নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শান্তি ও ধ্বংস

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৮

ছোটবেলায় আমি ব্যাপক ধর্মপরায়ণ মানুষ ছিলাম। সকালবেলায় মক্তবে যাওয়া হত, হুজুর সুর করে কোরান পড়তেন, বাকিরা কায়দা-আমপারা পড়তো। আমাদের মূল আগ্রহ পড়াশোনায় না, মসজিদের খুব কাছেই একটা পুকুর আছে, সেই পুকুরপাড়ে তালগাছ আছে। রাতে তাল পড়লে সেটা ভোরে কে কার আগে কুড়িয়ে নেবে- এরকম একটা প্রতিযোগিতা চলতো। যে তাল পেতো, সে হাসিমুখে 'বা যবর বে, তা যবর তে' সুর করে পড়তো। বাকিদের মুখ থাকতো অন্ধকার, আরবী ভাষার কাঠিন্য অবশ্যই এর কারন নয়।

সেসময় বন্ধুদের মুখে শুনতাম, বিধর্মীদের বাড়ীতে খেলে ইবাদত কবুল হবে না, পূজার খাবার খাওয়া যাবে না, ওরা খাবারের সাথে গোবর মিশায় ইত্যাদি। বুদ্ধিদাতাদের জিজ্ঞেস করতাম, এসব খাবার তো ওরা নিজেরাও খায়, তাহলে গোবর মেশাবে কেন?
উত্তর পাওয়া যেত না।

নিষিদ্ধ বস্তুমাত্রই আকর্ষণীয়। আমি সাগ্রহে বন্ধুতালিকা প্রসারিত করলাম, বিনিময়ে অকৃত্রিম কিছু বন্ধু পেলাম। সনাতন বন্ধুদের বাসায় নাড়ু-সন্দেশ থেকে শুরু করে লুচি-সবজির সে স্বাদ পেয়েছি, বড়ুয়া বন্ধুটির সাথে ঘুরে যে শান্তির যে আত্মপ্রসাদ পেয়েছি, রোজারিওদের বাড়ীতে কমিক-কার্টুন নিয়ে যে অবর্ণনীয় আনন্দ করেছি- পরিণত বয়সে সেসব ভেবে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।

যতদিন গিয়েছে, তত স্পষ্ট হয়েছে- পৃথিবীতে ধর্ম আসলে দুইটা, হিংসা ও প্রেম। বোধিবৃক্ষের নিচে বসে বুদ্ধ যে প্রেমের কথা বলেছিলেন, হেরা গুহায় রাসূল মুহাম্মাদ (সা.) এর ব্যতিক্রম কিছু বলেছিলেন? মানবপ্রেমের জয়গান ছাড়া আর কি বলে গেছেন তাঁরা? হৃদয় মন্দিরের পবিত্র বেদীতে তাঁরা উপলব্ধি করেছিলেন শাশ্বত সত্য। নজরুল অত্যুক্তি করেননি-
এই হৃদয়ের ধ্যানগুহা মাঝে বসিয়া শাক্যমুনি
ত্যজিল রাজ্য মানবের মহাবেদনার ডাক শুনি'।
এই কন্দরে আরবদুলাল শুনিতেন আহ্বান,
এইখানে বসি' গাহিলেন তিনি কোরানের সাম-গান!
মিথ্যা শুনিনি ভাই,
এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির-কাবা নাই।

হৃদয়ের ভেতরে সত্যকে ধারন ও লালনের অভ্যেস আমাদের স্বাভাবিক সামাজিক জীবনে গড়ে ওঠে না। স্কুলকলেজে পড়ার সময় একত্রে খেতে বসে সনাতন বন্ধুকে 'গো-মাংস না খাওয়া' নিয়ে হাস্যরসের খোরাক হতে দেখেছি। পরবর্তীতে নটর ডেমের অধ্যাপক বিদ্যুৎ কুমার ভদ্র স্যারের মুখে শুনেছি,'গো-মাংস খাওয়াতে কোন সমস্যা নেই, কিন্তু আমার বাবা-মা যা খায়নি তা খেতে যে আমার ইচ্ছে হয় না!' এই কথায় যদি কেউ কুসংস্কার দেখতে পায় তাহলে তাকে ফিরে যেতে হবে আওলিয়া বায়জীদ বোস্তামীর কাছে, তিনি মরুদেশের মানুষ হয়েও কোনোদিন সুমিষ্ট তরমুজ খাননি। যে খাবার তাঁর রাসূল খেয়েছেন বলে কোন প্রমাণ নেই, কাউকে খেতে নিষেধ করেননি বটে কিন্তু বায়জীদ বোস্তামি নিজে কখনো সেটা খাননি। এটা প্রত্যাখ্যান নয়, প্রেমে বিনয়ে স্বেচ্ছায় ত্যাগ করা।

যে প্রেম ত্যাগ করতে শেখায় না, শুধু হরণ করতে শেখায়-
সেটা প্রেম নয়, স্রেফ লালসা।

গত সপ্তাহে অনেকগুলো হত্যাকাণ্ড হয়েছে, চাপাতির কোপ থেকে শুরু করে স্কুলে বোমা হামলা- কোনটিই ঈশ্বরপ্রেমের ফসল নয়, হিংসাধর্মের অনলে জ্বলে যাওয়া সভ্যতার ক্ষত। আমাদের অন্তরে যতদিন এই অনল থাকবে, ততদিন সমাজ-রাষ্ট্র-সভ্যতা এভাবে জ্বলতেই থাকবে।

সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৪০

সোজোন বাদিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ, আপনার লেখাটির জন্য। আপনার চিন্তধারার প্রতি শ্রদ্ধা রইল। ভাল থাকুন।

২| ০১ লা মে, ২০১৬ দুপুর ১:৫৪

আজমান আন্দালিব বলেছেন: সুন্দর লেখা। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.