নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নরকে স্বাগতম।

হাতুড়ে লেখক

ফেসবুকে আমি: www.facebook.com/ariyaanriyad

হাতুড়ে লেখক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কয়েকশো চকচকে নোট

২২ শে জুন, ২০১৭ সকাল ১১:০০




লেদোয়ার চৌধুরী আমার বিশেষ বন্ধু মানুষ। বিশেষ বলছি এই জন্য যে, কোনকালে আমাদের বন্ধুত্বের সূচনা হয়েছিল বলতে পারি না। হতে পারে সেটা শৈশবের কোন রৌদ্রঝড়া দুপুরে ডাংগুলি খেলার মাঠে অথবা গোধূলীর শেষার্ধে গোল্লাছুটের হাত ধরে কিংবা ঝিমধরানো সন্ধ্যায় খড়ের গাদায় বসে বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে। আমাদের বন্ধুত্ব সম্পর্কে বুঝতে হলে আরেকটু গভীরে যেতে হবে। কর্মের খাতিরে আমাকে কিছুকাল দেশের বাহিরে কাটাতে হয়েছিল তখনো সে নিয়ম করে চিঠি লিখতো আমাকে। আমি দেশে ফেরার পর আমাদের বন্ধুত্বটা এতটা গভীর হয়ে উঠলো যে, আমরা একে অপরের ছায়া সঙ্গী হয়ে উঠলাম। এই যে গভীরতা, দুয়ের মিলিত সঞ্চিবনী শক্তির লুটোপুটি, আত্মার বিমোহ শান্তি স্রোতধারার মত বহমান এগুলো সম্ভবপর হয়েছিল সম্ভবত আমরা দুজন বিপত্নীক বলেই। আরেকটি জায়গায় দুজনের সমানুপাতিক আগ্রহ ছিল যেখানটায় সেটা টাকা বৈ দ্বিতীয় কিছু নয়। তবে সেটা ছিল গোপনে, বিভক্ত। অর্থ্যাৎ এত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও অর্থ সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়াদি নিয়ে আমাদের মাঝে কোন আলাপই হতো না।

লেদোয়ার চৌধুরী হঠাৎ করে অগাধ ধনসম্পদের মালিক হলো কিভাবে এটা নিয়ে লোকজন যেমন চিন্তা করে তেমনি তার কি পরিমাণ অর্থকড়ি রয়েছে সেটা নিয়েও তাদের ভাবনার অন্ত নেই। লোকেদের এমনও বলতে শুনেছি যে, লেদেয়ারের যে পরিমাণ নগদ টাকা এক গাড়ি রাবার ব্যান্ড দিয়েও নাকি সেটা বাঁধা অসম্ভব। লোকেদের ধারণা যে নেহাত মন্দ নয় সেটার একটা আভাস পাওয়া গেল একদিন।

সেদিন সম্ভবত লালপানি পেটে একটু বেশিই পড়েছিল।
-বন্ধু! তুমি কি ধারণা করতে পারো আমার কত টাকা রয়েছে?
-এসব কথা থাক। অন্যকিছু বলো।
-থাকবে কেন? আমার একমাত্র প্রাণপ্রিয় বন্ধু হিসেবে এটা জানা তোমার একান্ত প্রয়োজন। তুমি কি জানো আমি আমার সব সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছি?
-সেকি! কেন?
-টাকা। বন্ধু টাকা। বুক ভরে টাকার গন্ধ নেওয়ার যে কি সুখ সে তুমি বুঝবে না।
-সত্যি বুঝতে পারছি না।
-চলো বন্ধুবর। তুমি যেখানে যাচ্ছো সেখানে আমি ব্যতিত অন্যকারো পায়ের ছাপ অব্দি পড়েনি এর আগে কোনদিন।

তালা খুলে আমরা যে ঘরটাতে স্থির হয়ে দাঁড়ালাম তার আদ্যোপান্ত চকচকে নতুন নোটে ভর্তি। ধাতস্থ হতে কয়েক মিনিট কেটে গেল আমার। ঘরটাকে একটি মাঝারি রকমের টাকশাল ব্যতীত অন্যকিছু ভাবাই যাচ্ছে না। থরে থরে নতুন টাকার বান্ডিল সাজানো। ঘর ভর্তি টাকার ট-ট গন্ধ। কিছু বলার আগেই সে এমন একটি বিষয় নিয়ে আলোকপাত করলো যার সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র ওয়াকিবহাল ছিলাম না আমি।
-কঠিন একটা অসুখে পড়েছি আমি। প্রতিদিন দশ বান্ডিল টাকা আমাকে খেতে হয় বন্ধু। তাই এই ব্যবস্থা। এভাবে কতদিন বাঁচতে পারবো বলে তোমার মনে হয়?
-কি বলছো এসব? তুমি কি পাগল হলে?
-হাঃ হাঃ। থাক এসব কথা। চলো বেরুনো যাক।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে সেদিনের মত প্রস্থান করলাম।

