নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে জন্ম। কাঁচ-পাকা চুল, দাঁড়িসমেত ইঁচড়ে পাকা যুবক।পেশাদার ট্র্যাভেল ব্লগার।ঘুরে বেড়াই ও লিখি।শখের বশে সাহিত্য চর্চা করি।সদালাপী,অলস ও স্বপ্নবাজ। জীবনের উদ্যেশ্য খুজে পাই নি।মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত।যতক্ষণ শ্বাস চলে ততক্ষণ সুবাহানাল্লাহ

ফয়সাল হাওড়ী

স্বরূপ বিনির্মাণে মগ্ন ।

ফয়সাল হাওড়ী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভয়কে জয়ের গল্প এবং সাজেক অভিযান .....

১০ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১:০৪

প্রচন্ড জড়তায় ভুগতেছিলাম।ক্যম্পাস ছাড়ার পর থেকেই আমি কিছু নির্দিষ্ট মানুষের সাথে মিশে আসছিলাম তাই নতুন মানুষের সাথে সহজে মিশে যাওয়ার অভ্যাসটা একটু ভোতা হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে সাজেক যাওয়ার উত্তেজনা। সব মিলিয়ে শুরুতেই প্রচন্ড আগোছালো হয়ে গেলাম, ফেনী পার হয়েই আমার লজ্জা কেটে গেলো।


আমি আমার ছেলেকে নিয়ে ঈদের ছুটিতে রোলার কোস্টারে উঠছিলাম। পত্নী উঠেন নাই ভয়ে, কিন্তু আমি নিজের ভয় স্ত্রীর সামনে প্রকাশ করি কি করে। ছেলেকে সাথে নিয়ে ওঠে আমি কিন্তু ভীষণ ভয় পাইছিলাম, বোকা বনে যাওয়ার ভয়।যদি ছেলের কিছু হয় আমি তো বোকা বনে যাবো।আর ছেলে যেন বুঝলই না "ভয়টা কি "।


ফেনী পার হওয়ার পর আমার ভিতরে আবার বোকা বনে যাওয়ার ভয় ঢুকলো। খাগড়াছড়ির পাহাড়ী রাস্তা বাসের রোলার কোস্টার আচরন আমাকে ড্রাইভারে সমান্তরালে দাড়ায়ে দেখতে হবে। আমি ওখানে দাড়ায়ে দেখতে গেলে যদি কিছু হয় ? ধরলাম কোন দুর্ঘটনা হলো না,কিন্তু ব্যালেন্স হারিয়েও যদি একটু পরে যাই, তাও তো ...... বোকা বনে যাবো। আমাকে আবার কেমন যেন বোকা বনে যাওয়ার ভয় পেয়ে বসলো।


কিন্তু দুই পাশের পাহাড়, তুফান তরি গাড়ি আর নিজেদের কমিউনিটি। এই সুযোগ।আমাকে এই থ্রিলটা নিতেই হবে। এই বাসে আমরা ছাড়া আর কেউ নাই। সবাই ট্রাভেলার। নিজের কমিউনিটি। ততক্ষনে এর ওর সাথে একটু আধটু কথাও হয়ে গেছে।তাইলে যাওয়া যায়। আর আমি অনেক সেইফি ঐখানে দাড়ায়ে জিনিসটা ফিল করে ফিরে আসতে পারবো।


বাসের সামনে শক্ত করে ধরে আমি হারিয়ে গেলাম।একের পর এক আপ এন্ড ডাউন, চারপাশের বৃষ্টিস্নাত পাহাড় গুলো , উদীয়মান সূর্যের দিগন্তের সাথে লুকোচুরি খেলা এবং নিজের ফিরে পাওয়া কৈশোর আমাকে পাগল করে দিলো। মনের অজান্তেই আমি আমার হাঁসের সুরে গান গাইছি। ছি ছি এ আমি কি করছি। মানুষ শোনলে কি বলবে ? আমি আবার খোলেসে ফিরে আসলাম। বোকা বনে যাওয়ার ভয় আমাকে কৈশোর থেকে একলাফে বৃদ্ধ করে দিলো। নেয়ায়েত ভালো মানুষ সেজে আবার সিটে এসে বসলাম।


