নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অযাচিত আবেগ এবং আমাদের ক্রিকেট

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:৫০

আবেগ ভালো জিনিস। চোখে সহজেই পানি আনতে সাহায্য করে। মোশাররফ করিমের ভাষায় 'আবেগে কাইন্দালছি' কিংবা মুরাদ টাকলা জাতীয় ব্যক্তির লেখনীতে 'coce gol alo'। নানা বিষয়ে আমাদের আবেগ আকাশচুম্বী। যেমন ক্রিকেট। আরও দুয়েকটা উদাহরণ লিখতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু ভেবে দেখলাম, সেসব ইস্যুতেও জনমনে দ্বিধা থাকার সম্ভাবনা আছে। যে জাতি মুক্তিযুদ্ধের ইস্যুতে দোটানায় ভোগে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে কয়েক ভাগ হয়ে যায়, তারা যে ক্রিকেটের ইস্যুতে খানিকটা হলেও ঐক্যবদ্ধ- এও কম কিসে!

কাজেই ক্রিকেটকেন্দ্রিক আবেগকে সম্মান না করে উপায় নেই। তবে মনে রাখা আবশ্যক, আবেগের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে- এটা লাগামহীন, যুক্তিহীন, অকর্ষিত এবং স্থূল। বাংলাদেশ জিতলে যেসব সমর্থক খুশিতে লাফাতে থাকেন (আমি নিজেও), তাদের কেউ কেউ বাংলাদেশের পরাজয়ে গালির ফোয়ারা বইয়ে দেন (চেষ্টায় আছি, এখনও পারিনি)। সম্প্রতি আরেকটি ভয়াবহ বিষয় যুক্ত হয়েছে, সেটা হচ্ছে 'মাশরাফি বন্দনা'। নেতৃত্বের অগ্নিপরীক্ষায় সফল, হাঁটুর চোট নিয়েও লড়াই করা এ দেশপ্রেমিক ক্রিকেটার নিঃসন্দেহে সকলের ভালোবাসার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। সমস্যা হচ্ছে, অনেকেই ফেসবুকে আবেগবশত লিখছেন-'মাশরাফি হচ্ছে দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু', আরেকজনের লেখা চোখে পড়ল,'দেশে যাকে ইচ্ছে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা থাকলে মাশরাফিকেই ভোট দিতাম'।

এসব আবেগপ্রসূত বক্তব্য হাসিমুখে মেনে নেয়া যেত, কিন্তু বাংলাদেশ বলেই এসব কথা বিপজ্জনক।

২০০৬ সালে ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস যখন শান্তিতে নোবেল পেলেন, দেশের তৎকালীন শীর্ষ দলগুলোর প্রত্যেকটি তাকে 'দেশের গর্ব' অভিহিত করে সম্মাননা জানিয়েছিল। আজকের ১৮ বছরের তরুণ তখন ৮ বছরের শিশু, তার না জানাকে আমি অপরাধ বলব না। তবে আরেকটু বয়োজ্যেষ্ঠদের নিশ্চয়ই স্মরণে আছে, সেসময় দেশের কণ্টকাকীর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির উত্তরণে গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে একটি গ্রহণযোগ্য ধারার বিকাশ জনসাধারণের মধ্যে খুবই প্রত্যাশিত হয়ে পড়েছিল। এমনকি তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যেও চলমান অস্থিরতা নিরসনে এটা আশা যুগিয়েছিল। সেই সংকটমুহূর্তে সম্ভবত ইউনুস সাহেবের মস্তিষ্কবিকৃতি ঘটে এবং তিনি ভুলে যান, এদেশের রাজনীতিতে উনার কোন 'উত্তরাধিকার' নেই। তিনি পত্রিকায় একটি বিবৃতি দেন, আমি রাজনীতিতে আসার কথা ভাবছি('আসবই' এমনটিও বলেননি, স্রেফ সম্ভাবনার কথা বলেছেন)। সেইসাথে ইউনুস সাহেব জনগণের কাছে মতামত চেয়েছিলেন, তাঁর আসা উচিৎ হবে কিনা, কিংবা আসলে কিভাবে তিনি কাজ করবেন- এইসব।