প্রায়শ তার টাকা সম্পর্কিত স্থুল রসিকতা আমার চরম বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ালো। অপরদিকে ঠিক একই সময়ে এক নারীর প্রেমে পড়লাম আমি। এই সামান্য বিরক্তি ও প্রেমই আমাকে তার বন্ধুত্ব থেকে ধীরে ধীরে দূরে ঠেলে দিল। তার বাসায় যাওয়া এক পর্যায়ে বন্ধই করে দিলাম।

একবছর ঘুরতে না ঘুরতেই দুঃসংবাদটি পেলাম আমি। ছুটে গেলাম বন্ধুর কাছে। তাকে দেখে সনাক্ত করাটাই আমার পক্ষে যুদ্ধসম মনে হলো। আয়তাকার লৌহ খাটিয়ায় সাদা কাপড়ে আচ্ছাদিত কঙ্কালসদৃশ শুয়ে থাকা মানুষটিই যে বন্ধুবর লেদোয়ার চৌধুরী, কেউ একজন না বললে আমি বুঝতেই পারতাম না।
-হায় বন্ধু আমার! তুমি এভাবে যেতে পারো না!
দুটো চোখ অাদ্র হয়ে উঠলো সহসাই। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই কয়েকজন মিলে বন্ধুর লাশটা কাঁধে তুলে কবরের দিকে হেঁটে চললাম। বন্ধুর লাশটা শেষবারের মত ঠেলে দিতেই আমার হাত ছুয়ে দুমড়ানো মোচড়ানো কয়েকশো চকচকে নোটে ভর্তি হয়ে গেল ছোট্ট গর্তটা।

মন্তব্য ২৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুন, ২০১৭ সকাল ১১:৩১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অথ গৃধ্নুতার এত দারুন তাৎপর্যময় গল্প :)

++++

২২ শে জুন, ২০১৭ সকাল ১১:৩২

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: হাঃ হাঃ দারুণ মন্তব্য ভৃগু দা। ;)

২| ২২ শে জুন, ২০১৭ সকাল ১১:৫৪

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: টাকা দিয়ে সুখ কিনা যায় না কখনো-মানুষ যদি বুঝতো এসব
তবে কবেই স্বার্থপরতা ছেড়ে দিতো

সুন্দর লাগল গল্প

২২ শে জুন, ২০১৭ সকাল ১১:৫৫

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ ফাতেমাপু। আছেন কেমন?

৩| ২২ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:০০

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া ভাল আছি-তবে চিকনগুনিয়ায় আমার জীবন শেষ করে দিছে। আমার দুশমনেরও যেনো এই রোগ না হয়। দুই সপ্তাহ হলো এখনো জোড়ায় জোড়ায় ব্যথা আর রেশ উঠলো তো উঠলো সারা মুখে দিয়ে গেলো ভয়ঙকর কালো দাগ। ঈদের খুশি মাটি :( । িএই ব্যথা নাকি এক বছর লাগবে কমতে-বলেন দেখি এ কেমন রোগ। নামও আবার ল্যাংড়া জ্বর। ল্যাংড়া কইরাই ছাড়লো।

২২ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:০৫

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: এই রোগের নাম হওয়া উচিত ছিল মোটাগুনিয়া! যতগুলো উপসর্গ কইলেন এর এ থেকে এটাই উপনীত হয়। আমার জানামতে এতদিন তো লাগার কথা না? ডাক্তার দেখান পয়সা তো জিঝু দেবে চিন্তা কি? B-)

৪| ২২ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:১০

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: াহাহাহাহ এই রোগের কোনো ঔষধ নাই, এইস প্যারাসিটামল ছাড়া। আর পয়সা আমারটা আমিই দিতারি ;) নো ঝিজু পিঝু

২২ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:১৫

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: ও বুঝছি ঝিজু ঘর জামাই! :P

৫| ২২ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:২০

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: েআরে ধুর তিনি ঘরজামাই হতে যাবেন ক্যান

