নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জ্ঞান অজ্ঞান

১৪ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:০২

অমিত সম্ভবত অজ্ঞান হয়ে গেল।

'সম্ভবত' বলার কারন, স্বাভাবিকভাবে অজ্ঞান বলতে যা বোঝায় অমিতের সেরকম হয়নি। রুমে বসে মোবাইল ঘাঁটছিল সে, কি যেন দেখে 'হোয়াদ্দা পাক' বলে ধপাস করে শুয়ে পড়ল, চোখমুখ উলটে একাকার অবস্থা। রুমে আনিস পড়াশোনা করছিল, সে সবাইকে ডেকে নিয়ে এলো। তারপর মেস থেকে সরাসরি হাসপাতালে।

ডাক্তার ওকে পরীক্ষা করছেন, আনিস বাদে আমরা সবাই রুমের বাইরে বেরিয়ে এলাম। শফিক জানতে চাইল, 'মাম্মা, কাহিনী কি?' শফিকের সাথে মেসের সবার মামা-ভাগ্নে সম্পর্ক। সম্পূর্ণ অকারনে যে যাকে মামা ডাকার কাজে সিদ্ধহস্ত।

আমি তেমন কিছু জানতাম না। তবে আনোয়ারের সাথে অমিতের খাতির ভালো। সে গলা নামিয়ে বলা শুরু করল-

অমিতের সাথে এক মেয়ের দীর্ঘদিনের প্রেম। দুজন দুজনকে ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না। সব ভালোই চলছিল, ক'দিন আগে এক ম্যাজিস্ট্রেট মেয়েটির বাসায় প্রস্তাব পাঠায়। তারপর থেকে মেয়েটি অমিতের সাথে ঠিকঠাক কথা বলে না। ফেসবুক থেকে অমিতকে ব্লক মেরে দেয়, অমিত তাতেও দমে যায়নি। ভুয়া আইডি খুলে মেয়ের একাউন্টে নজরদারি করে যাচ্ছিল। কিন্তু অমিত অকস্মাৎ এমন হয়ে গেল কেন, সেটা আনোয়ারও জানে না।

'কিন্তু অমিত হাঁপাচ্ছিল কেন? অজ্ঞান হয়ে কি হাঁপানো যায়?' শফিক জানতে চায়।

আমাদের কাছে এর কোন উত্তর ছিল না। আনিস ডাক্তারবাবুর সাথে বেরিয়ে এসে জানায়, অমিতের তেমন কিছু হয়নি। প্রবল মানসিক চাপের জন্য এমন হয়েছে, ডাক্তার সাহেব 'ফাংশনাল ডিজঅর্ডার' না কি যেন বললেন।

আমরা ভেতরে ঢুকলাম। অমিত আধমরার মতো শুয়ে আছে, এখনো হাঁপাচ্ছে। মোবাইলে কি এমন দেখে ওর এমন হল- জানতে চাইলে ক্ষীণ স্বরে অমিত উত্তর দিলো, 'সবশেষ রে.. ওর বিয়ে হয়ে গেছে..'

আমরা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। নীরবতা ভেঙ্গে শফিক সাগ্রহে বলল,'সবই বুঝলাম, কিন্তু 'হোয়াদ্দা পাক' কথার শানে নুজুল কি?'

উত্তরে অমিত যা বলল, তা মুদ্রণযোগ্য না, শফিককে কিছু একটা করার আগ্রহ প্রকাশ টাইপের। কথা শেষ করার আগেই শুরু হল অমিতের খিঁচুনি। আমরা দ্রুত ডাক্তার ডাকতে গেলাম। এর মধ্যে শিফট বদল হয়েছে, বিকেলের ডিউটিতে এক রূপবতী ডাক্তার এসেছেন। তিনি অমিতকে দেখে বললেন, 'বেশি বেশি শ্বাস নেয়ার কারনে উনার এই খিঁচুনি।' আনিস জানতে চাইল' 'এর চিকিৎসা কি?'

উত্তরে ডাক্তার বললেন,'একটা বদ্ধ পলিথিনের ব্যাগ উনার মুখে চেপে ধরে রাখুন, কার্বন ডাই অক্সাইড শ্বাসপ্রশ্বাসের সাথে বেশি গেলে রক্তে ক্যালসিয়ামের লেভেল স্বাভাবিক হয়ে আসবে, আর খিঁচুনি হবে না।' বলেই তিনি পাশের রুমে অন্য রোগী দেখতে গেলেন।

এই রূপবতী চিকিৎসক রসিকতা করলেন কিনা ঠিক বোঝা গেল না। শফিক দৌড়ে গেল ব্যাগের খোঁজে। অমিত বিড়বিড় করে বলল, 'শালার শান্তিতে মরারও সুযোগ নাই.. হোয়াদ্দা..'

বাক্যটি শেষ করতে পারল না অমিত। ডাক্তার রুমে ঢুকছেন দেখে সে থেমে গেল।

রূপবতীদের সামনে ওসব বলা যায় না।
আধমরা কিংবা ফুল মরা হলেও না।

ব্যাচেলর অমিত এটুকু ভালো করেই জানে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.