খাগড়াছড়ি নেমে এক বড় ভাইয়ের সাথে পরিচয় হলো।চিটাগাং বাড়ি এবং উনি আমার চেয়ে বেশি উত্তেজিত। আমি তো শুধু ঘরের খেয়ে বোনের মোষ তাড়াই উনি বিদেশের খেলে জঙ্গলের মোষ তাড়ান। সুইডেন প্রবাসী,সুডেনের নাগরিক , বাংলাদেশে দেড় বছরে ছুটি কাটাইতে আসা এই ভাই উত্তেজনার ঠেলায় দুইদিন আগেই খাগড়াছড়ি যেয়ে বসে আছেন।উনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতার সারমর্ম হইলো হাতের কাছে হয়না খবর কি দেখতে যাও দিল্লী লাহোর ? আগে আমরা এই যাযাবর গুষ্টি দেশের আনাচে কানাচে দেখবো তার পর দুনিয়া।

এবার আমাদের সাজেক যাওয়ার পালা। যেতে হবে যাযাবর এক্সপ্রেস চান্দের গাড়ি করে। টুরে যাওয়ার আগ থেকেই মাথায় চান্দের গাড়ি খেলা করছিলো।এবার সেই চান্দের গাড়িতে উঠার পালা। মনে মনে আমি হাজার বার শিয়র। আমার সীট লাগবে না, আমাকে শুধু ছাদে বসতে দিও।বয়সের সম্মান দিতে যেয়ে কেউ আবার ভালো একখানা সিট দেখাইয়া বসতে আনুরোধ কইরো না।

অবশেষে আমি চান্দের গাড়ির ছাদে।আমাকে এবার ভীষণ ভাবে বোকা বনে যাওয়ার ভয় পেয়ে বসলো।কি কি হতে পারে। দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, যে ভয়ংকর রাস্তা , হতেই পারে।দুর্ঘটনা হলে কেবল ছাদ থেকেই একটু বাচার চেষ্টা করা যাবে। ভেতরে থাকলে নিরব আত্মসমর্পণ।তাছাড়া অতিরিক্ত গাছের ডালা পালা ? সাবধান থাকতে হবে। আরেকটা হতে পারে একটু খুলে বলি।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাজেক পর্যন্ত গাইড দেয়। পথে দুই এক জায়গায় চেক পোস্টো আছে।দেশের সাধারণ জনগনের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এই টহল , স্কট দেওয়া। আসলে ঐ এলাকায় পরিবহনে ছাদের চড়া আর্মির চোখে বিশাল অপরাধ।না হয় উনাদের চোখ ফাঁকি দিয়েই চড়লাম।কিন্তু একটা আইন ভাঙবো , আমার দ্বারা আরেকজন দেশের ভাঙ্গার উৎসাহ পাবে। এতে এই বিরান পাহাড়ে আমাদের নিরাপত্তায় যারা কষ্ট করছেন উনাদের অসম্মান করা হবে। ধুর শালা আমারে ভয়ে পাইছে।আগে এই ভয় কাটাইতে হবে পরে অন্যকিছু।


সামনে এক বড়ভাই বসে আছেন।উনি এই টুরে বয়সে সবার সিনিয়র। আমি নিজেই সম্মান দেখায়ে ভেতরে খাঁচায় বন্দী করে দিছিলাম। উনি দেখি এখন আমার সামনে । যদিও উনি খুব কম সময়ই ছিলেন কিন্তু উনি এই মজাটা মিস করলেন না। পুরোটাই নিলেন। রসিক মানুষ। উনার সম্পর্কে অনেক আগে থেকেই শোনে আসছি।আমি যে বিদ্যার পাগল উনি সেই বিদ্যার দেশসেরা জ্ঞানী।তথ্য প্রযুক্তি খাতে উনার অবদান বাঙলা তথ্য প্রযুক্তি চর্চার ইতিহাস সোনার ফ্রেমে বেধে রাখবে।উনার সাথে আরেকটা মিল পেলাম।থ্রিল পাগল। উনি এই বয়সেও এই থ্রিলটা ছাড়লেন না। একটু লুকোচুরি করে থ্রিলটা নিয়ে নিলেন। আমি শালা কোন ছাড় !উনার হাটুর সমান বয়স। আমার এতো ভয় কিসের। নিজের মনকে খুলে দিলাম , সতর্ক হলাম এবং আইনকে সম্মান দেখালাম(চেক পোস্টের কাছাকাছি গিয়ে নিচে নেমে যেতাম।)


