নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের গর্বের বিশ্ববিদ্যালয়

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৪৯

শ্রী হরিদাস ভট্টাচার্য
এমএ, বিএল, দর্শন-সাগর, পি আর এস

যা তা জিনিস না। 'পি আর এস' মানে 'প্রেমচাঁদ রায়চাদ স্কলার', তার সাথে আছে 'দর্শন-সাগর'। তাঁর নাম শুনলে পশ্চিমের স্কলাররাও চোখ বুজে বলতেন, 'হ্যারিড্যাশ সেইড ইট? দ্যান ইট ইজ এবসোলিউটইলি রাইট।'

স্যার পি জে হার্টগ দায়িত্ব পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার। একদিনে ছিলেন 'ইংলিশ জেন্টেলম্যান', অন্যদিকে কর্মী স্বভাবের মানুষ, ইম্পেরিয়াল এডুকেশন সার্ভিসের অধিকর্তা ছিলেন, মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করতে ভালবাসতেন। মিশনারির মমতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শিক্ষক খুঁজছিলেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সত্যেন বোসের মতো বিজ্ঞানী, হরিদাস ভট্টাচার্যের মতো দার্শনিকরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে এসেছিলেন। তাঁরা যেন বেকার বসে ছিলেন চাকরির জন্য- এমন নয়। তাঁদেরকে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে 'ভাগিয়ে আনা'র কাজটি করেছেন স্যার পি জে হার্টগ, অবশ্যই নিয়মকানুন মেনে এবং সবিনয়ে। হরিদাস ভট্টাচার্যকে চিঠিতে লিখেছিলেন-

'আপনি এলে খুশি হব। অধ্যাপকের পরিবর্তে রীডার পদে আপনার যোগদান অধিকতর শোভনীয়। বাৎসরিক ৯০০ টাকা বেতনে এবং বৎসরান্তে ৯০ টাকা বৃদ্ধিতে উক্ত পদে আপনার নিযুক্তি নিশ্চিত করতে অমুক তারিখের মধ্যে পত্রযোগে জানাবেন।'

হরিদাস ভট্টাচার্য ফিরতি চিঠিতে লিখলেন-
'রীডার পদে আপত্তি নেই, কিন্তু আমার বর্তমান প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে আপনি রাজি না করালে আমি যেতে পারব না। তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের প্রশ্নপত্র প্রণয়নের কাজটি ভালোবেসে আমায় করতে দিয়েছেন। এই আস্থার সামনে দাঁড়িয়ে পদত্যাগ করা আমার পক্ষে অসম্ভব।'

স্যার হার্টগ লিখলেন-
'সে ব্যাপারটি আমি দেখেছি। নিশ্চিন্ত থাকুন। আর কোন সমস্যা হলে জানাবেন।'

হরিদাস ভট্টাচার্য 'দার্শনিক-সুলভ' উদাসীনতার পরিবর্তে হাস্যরসে আসক্ত ছিলেন। তিনি লিখলেন-
'শুনেছি ঢাকায় পর্যাপ্ত মশা, এটা নিয়ে বিশেষ চিন্তাযুক্ত আছি।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হার্টগ সযত্নে উত্তর দিলেন-
'খোঁজ নিয়েছি। মশার ব্যাপারটা সত্য, বিশেষ করে রমনা এলাকায়। তবে মশাগুলো দুষ্টু হলেও অভদ্র নয়। কামড়ায় বটে, কিন্তু ম্যালেরিয়া হয় না। নির্ভয় থাকুন'

