নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি ছাড়া \'সব ঝুট হ্যায়\'

০৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৫৫

গতকাল একটি বাম ছাত্র সংগঠনের সভাপতি ফেসবুক স্ট্যাটাসে দাবী করেন, একজন পাকিস্তানি সমর্থককে জোর করে জাতীয় পতাকা পড়িয়েছেন ক্ষমতাসীন সাংসদ, সেই সাথে কিছু ছবি শেয়ার করা হয়, যাতে একজন দাড়িওয়ালা বৃদ্ধকে বাংলাদেশের পতাকা গায়ে জড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তার চেহারায় স্বাভাবিকতা ছিল না, তিনি হাসছিলেন না কাঁদছিলেন- সেটাও ছবিতে স্পষ্ট নয়।


যদি সত্যিই 'জোর করে' কাজটি করা হয়ে থাকে, বিষয়টি লজ্জাজনক- এ প্রশ্নে নিশ্চয়ই কোন বিবেকবান মানুষ দ্বিমত পোষণ করবেন না। যদি তিনি স্বেচ্ছায় কাজটি করে থাকেন, তাহলে বরং সেই সাংসদের উচিৎ ছিল তাকে নিবৃত্ত করা, কারন জাতীয় পতাকা দিয়ে লুঙ্গি-পাঞ্জাবি-চাদর ইত্যাদি তৈরির কোন সুযোগ আইনত নেই।


সত্য কি- এটা জানার জন্য অনলাইন ও অফলাইনে অনুসন্ধান চালালাম। একাধিক গণমাধ্যমে এসেছে 'তাকে জোর করা হয়েছে', ততোধিক গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে 'তাকে জোর করা হয়নি'। সাংবাদিকতা এখন বৈশ্যবৃত্তির নামান্তর, সত্য প্রকাশের জন্য প্রয়োজনীয় শ্রম দেয়ার পরিবর্তে অর্থ উপার্জনের মোহ পেশাটির নৈতিক ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে। এককালের দোর্দণ্ডপ্রতাপ সাংবাদিক ও রাজনীতিক আবুল মনসুর আহমদের পুত্র ডেইলি স্টার সম্পাদক মহফুজ আনাম(মনসুর সাহেব এ নামেই ছেলেকে ডাকতেন) আজ এক কোর্ট থেকে আরেক কোর্টে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন 'ভুল স্বীকারের ভুলটি করার কারনে'। এদেশে ভুল স্বীকার করা ভুল, তবে যারা অজস্র গণমাধ্যমে অগণিত ভ্রান্ত তথ্য প্রতিনিয়ত বিভ্রান্তি ছড়িয়ে যাচ্ছে, একেক দলমতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিজের মনগড়া সংবাদ বানাচ্ছে, তাদের কোন সমস্যা হচ্ছে না। এটি 'প্যারাডক্স' এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ বটে।


যাই হোক না কেন, সত্য জানাটা জরুরী, নাহলে সবারই মিথ্যেবাদী হবার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। অনলাইন এবং প্রিন্ট মিডিয়ার কোন সংবাদের কতটুকু সত্য- তা বোঝার কোন উপায় নেই। সেটা আংশিক জেনে কিংবা না জেনে ঢাকার চারদেয়ালে বন্দী অনেকে, এমনকি ঢাকার বাইরে বসবাসরত একটি বড় অংশের মানুষ 'এ জন্যেই বামরা খারাপ', 'বাম মানেই বদের হাড্ডি' টাইপের স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। ধরে নিই, সেই ছাত্রনেতার তথ্যটি ভুল। সেজন্য তিনি প্রচলিত আইনে বিচারের আওতায় আসবেন, কোন আপত্তি নেই। কিন্তু উনার কর্মের দায়ে কি সব বামপন্থীই খারাপ হয়ে যাবেন? আসলে এই বামপন্থা কি- সেটা না জেনেই 'বাম মানেই খারাপ' এ ধরনের একটি মনোবৃত্তি আমাদের সমাজে চালু আছে।