চান্দের গাড়ি চলছে।আনুমানিকে ৬০ ডিগ্রী এঙ্গেলে উঠে যাওয়া এবং নেমে আসা। ভয়নক সব বাক, ডানে খাদ বামে পাহাড়, সব ভয় মন থেকে উডে গেলো।চোখ পড়ল রাস্তার বাকে বাকে লুসাই উপজাতির ছোট ছোট বাচ্চাদের হাত নেড়ে স্বাগত জানানো। কেমন আছো , হায় বন্ধু এমন দুই একটি বাঙলা শব্দ ছুড়ে দেয় অনেকে। দূরে দূরে পাহাড় আর একটা দুটো বাড়ি, মেঘের সাথে পাহাড়ের খেলা। কখনো মেঘ পাহাড়ের গলা ধরে টানাটানি করে, আবার কখনো পাহাড় মেঘকে থামিয়ে দেয়। এই তুই আর এই দিকে যেতে পারবি না।তার মাঝে চান্দের গাড়ির থ্রিল মাথায় পোনা মাছের ঝাঁক ধরা দিলো-

চান্দের গাড়ি চান্দের গাড়ি
সাজেক টু খাগড়াছড়ি
রোলার কোস্টার,তুফান তরি
মেঘ পাহাড়ে লুকোচুরি
খোলস হটাও, মুক্ত মনের অভিসারী।


সাজেক নেমেই মাথা নষ্ট আমার। আমি কখন একা হবো। ফ্রেশ হয়েই বেড়িয়ে পরলাম। আমি যেদিকে রাস্তা গেছে সেদিকেই যাবো। মোবাইল নেটওয়ার্ক নাই।মোবাইল থেকে ছুটি। সাথে শুধু কয়টা খুচরো টাকা। আসার পথে কলা আর আনারস খেয়ে মনটা পাগল হয়ে আছ। এখানের সব কিছুর সাদ ভিন্ন এবং পিউর।এই লুসাই উপজাতি হয় ভেজাল বুঝে না অথবা ভেজাল বুঝলেও নিজের কথা ভেবেই কেউ করে না।সবাই ধনী এবং অধিকাংশ শিক্ষিত কিন্তু খুব সাধারণ জীবন যাপন করে। অতিথি পরায়ন এবং সদালাপী।


শধু কয়টা ভাংতি টাকা ছাড়া আমার মনের আরেকটা জিনিস খুব সাহস দিয়েছিল সেটা হলো আর্মি। চারদিকে আর্মির সদস্যারা নিজেদের কাজে ব্যস্ত এবং জায়গায় জায়গায় সব কিছু শৃঙ্খলার মধ্যে অনন্দ নেওয়ার সেরা সুযোগ করে দিছে। তাই বেড়িয়ে পড়লাম। অজানা অরন্য এবং আমি , মনের সাথে কতোপকথন এবং মেঘের সাথে দুষ্টামি। বল হারামি সারাজীবন মাথার উপর ছিলি। এখন কোথায় ? পায়ের নিচে। মেঘ মুচকি হেসে জবাব দেয়। দুদিন বাদে তোমার সাথে দেখা করতে আসবো , ততক্ষণ উপরেই থাকো।


