয়া। পরদিনই বাদ ফজর নিয়ে যায় মসজিদের ইমাম সাজ্জাদ হুজুরের কাছে। হাত যশে দশ গ্রামে নাম ডাক তার। হুজুর তাকে মসজিদের সামনের মাটি আর আর অজুর পুকুরের পানি পড়া খেতে দেয়। বলে," ভরসা রাখ, সুস্থ হইবি।" শান্ত মনে ঘরে ফেরে শিমুল।

কিন্তু একি! দিন যায় ঘা সারে তো না বরং পানের দলার মত ফুলে উঠছে। বাকা হয়ে গেছে মুখটা। দুঃখ বাড়ে কিন্তু উপায় পায় না শিমুল।

ঢাকা থেকে ব্যাবসায় মার খেয়ে গ্রামে ফিরেছে রেমো। ঢাকায় একটা ক্লিনিক ব্যাবসা দিয়েছিল সে। কিন্তু খুব বেশি রোগী পটাতে না পেরে লসের মুখ দেখে সে। এটা নিয়ে কয়দিন মন বেজার তার। একদিন শামসুর দোকানে চা খেতে খেতে শুনল শিমুল মিয়ার কথা। হঠাৎ ঠোটের কোনে হাসির ঝিলিক খেলে গেল রেমোর। ভাল ইনকামের আশায় জীভটা যেন লকলকিয়ে উঠল।
রেমো একদিন শিমুল মিয়া কে পেয়ে বোঝাল এ রোগের চিকিৎসা করতে ঢাকা যেতে হবে। তার এক পরিচিত ক্লিনিক আছে যেখানে এরকম চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু "এট্টু পয়সা কড়ি লাগবিনে।"

শিমুলের চোখের কোনে পানির বিন্দু জমা হয়। নিজের সম্বল বলতে কিছু নেই। কোথায় পাবে সে টাকা।

"ওই মিয়া ছেলেরে বাচাতি হলি ঢাকা যাতি হবে"। উপায়ন্তর না দেখে চড়া সুদে মহাজনের কাছে টাকা ধার করে সে। ছেলের সুচিকিৎসার আশায় ঢাকা ছোটে।

রেমো মনসুরকে নিয়ে একটা ছোট ক্লিনিকে তোলে। কাফনের মত সাদা কাপড় পরা এক লোক মনসুরকে টিপে টুপে দেখে একটা লিখে দেয় কাগজে। বলে চিকিৎসার জন্য টেস্ট করানো লাগবে। বকলম শিমুল মনসুরের টেস্ট করায়। হাত থেকে চলে যায় অনেক খানি টাকা।
টেস্টের রিপোর্ট আসলে তাকে জানানো হয় অপারেশন লাগবে মনসুরের। "একলাখ লাগবোনি গো শিমুল মিয়া, আছে নি?" বলে রেমো। অসহায়ের মত চেয়ে থাকে সে। কথা বলার ভাষা টায় যেন হারিয়ে ফেলেছে এ মূহুর্তে। তার কাছে যা টাকা আছে তা দিয়ে দুই বাপ পুতের হয়ত দুইদিন চলবে। অপারেশন তো অলিক স্বপ্ন।

রীতিমত ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় শিমুলকে তারা। এক হাতে ব্যাগ আর এক হাতে মনসুরের হাত শক্ত করে ধরে হাটতে থাকে রাস্তায়। কোথায় যাবে সে? গলায় কাছে টিউমারের মত কান্না ঠেলে বেরিয়ে আসতে চায়। পারেনা সে শেষ পর্যন্ত। রাস্তার মোড়ে ফুপিয়ে কেদে ওঠে। অপ্রস্তুতের মত হা হয়ে থাকে মনসুর। বাবাকে কোন দিন কাঁদতে দেখেনি সে।
তাদের এ দুর্দশা দেখে এগিয়ে আসে দাড়ি টুপি পড়া এক ভদ্রলোক। সব শুনে সে পরামর্শ দেয় সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার। দয়াপরবশ হয়ে হাতে কিছু টাকাও গুজে দেয় লোকটি।
যায় সে সরকারি হাসপাতালে, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল। কিন্তু এখানেও সাদা কাপড় পরা মানুষ গুলোকে দেখে শিউরে উঠে সে। কিন্তু না একজন এসে হাসি মুখে কথা বলে তার সাথে । তাকে আস্বস্ত করে। তার দুঃখের কথা শুনে তাকে সাহায্যও করে তাকে। কথা দেয় তাকে বিনামূল্যে সব চিকিৎসা করার। সে কিছুটা আস্বস্ত হলেও ভয় কাটেনা তার। মনের কোনে চিনচিনে ব্যাথার মত একটা প্রশ্ন ঘুরতে থাকে, তার ছেলে সুস্থ হবে তো !
কিন্তু মনসুরের বাম পাশের ফোলাটা যেন বেড়েই যাচ্ছিল। ছোট একটা বলের আকার ধারণ করেছে সেটা। ফোলার কারণে ঠিক মত কথাও বলতে পারছে না সে।
একদিন তাকে বড় একজন ডাক্তার ডেকে বলে তার জীবনের সবচেয়ে খারাপ খবর টি। কোন দিন শুনতে চায় নি সে। ক্যান্সারের কারণে পুরো জীহবা টা কেটে ফেলতে হবে মনসুরের। আর কোন দিন কথা বলতে পারবে না সে। হঠাত করেই পুরো দেহটা ভারি লাগে তার। দুঃখের ভারে হঠাত মাটিতে বসে পড়ে সে। চোখে সবকিছু অন্ধকার হয়ে যেতে থাকে।

মাথায় হাত দিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় বসে ছিল শিমুল মিয়া। খবরটির জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না সে। মাথায় যেন পাথর মেরেছে কেউ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.