নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেবীদের চরণে

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৫

- প্রতিমা দেখতে এসেছেন বুঝি?

পড়াতে তার কখনোই বোধহয় ক্লান্তি লাগত না। সংসারের শত ব্যস্ততা সামলেও ঠিকই ছোট্ট ছেলেটাকে পড়াতে বসতেন। হাতে চকপেন্সিল ধরে শ্লেটে অক্ষর আঁকা শেখাতেন। সেই অক্ষর এক সময় রোগীর প্রেসক্রিপশনে শোভা পেল। জন্মদাত্রী প্রথম জ্ঞানের দেবী রইলেন আড়ালে।

আরেক দেবী ছিলেন তাসলিমা আপা। স্কুলের বাচ্চাদের বোধহয় প্রাইভেট পড়াতেন। আমি যেতাম উনাদের বাসায় বেড়াতে। তাদের বাসায় গল্পের বইটই, কার্টুন-কমিকস এইসব ছিল পর্যাপ্ত। আনন্দের সময় ছিল সেটা। জ্ঞানের সাথে আনন্দের মিশেলে কেটেছে শৈশবের দিনগুলি।

প্রাইমারীর শেষদিকে মমতাজ ম্যাডামকে পেলাম। স্কুলে শিক্ষক সংকট। মমতাজ ম্যাডাম একাই অংক করাচ্ছেন, আবার ইংরেজী ক্লাস নিচ্ছেন। ক্ষীণকায় মানুষ, অথচ কি কঠিন ব্যক্তিত্ব! প্রবল বন্যায় স্কুলের সামনে সাঁতার-পানি, ম্যাডাম নৌকায় চড়ে এলেন ক্লাস নিতে। আমার ক্ষমতা থাকলে ম্যাডামকে একটা রাজহাঁস-টাইপের নৌকা বানিয়ে দিতাম। কি সুন্দরই না মানাতো!

হাইস্কুলে জাহানারা ম্যাডামকে পেলাম। অসুস্থ শরীরে ক্লাস নিতেন। একদিন হুট করে মারা গেলেন। অল্প বয়সে শোক কাহাকে বলে- টের পেলাম। স্কুল নিথর, ক্লাস নীরব। দেবীর অকাল প্রস্থানে মন্দিরে শূন্যতা নেমে এলো।

নটরডেম ছেলেদের কলেজ, ইদানিং অবশ্য ফেসবুকে কিছু তরুণী দেখি যাদের প্রোফাইলে 'নটর ডেম কলেজ' দেখে মুগ্ধ হই। কলেজজীবনে পেয়েছিলাম মারলিন ক্লারা ম্যাডামকে, কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যে 'নাহিদ সুলতানা' এবং 'নাহিদা সুলতানা' - এই দুই ম্যাডাম ছিলেন কলেজের আলোচ্য বিষয়। কলেজের দেয়াল-টেয়ালে বিশদ মহাকাব্য লেখা আছে উনাদের নিয়ে। উন্মাদ ভক্ত দেবালোকের জন্য সবসময় শুভ নাও হতে পারে।

মেডিকেল কলেজের শীতার্ত পরিবেশে এক বছর কাটিয়ে বসন্তের দেখা পেলাম কানিজ ম্যাডামের ক্লাসে। আহা! 'আনন্দময়ীর আগমনে' এনাটমীর মতো নিষ্প্রাণ বিষয়ে যেন প্রাণ ফিরে এল। নতুন ম্যাডাম সারাদিন তার রুমে এনাটমী পড়েন, এটা দেখে সম্ভবত আমার মতো খারাপ ছাত্রদের মধ্যেও এনাটমীর প্রতি প্রীতি আগ্রহ জেগে উঠল। হাসিমুখে বারবার ফেল করা ছাত্রকে তিনি বোঝালেন, 'ভুল করাটা ভুল নয়, ভুল আঁকড়ে থাকাটাই বরং অন্যায়, শুধরে নেবার জন্য এক মুহূর্তও যেন দেরি না হয়'। ছাত্রটি খানিকটা শোধরালো বটে।
শেষ বর্ষে এসে রওশন ম্যাডাম এবং লাকী ম্যাডামকে পেলাম। গাইনীর দুই দিকপাল ফাইনাল প্রফের ভাইভা নিতে বসেছেন। রওশন ম্যাডামের কাছে পরীক্ষা দিলাম, সৌম্যদৃষ্টিতে নীরবে উত্তর শুনলেন। হ্যাঁ-না কিছুই বললেন না। শান্ত, ঠিক যেন শরতের আকাশ। ভাইভা মোটামুটি হল।

এবার লাকী ম্যাডামের বোর্ড। কঠিন এক্সামিনার হিসেবে ম্যাডামের খ্যাতি আছে। আমার আগে দুয়েকজন ললনাকে নাকের পানি চোখের পানি এক করে বেরোতে দেখলাম। সেই ললনাদের তুলনায় আমি তো মশামাছি পর্যায়ের! 'ফেল যখন অনিবার্য তখন উপভোগ করাই শ্রেয়' নীতিতে ভাইভা দিতে বসলাম। ম্যাডাম কি কি যেন প্রশ্ন করলেন। আমার মাথায় তখন আবার একটা উপন্যাসের কাহিনী ঘুরছে, কি বিপদ! মনোসংযোগ করে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছি। কিছু পারি, অধিকাংশই পারি না। একটা প্রশ্নের উত্তর মনে পড়ছিল না, অবশ্য কোনোদিন টপিকটা পড়েছি কিনা- সেটা নিয়েও সন্দেহ আছে। ম্যাডাম যেন আমার মাথার ভেতরে ঢুকে বলে বসলেন-'কোনোদিন না পড়লে মনে পড়বে কিভাবে?' তারপর আরেকটি প্রশ্ন করলেন। সেটাও কোনোদিন শুনিনি। ম্যাডাম আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে। তারপর খুব অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটল। যে উত্তর আমার জানা নেই, সেই উত্তর হঠাৎ মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেল। কিভাবে বললাম আমি জানি না। আজও ঘটনাটার কোন ব্যাখ্যা আমি খুঁজে পাই না।

ম্যাডাম তিরস্কার করলেন, 'গাধা, এটা বলতে এতক্ষণ লাগে! যাও!'

সে তিরস্কারের মধ্যে ভালোবাসা আছে, স্পষ্ট টের পেলাম। পরীক্ষার ফলের চেয়েও জ্ঞানের দেবীর এ ভালোবাসার প্রসাদ অনেক মিষ্টি।

হাতে প্রসাদ দিতে দিতে একজন জিজ্ঞেস করলেন
- প্রতিমা দেখতে এসেছেন বুঝি?

আমি হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লাম। আজ প্রতিমাই তো দেখতে এসেছি। প্রতিমা মূর্ত, দেবী বিমূর্ত। মঙ্গলদীপ জ্বেলে দেবীরা জীবনের আসেন, আরও নীরবে চলে যান একসময়।

দেবীদের সাথে আমার দেখা হয়েছে জীবনের পথে, একবার নয়, বহুবার।

অসুর হয়েও তাঁদের আশীর্বাদ পেয়েছি বলেই আজ দু'পা হাঁটতে শিখেছি।
এ যাত্রার ব্যর্থতাগুলো এই নগণ্য মানবের, সাফল্যটুকু তাঁদের পবিত্র চরণে সমর্পিত।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৫৬

মাহবুবুল আজাদ বলেছেন: ফাল্গুনের শুভেচ্ছা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.