নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিস্থিতি ও প্রত্যাশা

০৩ রা জুলাই, ২০১৬ রাত ১:৪৪

একটা কুকুর গুলির শব্দ শুনে এদিক ওদিক তাকায়, লেজ নাড়ে, পারলে একটু ঘেউ ঘেউ। এর বেশি না। কুকুর ইন্দ্রিয়সর্বস্ব প্রাণী, ইন্দ্রিয়ভোগের বাইরে তার করণীয় সীমিত। এটা তার অপরাধ নয়, শ্রেণীচরিত্র। এতে কুকুরের মানহানি হবার কিছু নেই, ও বেচারাকে দোষ দিয়েও লাভ নেই।

কিন্তু একজন মানুষ? মানুষের হাত না থাকলেও সে বাঁচে, কিন্তু মন না থাকলে তার অস্তিত্ব কোথায়? মানবজীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ এই মন। রবীন্দ্রনাথ এই মনকেই সৃষ্টির প্রধান উপকরণ আখ্যায়িত করে গেছেন। যার একটা মন আছে, তার পক্ষে বুলেটের শব্দ শুধুমাত্র একটা শব্দ নয়। বুলেট ছুটে এসে কারো দেহকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলছে, ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে, বোমার শব্দ মিলিয়ে গেলেও বাতাসে বারুদের গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে- তিনি এইসব অনুভব করে বসেন, অবশ্যই ইচ্ছে করে নয়। মন থাকলে এই ভাবনা আসতে বাধ্য। তার চোখে জবাইয়ের মুহূর্তে গলগল করে ঝরে পড়া রক্ত এইচডি ভিডিওর মতো করে ভেসে উঠবে। হাতজোর করে প্রাণভিক্ষা চাওয়া মানুষটির দিকে নিরুপায় হয়ে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ছাড়া মনের আয়নায় দাঁড়ানো মানুষটির আর কিছু করার থাকে না। এই যন্ত্রণা অসহ্য, অবর্ণনীয়।

আগেই লিখেছি, এসব চিন্তা স্বেচ্ছায় কেউ করেন না। বিরাট বুদ্ধির মানুষ বলে এসব কাউকে ধাওয়া করে বেড়ায় তাও নয়। মননশীল মানুষমাত্রই এসব সংকটে পড়তে বাধ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী সংসারী মানুষটি- যারা মন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং এখনো বিসর্জন দিতে পারেননি, তাদের এই সমস্যা হবেই। এদের জন্যই পাকিস্তানের বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হয়েছে, সালমান এফ রহমানদের মতো লুটপাটবিশারদের জন্য নয়, ওদের সঙ্গে মানুষ নয় বরং ইতর প্রাণীর মিলই বেশি। একাত্তরের প্রসঙ্গ যখন এলো, একটু ভাবতে বলব সেই সময়ের শিল্পসাহিত্যের কথা। খুব বেশি কাজ কি একাত্তরে হয়েছে? রাষ্ট্রে যখন রক্তপাত হয়, কবি ছন্দ হারিয়ে ফেলেন, গল্পকার গল্পের খেই হারিয়ে ফেলেন, সুরকার সুর খুঁজে পান না। জীবন যখন সংকটে, মন তখন সৃষ্টির অবস্থানে দাঁড়াতে পারে না। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দিয়ে একটা জাতির মেধা-মনন-চিন্তার উন্নতি মাপা সম্ভব না। ভারতে অনেক মাড়োয়ারির কোটি কোটি টাকা আছে, তারা কেউ বিশ্ব ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথের বিন্দু পরিমানও অবদান রাখেন নি। বিশ্ব আজও পুরনো রবীন্দ্রনাথকে চেনে, নতুন পুরাতন কোন মাড়োয়ারিকে নয়। রাষ্ট্রের আসল সম্পদ হচ্ছে তার মানুষ, সাময়িক অর্থবিত্ত উচ্চ ইমারত এসব নয়।

যে রাষ্ট্র যত সভ্য, সে তার 'মানুষ' সম্পদকে তত যত্ন করে সংরক্ষণ করে। বাংলাদেশ নামক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রটি এখনো অর্ধশতবর্ষ পার করেনি। ইতোমধ্যে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে সে তার 'মানুষ' সম্পদের প্রতি আগামীতে যত্নবান হবে- এটুকু আশা নিয়ে আমরা সামনে তাকাতে চাই, কুকুরের মতো নয়, মানুষের মতো বাঁচতে ও মরতে চাই।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুলাই, ২০১৬ রাত ৩:৫২

কাশফুল মন (আহমদ) বলেছেন: দারুণ লিখেছেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.