নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুভ জন্মবার্ষিকী হে প্রেমের কবি!

২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ৩:২২

সংস্কৃত নীতিশাস্ত্রে বলা হয়েছে, সংসারবিষবৃক্ষের দুটো সুমিষ্ট ফল-
কাব্যপাঠ ও সজ্জনের সঙ্গলাভ।

গভীর রাতে সজ্জনের সঙ্গলাভ অসম্ভব। চেনাজানা সজ্জনদের দরজায় এখন কড়া নাড়লে চোর ভেবে আগে পিটিয়ে নেবেন, তারপর চেহারা দেখবেন। তাদের বাড়ীতে যাবার পথেও আরেকশ্রেণীর সজ্জনের হাতে 'আপ্যায়িত' হবার সম্ভাবনা আছে। ঢাকা সম্ভাবনার শহর, বাংলাদেশ সম্ভাবনার দেশ, এখানে কোন সম্ভাবনাই উড়িয়ে দিতে নেই।

সুতরাং কাব্যপাঠ চালিয়ে যাই। রবি থেকে নজরুল। ক'দিন আগে নজরুল নিয়ে লিখবার ফরমায়েশ পেয়েছি, কিন্তু সে সাধ্য আমার কোথায়? যিনি লিখে গেছেন প্রবল শক্তিতে-

'মিথ্যা শুনিনি ভাই,
এ হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোন মন্দির কাবা নাই।'

কিতাবখোর ধর্মশাস্ত্রবিদের হুমকির সামনে দাঁড়িয়ে স্বল্পজ্ঞানের বাঙালীর পক্ষে এমন চিন্তা ভীতিকর হতে পারে, সেকথা ভেবেই বোধহয় নজরুল ফের লিখলেন-

'শিহরি উঠো না, শাস্ত্রবিদেরে ক'রো না ক' বীর, ভয়,
তাহারা খোদার খোদ 'প্রাইভেট সেক্রেটারী ত নয়!'

'OMG' কিংবা 'পিকে' সিনেমার মূল বার্তা বহু আগেই নজরুল দিয়ে গেছেন। ধর্মজীবীদের দৌরাত্মের বিরুদ্ধে এমন স্পষ্টভাষণ সে যুগে অচিন্তনীয় ছিল। সব ধর্মের সারকথা যে মানবতা, সেটাকে সম্মান করার সৌজন্যতাও তিনি দেখিয়েছেন, ধর্মগুরুদের অনুভব করেছেন রক্তপ্রবাহে-

'আদম দাউদ ঈসা মুসা ইব্রাহীম মুহাম্মদ
কৃষ্ণ বুদ্ধ নানক কবীর- বিশ্বের সম্পদ,
আমাদেরি এরা পিতা পিতামহ, এই আমাদের মাঝে
তাঁদেরই রক্ত কম-বেশি ক'রে প্রতি ধমনীতে রাজে।'

আজকের পৃথিবীতে গরীবের হক মেরে যারা ধনী হয়েছে, তাদের ধর্মকর্ম করার উৎসাহ অন্যদের চেয়ে বেশি। এদের হয়তো মনে পড়ে না, প্রায় সব ধর্ম প্রচারকই দরিদ্রবেশে জীবন কাটিয়েছেন। এই দারিদ্র্যকে ধনীরা বরণ করেনি, বরং মৃত্যুর পর স্বর্গের লোভে এদের ধার্মিকতার জন্ম। গরীব এদের চোখে উপেক্ষিত, কিন্তু নজরুলের চোখে-

'চাষা বলে করো ঘৃণা!
দেখো চাষা-রূপে লুকায়ে জনক বলরাম এলো কি না!
যত নবী ছিল মেষের রাখাল, তারাও ধরিল হাল,
তারাই আনিল অমর বাণী, যা আছে রবে চিরকাল।'

ফতোয়াবাজেরা সেই অমর বাণীর অপব্যাবহারে দক্ষ, কে পাপী, কে চাপাতির যোগ্য- এসব নির্ধারণ করার লোকের অভাব নেই। স্বয়ং ঈশ্বর ছাড়া কে এর বিচারের ক্ষমতা রাখে? এদের সাবধান করে নজরুল বলেন-

'এ দুনিয়া পাপশালা,
ধর্ম-গাধার পৃষ্ঠে এখানে শূন্য পুণ্য-ছালা
হেথা সবে সম পাপী,
আপন পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপি!'