হরিদাস এলেন। আরও অনেক নামী-গুণী শিক্ষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসগুলোতে শিক্ষকের চারপাশে প্রাণোচ্ছল শিক্ষার্থীদের ভিড়। সে আমলের খালি গলায় সম্মানিত শিক্ষকদের বক্তৃতা শুনতে যে আগ্রহ দেখা যেত শিক্ষার্থীদের মাঝে, তাতে এটাকে 'জ্ঞানাশ্রম' বললে ভুল হত না। কলকাতা বোর্ডে ২য় স্থান অধিকারী ছাত্র সরদার ফজলুল করিম ইংরেজিতে ভর্তি হয়েছেন। ইংরেজির ক্লাসে বসেই তিনি খানিকটা শুনতে পেয়েছিলেন হরিদাস ভট্টাচার্যের গলা। বিষয় বদলে তিনি দর্শনে চলে এলেন। শিক্ষকের বক্তৃতাই ঘুরিয়ে দিয়েছিল পরবর্তীতে 'জাতীয় অধ্যাপক' হওয়া এই তরুণের মন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ঢাকা একটি আন্তর্জাতিক শহরে পরিণত হয়। বিদেশী যোদ্ধারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে তাঁবু গাড়ে। সকাল বিকেল আড্ডা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের সাথে, একত্রে তাস খেলে, চা-নাশতা খায়। চীনের সমাজতন্ত্র নিয়ে হয়তো গল্প হচ্ছে, এক সৈনিক বলে বসল,'কাল তো আমি চীন থেকে উড়ে এলাম!' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ডিবেট শুনে মুগ্ধ হতেন কোন কোন যোদ্ধা, যিনি নিজ দেশে শিক্ষক ছিলেন, বাধ্যতামূলকভাবে যুদ্ধে এসে পড়েছেন। তাঁদের অনেকের ভাষ্য, 'this university is the oxford of the east'

বায়ান্নো থেকে একাত্তরের ইতিহাসের আঁতুড়ঘর এই বিশ্ববিদ্যালয়। জিন্নাহ হাড়েহাড়ে টের পেয়েছিলেন, মাথা নিচু করে চলে যেতে হয়েছে এশিয়ার লৌহমানব আইয়ুব খানকেও। তবে স্বাধীন বাংলাদেশের শাসকেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সেভাবে দেখেননি। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ বিষয়টি সত্য নয়। আমরাও তা-ই বিশ্বাস করতে চাই, আমাদের এই অহংকারের প্রতিষ্ঠানটি হয়তো আরও বড় কিছু, মন্ত্রীমশাই হয়তো তা-ই বোঝাতে চেয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।

দেশের সবচেয়ে বড় ও পুরনো বিদ্যাপীঠটাকে 'গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়' বানাবার তেমন কোন আয়োজন নেই। শিক্ষকদের মধ্যে সত্যেন বোস- হরিদাস স্যারদের মতো শিক্ষক নেই, দুয়েকজন থাকলেও অজস্র ডিগ্রীধারী মেরুদণ্ডহীনদের মধ্যে তাঁরা অসহায়। ঢাবি'র বুক চিরে চলে যায় অদম্য ক্ষমতাধর মেট্রোরেল, তাতে কারো কারো হয়তো কষ্ট হয়, আমরা প্রকাশটা দেখতে পাই না। হ্যারল্ড লাস্কির গর্বের আবদুর রাজ্জাক স্যারের মতো স্কলার হয়তো আজও গড়ে ওঠেন, আমরা জানতে পারি না। হয়তো শেখ মুজিবের মতো কোন এক ছাত্র কর্মচারীদের সমস্যা-বৈষম্য নিরসনে বুকের ছাতি ফুলিয়ে এগিয়ে যান রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সামনে দিয়ে, কিন্তু প্রচলিত সুবিধাবাদের সমাজে কিছু করতে পারেন না।

হায় আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৫:৫১

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা দেখি আজকে এ যুগের স্যার পি জে হার্টগ সন্ধান পেয়েছেন। নতুন এই স্যার পি জে হার্টগ এর নাম এ কে এম নূর-উন-নবী, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। উনার একার প্রতিভা স্যার পি জে হার্টগ, শ্রী হরিদাস ভট্টাচার্য, ও সরদার ফজলুল করিম এর সম্মিলিত প্রতিভার চেয়েও বেশি।

