নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিবেক যেখানে শূন্য, জীবন সেখানে অবান্তর

০৩ রা জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৫৮

'পরের দিন ছুটি আছে, চল কোথাও ঘুরে আসি'- এক বন্ধুর প্রস্তাবে বাকি দু'জন রাজি হয়ে গেল। ঠিক হল তারা নেত্রকোনার বিরিশিরি যাবে। কমলাপুর থেকে ট্রেন ছাড়ে, হাওর এক্সপ্রেস। তারা টিকেট কেটে ট্রেনে চেপে বসলো।

ট্রেন লোকারণ্য, কোথাও তিল ধারনের জায়গা নেই। বিমানবন্দর স্টেশনে ট্রেন থামামাত্র দরজা তো আছেই, জানালা দিয়েও একের পর এক লোক ঢুকতে লাগলো। এক ভদ্রমহিলার কোলে শিশুসন্তান ছিল, জানালা দিয়ে এক লুঙ্গি পরিহিত লোক এসে সেই ভদ্রমহিলার গায়ের উপর পড়ল, কেউ দেখার নেই, কেউ থামাবার নেই। যাত্রীদের একজন প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে মা-বোন তুলে গালাগাল করা হল, একজন বোধহয় যৎসামান্য চড়থাপ্পরও মেরে বসলো। এর মধ্যে ঐ বগিতে একজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বুকে প্রচণ্ড ব্যাথা, দরদর করে ঘামছেন, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে- এরকম পরিস্থিতি। সেই তিন বন্ধুর একজন ছিলেন চিকিৎসক, তিনি দেখে হৃদরোগ সন্দেহ করলেন এবং রোগীর সঙ্গীকে দ্রুত ট্রেন থেকে নেমে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিতে বললেন। রোগীর স্বজন তাদের সহায়তা চাইলে তারাও তৎক্ষণাৎ যাত্রা বাতিল করে উনাদের সঙ্গে নেমে যেতে সম্মত হলেন, প্রমোদভ্রমণের চেয়ে জীবনের আহ্বান অনেক বড়।

কিন্তু ভাগ্য এতোটাই সুপ্রসন্ন যে, জানালা দিয়ে অনর্গল লুঙ্গিপড়া-অর্ধউলঙ্গ মানুষ টপটপ করে ভেতরে এলেও সেই রোগীটিকে ট্রেন থেকে বের করা গেল না। ডাক্তার ও তার বন্ধুগণ চিৎকার করে 'ভাই মরণাপন্ন রোগী আছে, প্লিজ একটু রাস্তা ছাড়েন' বলেও লাভ হয়নি, সবাই ভিড়ে নিজের জায়গা রক্ষায় ব্যস্ত। কেউ একজন মন্তব্য করলেন, 'রোগী লইয়া ট্রেনে উঠছে ক্যান, প্লেনে গেলেই পারে।' যথাস্থান হলে এমন মন্তব্যের যথাযথ প্রত্যুত্তর দেয়া যেত, কিন্তু তখন সে অবস্থা নেই। ট্রেন চলতে শুরু করেছে, অনেক ধাক্কাধাক্কি করেও যখন পথ করা গেল না, তখন ট্রেনের শিকল খোঁজা হল, সেটা টানলে নাকি ট্রেন থামানো যায়। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, ট্রেনের শিকলটি বোধহয় জন্মলগ্ন থেকেই বিকল। রোগী, তার স্বজন, এবং ঘটনাক্রমে জড়িয়ে পড়া সেই বন্ধুত্রয় অবাক হয়ে দেখল, পুলিশের এক কনস্টেবল বগিতে ঢুকছে আর সবাই তাকে পথ করে দিচ্ছে। যে জনতা রোগীকে বের হতে দেয়নি, সেই ভিড়ের মধ্য দিয়ে কী অনায়েসে সেই পুলিশ সদস্যের জন্য জায়গা হয়ে গেল!

তারা যখন রাত দেড়টায় জয়দেবপুর স্টেশনে নামলো, রোগী ততক্ষণে প্রায় সংজ্ঞাহীন। শুধু জনবহুল নয়, বিবেকহীন মানুষে পূর্ণ একটি দেশে জন্মানোই ছিল ওই রোগীর আজন্ম পাপ। প্রমোদভ্রমণে বের হওয়া তিন বন্ধুর জন্য এটা হয়ে গেল শিক্ষাসফর, যে দেশকে তারা ভালোবেসে বড় বড় বুলি ছেড়ে এসেছে এতকাল, সেদেশের আপামর জনসাধারণের এই অসাধারণ আচরণ না দেখলে তাদের শিক্ষাটাও অসম্পূর্ণ রয়ে যেত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.