ছাত্রাবস্থায় রাজনীতি নিয়ে পড়ার চেষ্টা করেছি, ইতিহাস জানার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সমাজতন্ত্র সম্পর্কে ভালো জানাশোনা ছিল না। আজ যখন সবাই মিলে বাম রাজনীতিকে গালাগাল করছে, তখন একটু পড়তে বসলাম। কারা এই বাম? যাদের বামহাত ডানহাতের চেয়ে বেশি শক্তিশালী, তারা? না। এরকম হাস্যকর কোন ব্যাখ্যা পাইনি। ইতিহাস অনুসারে, ডান এবং বামের ধারনাটি এসেছে ফরাসী বিপ্লবের সময়ে। তৎকালীন ফরাসী পার্লামেন্টে যারা সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের স্বপক্ষে কথা বলতেন, তারা বসতেন বামপাশে। যেসব জনপ্রতিনিধি জমিদারি-স্বার্থের পক্ষে ছিলেন, জনবিমুখ সেসব ধনীর অবস্থান ছিল ডানে। এই হচ্ছে ঐতিহাসিক ভিত্তি। যদি তাই হয়, তাহলে বাহাত্তরের সংবিধানের দুটো মূলনীতি 'গণতন্ত্র' ও 'সমাজতন্ত্র' জন্ম থেকেই বাংলাদেশকে খানিকটা বাম বানিয়ে রেখেছে। মুজিব সরকারের এই 'ভুল' পরবর্তীতে জিয়া এবং এরশাদ 'শুধরে' দেন। কাজেই বাম মানেই খারাপ- এটা হুট করে বলার জিনিস না। গত পাঁচ-দশ বছরের আলোকে নয়, বাংলাদেশ-ভারতের প্রেক্ষিতে নয়, রুশ-চীনের হিসেবে নয়- বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে নির্মোহ অধ্যয়ন সাপেক্ষে যদি কেউ মন্তব্য করেন, তাহলে সেটার একটা জ্ঞানতাত্ত্বিক ভিত্তি থাকে। আওয়ামী লীগ করলেই দুনিয়ার বাকিরা দুর্বৃত্ত, বিএনপি করলেই আওয়ামী লীগ খারাপ, ব্লগার মানেই নাস্তিক, মুক্তচিন্তা মানেই ইসলামবিরোধী- এসব স্থুল গৎবাঁধা ধারনা দেশের মুখস্থনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বের হওয়া 'মেধাবী' তরুণদের মধ্যে প্রকট হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর সৈনিকেরা আজ ভুলে যাচ্ছে, কূটনৈতিক কারনে একাত্তরের পর টিক্কা খান কিংবা ভুট্টোর সাথে শেখ মুজিব ওআইসি সম্মেলনে হাত মিলিয়েছেন, হাসিমুখে কথা বলেছেন। কারন এটাই ভদ্রতা, শিষ্টাচার। আমার আপনার চেয়ে বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেম নিশ্চয়ই কম ছিল না। জন্মশত্রুর সাথে যুদ্ধের ময়দানে যুদ্ধ হতে পারে, কিন্তু পথেঘাটে আমার ইতরসুলভ আচরণ যেন সেই শত্রুকে আমার জাতিসত্ত্বা নিয়ে কটাক্ষ করার সুযোগ না দেয়- সেদিকে সতর্ক থাকা জরুরী। যে পাকিস্তান একাত্তরে পেছন থেকে হামলা করেছে, তার সাথে আমাদের আদর্শিক যুদ্ধ শেষ হয়েছে কিনা, না হলে সেটা কবে হবে, এসবের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকা জরুরী। অতিরিক্ত সবই খারাপ, ভালোবাসাও, কারন সেটা একপর্যায়ে আত্মকেন্দ্রিক ভালোলাগায় পরিণত হয়, নিজের বোধবুদ্ধির বাইরে সত্য-মিথ্যার বিচারের অনুভূতিকে স্তব্ধ করে দেয়।

স্বাভাবিক চিন্তার ক্ষমতা দেশের জনতার মাঝে আশংকাজনকহারে কমছে। যে যে পক্ষেই মনস্তাত্ত্বিকভাবে বসবাস করেন, সেটাকেই একমাত্র সত্য ধরে অন্ধের জীবনযাপনের একটি প্রবণতা সমাজে বাড়ছে। আজকের এই পরিস্থিতিতে নিজের সুবিধাজনক তত্ত্বের অন্ধবিশ্বাসীর প্রিয়গান হতে পারে রবীন্দ্রনাথের 'তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা'।

যার যার ধ্রুবতারা ঠিক রেখে মানুষকে সম্মান করলে কি সমস্যা, সেটা আমি বুঝতে পারি না। একাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশে সকল দলমতের মানুষ পরিপূর্ণ স্বাধীনভাবে পারস্পরিক সৌহার্দের মধ্যে বেঁচে থাকবে- এই তো ছিল সবার প্রত্যাশিত। প্রাপ্তির প্রশ্নে সবার ঊর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থ, ত্যাগের প্রশ্নে সবার আগে আত্মত্যাগ, এরকম স্বর্ণালী সময় আমাদের এসেছিল। সংকটমুহূর্তে ব্যক্তি নিজের ধ্রুবতারাটাকে কিভাবে সামলাবে, তারও একটি পন্থা রয়েছে। গভীর সমুদ্রে ধ্রুবতারা এদিক-সেদিক হয়ে গেলে নাবিক যেভাবে কম্পাসের মাধ্যমে দিক নির্ধারণ করে, হৃদয়ের গহীনে থাকা সেই জৈবিক কম্পাসের নাম 'বিবেক'।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষায় বললে হয়তো অত্যুক্তি হবে না-
'বিবেক থাকে ভারতের বলিউডে। এই বঙ্গসমাজে আজ তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।'

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:০০

বিজন রয় বলেছেন: 'বিবেক থাকে ভারতের বলিউডে। এই বঙ্গসমাজে আজ তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।

দারুন!!
++++

২| ০৬ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৮

মহা সমন্বয় বলেছেন: স্বপ্নপূরণের ফাইনাল আজ :D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.