নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্বেষণ

১৩ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:১২

অরু ঘুমাচ্ছে। সারারাত ডিউটি করে এসে কখন শুয়ে পড়েছে, আমি টের পাইনি। আমি ঘুমিয়েছি শেষরাতে। নরম্যান ফ্রিডল্যান্ডের একটা উপন্যাস ধরেছিলাম, শুরু করার পর উপন্যাস আমাকে ধরে ফেলেছে, শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছাড়েনি। এক কিশোরীর কাহিনী। একদিন ঘুম থেকে জেগে সে দেখতে পায় পুরো বাড়ি খালি, কেউ নেই। বাড়ির বাইরে বের হয়ে মেয়েটা আবিষ্কার করে, তার বাড়ির চারপাশে বন, অথচ আগে এরকম কিছু ছিল না। মেয়েটা ভয় পেয়ে যায়। আকাশে মেঘ জমতে থাকে। মেয়েটা সিদ্ধান্ত নেয় তাকে পালাতে হবে, বনের বাইরে যেতে হবে। বনের শেষ কোথায় যে জানে না, তার বাড়ির সবাই কোথায় গেল তাও জানে না। শুধু সে জানে তাকে পালাতে হবে।

উপন্যাস শেষ করতে করতে রাত চারটা বেজে গেল।

অরুকে উপন্যাসের ঘটনাটা বলতে পারলে ভালো হত। ঘুম থেকে জাগিয়ে বলাটা ঠিক হবে না। থাক, বেচারি ঘুমাক। জানালা দিয়ে সকালের আলো এসে অরুর ঠোঁটে পড়ছে। অরু একটু নড়লেই কম্বিনেশনটা নষ্ট হয়ে যাবে। আমি ফটোগ্রাফার নই, ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুললে হাস্যকর ছবি ওঠে। সুশোভন থাকলে হয়তো অসাধারণ একটা ছবি তুলতে পারত, বেচারা পথেঘাটে ঘুরে ঘুরে কি অসাধারণ ছবিই না তোলে! ওর তোলা ছবি দেখে মানুষ একদফা অবাক হয়, দ্বিতীয় দফা অবাক হয় যখন শোনে ও ডাক্তার। ডাক্তারের হাতে থাকবে যন্ত্রপাতি, স্টেথোস্কোপ, অথচ ও গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে! একদিন ওর কাছে শুনতে হবে, সকালের রোদের কি আলাদা কোন ফটোগ্রাফিক গুরুত্ব আছে? তা না হলে অরুকে এতো সুন্দর লাগছে কেন? সূর্যালোক যেন গোপন দস্যুর মতো পা টিপে টিপে ঠোঁটের ঠিক উপরে এসে থেমে আছে, এক পা-ও এগুচ্ছে না। সময় এখানে থেমে গেলে কেমন হয়? বিজ্ঞান নিয়ে লাফালাফি করা তরুণ লেখকদের অনেকেই ধর্মদর্শন থেকে বিজ্ঞানকে আলাদা করে দিচ্ছে। অথচ বিজ্ঞান কোয়ান্টাম ফিজিক্সের হাত ধরে স্বীকার করছে, সময় ভ্রান্ত, এমনকি গ্রহ নক্ষত্র ব্রহ্মাণ্ড সবকিছুই বিভ্রম হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাহলে কি অরুর ঠোঁটে থেমে যাওয়া আলোকরশ্মিও বিভ্রম? এই সুন্দর সময়টাও একটা বিভ্রাটমাত্র? প্রাচীন শাস্ত্রগুলো বলছে, জ্ঞানের বাইরে সবই মায়া, বিভ্রান্তি। সত্যিই কি তাই?

আমি একজন সামান্য আইনের শিক্ষক। এসব তত্ত্বকথার বাইরে কিছুই আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে হয়তো সময়টাকে থামিয়ে দিয়ে রবীন্দ্রনাথ সাহেবকে একটা কাগজ দিয়ে বলতাম আমার হয়ে অরুকে নিয়ে কিছু লিখে দিন, গল্পকবিতা আমাকে দিয়ে হয় না। তিনি হয়তো লিখে ফেলতেন-

'চিরকাল এইসব রহস্য আছে নীরব
রুদ্ধ ওষ্ঠাধর
জন্মান্তের নবপ্রাতে সে হয়তো আপনাতে
পেয়েছে উত্তর'

