নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে জন্ম। কাঁচ-পাকা চুল, দাঁড়িসমেত ইঁচড়ে পাকা যুবক।পেশাদার ট্র্যাভেল ব্লগার।ঘুরে বেড়াই ও লিখি।শখের বশে সাহিত্য চর্চা করি।সদালাপী,অলস ও স্বপ্নবাজ। জীবনের উদ্যেশ্য খুজে পাই নি।মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত।যতক্ষণ শ্বাস চলে ততক্ষণ সুবাহানাল্লাহ

ফয়সাল হাওড়ী

স্বরূপ বিনির্মাণে মগ্ন ।

ফয়সাল হাওড়ী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সংসারের অ আ ক খ

২৫ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৫:০১

-কই ছিলি ? সারাদিন শুধু ঘুরাঘুরি । আয় এইদিকে আয়। তর মা কৈ?

হাঁসের খামারে গেছে।

-মার সাথে দুইটা কলসি পানি টানলেও তো পারস।

গেছিলাম , আম্মা আরো দৌড়ানি দিছে।কইছে রাইতে ভাত নাই।

-এই কিচ্ছা বাদ দে ।বাবার কাছে আয় বস।

ডুব দিয়া নাইরকেল গাছের তলে যাও। আমি পাটি বালিশ নিয়া আসি।

-আগে বাবারে এক গেলাস পানি দে।

দুই দিনের বানিজ্য সফর শেষে বাড়ি ফিরলেন ব্যাপারী সাহেব ।বাড়ির উঠোনে আপন কর্মে মহা ব্যস্ত তাঁর সাত বছর বয়সী ছেলে জাফর।প্রথম দর্শনে পিতা পুত্রের এই অসংলগ্ন সংলাপ শোনে তাদের প্রকৃত সম্পর্ক বোঝার উপায় নেই।তাঁরা বন্ধুর ন্যায় পিতা-পুত্র নয় কিন্তু পিতা পুত্রের মতোই বন্ধু।


ও আব্বা তুমি কই গেছলায় ?

-হাঁসের ব্যাপারী খুইজা দুইডা দিন নষ্ট। ল্যাইপশা , জয়কলস দুই দুনিয়ায় দুই বাজার, হাঁটা আরা হাঁটা।

দেও তাইলে আগে পা দুইডা টিইপা দেই।

-হ দে বাপ।তর মায় তর উপরে খ্যাপছে কেন ?

নানীর বাড়িত যাইতে চায়। আমারে সাথে যাইতে কয়।আচ্ছা আব্বা আমার যা ভালো লাগে না তা করা ঠিক ?

জ্যোস্ট মাস। হাওরে চিপচিপে পানি।রাত পোহালেই হাওরের চেহারা বদলায়।দিন শেষ পানি বাড়ে হাত খানেক।বাড়ির কাছেই ধান শুকানোর মাঠের পাশে হাঁসের খামার। দিন পাঁচেক পরেই হয়তো খামারে পানি ঢুকবে।তাই হাঁসের খরিদদার খুজে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে বাড়ির দক্ষিণে নারিকেল গাছের ছায়ায় মাদুর পেতে শুলেন ব্যাপারী সাহেব। অসয্য গরম ও গোমট আবহাওয়ায় গায়ের ঘামে শীতল পাটি আরো শীতল হয় কিন্তু শরীর জুড়ায় না।তাঁর উপর অকাল পক্ক ছেলের প্রশ্নের উত্তর দিতে মাঝে মাঝে বিরক্ত হলেও প্রকাশ করেন না।শুধু শংকায় মরেন, কতোদিন এমন করে এই ছেলের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন।

আব্বা, হাঁস বেচতায় না ?পানি তো আইছেই?দুই দিন বাদেই আড়ে উঠবো দিলদারের দাদি কইছে।

-হ রে পুত এইডাই তো চিন্তা।তাই তো হাটু পানি কমর পানির মধ্যে দুইদিন হাওর ভাঙলাম।দেখি বুধবারের আগে বেচা হইয়া যাইবো/

আম্মায় কয় তুমি খেলা দেখতে গেছো।

-আইচ্ছা তুই ক আমি একজন খেলোয়াড় হইয়া চোখের সামনে একটা খেলা চলতাছে সে খেলা না দেইখা পাশের রাস্তা দিয়া চইলা যাই ক্যামনে?বেডি মাইনসে এইতা বুঝে নারে বাপ।এই হাতটা একটু টাইনা দে।

আব্বা আমি নানীর বাড়িত যাইতাম না।

-ক্যরে ? তর মামুরা তরে আদর করে না ?