দুইজনেই তো স্বাবলম্বি। তবে তিনি ঘর জামাই না আমি ঘরবউ

২২ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:২৬

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: আমাদের এই এক সমস্যা! নারী যদি ঘরবউ হইতে পারে, তাহলে পুরুষ ঘর জামাই হইলে অসুবিধা কি? হুদাই কেন এটাকে অস্বাভিক চোখে দেখা হবে? ঘর জামাই হওয়ার জন্য পাত্রী খুজতেছি! দোয়া করবেন ;)

৬| ২২ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৮

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: হাহাহাহ আচ্ছা আমিও পাত্রী দেখুম নে। ব্যাংকার চলবে নাকি? হাহাহা

২২ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৫

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: চলবে মানে দৌড়ুবে! কিন্তু আমি ব্যাংকার পাত্রীর জন্য চলবো না দৌড়াবো সেটাই চিন্তার ব্যাপার। |-)

৭| ২২ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১:৩৯

নাগরিক কবি বলেছেন: আমারে কিছু টেকা দিবা হাতুঈড়া !:#P

২২ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১:৪৭

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: কি কলবা? B-)

৮| ২২ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১:৫০

নাগরিক কবি বলেছেন: এক প্যাকেট বিড়ি কিনাম B-))

২২ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ২:৫৮

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: আচ্ছা।

৯| ২২ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ২:২১

ধ্রুবক আলো বলেছেন: শেষের দিকটা খুব একটা ভালো হয় নাই।

২২ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ২:৫৮

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: পাশা আছি পাশা থাকুন।

১০| ২২ শে জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৩

উম্মে সায়মা বলেছেন: নোটে কেন ভর্তি হল গর্ত? আপনার অন্যান্য গল্পের তুলনায় এটা মোটামুটি।
শিরোনামে টাইপো আছে। খেয়াল করেননি বোধহয়। ভালো থাকুন।

২২ শে জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪২

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ ভুলটা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। শুভ কামনা রইলো। পাঠ ও মন্তব্যে ভালো লাগা একরাশ।

১১| ২২ শে জুন, ২০১৭ রাত ৮:২৭

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: অনেক সুন্দর করে গল্প লেখেন ভাই। এবার পুরোটা পড়েই ক্ষান্ত হলাম।
আপনার পাঠক ধরে রাখার গুণটা যথেষ্ট ভালো লাগলো।

টাকার গন্ধ আমি টেষ্ট করে দেখিনি কোনদিন। অনেক টাকার গল্প। মুগ্ধতা রইল গল্পে।

শুভকামনা জানবেন ভাই।

২২ শে জুন, ২০১৭ রাত ৮:৫৫

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: টেস্ট করে দেখবেন। হেব্বি। আপনার জন্যও শুভ কামনা B-)

১২| ২২ শে জুন, ২০১৭ রাত ৯:৩৩

আহমেদ জী এস বলেছেন: হাতুড়ে লেখক ,




লেদোয়ার চৌধুরীর কফিনে খামোখা হাতুড়ি পিটিয়ে কতোগুলি নোট মেরে দিলেন !!!!!

২৩ শে জুন, ২০১৭ সকাল ১১:১০

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: ভায়ু ব্যাপারটা সে রকম না মোটেও। আমি বলতে চেয়েছিলাম, লাশটাই নোট হয়ে গেছে B-)

১৩| ২৩ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১:০৭

বর্ষন হোমস বলেছেন:
ওস্তাদের মার শেষ রাতে।

ঠিক তেমনই হাতুড়ে লেখকের গল্পের মূলভাব শেষ লাইনে।

২৩ শে জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৩

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: হাঃ হাঃ। পরে মন্তব্য দেব। B-)

১৪| ০৩ রা জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:৫২

রানা আমান বলেছেন: বরাবরের মতই ভালো লেখা । সত্যি বলতে কি , আপনার এবং আরও কজনের ভালো কিছু লেখা পড়ার জন্যই আমার ব্লগে সময় দেয়া , নিজে কিছু লিখতে খুব একটা ইচ্ছে করেনা কখনো ।

০৬ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:১২

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: সত্যি বলতে কি , আপনার এবং আরও কজনের ভালো কিছু লেখা পড়ার জন্যই আমার ব্লগে সময় দেয়া।


এটা বেশ সুখদায়ক।


নিজে কিছু লিখতে খুব একটা ইচ্ছে করেনা কখনো ।

মন্দ ভালো যাইহোক লিখুন। হাল ছেড়ে দেবেন না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.