ফোন বেজে উঠল। অরুর ঘুম ভাঙলো না, তবে সে একটু পাশ ফিরল। আলোটা আর ঠোঁটে নেই, এখন কানের পাশ দিয়ে গলার সীমানা ছুঁয়ে যাচ্ছে। দস্যুর লোভ আলোকেও মনে হয় গ্রাস করেছে, কী অবলীলায় অরুর সান্নিধ্য নিয়ে যাচ্ছে! সূর্যকে এই প্রথমবারের মতো আমার ঈর্ষা হল।

ফোন বেজেই যাচ্ছে। আমি রিসিভ করে বারান্দায় চলে এলাম।

'স্যার, একটা খবর আছে' অপর প্রান্ত থেকে কমল জানালো।
'খুব জরুরি কিছু?' আমি জানতে চাইলাম।
'কবীর সাহেবের নামে সম্ভবত ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছে' কমল ইতস্ততভাবে জানালো।
'আর কিছু?'
'না স্যার।'
আমি ফোন কেটে দিলাম।

কবীর সম্ভবত দুশ্চিতায় আছে। আমার মোবাইল বন্ধ পেয়ে কমলকে ফোন দিয়েছে, কমল রিং করেছে বাড়ির ল্যান্ডফোনে। এর মানে কবীরের কাছে বাড়ির নম্বরটা নেই। সবকিছুই সুতোয় গেঁথে আছে। তেমনি কবীরের জামিন বাতিলের অর্থ কবীরের কেসটাতে প্রতিপক্ষ শক্ত তদবির করেছে। টাকা কিংবা ক্ষমতা- সবই তদবিরের অংশ। কোনটা কাজে লেগেছে, সেটা বড় বিষয় না। আমি মোবাইল হাতে নিয়ে শফিককে ম্যাসেজ পাঠালাম, কবীর অন্তত আজ গ্রেফতার হবে না। খবরটা কবীরকে দিলে সে কিছুটা চিন্তামুক্ত হত, থাক, দরকার নেই। সে থাকুক দুশ্চিন্তায়। গ্রেফতার না হওয়ার তুলনায় এটুকু মূল্য খুব বেশি না।

অরুর জন্য ব্রেকফাস্ট বানালে কেমন হয়? আমি রান্নাঘরে ঢুকলাম। কাজের বুয়া সম্ভবত বাসন কোসন ধোয়ায় ব্যস্ত ছিল, আমাকে দেখে সে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। তার হাত থেকে প্লেট বেসিনে পড়ে গেল। আমি অভয়ের হাসি দিয়ে বললাম, 'কি রহিমার মা, ভয় পেয়েছো?'
'না আব্বাজি' বলতে গিয়েও গলা কাঁপল তার। রহিমার মা নামে তাকা ডাকা হয় বটে, কিন্তু তার রহিমা নামের মেয়েটিকে কেউ কখনো দেখেনি।

হতভম্ব রহিমার মাকে আরও হতভম্ব করে দিয়ে আমি ফ্রাইংপ্যান চুলোয় চড়িয়ে দিলাম। আটা পানি মিশিয়ে মাখলাম। সাথে সামান্য লবণ দিলে ভালো হত, ছেলেবেলায় মাকে দেখেছিলাম রুটি পরোটা বানানোর সময় সামান্য লবণ দিতে। লবণ কোথায় আছে খুঁজে পাচ্ছি না। রহিমার মাকে দিতে বলব সে উপায়ও নেই। যদি লবণের বাটি ফেলে দেয়? নিজেই রান্নাঘরে লবণ খুঁজতে লাগলাম।

কোনকিছু খুঁজে পাওয়ার মধ্যে আনন্দ আছে, সেই আনন্দের তাড়নায় মানুষ সারাজীবন ছুটে বেড়ায়। কেউ খোঁজে অর্থ, কেউ খ্যাতি, কেউ জীবনের অর্থ, কেউ গ্রেফতারি পরোয়ানা, কেউ জামিন। কেউ হয়তো লবণ।

জীবনের আরেক নাম কি তাহলে অন্বেষণ? এই অন্বেষণের শেষ কি মৃত্যুতে? নাকি সেও আরেক অন্বেষণ-যাত্রা? অদেখা অজানা ভুবনে তরী ভাসানো?

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:১৬

বিজন রয় বলেছেন: জীবনের আরেক নাম কি তাহলে অন্বেষণ? এই অন্বেষণের শেষ কি মৃত্যুতে?

অবশ্যই মৃত্যুতে।
++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.