“বাঁশ খেয়েছি“ এই গল্প যতটা পৈচাশিক আনন্দদায়ক বাঁশের সবজী ততটাই মজাদার।পাহাড়ী বিভিন্ন সবজী এবং ফল আমার ট্যুরটা অস্থির বানায়ে দিছে। এক থেকে দুই টাকা পিস কলা এমনি মিষ্টি যে আমাদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেলো কে কয়টা কলা খাইছে। আমি ছিলাম সকল স্বাদ নেওয়ার তালে। পাহাড়ী আম, বাংগি , আনারস , ডাব কিছুই বাদ যায় নি।দুঃখের বিষয় কমলা খাওয়া মিস হইছে।ঘুমায়ে গেছিলাম।


রাতে খাওয়া দাওয়ার পরে করিডোরে সেই সিনিয়র ভাই উনো খেলতে বসছেন। সাজেক ট্যুরে মজার মিনি ইভেন্ট ছিলো এই উনো খেলা। কার্ড দিয়ে খেলতে হয়, একই সাথে লুডু এবং তাসের মজা। চাইলেই পাশের জনকে ঘায়েল করা যায়। যখনি আমাদের একটু অপেক্ষা করতে হইছে তখনই উনো খেলা। উনো খেলতে খেলতে বরিশালের এক ভাইয়ের সাথে পরিচয় হলো। উনার একটা কথা বলেন আর আমরা সবাই হেসে লুটুপুটি খাই।

রাত চারটায় প্রতিবেশীদের ঘুমের কথা চিন্তা করে রুমে চলে আসলাম। ঘরের ভিতরে চাঁদ মামার আলোয় আলোকিত। জানলায় মেঘ, ঠাণ্ডা মৃদু বাতাস।অন্যরকম।রুমমেটরা গল্প করতে করতে উইকেট হারায়ে ফেলছে। ভোর পাচটায় যাবো কংলাক পাহাড়ে । আমি একাই জেগে আছি। আমি ঘুমিয়ে গেলে নিশ্চিত সবাই মিলে বোকা হবো।এবার বোকা বনে যাওয়ার ভয় আমাকে জাগিয়ে রাখলো।একসময় ঘুমিয়ে গেলাম। তবে ঘুম ভাঙ্গার আগে টিম গাইডকে জাগিয়ে তোলে ঘুমালাম।


সবার রেডি হওয়ার সময়টায় একটা পাওয়ার ন্যাপ নিয়েই কংলাক।মাঝারি উচ্চতার এই পাহাড়ের শেষ ৩০০-৪০০ ফিট ভয়ানক। এবার আর মনে বোকা বনে যাওয়ার ভয় ঢুকলো না। সবার আগে তড়তড়িয়ে চূড়ায়।প্রকৃতি ডাকে পাগল প্রায় আমি পাহাড়িদের স্যনিটেশন দেখে টাস্কি খেয়ে গেলাম।এই ব্যাপারে তাঁরা সমতলের চেয়ে অনেক সচেতন।


কংলাকের চুড়ায় মাচায় বসে নিচের মেঘ দেখার অভিজ্ঞতাটা শব্দের ও ছবিতে ফুটিয়ে তোলা খুব কঠিন । সে তুলনায় নিজের মনের তৃপ্তি মিটিয়ে দেখা অনেক সুখকর।

উপমায় নয় , ক্যামেরায় নয়
তোমায় আমি একে নিলাম মনে
তোমার গান গাইবো পাহাড়
যখন যাই যেখানে।


কংলাক থেকে ফিরে খাগরাছডি শহরে দুপুরের খাবার ও ঝুলন্ত ব্রিজ দেখে আমরা গেলাম ঝর্ণা দেখতে। আগের দিন সাজেক যাওয়ার পথে একটা ঝর্ণা আনন্দ দিয়েছিল কিন্ত তেমন থ্রিল দেয় নাই। এই তেরাং তৈঁকালই আমাকে ঝাঁকি দিয়ে ঘুম ভাঙ্গালো।
আমি উত্তেজিত হয়ে গেলাম।প্রায় পাঁচ তলা উচো স্লপ থেকে নিজেকে পানির সাথে ভাসিয়ে দেওয়া যায়। সেই স্লপি জোনের শুরুতে যেতে হবে আবার খুব সাবধানে। ফসকে গেলেই নিচে।আমার মনে শুধু বোকা বনে যাওয়ার ভয় না, জীবন মরণের সংশয় দেখা দিলো।আমি কিছুক্ষন বসে রইলাম। আসতে আসতে সাহস সঞ্চয় করলাম এবং বডিকে রেড এলারট দিয়ে বসে বসেই যাওয়া শুরু করলাম। এই তো ১৫ ২০ ফুট। তারপর ঝর্নার জলে আমি ভিজবো।জলে গা ভাসিয়ে সোজা ৫০/৬০ নিচে।

