নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানববিদ্যার তাত্ত্বিক অথবা মানবিক আচরণের মানুষ

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:০৯

'দেখি দেখি ব্লাউজ খোলো'... বলতে বলতে একজন সিনিয়র চিকিৎসক রোগীকে নিরীক্ষা করলেন। যথাবিহিত গোপনীয়তা, একজন মহিলা এটেন্ডেন্টের উপস্থিতি- এসব তিনি জরুরী ভাবলেন না। পনের-বিশজন মেডিকেল স্টুডেন্টের সামনে একজন রোগীকে এভাবে নিরীক্ষা করা একপ্রকার সম্ভ্রমহানি, এটা হয়তো সেই চিকিৎসকের মনে হয়নি। এই দৃশ্য মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় আমার নিজের চোখে দেখা। অথচ সেই শিক্ষক পরীক্ষা নেয়ার সময় বইয়ের ভাষায় 'proper privacy must be maintained' না শুনলে ফেল করিয়ে দেন। মলিন হেসে বলতে হয়, 'বিজ্ঞানের ছাত্র বা শিক্ষক হওয়া আর বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ হওয়া এক নয়।'

চিকিৎসা বিষয়ক বইপত্রে কোনো রোগের সচিত্র বর্ণনা দেয়ার সময় রোগীর অনুমতিক্রমে রোগাক্রান্ত দেহাংশের ছবি ছাপানো যেতে পারে, তবে চোখ-মুখের অংশবিশেষ ফটোশপের মাধ্যমে ঢেকে দেয়া হয়, যাতে রোগীর সম্মান ক্ষুণ্ণ না হয়। রোগ জানার উৎসাহে রোগীর মনুষ্য পরিচয়টিকে অবমাননা না করা- শুধু চিকিৎসক হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবেও এটা নৈতিক দায়িত্ব।

বাংলাদেশে কিছুদিন আগে বিরল একটি জিনঘটিত ব্যাধি ধরা পড়ে, বাংলায় নাম দেয়া হয় 'বৃক্ষমানব'। তার হাত-পায়ের লক্ষণগুলোর ছবি তুললেই হত, সেটা না করে তার এবং তার বউয়ের ছবি তুলে ফেসবুকে দেয়া হল। কাজটি কোন নির্বোধ অশিক্ষিত মানুষ করেনি, উচ্চতর ডিগ্রিসম্বলিত চিকিৎসক বন্ধুরাই করেছেন। তাদের দেখাদেখি আমজনতা ও সাংবাদিকেরাও সেসব ছবি ব্যবহার করেছে।
নিতান্ত দরিদ্র, বৈষয়িক-বুদ্ধিহীন এবং বাংলাদেশের নাগরিক হবার কারনে সেই বৃক্ষমানব জানতেন না, আধুনিক বিশ্বে এই কারনে তিনি মামলা করলে মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ পেতেন। বাংলাদেশে যেহেতু প্রাণনাশেরই বিচার নেই, সেখানে সম্মানহানির কিসের বিচার? রাজবংশের জাতক/জাতিকা হলে ভিন্ন বিষয়।

সম্প্রতি আরেকটি মেয়ের ছবি নিয়ে ফেসবুকে মাতামাতি শুরু হয়েছে। মেয়েটার সারা গায়ে লোমের আধিক্য, রোগের নাম Ambras Syndrome, লোমের কারনে বাংলা নাম দেয়া হয়েছে 'গরিলা-মানব'। নানা 'এঙ্গেল' থেকে তার ছবি তুলে উন্মুক্ত ফোরামে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করছেন চিকিৎসক বন্ধুরা, মেয়ের নাম বাবার নাম সব ফেসবুকে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। মেয়েটাকে সাহায্য করতে চাইলে শুধু ব্যাংক একাউন্ট/বিকাশ নম্বর দিলেই চলতো, নানা 'এঙ্গেল' থেকে মেয়েটার ছবি তুলে যিনি/যারা পোস্ট করলেন, তাদের কি রোগীকে সম্মান করার নূন্যতম ভদ্রতাটুকু কেউ শেখায়নি? একটা ধর্ষণের ঘটনা বর্ণনার সময় পত্রিকার সাংবাদিকও সেই ধর্ষিতার নাম উল্লেখ করে না, এটা পেশাগত দায়বোধ, মানব সভ্যতার প্রতি সম্মান দেখানো।

জ্ঞানে বুদ্ধিতে নিজেদেরকে সমাজের 'ব্রাহ্মণ' ভেবে আসা আমার সহকর্মী চিকিৎসকদের জ্ঞান দেয়ার যোগ্যতা আমার নেই। শুধু সবিনয়ে বলে যাই-

'সম্মান দিতে না জানো হে মানব,
লজ্জা দেয়ার অধিকার কি তুমি রাখো?'

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:১৭

রোদ বৃষ্টি কাব্য বলেছেন: ধন্যবাদ বিষয়টি লিখার জন্য।

২| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:২০

জাহিদ বেস্ট বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার লেখা পড়ে। এভাবেই চলছে দেশ। আমরা অনেকেই এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করি মনে মনে।

৩| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:০৯

জনৈক অচম ভুত বলেছেন: 'সম্মান দিতে না জানো হে মানব,
লজ্জা দেয়ার অধিকার কি তুমি রাখো?' :|

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.