নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক প্যাকেট ভালোবাসা

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৬

মেয়েটা কথা বলতে পারে না বটে, কিন্তু চারপাশের পরিবেশটা বেশ বুঝতে পারে। এই যেমন পাশের বাড়ির বাচ্চাটা মায়ের কোলে চড়ে ঘুরে বেড়ায়, মায়ের সাথে কথা বলে, মায়ের সাথে সাথে হাসে। এসব দেখে তার কেমন লাগে সেটা জানা যায় নি। কথা বলতে পারলে হয়তো জানা যেত। তার চোখের দৃষ্টিকে 'শূন্যদৃষ্টি' বলা যেতে পারে। অন্যের খেলনার দিকে শিশু যেমন আগ্রহের সাথে তাকায়, তার তাকানোটা সেরকম নয়। বরং যে খেলনা সে কোনোদিন পাবে না, সেটার দিকে তাকানোর সময় আগ্রহের বদলে যে শূন্যতা থাকে, ঠিক সেরকম।

শিশুটির এই শূন্যদৃষ্টির কারন- তার মা নেই।

রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকে মেয়েটা। বাইরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। শীতকালে অসময়ের বৃষ্টি। মেয়েটা হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বৃষ্টির ফোঁটা তার হাতে জমতে থাকে।

শওকত সাহেব ব্যাগ হাতে হনহন করে হাঁটছেন। এসময়ে বৃষ্টির জন্য আকাশ-বাতাস, রাস্তা-ঘাট কেউই প্রস্তুত ছিল না, শওকত সাহেবও না। অবশ্য প্রস্তুত হলেও লাভছিল না, কারন শওকত সাহেবের ছাতাটি গত বর্ষায় হারিয়ে গেছে। হয়তো অফিসের কোন সহৃদয়বান কলিগ নিজের ভেবে নিয়ে গেছেন। সেই ভদ্রলোক সহৃদয়বান বলেই ফেরত দেয়ার কথা ভাবেননি। শওকত সাহেবের হাতেগোনা বেতনে নতুন ছাতা আর কেনা হয়নি। এ বছর বর্ষার আগে কিনবেন ভেবেছিলেন, এই অসময়ের বৃষ্টি শওকত সাহেবের জন্য 'মড়ার উপর খাড়ার ঘা' বললে অত্যুক্তি হবে না।

গলির সামনের দোকানটায় এসে তার মনে পড়ল, বিরাট ভুল হয়ে গেছে। এই দোকানে জিনিসটা পাওয়া যাবে না। মাইলখানেক পেছনে গিয়ে বড় কনফেকশনারিতে গিয়ে আরও খানিকটা ভিজে গেলেন শওকত সাহেব। পকেটের দিকে তাকিয়ে পছন্দের জিনিসটা কিনতে পারলেন না, বদলে আরেকটা জিনিস নেয়া হল। তবু তো কেনা গেল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাড়ির পথ ধরলেন তিনি।

আধভেজা হয়ে বাড়ির সামনে আসতেই চেঁচিয়ে উঠলেন তিনি,'এই... এই... মেয়ে করে কি? ঠাণ্ডা লেগে যাবে তো!' দ্রুত ভেতরে ঢুকে মেয়েকে কোলে নিলেন, গামছা নিয়ে মেয়ের হাত-পা মুছতে লাগলেন তিনি।
মেয়েকে বললেন,'চোখ বন্ধ করো তো মা।'

মেয়েটা হেসে ছোট্ট দু'হাতে চোখ বন্ধ করল। শওকত সাহেব ব্যাগ থেকে প্যাকেটটা বের করে বললেন,'শুভ জন্মদিন মামণি!' মেয়েটা হয়তো কিছু বলতে চেয়েছিল। বোবা বলে সে আনন্দ গলার বদলে চোখে ফুটে উঠল। মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে শওকত সাহেব ভুলে গেলেন তার মাথাটা ভেজা ছিল, ভুলে গেলেন তিনি একটা অল্প বেতনের চাকরি করেন, ভুলে গেলেন তিনি মেয়ের জন্য কেক কেনার সামর্থ্যও রাখেন না।

মেয়েটা কিংবা শওকত সাহেব- কারোরই জানা ছিল না, আজ চকোলেট দিবস।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৩২

অচল জ্ঞানী বলেছেন: দারুন লেখনির জন্য, ধন্যবাদ

২| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:১৯

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন বলেছেন: পাঠকের মন্তব্য হচ্ছে নির্মল প্রেরণা। আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.