নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে জন্ম। কাঁচ-পাকা চুল, দাঁড়িসমেত ইঁচড়ে পাকা যুবক।পেশাদার ট্র্যাভেল ব্লগার।ঘুরে বেড়াই ও লিখি।শখের বশে সাহিত্য চর্চা করি।সদালাপী,অলস ও স্বপ্নবাজ। জীবনের উদ্যেশ্য খুজে পাই নি।মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত।যতক্ষণ শ্বাস চলে ততক্ষণ সুবাহানাল্লাহ

ফয়সাল হাওড়ী

স্বরূপ বিনির্মাণে মগ্ন ।

ফয়সাল হাওড়ী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অচিন পাখি ডট কম

০৩ রা জুন, ২০১৭ রাত ৯:১৯



সকাল বেলা হাটতে যাওয়া একটা অকাজ ছাড়া কিছুই না। ভুড়ি বেড়ে যাচ্ছে এই অজুহাতে একটা মানুষের সকাল বেলার ঘুম হারাম করা অন্যায় । আমাকে সেই অন্যায় টা মেনে নিতে হয় । আমার সহধর্মিণী সংসারের অধিপতি । তার হুকুম তামিল করাই আমার একমাত্র কাজ । ইহ জগতের অন্য কোন কিছু তাঁর কাছে কাজ বলে পরিগণিত হয় না । ছেলে মেয়ে গুলোও হয়েছে তাই । বুঝে না বুঝে মায়ের পক্ষ নেয় । লালন হাওড়ী ও বুলন হাওড়ী । নামের শেষে আমার টাইটেল ছাড়া আর সব কিছুই তারা তাদের মায়ের পেয়েছে । চেহারা, কথা বার্তা, চালচলন ও কাজকর্মে মায়ের কপি । হ্যা ওদের মায়ের ভাষ্যমতে আমার বদ অভ্যাস গুলো মাহারাজ আর মহারানী ঠিকই পেয়েছেন । আমার মতো করে লালন প্রকাশ্যে নাকে আঙ্গুল দেয় আর বুলন কথায় কথায় অহেতুক জেদ করে । লালন স্কুলে যাবে আর সে যাবে না তা হয় না । সে স্কুলে যাবেই । লালনের বয়স ছয় তাতে কি ? তাঁর বয়সও তো তিন হয়েছে । লালন স্কুলে গেলে সে যাবে না কেন ? মা বলা সত্তেও বাবা কেন সকাল বেলা মর্নিং ওয়ার্ক করতে যাবে না ?ছেলে মেয়ে ও বউ একজোট হলে কিচ্ছু করার থাকে না, সে নির্যাতন হোক আর অন্যায় আবদার হোক মেনে নিতেই হয় । অগত্যা আমাকে মর্নিং ওয়ার্কে যেতেই হয় । দীর্ঘদিন ধরে আউট সোরসিং করতে করতে ভুরি টাও কেমন যেন বেঢপ ঢোলের মতো হয়ে গেছে । এখন আর নিজের কাছেও পছন্দ হয় না । কিন্তু এই সাত সকালে হাটতে বের হওয়া কতোটা বিরক্তির কাজ তা আমি ওদেরকে কিভাবে বুঝাই ?

সকাল বেলা বেড টি খেয়ে আমি হাটতে যাই । হাটা কিসের ? ছাত্র জীবনে ক্লাস ফাকি দিয়ে দিয়ে একটা বদ অভ্যাস হয়ে গেছে । এই বদ অভ্যাসের নাম "ফাকি দেয়া"। আমি এখনো সে অভ্যাসের সৎ ব্যাবহার করে থাকি । বাসা থেকে একটু দূরে একটা চায়ের দোকান আছে স্ত্রী পুত্রের গমনপথের উল্টো দিকে। কস্ট করে সেই দোকান পর্যন্ত আসি । পেট ভরে নাস্তা করি । মনে যা চায় তাই খাই । বাসায় আসলে তো দেখবো ঠাণ্ডা দুটো রুটি আর স্বাদহীন একটা ভাজি টেবিলে বাড়া আছে সাথে কিছু ফল । ফল গুলো খেতে ভালো লাগে কিন্তু সে শুকনো রুটি , ওয়াক। কিন্তু কিচ্ছু করার নাই। দশটা এগারোটার দিকে খেয়ে ফেলি । না খেলে মেয়ে তাঁর মায়ের কাছে নালিশ করবে । তাই নিজের পিঠ বাছাই । চায়ের দোকানের ভরপেট নাস্তা খেয়েও দুই ঘন্টা পরে আমার কিভাবে খিদে পায় আমি ভেবে পাই না ।