আমার পিছু পিছু দুই একজন আসছে। কিন্তু নিজেকে সামলাতে যেয়ে তাঁদের দিকে তাকানো হয় নি।আমি আমার টার্গেটে পৌছায়ে পিছনে তাকালাম। আমাদের কোন যাযাবর না, অন্য একটা গ্রুপ।তাঁদের মধ্যে এক জলপরী আমার নজর কেড়ে নিলো। এই দুরন্ত সাহসী অষ্টাদশী আমার পাশে এমনকি আমার পরপরি ঝাঁপ দেবে ঝর্নায়।তার অনুজ কিশোর তাঁকে ঝাঁপ না দেওয়ার মিনতি করছে।সেই নিয়ে এমন ভয়ংকর অবস্থানে ভাই বোনের দরকষাকষিটা আনন্দ দায়ক ছিল।


এরই মাঝে আমাদের দুই একজন যাযাবর চলে আসছেন।আমরা দলে ভারী হতে শুরু করলাম। ব্যাস আমাকে আর পায় কে? কিসের বোকা হওয়ার ভয়, আমার পিছনে ভাই বেরাদার আছে।দিলাম আল্লাহ্‌র নামে ঝাঁপ।আমি জলে ভাসা পাখি হয়ে ঝর্নার তলদেশে।উঠেই কাপড় চোপড় ও নিজের শরীর চেক করলাম। না কিছু হয় নি।আবার দিবো। ২য় বার খুব মজা নিয়েই কাজটা করলাম। ৩য় বার প্যান্ট ছিড়ে গেছে। ও বলে রাখি এই ঝর্নার সবার প্যান্ট ছিড়ে যায়। তাই সবাই ব্যাকআপ নিয়েই নামে।


ঝর্ণা থেকে খাড়া পাহাড় বেয়ে উপরে উঠে আসা ছিল কষ্ট দায়ক।কিন্তু বরিশালের সেই ভাই পুরো রাস্তা মজার মজার দুস্টামি করে করে কখন যে গাড়ির কাছে নিয়ে আসলেন বুঝলাম না।উনি একটা কষ্ট ভোলানোর ম্যাজিক।আমাদের তিরিশ জনের ভরপুর বিনোদনে মাতায়ে রাখছেন তিনি। গাড়িতে উঠার আগে সবাই যখন হিসাম নিকাশ করছি কার কি ক্ষতি হইছে তখন দেখি আমাদের অনেকের গায়ের বিভিন্ন জায়গায় লোম চলে গেছে। বিশেষ করে পায়ের নিচের দিকটা দেখতে গলা ছিলা মুরগীর মতো দেখাচ্ছে।খুব অবাক হলাম পাথরের ঘর্ষণে পায়ের এতোগুলো লোম একদম ক্লিন শেইভ!

আলুটিলা গুহা নিয়ে মনের মধ্যে একটু সংশয় ছিলো। এতো মজার হবে কি বিষয়টা ? বাংলাদেশে তেমন থ্রিলিং গুহা আছে কি ? এই করতে করতে উপজাতি এক গাইডের পিছনে আমরা আট দশজনের ছোট একটা বহর গুহায় ঢুকে গেলাম। হাতে মসাল। ভালোই লম্বা রাস্তা।নিচে হালকা পানির প্রবাহ, উপর থেকেও চিপ চিপে পানি পরে।অন্ধকারে শেওলামাখা পাথরে বিভিন্ন শারীরিক কসরত করে এগিয়ে যাওয়া। বিষয়টা অনেক অনেক মজার ছিলো।আশার চেয়ে অনেক বেশি পাওয়ার মজা ।

