নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছুটি

০৯ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৩৯

চাকরির সতেরো বছর হয়ে গেল।

দীর্ঘ চাকরিজীবনে রেজাউল সাহেবের কখনো ছুটি নেয়ার দরকার হয়নি। অফিসের সেরা পারফর্মারের পুরষ্কার পেয়েছেন একাধিকবার। অনেকগুলো দুঃসাধ্য এসাইনমেন্ট সম্পন্ন করার দুর্লভ কৃতিত্বের পুরষ্কার পেয়েছেন হাতেনাতে। কোম্পানির ডিজিএম হয়েছেন, ঢাকায় ফ্ল্যাট হয়েছে, পূর্বাচলে তিন কাঠা প্লট, ব্যাংকে যথেষ্ট অর্থকড়ি। এসবের পেছনে রাহেলার অবদান কম না, ঘরকুনে ভালো ছাত্রটিকে কর্মক্ষেত্রের ব্যস্ততম মানুষে পরিণত করার নেপথ্য কারিগর সে-ই।

ফি বছর কোম্পানির খরচে বাইরে ঘুরতে যান রেজাউল সাহেব। বিজনেস ট্যুর, বছরে অন্তত তিন চারবার। ছেলেমেয়েদের নিয়ে যাবার ইচ্ছে আছে, কিন্তু সময় হয়ে উঠে নি। গত বছর বাড়ির কাজটা ধরেছেন, আরও বছরখানেক লাগবে। অফিসের ফাঁকে ফাঁকে সপ্তাহে দুয়েকদিন যেতে হয় সেখানে, নাহলে হরিলুট হয়ে যাবার সম্ভাবনা। কনস্ট্রাকশনের লোকেরা নিজের কাজ করার চেয়ে আজকাল দু'নম্বরির ধান্দায় বেশি থাকে।

সপ্তাহ শেষের ছুটির দিনটাতে কোন কাজ রাখেন না রেজাউল সাহেব। ঐদিনটা শুধু পরিবারের জন্য। রাহেলার এক সপ্তাহের জমানো বকুনি, মেয়েটার পরের সপ্তাহের আগাম আবদারগুলো, সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে আনা তাজা মাছের ঝোল, ছেলেটার স্কুলের খাতাপত্র উল্টানো- এসব করেই দিব্যি কেটে যায় শুক্রবারটা। কখনো সখনো ঢাকার কাছেপিঠে গাড়ি নিয়ে বের হওয়া, ড্রাইভার জালাল সপ্তাহে দুদিন ছুটি পায়, বিনিময়ে শুক্রবারটা ডিউটি দেয়। রেজাউল সাহেবের দিন ঐ শুক্রবার। আনন্দের, অবসরের, ঘোরাঘুরির। পুরো সপ্তাহের ক্লান্তির সুদাসলে উসুলের দিন।

'আসতে পারি?' জিএম সাহেব কখন দরজায় এসে দাঁড়িয়েছেন সেটা রেজাউল সাহেব টেরই পাননি।
'আসুন স্যার' বলে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন রেজাউল সাহেব। জিএম সাহেব নরম গলায় জিজ্ঞেস করলেন,'এখন কেমন আছেন?'
'জী স্যার, ভালো।'
'এতোবড় ঘটনার পরও অফিস করছেন, অবশ্য ব্যস্ত থাকাটা ভালো। তবু যদি মনে করেন, ছুটি নিতে পারেন। কিছুদিন ঘুরে আসুন কোথাও।'
'দেখি স্যার।' রেজাউল সাহেব আনমনে উত্তর দিলেন।

'স্যার কোনদিকে যামু?' নতুন ড্রাইভার ইততস্ত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করে। ছেলেটার বয়স কম, কণ্ঠে এখনো পরিপক্কতা আসে নি। এই ছেলেটার মতো বয়সেই তো রেজাউল সাহেব ঢাকায় এসেছিলেন। সদরঘাটে নেমে অবাক দুচোখে ঢাকা শহরকে দেখেছিলেন। সে চোখে বড় হওয়ার স্বপ্ন ছিল, জগতের সব সুখ জয় করার স্বপ্ন। ঢাকা আগের চেয়ে বড় হয়েছে, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বড় হয়েছে জীবনের সংগ্রাম। তবু রেজাউল সাহেব সুখী হয়েছিলেন। সুখটা যে একটা লম্বা ঘুমের মতো কোনদিক দিয়ে কেটে যায় টেরই পাওয়া যায় না। সুখের সময়টাতে ঘড়ির কাটা সম্ভবত দ্রুত চলে। খুব দ্রুত।

'তেজগাঁওয়ের দিকে যাও', ড্রাইভারকে নির্দেশ দিয়ে গাড়িতে শরীর এলিয়ে দেন রেজাউল সাহেব। ড্রাইভার সিডি ছেড়ে দেয়, অফিস থেকে তাকে বলে দেয়া হয়েছে, রেজাউল সাহেব আগের গাড়িতে করে ফেরার পথে রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনতে পছন্দ করেন। কলিম শরাফীর গান বাজতে লাগল-
'আছে দুঃখ... আছে মৃত্যু... বিরহ দহন লাগে...'

গাড়ি তেজগাঁও ক্রসিঙের কাছে আসার পর রেজাউল সাহেব ড্রাইভারকে ছেড়ে দিলেন। ধীর পায়ে হেঁটে হেঁটে রেললাইনের এসে দাঁড়ালেন। জিএম সাহেব ঠিকই বলেছেন, একটা ছুটি দরকার। লম্বা ছুটি। একা থাকার চেয়ে ছুটি নিয়ে চলে যাওয়াই ভালো।

দূর থেকে রেলের হুইসেল বাজে। রেজাউল সাহেব ঠিক সেখানটাতে দাঁড়ান, যেখানে রাহেলা ছেলেমেয়েদের নিয়ে গাড়িতে আটকে গিয়েছিল, ভয়ার্ত চিৎকারে নিষ্ফল দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল ঘাতক ট্রেনের দিকে। রেজাউল সাহেব ট্রেনের দিকে তাকান, তবে তার দৃষ্টিতে সেই ভয় নেই, আছে শূন্যতা। সব হারিয়ে বেঁচে থাকার অনাকাঙ্ক্ষিত শূন্যতা।

ট্রেনের হুইসেল বাজতে থাকে। সন্ধ্যের নিস্তব্ধ প্রহরে সেই গান বেজে যায় মলিন সুরে।
'আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু... নাহি ক্ষয়, নাহি শেষ... নাহি নাহি দৈন্যলেশ...'

হুইসেলের সাথে গানের সুর একাকার হয়ে আসে।
দূর থেকে কেউ কেউ দেখতে পায়, একটা লোক রেললাইনে দাঁড়িয়ে আছে, তাদের গলা অতদূর পৌছায় না।

ট্রেন এগিয়ে আসে।
ঠিক যেন সন্ধ্যার অন্ধকারের মতো।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৫

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।
তবে নামটা একটু খারাপ লাগল। ছুটি নামটা পড়েই কেন যেন মনে হচ্ছিল গল্পে একটা মৃত্যু আছে।
নামের ব্যাপারে একটু সতর্ক হবেন।

২| ১০ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:০৭

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: কিন্তু তিনি আত্মহত্যা করলেন কেন? ছুটির জন্য মৃত্যু????

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.