রাস্তার পাশের টং দোকান । এই দোকানদারের নামটা আমি জানি না। সবাই তাকে "মোটা মামা" বলে ডাকে । বয়সে আমার সমান হবে । তাঁর শরীর ও ভুরি নিয়ে নাকি সে দুইটা মানুষের সমান, এই কথা সে নিজেও হেসে হেসে বলে । মানুষটাকে আমার ভালোই লাগে । বিশেষ করে তাঁর হাতের খাবার আমার কাছে অমৃত । সকাল বেলা স্পেশাল নাস্তা "মসলিন রুটি" আর গরুর কালাভুনা । রুটিটা অনেক পাতলা ও মোলায়েম । কালাভুনা অসাধারণ টেস্টি কিন্তু সেটার গরুর না অন্য কিছুর বুঝে উঠতে পারি না । এতো সুস্বাদু আর এতো কম দাম বিশ্বাস হয় না । কিন্তু তাঁর স্বাদের কাছে আমি বন্দি । খাওয়ার সময় সন্দেহ মাথায় আসে না।

আজকে মোটা মামা কালা ভুনার সাথে এক চামচ করে জলপাই আচার দিচ্ছেন । অন্যদিন গেটিস একবার দেন আজকে দুবার দিলেন । কেন দিলেন বুঝলাম না । আমি বার বার উনার দিকে তাকাচ্ছি । কিন্তু প্রস্নটা করতে পারলাম না । উনি হয়তো আমার মনের জিজ্ঞাসাটা বুঝতে পারলেন ।

- মামা কাউওন হইলো আল্লাহর রহমত । সবাই কাইতাম ফারে না । আমার দোকানে আল্লাহর রহমতে ভালই কাস্টমার আইয়ে । কইতরের মতো কায় । আমার দেহামতে আফনেই মন ভইরা কান । তাই আফনের দুইবার দিছি । সবাইরে দেই না। দিলে আমার ব্যবসা থাকবো ? কি কন মামা ? আফনার স্বাস্থ্য ভালো মামা । বেশি কইরা কাইবাইন । আমার বাবায় একটা কথা কইতো । কম কাওউন নিজের সাথে কঞ্জুসি করা । নিজের সাথে কঞ্জুসি করলে সম্পদ কইমা যায়।

বুঝলাম না। প্রশংসা করলো না সমালোচনা করলো । মনে হয় চান্স পেয়ে উপদেশ দিলো । নিজের রেফারেন্স দিতে সাহস করে উঠতে পারে নাই। তাই তাঁর বাবার নামে রেফারেন্স দিলো । শিক্ষিত মানুশকে উপদেশ দিতে পেরে অল্প ও অশিক্ষিত মানুষরা আনন্দ পায় ও গর্ভ বোধ করে । আমি তাঁর চোখে সে আনন্দটা দেখলাম ।মুখে বললাম।

- পানি দেন।

লোকটাকে এখন আমার সহ্য হচ্ছে না । উঠে পড়তে ইচ্ছে করছে । কিন্তু বউ এখনো বাসা থেকে যায় নাই । আরো ২০ মিনিট বসতে হবে। কি করা যায় ? একটা সিগেরেট আর চা নিয়ে রাস্তার দিকে মুখ করে বসলাম । সামনে একটা বাড়ি । সে বাড়ির গেটে মুরুব্বী মতোন একটা লোক খুব আরাম করে দাত মাজতেছে । জীবনের কোন টেনশন তাঁর চেহারায় নাই । খুব আরাম প্রিয় শরীর । এই বাড়িটা একজন পীর শ্রেনীর মানুষের বাড়ি । সারাদিন এখানে মানুষ আসে যায় । এই মুরুব্বী তাদের ভেতরে ঢোকান এবং বের করে দেন । গেটটা সারাদিন ভেজানো থাকে । এর চেয়ে বেশি কিছু জানা বা দেখা সম্ভব না এখান থেকে । মুরুব্বীর পাশে ফুটপাতে আড়াআড়ি হয়ে একটা কুকুর আরাম করে ঘুমাচ্ছে । এই ফুটপাতের মালিক সে । তাঁর ঘুমানোর জন্য মানুষের চলাফেরার অসুবিধা হলে তাতে তাঁর কোন দায় নাই । রাস্তাটা খুব ব্যাস্ত । মানুষ গুলো দৌড়াতে দৌড়াতে হাপিয়ে উঠছে । প্রতিদিন দেখি এই চেনা মানুষগুলো । একই ভাবে দৌড়ে কোথায় যেন যায় । আবার সন্ধায় যখন চা খাইতে আসি তখন আবার ফিরে আসে । এখানে সবাই গতিশীল । গতিহীন শুধু আমি, মুরুব্বী আর এই কুকুরটা ।