জনগণের মতামত দরকার হয়নি।

যেসব রাজনৈতিক দল দুদিন আগেই তাকে মাথায় তুলে ধেই ধেই করে নৃত্যরত ছিল, তাদের মধ্যে ছি ছি পড়ে গেল। তারা ইউনুসবিরোধী প্রচারনায় সর্বস্ব নিয়োগ করলেন। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দেয়ালের কথা আমার এখনো মনে পড়ে, সেখানে একপাশে দুদিন আগের লেখা 'ইউনুস আমাদের দেশের গর্ব', আরেকপাশে মাত্র লেখা 'দেশের শত্রু সুদখোর ইউনুস নিপাত যাক'। এই দুদিনের মাঝে ইউনুস সাহেব নতুন করে সুদ খেয়েছেন কিনা, সেটা দেয়াললেখকেরা হয়তো ভালো জানবেন।
'দেশের গর্ব' দুদিনের মাথায় কিভাবে 'দেশের শত্রু' হয়ে যায়, সেটার একটি অসাধারণ দৃষ্টান্ত রেখে ইউনুস সাহেব রাজনীতিতে আসার আগেই ফেরত গেলেন। এই দৃষ্টান্ত আরও বহুদিন দেশের শিক্ষিত ও নন্দিত ব্যক্তিবর্গকে রাজনীতির মাঠ থেকে দূরে রাখবে, অবশ্যই প্রথাগত রাজনীতিকদের জন্য এটা একটা বিজয়।

যারা আবেগের বশে মাশরাফিকে নিয়ে দু'চার লাইন লিখছেন, তাদের অনুরোধ করব, মাশরাফিকে এখনই এসব ভাবতে যাবেন না, তাতে ও বেচারা বরঞ্চ ক্ষতির মুখেই পড়বে। এদেশের কোনো সেক্টরে মেধাবী ও যোগ্য লোকেরা একটানা কাজ করতে পারেনি, একমাত্র ক্রিকেট ছাড়া। থাকুক না এই জায়গাটা আলাদা। এই উদাহরণ দেশের সকল ক্ষেত্রে ছড়িয়ে দিতে গেলে ভয়াবহ সংকট দেখা দেবে, কারন সবখানেই কমবেশি অযোগ্যরা দাপটের সাথে রাজত্ব করছে। ক্লাসের ফার্স্ট বেঞ্চের ছেলেটি ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে তৃতীয় বেঞ্চের অনার্স পড়া (পরবর্তীতে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেয়া) ছেলেটির দ্বারা শাসিত হচ্ছে, সেই শাসক আবার চালিত হচ্ছে শেষ বেঞ্চের ছেলেটির হাতে(কারন সে রাজনীতি করে আরও দূর এগিয়েছে)। কাউকে অপমান করছি না, কিন্তু এ যে নিখাদ বাস্তবতা। এদেশের ক্রিকেট এভাবে চললে আজ দেশে 'ক্রিকেট লীগ' 'ক্রিকেট দল' -এসব যন্ত্রণায় জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যেত।

যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ ও প্রয়োগে ব্যর্থ এই দেশে মাশরাফিরা উজ্জ্বলতম ব্যতিক্রম।
তাদের ভালো থাকতে দিন।

আমাদের অযাচিত আবেগ যেন তাদের সুন্দর পথটিকে ভারাক্রান্ত করে না তোলে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:৫৪

বিজন রয় বলেছেন: হ্যাঁ, অযাচিত আবেগ কিছুটা আছে আমাদের। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, আমাদের ক্রিকেট উন্নতি হয়েছে। ছেলেরা আসলেই ভাল করছে।

লেখায় ++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.