নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রবেশ নিষেধ

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩৯

- অই মিয়া, আপনে লাইনের বাইরে থিকা ঢুকলেন ক্যান? পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠল।

আধঘন্টা ধরে শুভ্র লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝেমধ্যেই এদিক সেদিক থেকে লাইনে লোক ঢুকে যাচ্ছে। কেউ কেউ হয়তো প্রতিবাদ করছে, কিন্তু তাতে তেমন কাজ হচ্ছে না। লাইন ভাঙ্গার আনন্দে ঢুকে যাওয়া মুখগুলোতে তৃপ্তিসূচক হাসি দেখা যাচ্ছে।

শুভ্রদের লাইনের পাশে আরেকটি লাইন, সেটি অবশ্য রোগীদের। বাংলাদেশে যে এতো মানুষ অসুস্থ, সেটা শুভ্র ভারতীয় দূতাবাসের কাছে না এলে টের পেত না। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে সম্ভবত আজকাল গাঁজা-চরস চাষ হচ্ছে, নাহলে এতো মানুষ বিদেশ যায় কেন? ওর ইচ্ছে হল দুয়েকজনকে জিজ্ঞেস করে, ভাই এদেশের হাসপাতালে কোন চিকিৎসাটা হচ্ছে না যেটার জন্য ভারতে যেতে হবে? ভদ্রতার কারনে জিজ্ঞেস করা হল না। শুভ্র অফিসের জুনিয়র এক্সিকিউটিভ পদে আছে, বেতন কম হলেও চাকরি জিনিসটার সাথে ভদ্রতার একটা যোগসূত্র আছে।

-আমাদের ডাকতে আরও দেরি হবে নাকি? কাছে দাঁড়ানো আনসার সদস্যকে জিজ্ঞেস করল শুভ্র। আনসার বাহিনী মূলত ক্ষমতাহীন হলেও বিভিন্ন জায়গায় গরু পাহারা দেয়া, লাইন ঠিক রাখা- এসব কাজে আনসারদের ব্যাপক দক্ষতা দেখা যায়। বিদেশী দূতাবাসের সামনে দাঁড়ানোর কারনে আলোচ্য আনসারটির আচরণে এক ধরনের আভিজাত্য দেখা যাচ্ছে। সে এমন একটা ভাব করল, যেন কিছুই শুনতে পায়নি। শুভ্র গলা চড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,'কি রে ভাই, কানে সমস্যা নাকি? আরও দেরি হলে বলেন, কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকব?'

এবার উত্তর পাওয়া গেল, 'আরও দেরি হইব, ভিতরে স্যারেরা লানছ করতাছে।'

ভেতরে 'লানছ' চলছে, আর বাইরে দাঁড়িয়ে জনগণ লাঞ্ছিত হচ্ছে। শুভ্র লাইন ছেড়ে বেড়িয়ে এলো। কিছু খাওয়া দরকার।

গুলশান মেইন রোডে বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর একটা রেস্টুরেন্ট পাওয়া গেল। ভেতরে ঢুকে অনেকক্ষণ বসে থাকার পর শুভ্র আবিষ্কার করল, দূতাবাসের মতো এখানেও সে অবহেলিত। কেউ তার টেবিলে এগিয়ে আসছে না। ঘটনা কি?

আশেপাশে তাকিয়ে বোঝা গেল, এখানে 'সেলফ-সার্ভিস', খাবার নিজেকেই গিয়ে অর্ডার করতে হবে, নিয়ে আসতে হবে। শুভ্র কাউন্টারে এগিয়ে গেল। কাউন্টারে রাখা মেন্যুর দিকে তাকিয়ে শুভ্র মনে মনে হিসেব করল, পানি কিংবা কোল্ড ড্রিঙ্ক ছাড়া সবই তার আয়ত্তের বাইরে। সুন্দরী ওয়েটার হাসিমুখে জিজ্ঞেস করল,'মে আই হেল্প ইউ স্যার?'

শুভ্র বলতে চাইল, 'অবশ্যই হেল্প করতে পারেন। ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো সওয়াবের কাজ, আমাকে খাইয়ে দো'জাহানের অশেষ নেকী হাসিল করতে পারেন।' এখানেও ভদ্রতাজনিত কারনে কিছু বলা গেল না। মনে মনে 'ভদ্রতা' নামক বস্তুটিকে গালাগাল দিতে দিতে রেস্তোরাঁ থেকে বেড়িয়ে এলো সে।

হাঁটতে হাঁটতে আরেকটু সামনে একটা চায়ের দোকান পাওয়া গেল। সেখান থেকে কলা-রুটি কিনে খেতে লাগলো শুভ্র। দোকানের পাশে কয়েকটা বেঞ্চ পাতানো। দূরের বেঞ্চে একটা মোটাসোটা ছেলে বসে আছে, তার সামনে একটি ক্ষীণকায় মেয়ে দাঁড়িয়ে তাকে কি যেন বলছে। ছেলেটা চুপচাপ শুনছে। ছেলেটির নিরুত্তর দশা দেখে মেয়েটি রেগে যাচ্ছে। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। বিকেলের রোদ গাছের ফাঁক দিয়ে ওদের গায়ে ঢলে ঢলে পড়ছে। শহরের ব্যস্ত জীবন ওদের স্পর্শ করছে না। ওদের ভুবনটা যেন পৃথিবীর মধ্যেও আরেকটি পৃথিবী। শুভ্র সেই পৃথিবী দূর থেকে দেখতে পারে, কিন্তু সেখানে ওর প্রবেশাধিকার নেই।

যেমনটি নেই দূতাবাসের বাইরে অভুক্ত দাঁড়ানো মানুষের।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২১

দ্যা রয়েল বেঙ্গল টাইগার বলেছেন: গল্প? নাকি অভিজ্ঞতা?
ঠিক ধরতে পারছি না। তবে লেখাটা অনেক সুন্দর ঝরঝরে!
বিশেষ করে, আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারটা দারুন ভাল লেগেছে!

"অই মিয়া, আপনে লাইনের বাইরে থিকা ঢুকলেন ক্যান"
এইটা জোস হইছে..... =p~

অঃ টঃ- মে আই হেল্প ইউ স্যার! এর পরিবর্তে 'ক্যান আই হেল্প ইউ স্যার' দিলে শুনতে ভাল লাগে। তবে ঐটাও ঠিক আছে। এখন আপনার ইচ্ছা! ;)
ধন্যবাদ! ভাল থাকবেন!

২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৩৮

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন:

শুভ্র :)


সাবলীল লেখা। ভালো লেগেছে।

৩| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০১

খোরশেদ আলম সৈকত বলেছেন: ভাল লেগেছে। গোছানো লেখা।

৪| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:১৬

জনৈক অচম ভুত বলেছেন: ভেতরে 'লানছ' চলছে, আর বাইরে দাঁড়িয়ে জনগণ লাঞ্ছিত হচ্ছে। :(

এক পলকে পড়ে ফেলা গেল। লেখায় ভাললাগা। :)

৫| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৮

রানা আমান বলেছেন: ভালো লিখেছেন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.