যদি বেশি নাই হয় তবে কি করে একাই সামলাচ্ছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি পদের দায়িত্ব। উপাচার্য ছাড়াও তিনি রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, তিনটি অনুষদের ডিন, আটটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও কয়েকটি দপ্তরের পরিচালকসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে।

হার্ভার্ড ও অক্সফোর্ড এর মতো বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর বড়ই দুর্ভাগ্য যে এ কে এম নূর-উন-নবী মতো যোগ্য মানুষ খুঁজে পান নাই।

পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর দিয়ে মেট্রো-রেল এর ট্রাক করা নিয়ে আপনার একটা মন্তব্যের সাথে এক মত হতে পারলাম না।

আমি কানাডার যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতেছি সেটির ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির বিশ্ব র‌্যাংকিং ৩০ এর মধ্যে। এর কম্পিউটার সাইন্স বিভাগটির পৃথিবীর সেরা ৫ টি বিভাগের মধ্যে পড়ে। এই শহরের ট্রেন লাইনটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর দিয়েই গেছে। নির্দিষ্ট করে বলি ট্রেন লাইনটির দূরত্ব কম্পিউটার সাইন্স, ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ৩ টির প্রতিটি থেকে মাত্র ১৫ মিটার বা ৪৫ ফুট দূরে। আমাদের শহরেও দ্রুতগতির ট্রেনের লাইনের কাজ চলতেছে। নতুন লাইনটিও পূর্বের লাইনের পাশেই হচ্ছে।

ঐ ট্রেন লাইন নিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ছাত্র বা শিক্ষক কোন আন্দোলন করতেছে না; কিংবা ঐ লাইনের কারণে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণার কোন ক্ষতিও হচ্ছে না।

বিশ্বের প্রথম ২০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটির নিচ দিয়ে চলছে টরোন্টোর মেট্রো ট্রেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেও রয়েছে কয়েকটি স্টেশন।

টরোন্টোর মেট্রো ট্রেনের লাইনটি বর্ধনের কাজ চলতেছে। নতুন একটি স্টেশন স্থাপন করা হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এর মতো ইয়র্ক বিশ্ব বিদ্যালয়ের সবচেয়ে ব্যস্ততম স্থানে।

পৃথিবীর কোন মেট্রো ট্রেনই সাধারণ ট্রেনের মতো কু-ঝিক-ঝিক করে হুিসেল বাজিয়ে চলে না। মেট্রো ট্রেন লাইনে বাস, কার, রিক্সাও চলে না যে হাইড্রোলিক হর্ন বাজিয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে রাস্তা ফাঁকা করার জন্য।

আমি বুঝতে পারতেছি না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর দিয়ে মেট্রো-রেল এর ট্রাক করা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে কেন?


২| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৪৫

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন বলেছেন: মেট্রোরেল ঢাবি'র ভেতর দিয়ে গেলে এই স্থাপত্যগত নান্দনিকতা নষ্ট হয়। আমাদের ঢাকায় এরকম ঐতিহ্যবাহী জায়গা ক'টাই বা আছে! সংসদ কিংবা ঢাবি- এই জায়গাগুলোকে এড়িয়ে করা গেলে সমস্যাটা কোথায়!

কয়েকজন 'বোদ্ধা'কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তারা বললেন, ব্যক্তি-মালিকানার জায়গায় 'হাত দেয়া যাচ্ছে না', সে হিসেবে ঢাবি'র মধ্যে রুট দেয়া সহজ। সাধারন ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদ করলে তাঁদের সরকার-বিরোধী ট্যাগ দিয়ে দমন করা হচ্ছে ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে।

একটা 'ওপেন-ডিবেইট' করতে পারলে সবার ধারণা স্পষ্ট হত, যুক্তিযুক্ত কাজটি সর্বসম্মতভাবে করা সম্ভব হত।

কিন্তু দেশে কে শোনে কার কথা!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.