প্রতিদিন আমি এখানে বসে আরেকটা কাজ করি তা হলো সকাল বেলার খবরের কাগজটা পড়ি । ভাজ না খোলা পত্রিকাটা হাতে নিলে মনে হয় প্রেস থেকে সরাসরি আমার হাতে এসে পরেছে । পাতা উল্টাতে মনের মধ্যে একটা সুখানুভূতি হয় তাই পড়ি । যদিও পড়ার মতো কিছুই থাকে না । খুন,খারাপি আর বিজ্ঞাপন । অন্যান্য খবর অনলাইন পড়া হয়ে যায় । তবুও প্রতিদিন ১০ টাকা নষ্ট করি । হার্ডকপি জিনিসটা জীবন থেকে উঠে গেছে । এই পত্রিকা আর টাকা ছাড়া এখন সব সফট কপি হয়ে গেছে ।

আজকের পত্রিকায় একটা খবর খুব মনে ধরলো । সফট কপি চোখে পড়েছিল গত কয়দিন আগে কিন্তু গুরুত্ত দিয়ে পড়ি নাই । এখন অলস বসে থাকার চাইতে এই খবরটা পড়া ভালো মনে হলো । তাই পড়লাম । খুব ভালো লাগলো খবরটা পড়ে । বাংলাদেশের একটা সামাজিক যোগাযোগের সাইট খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ইদানিং । অচিন পাখি ডট কম । বিশেষজ্ঞরা নাকি বলছেন এটা খুব তাড়াতাড়ি বিশ্বে প্রথম শ্রেনীর সামাজিক যোগাযোগের সাইট হয়ে যাবে । ইতোমধ্যে নাকি ইউজার সংখ্যায় বিশ্বে দশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে । শীর্ষে থাকা সামাজিক যোগাযোগ সাইট গুলো অচিন পাখিকে কিনে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে । রিপোর্টার নিশ্চিত বাড়িয়ে লিখছেন । তাও পড়লাম । সপ্নে ভাসতে কার না ভালো লাগে । আর এমনটা হলেই বা ক্ষতি কি ? আইটি সেক্টরে এমন একটা কিছু অর্জন এখন আমাদের প্রাপ্য । আর কতোদিন এই জাতি শুধু সামাজিক যোগাযোগের সাইটে নিজের ছবি আপলোড করে ধন্য হবে ? যাই নিজের মনের সাথে বাজে তর্ক না করে কাজ করি গে।বিল পরিশোধ করে উঠে পরলাম।

৫/১০/১৭

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুন, ২০১৭ রাত ১২:০৬

Al Rajbari বলেছেন: ভালই লাগলো-!!

০৪ ঠা জুন, ২০১৭ রাত ২:৩৪

ফয়সাল হাওড়ী বলেছেন: সাথে থাকুন। পরে আরো পর্ব আছে।

২| ১৪ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:৫২

মনিরা সুলতানা বলেছেন: মামা কাউওন হইলো আল্লাহর রহমত । সবাই কাইতাম ফারে না । আমার দোকানে আল্লাহর রহমতে ভালই কাস্টমার আইয়ে । কইতরের মতো কায় । আমার দেহামতে আফনেই মন ভইরা কান । তাই আফনের দুইবার দিছি । সবাইরে দেই না। দিলে আমার ব্যবসা থাকবো ? কি কন মামা ? আফনার স্বাস্থ্য ভালো মামা । বেশি কইরা কাইবাইন । আমার বাবায় একটা কথা কইতো । কম কাওউন নিজের সাথে কঞ্জুসি করা । নিজের সাথে কঞ্জুসি করলে সম্পদ কইমা যায়।

হাহাহা ; কঠিন উপদেশ । লেখায় ভালোলাগা !

১৪ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১:১৭

ফয়সাল হাওড়ী বলেছেন: আমার খুবই আনন্দ হচ্ছে এই ভেবে যে আমার লেখা কারো ভালো লাগে। হা হা হা হা ।

আমি জানতাম আমার লেখা বস্তা পচা। হা হা হা হা

৩| ১৪ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১:২৩

মনিরা সুলতানা বলেছেন: ব্লগে আসার আগে আমারা সবাই তাই ভাবি " নিজেদের লেখা কে বস্তা পচা " এখানে সব লেখার ই পাঠক আছে আপনি লিখেন ধীরে ধীরে পাঠক বাড়বে । অন্যদের লেখা পড়ুন তাতে ও আপনার নিজের লেখার মুল্যায়ন নিজে করতে পারবেন ।

আশা করছি আপনার ব্লগ জীবন আনন্দময় হবে !শুভ কামনা !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.