একই কথা রাজনীতিকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এক সরকার নিজ কুকর্ম ঢাকতে গিয়ে আগের সরকারের অপকর্মের দোহাই দেয়। 'নিজের পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপা'র কী সুন্দর দৃষ্টান্ত! শুধু কী রাজনীতিক? তাদের দোসর আমলাশ্রেণীর লুটপাটে ও দাম্ভিকতায় রাষ্ট্রযন্ত্র বিকল হবার পথে, ব্রিটিশ আমল থেকে যাদের সেভাবেই গড়ে তোলা হয়েছে। শতবর্ষ আগে সেই আমলাতন্ত্র নিয়ে নজরুল যা লিখে গেছেন তা অষ্টম পে-স্কেল ঘোষিত হবার পর অন্যান্য ক্যাডারের সদস্যরা নিশ্চয়ই টের পেয়েছেন-

'মোদেরই বেতন-ভোগী চাকরেরে সালাম করিব মোরা,
ওরে, 'পাবলিক সার্ভেন্ট'দেরে আয় দেখে যাবি তোরা!
কালের চরকা ঘোর,
দেড়শত কোটি মানুষের ঘাড়ে চড়ে দেড়শত চোর।'

সামাজিক অসঙ্গতির বিরুদ্ধে সোচ্চার নজরুলের আসল শক্তিটি হচ্ছে মানবতার আরাধনায়। সমাজের উঁচু স্তরের সাহিত্যবিশারদেরা যা নিয়ে ভাবেননি, রুটির দোকানে আধপেটা নজরুল সেই অবহেলিত অচ্ছুতদের কখনো ভোলেননি। বঞ্চিতের কথা বারবার তার লেখায় ফিরে আসে। একবার এক চিকিৎসক বন্ধু এক পিতৃপরিচয়হীন শিশুর গল্প বলেছিলেন, শিশুটিও যেন অপরাধীর সাজা পেয়ে বড় হতে থাকে। জন্মদাতা ও দাত্রীর দায় কেন অবলা শিশুর? ভেবে পাইনি। নিষ্ঠুর এ সমাজের প্রতি নজরুল লিখে গিয়েছেন-

'মুনি হল শুনি সত্যকাম সে জারজ জবালা-শিশু,
বিস্ময়কর জন্ম যাঁহার- মহাপ্রেমিক সে যীশু!
কেহ নহে হেথা পাপ-পঙ্কিল, কেহ সে ঘৃণ্য নহে,
ফুটিছে অযুত বিমল কমল কামনা- কালিয়-দহে।
শোনো মানুষের বাণী,
জনমের পর মানব জাতির থাকে না ক' কোন গ্লানি!'

মানুষকে যিনি এভাবে ভালোবেসে জীবনটা কাটিয়ে গিয়েছেন, সেই নজরুলের কাব্যপাঠে রাত কেটে যাবে, বেলা অনুদয়ের মিষ্টি প্রহরে জীবনকে আরও শুদ্ধ করবার প্রেরনা মিলবে, ভালোবাসোতে ইচ্ছে হবে সকল প্রাণকে, বজ্রমুঠিতে আঘাত হানতে ইচ্ছে হবে নির্দয় সমাজের ইস্পাত-কঠিন বক্ষে। কবিতা নিয়ে দু'কলম হয়তো লেখা চলে, কিন্তু নজরুলকে আঁকবার মতো স্পর্ধা আমার নেই। নিজের অক্ষমতা বরণ করে নিই হাসিমুখে, এও যে নজরুলের শিক্ষা! ইত্তেহাদ পত্রিকার অফিসে বসে প্রিয় এক সহকর্মীকে বলেছিলেন, স্ত্রীর অসুস্থতা না সারলে তিনিও শয্যা নেবেন, ব্যাপারটা অনেকটা খাদের পাশে দাঁড়িয়ে কাউকে তুলতে তুলতে নিজেরই পড়ে যাওয়ার মতো।

শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছিল, কবি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে জীবনের শেষভাগ কাটিয়েছেন।

জরাকে ভালোবেসে আহ্বান করেছিলেন যিনি, তিনি শুধু বিদ্রোহী কবি নন, প্রেমের কবিও বটে- কবির ১১৭তম জন্মবার্ষিকীর প্রথম প্রহরে একথা বললে নিশ্চয়ই অত্যুক্তি করা হবে না।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ৩:২৯

কবি হাফেজ আহমেদ বলেছেন: অসাধারন পোস্ট। ধন্যবাদ আমার প্রিয় কবি সম্পর্কে লিখায়। অনেক ভালো লাগল। এগিয়ে যান। শুভাশিস রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.