নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মে দিবস ও আমাদের ভণ্ডামির আনন্দ

০১ লা মে, ২০১৬ সকাল ১০:৫৬

গত বছরের শেষভাগের কথা। নতুন বেতন স্কেলের বৈষম্য নিয়ে সরকারী চাকুরেরা তৎপর, তাদের আন্দোলন চলছে। আমি যদিও সরকারী চাকুরে নই, হবার সম্ভাবনাও দেখিনে, তবুও একজন পেশাজীবী হিসেবে সেই আন্দোলনে গেলাম। সরকারের ঘোষিত 'অন্যায়ের' বিচারের ভার সরকারের কর্তাব্যক্তির হাতেই সবিনয়ে তুলে দেয়া হল, পূর্বনির্ধারিত কিছু সিদ্ধান্ত ফটোকপি করে সবার হাতে ধরিয়ে দেয়া হল। সবাই সেলফি তুলতে ব্যস্ত, নেতাদের কথায়ও 'সেলফি'র প্রতিফলন দেখা গেল। এই নতুন বেতন কাঠামো কিভাবে আরও 'সুবিধাজনক' করা যায় এই নিয়ে চেঁচামেচি। সবার জন্য সমান সুবিধা ও মর্যাদা নিয়ে আলোচনা কম হল। আমার চিকিৎসক বন্ধুরা হাসপাতালের নিচের স্তরের কর্মীদের মানবেতর জীবন নিয়ে কিছু বললেন না, কৃষিবিদ বন্ধুরা বললেন না আমলাতন্ত্রের পাশাপাশি দালালতন্ত্র কিভাবে কৃষকের মুখের হাসি কেড়ে নিচ্ছে, কৃষক ন্যায্য মজুরি পাচ্ছে না। নতুন বেতন স্কেল শুধু সরকারী চাকুরেদের, অথচ অর্থনৈতিক কাঠামোর সবখানে এর যে প্রভাব পড়বে সেটা সবাইকে বইতে হবে। সকল পেশার, তা সে সরকারী হোক আর বেসরকারী, একটা ষ্ট্যাণ্ডার্ড মজুরি কাঠামো থাকা আবশ্যক। সচিব সাহেবের বেতন লাখ টাকা, ভালো কথা, কিন্তু বাজারে চালের দাম নিশ্চয়ই সচিবের জন্য বেশি নয়। মৌলিক চাহিদার বিষয়গুলোতে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের জন্য সমান বরাদ্দ দিলে কি খুব সমস্যা হত?

আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখলাম, সবাই যেন প্রবৃদ্ধিতে নিজের ভাগ বুঝে পেলেই খুশি, আর কিছু দেখার সময় নেই। বড়দের কেউ বললেন না, ছোটরা ভালো নেই। সরকারের মন্ত্রী বললেন না, চাকুরেরা ভালো নেই। চাকুরেরা বললেন না, চাকুরীবিহীন মজুরেরা ভালো নেই। মজুরেরা বলতে পারে না, ওদের মাইক-মঞ্চ নেই। লিখতে পারে না, অধিকাংশই নিরক্ষর। কিন্তু ওরাও বোঝে, দেশের প্রবৃদ্ধির রেখাটা ওদের ঘামের ফসল, আমাদের মতো শিক্ষিতজনের বুদ্ধি দিয়ে কারখানার মেশিন চলে না, জমিতে ফসল ফলে না- এসবের কৃতিত্ব শ্রমিক ভাইদের।

আমাদের প্লেটের ভাত যে কৃষক ফলিয়েছিলেন, তিনি তিনবেলা খাচ্ছেন কিনা আমরা জানি না। যে মজুর মাথায় করে ওষুধের বড় বস্তা গুদামে এনেছে, সে সুস্থ আছে তো? যে পরিবহন শ্রমিক আমায় বাড়ীতে নিয়ে যাচ্ছে, সে নিজের বাড়ীতে যাবার 'ক্যাজুয়াল লীভ' পায়? অসুস্থ হলে 'সিক লিভ'? ছাপাখানায় যে শ্রমিকটি ঘাম ঝরিয়ে বই বাঁধাই করছে, সে নিজে পড়তে জানে তো? তার সন্তান? নাকি সেও বাবার মতো আধুনিক সভ্যতার দাসে পরিণত হবার পথে দাঁড়িয়ে আছে? আমার সচিব সাহেবের ছেলে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ছে, অথচ শ্রমিক-মজুরের সন্তান বাংলাও শিখতে পারছে না। এটা স্কুলের অভাবের জন্য নয়, অর্থনৈতিক অসামঞ্জস্যের ফসলমাত্র।

আমরা শিক্ষিতরা হচ্ছি ভন্ডের দল। নিজেদের সুবিধা লুট করে বঞ্চিত করছি দুর্বলকে। আমাদের শক্তিশালী হাতিয়ার শিক্ষা। ওদের পবিত্র হাতিয়ার শ্রম। বছরের ৩৬৪ দিন ওরা নিষ্পেষিত হয়, আজকের একটা দিন ওদের কথা স্মরণ করে প্রকারান্তরে আমরা রসিকতা করি। ওদেরও ছুটি দিই, নিজেরাও ছুটি কাটাই।

দিনটা আনন্দের বটে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.