নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবন্মৃত লেখক

০৫ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:০০

সাতসকালে পরিচিত এক লেখকের সাথে দেখা। ভদ্রলোকের হাতে ব্যাগ, পরনে জুতসই কেতাদুরস্ত পোশাক। অফিস-আদালতে যাবার যোগ্য সাজ। বছর তিনেক আগে পরিচয় হয়েছিল। বইমেলায় বইখাতা বের করেছেন, ব্লগও লিখতেন। সেসময় পাঞ্জাবী ফতুয়া গায়ে আগুনঝরা কথাবার্তা বলতেন। দেশ বদলে দিতে হবে, বুর্জোয়া উৎখাত করতে হবে, সাম্যের গান গাইতে এবং গাওয়াতে হবে। কেউ না গাইলে রাস্তায় চিৎ করে টুঁটি চেপে গান গাওয়ানো হবে, ইত্যাদি।

পুরনো সাজের সাথে নতুন সাজ মিলছে না। আমিও আর আমি নেই। অপরিকল্পিত বৃক্ষনিধনের ফলে সুন্দরবন আরও ছোট হচ্ছে। খুলনা থেকে ফেরার সময় আমার উর্বর গালে সেই সুন্দরবনের একাংশ সাথে নিয়ে এসেছি। নিধনহীন ও উৎপাতহীন পরিবেশে ক্ষুদে বনাঞ্চল ভালোই আছে। চেহারার এই নতুন ভূগোল নিয়ে যখন চেনাজানা কারো সামনে হাজির হই, পরিচিতজনও সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। কে এই জঙ্গী?

আজও এর ব্যতিক্রম হল না। লেখক সাহেব ইতস্তত করে বললেন ,'আপনারে তো ঠিক চিনতে পারলাম না।'
গাল থেকে দাঁড়িগোঁফ খুলে ফেলার ব্যবস্থা থাকলে আমি একটান দিয়ে খুলে ফেলে চিক্কুর দিতাম, 'অহন চিনছেন?' সঙ্গত কারনেই সেটা সম্ভব হল না। নাম বলতে না বলতেই জড়িয়ে ধরলেন। অতঃপর রাস্তার পাশে প্রকাশ্যে চা পান করার উদাত্ত আহ্বান, ভাষাবিদপুত্র অনন্য আজাদের প্রবচনগুচ্ছে আছে, 'প্রকাশ্যে চুম্বন খাও, চা খেও না'। সে প্রবচনকে কনিষ্ঠাঙ্গুলি দেখিয়ে আমাদের চা চক্র সম্পন্ন হল ।

লেখালেখি কেমন চলছে, জানতে চাইলে কিছুটা বিমর্ষ হয়ে যা বললেন-
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বছর দুয়েক শিল্পসাহিত্য নিয়ে কাটিয়েছেন। পরিবার ভেবেছিল, তিনি বোধহয় চাকরি-বাকরি পেয়ে যাবেন কারন দিনরাত বইখাতা নিয়ে থাকেন। 'এই বইখাতা যে সেই বইখাতা নহে' এটা বুঝতে তাদের দেরি হয়েছে। লেখক ভদ্রলোক আশায় ছিলেন, পিতৃদত্ত বাড়িতে বসবাস করে জীবন পার করে দেয়া যাবে। কিন্তু সেই পিতৃদেব হঠাৎ ভীষ্মদেব হয়ে উঠলেন। সাফ জানিয়ে দিলেন, 'আকাইম্মার ধাড়ি' লালনাপালনের কোন ইচ্ছে তার নেই। যদি অচিরেই চাকরি না জোটে, তবে বাড়ি ছাড়তে হবে। লেখালেখি শিকেয় তুলে মাসছয়েক লেগে রইলেন। সরকারি চাকুরির সোনার হরিণ হাতে এলো। চাকুরিযন্ত্রণায় তিনি এমনিতেই কাতর ছিলেন, তার উপর 'মড়ার উপর খাড়ার ঘা' স্টাইলে পারিবারিকভাবে বিয়ে ঠিক করা হল। বাপের ভয়ে চাকরিতে ঢুকেছিলেন, বউয়ের ভয়ে সুবোধ স্বামী সাজার চেষ্টা করলেন। টিএসসি কিংবা শাহবাগের আড্ডায় যাতায়াত কমে গেল। সমকালীন সাহিত্যের গুষ্ঠিউদ্ধারের মহৎ আলোচনা সভাগুলোতে হাজিরা কমতে লাগল। রাতে ল্যাপটপে দুয়েকটা লেখা লিখতে বসলে বউ ভিন্ন কিছু ভেবে বসে কিনা, এই ভয়ে অফিসের কম্পিউটারে অল্পবিস্তর লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এরই মধ্যে পুরনো একটি লেখা বইমেলার একটি গল্প সংকলনে ছাপা হয়। লেখার কাহিনী মোটামুটি এমন, অফিসের এক বস অধনস্ত এক মহিলা কলিগের শ্লীলতাহানি করে এবং পরবর্তীতে সেই মহিলার জীবনে কিভাবে দুর্যোগ নেমে আসে। শ্লীলতাহানির বর্ণনা বিশদ ও শৈল্পিকভাবে লেখার ফল হাতেনাতে পেয়েছেন তিনি। সেই বইটি কিভাবে কিভাবে যেন তার বাসায় চলে এসেছে। বউসহ বাড়ির অনেকের ধারনা, এটা তারই আত্মজীবনী। তিনিই বোধহয় সেই ধর্ষক, তা না হলে এতো বিস্তারিত বিবরণ তিনি কিভাবে লিখলেন? ভদ্রলোক হয়তো রাগে দুঃখে ক্ষোভে নিজের চুল ছিঁড়ে ফেলতেন, কিন্তু সেখানেও সংকট। সাহিত্যের সাথে গত দু'বছরে চুলগুলোও তাকে ছেড়ে গেছে।

বিদায়ের সময় মাথায় চুল গজানোর ওষুধপত্র জানতে চাইলেন। এমন বেদনাবিধুর কাহিনী শোনার পর সম্ভব হলে আমি নিজের গাল থেকে কিছু দাঁড়িই দান করে দিতাম। রক্ত কিংবা কিডনি দেয়ার মতো চুলদাঁড়ি দান করার ব্যবস্থা থাকলে ভালো হত।

কিন্তু হায়!
আমাদের সমকালীন বিজ্ঞানের সে ক্ষমতা নেই,
আমাদের পরিবারগুলোর নেই শিল্প লালনের ক্ষমতা।

সৃষ্টিতে অক্ষমতাই আজ সৃষ্টির মাঝে টিকে থাকার মোক্ষমতম শর্ত।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:০২

বিজন রয় বলেছেন: লেখকেরা কখনো মরে না।

সুন্দর লেখা।
++++

২| ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:০৫

আমিই মিসির আলী বলেছেন: আমাদের সমকালীন বিজ্ঞানের সে ক্ষমতা নেই,
আমাদের পরিবারগুলোর নেই শিল্প লালনের ক্ষমতা।
সৃষ্টিতে অক্ষমতাই আজ সৃষ্টির মাঝে টিকে থাকার মোক্ষমতম শর্ত।

জটিল কথা বলছেন ভাই।
ফ্যান হইয়া গেলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.