উহু,মামা কতো সুন্দর সুন্দর গান শোনায়।খালা কতো ফল খাইতে দেয়, মাথায় তেল দিয়া দেয়।

-তাইলে যা বুধবারে বাজার থাইকা ফল নিয়া তর নানিরে দেইখা আয়।

না। যাইতাম না। আমি তোমার সাথেই থাকমু। তুমি না কইছলায় আমারে গানে নিয়া যাইবায়।

ছেলেকে ভুলানোর জন্য কবে একবার বলেছিলেন যে গানে নিয়ে যাবেন নিজেই ভুলে গেছেন।কিন্তু ছেলে মনে করে বসে আছে। অদ্ভুত ছেলে জীবনে একবার জামা জুতার আবদার করলো না কিন্তু সুযোগ পেলেই গানে যাওয়ার বায়না ধরে।নিজে খেলাধুলা ও গান বাজনা পছন্দ করার অপরাধে “সংসারে অমনযোগী” এমন তকমায় নিন্দিত।কিন্তু এই ছেলেকে বোঝাবে কে যে এই অসাড় সমাজে সংস্কৃতিচর্চা মুল্যহীন হয়ে যাচ্ছে।তাই আবদারের উত্তর দিলেন না বরং ছেলেকে নিজের কাজ সম্পর্কে মনে করায়ে দিলেন।

-যা করস মন দিয়া কর না খালি কথা কয় । মাথাডা শুধু চুলকায়। এই পাকনা চুলের যন্ত্রনায় ঘুমাইতে পারি না।

উহু। এখনি চুলে হাত দিমু না। চুলে হাত দিলেই তুমি ঘুমাই যাও।

-আব্বা তরে গান শোনামু।

না। একটা গান শোনাইয়াই তুমি ঘুমাই যাইবা।আগে কও আমারে গানে নিয়া যাইবা।

-বাপরে বড় হইয়া নানীর বাড়ি পাবি না।বড় হইলে নানীর বাড়ি থাকে না।

আমার ঐখানে যাইতে ইচ্ছা করে না।ওরা ভালো না। তোমার নামে বদনাম কয়। আচ্ছা আব্বা ভালো মানুষ অরেকজনের বদনাম কয় ?

এই অবুঝ বালকের সকল প্রশ্নের উত্তর তিনি যেমন জানেন না তেমনি এই বালকের বুদ্ধিজ্ঞান সম্পর্কে তিনি সন্দিহান। পাকা পাকা কথা বলেলেও সমবয়সীদের বাজারে বোকা-সোকা বলেই তার পরিচিতি বেশি।এমনই অঘটনঘটনপটিয়সী ও নন্দ ঘোষ টাইপের যে মাঝে মাঝে কিছুই না করেও সাত পাড়ার সকল বালকের দোষ মাথায় নিয়ে নাক ডেকে ঘুমায়।সদা প্রশ্ন আর কথা।ব্যাপারী সাহেব ছেলের এই পাকামোতে যতটা অভ্যস্থ হয়ে গেছেন,তার চেয়ে বেশি ছেলের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উৎকণ্ঠা তাঁকে সংলাপ চালিয়ে যেতে তাঁকে বাধ্য করে।এই ভালো মন্দে গড়া সংসারে তিনি ছেলেকে কি উপদেশ দিয়ে যাবেন মাঝে মাঝে তাই খুজে পান না।

-পরনিন্দা আপন ভাইয়ের মাংশ খাওয়ার সামিল।এই সব কয় না বাজান।এই কানের কাছে দেখ কয়টা পাকনা চুল চাইয়া থাকে।ও পুত, তর নানী বাড়ির সবাই কি আমার বদনাম কয় ?

উহু! মামা আর খালা তোমার একদম সাগরেদ।খালা কি কয় জানো ? তোমার সাথে সুলেমান বাদশার পাট দেখতে যাইবো।হি হি

-বাজান ধান উড়াইতে পারো ?

উহু, আমি দেখছি। এই যে এইভাবে কুলায় ধান নিয়া এমনে এমনে নারা দিলেই চুচা পইরা যায়।

-তাইলে শুভংকরের ফাঁকি
ধাঁধার উত্তর কও দেখি।
একই জমির ধান চুচা
কখন একপাল্লায় মাপি ।

আমি পারি না। তুমি কইয়া দেও ।

-ধাঁধাডাত হাওরের পানির সমান রহস্য বাজান তুমি বোঝার কথা না।

তুমি কইলে আমি নানার বাড়িত যাইমু।আমার ধাঁধা বুঝন লাগতো না।গান গাও।

-ও বাপ যা।তর মায়ের নিয়া নাইয়রটা কইরা আয়।বাবা তরে শার্ট লুঙ্গি কিনা দিমুনে।যা, একই পথে ফুল থাকে,কাটাও থাকে।তাই বলে হাঁটা বাদ দিবি নাকি।

একটা গানো শোনাইলা না কিন্তু আরেকবার কইয়ো মাথা বেদনা।

-দুয়ারে আইসাছে পালকী
নাইয়রী গাও তোল রে
তোল মুখে আল্লাহ্‌ রুসুল সবে বলো ...।

(চলবে)








মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.