নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হোস্টেল-হল-মেসে থাকার কারনে আমাকে অনেক বার নিজে রান্না করে খেতে হয়েছে। আমি প্রায় ৭/৮ বছর যাবত অনিয়মিত রান্না করি। খাওয়ার যোগ্য রান্না আমি করতে পারি কিন্তু পেয়াজ কাটতে পারি না। আমি পেয়াজ কাটলে অনেক মোটা মোটা করে কাটা হয়। সেই নিয়ে আমার মধ্যে অনেক দিন ধরে লজ্জা কাজ করতো। গত তিন দিন খালা (মেসের বুয়া) আসেন নাই। আমি একা একা অনেক সাহস সঞ্চয় করে চিকন করে পেয়াজ কাটার চেষ্টা করলাম। প্রথম দুই তিন বেলা হলো না। কিন্তু শেষের দুই বেলা আমি খেয়াল করলাম আমার অজান্তেই পেয়াজ চিকন করে কাটা হচ্ছে। আমি বুঝতে পারলাম আমি শিখে গেছি। এখন আমি চিকন করে পেয়াজ কাটতে পারি। আমার আনন্দ দেখে কে ?
প্রতিটা শিক্ষার মধ্যে আনন্দ আছে। সে যত বড় শিক্ষা হোকা আর ছোট শিক্ষা হোক। আমার মনে হয় শিক্ষা ছোট বড় হায় না। শিক্ষা ব্যক্তি ও সময় সাপেক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় হয়। মোদ্দা কথা, প্রতিটা শিক্ষার মধ্যে একটা আনন্দ আছে , সুখ আছে।
শিক্ষা জীবনের শেষ সময়ে এসে আমি উপলব্ধি করলাম আমি অনেক কিছুই জানি না । আমার মানব জমিন পতিত পরে আছে । অনাবাদী এই জমিন নিয়ে বিশ্ব সংসারে আমি মাথা উচু করে দাড়াবো কেমন করে?
হায় আমি কি করলাম ?
"মন রে কৃষি কাজ জান না।
এমন মানব-জমিন রইলো পতিত,
আবাদ করলে ফলতো সোনা।।"রামপ্রসাদ সেন
আমার কম জানার পিছনে মূল কারণ আমার জানার পিপাসা অনেক কম। এই জানার পিপাসা না থাকার কারনে আমি অনেক কিছুই শিখি নাই । আমি যখন আমার বাংলা ব্লগ সময়ের নারী চালু করি ০৫ আগস্ট ২০১৩ তখন আমি নিজে বাংলা কম্পোজ জানতাম না। বিজয় দিয়ে অনেক কষ্টে নিজের নামটা লিখতে পারতাম। অভ্র ভয়ে ধরতাম না। কিছুদিন পরে খেয়াল করলাম আমাকে এই ব্লগ ভালো ভাবে চালাতে হলে বাংলা শিখতেই হবে।আমার মধ্যে পিপাসা সৃষ্টি হলো । মাত্র ৭ দিনে আমি অভ্র শিখলাম এবং বাংলা প্রাক্টিস করার জন্য প্রতিদিন বিশাল বিশাল ফেসবুক স্ট্যটাস দিতাম।এখন সারাদিন বাংলা লিখতে পারি।
এভাবে আমার একটা করে শিখার কাজ চলছে। আমি প্রতিদিন অন্তত একটা জিনিস শিখতে চাই।এটাই আমার আল্লাহ্র কাছে একমাত্র প্রার্থনা। আমায় জ্ঞান দাও প্রভু- আমি শিখতে চাই।
শিখার ক্ষেত্রে আমাকে অনেক বিচক্ষন হতে হয়। আমি কোনটা শিখবো কোনটা শিখবো না। কারণ একটা মানব জীবন সফল করতে অনেক বেশি কিছু শিখতে হয় না। কিছু বা কোন একটা কিছু ভালো মতো শিখলেই চলে।জ্ঞানী গুনীরা এই কথাই বলেন। কিন্তু সেই একটা ভালো করে শিখা এবং তার পুরোটা শিখতে গেলে অনেক কিছু শিখা লাগে। তাই শিখার শেষ না।
শিখতে হলে আমাকে আরো নির্বাচন করতে হয় আমি কার কাছ থেকে শিখবো। কার কাছে থেকে শিখবো সেখানে যে বয়স বা জ্ঞান বা সামাজিক অবস্থান বিচার করে তার শিখার প্রাথমিক যোগ্যতা নাই।
শিক্ষার জন্য ধরয্য অনেক জরুরী ব্যপার। এখানে চাতকের মতো হতে হয়। তবেই অসাধ্য সাধন হয় ।দুঃখ , কষ্ট সমস্থ মাথায় নিয়ে একনিস্থ হয়ে শিখার জন্য বেকুল হলেই শিখাহ যায়।
ফকির লালন সাই এর ভাষায় বলতে গেলে-
চাতক পাখির এমনি ধারা
তৃষ্ণায় জীবন যায়গো মারা
অন্য বারী খায়না তারা
মেঘের জল বিনে।
মেঘে কত দেয় গো ফাঁকি
তবু চাতক মেঘের ভুখি
অমনি নিরিক রাখলে আঁখি
তারে সাধকও বলে।
অমৃত মেঘেরও বারী
মুখের কথায় কি মেলে
চাতক স্বভাব না হলে?
আমি চাতক না। আমি চাতকের চেয়ে উত্তম। আমি মানুষ। আশরাফুল মাকলুকাত। আমার জ্ঞানের তৃষ্ণা আরো বেশি । আমি শিখবো। আল্লাহ আমাকে শেখার সুযোগ দাও। আমি জানি আমি কি শিখতে চাই। আমাকে সময় ও সুযোগ করে দাও।
©somewhere in net ltd.