এই ট্যুরে কয়েকটা বিষয় খুব নজর কাড়া ছিল।পূর্ব পরিচিত এবং অপরিচিত বিচার না করে শিশু মনে সবার এক হয়ে মিশে যাওয়া।উনো খেলা এবং একজন আরেকজনকে ব্লক করে দেওয়ার পৈশাচিক আনন্দ।চান্দের গাড়িতে খালি গায়ে মেঘে ভিজে যাওয়া।আমাদের এই তিরিশ জনের টিমে কয়েক জোড়া কাপল ছিল। আমি খুব অবাক হইছি আমাদের মহিলা যাযাবরদের ফিটনেস দেখে। এই অভিযানে উনারা এতো টাফ জার্নিতে কেউ বমি করা বা অসুস্থ হওয়া তো দুরের কথা । উনারা কয়েক জায়গায় অনেক সাহসী ভুমিকাও পালন করছেন। এক ভাবীকে দেখলাম উল্টো ভাইকে সাহস দিয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে উৎসাহ দিচ্ছেন।

আলুটিলার উপরে সন্ধ্যা নামলো। সেই সাথে বিদায়ের সুর।যাযাবরের ঘরে ফেরার ঘন্টা।এই প্যারাডক্সও মেনে নিলাম। খুব ইচ্ছে হচ্ছিল এই অকারণ প্রতিযোগে , বেচে থাকার অশুভ লড়াইয়ে আর ফিরে না আসার।কিন্তু দিন শেষ সব পাখিকে ঘরে ফিরতে হয়।চান্দের গাড়ির ছাদে একা একা শুয়ে চাঁদের সাথে হোটেলে ফিরে আসা।সারা বছর দুঃখ কষ্ট শেয়ার করা আমার সেই চাঁদের সাথে অনেকদিন পর সুখ ভাগ করে নিলাম।

দেশ বিদেশের অভিযানে
ভয় জয়ের খেলা...।
পাহাড় সাগর নাদী হাওর
প্রকৃতির মায়ায় আমি যাযাবর ।
দিন শেষে ঘরের মায়ায়
ফিরে আসি তোমার শহরেই
তোমায় আমি গল্প শোনাই
জীবনের মুহূর্ত গুলো এখানেই ।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ২:২৩

মুচি বলেছেন: ভালো কাহিনী, কিন্তু সাজেকে ভয়ের 'ভ' ও নাই। :(

১০ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ২:৩১

ফয়সাল হাওড়ী বলেছেন: ভাই ভয় জিনিসটা আসলে আপেক্ষিক। আপনি অনেক সাহসী, তাই হয়তো সাজেকের উঁচু নিচু পাহাড়ী রাস্তায় চান্দের গাড়ির ছাদে চড়া আপনার কাছে ভয়ের মনে হয় নি।আবার আমার মতো হাইটফোবিয়া রুগীর জীবন বেড় হয়ে যাচ্ছিলো। লেখা পড়েন এবং মন্তব্য করে উৎসাহ দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

২| ১০ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:৫১

রাতু০১ বলেছেন: সুন্দর ও শুভকামনায়।

১০ ই জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৭

ফয়সাল হাওড়ী বলেছেন: উৎসাহ দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

৩| ১০ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:০২

ডার্ক ম্যান বলেছেন: সামনে যাব ভাবছি। যদিও পাহাড় ভীতির কারণে আজ পর্যন্ত কোন পাহাড়ে উঠা হয় নিয়ে

১০ ই জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৯

ফয়সাল হাওড়ী বলেছেন: ভয় কাজ করে না যাওয়া পর্যন্তই , সামনে গেলে সুন্দরের মায়ায় ভয় কেটে যায়। ঘুরে আসুন, আনন্দ ১০০% পাবেন।

৪| ১১ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:২৪

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন। শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ।

১২ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:১৭

ফয়সাল হাওড়ী বলেছেন: আপনাকে অভিনন্দন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.