নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুরষ্কার

১৮ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:০৭

আপেক্ষিকতা খুব নির্মম জিনিস। ঈদের ছুটিটা দেখতে দেখতে কেটে গেল, অথচ ঢাকায় ফেরার বাস লেট করার কারনে কাউন্টারে বসে থাকা সময়টা যেন কাটতেই চাইছে না। বিজ্ঞানের নির্মম রসিকতার কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। বাস যখন দেরি করেই ফেলেছে, তখন বসে থাকা ছাড়া আর কীইবা করার আছে! কথায় বলে, মানুষের অসাধ্য নাকি কিছু নেই। বাসের কাউন্টারে ত্যক্ত-বিরক্ত অবস্থায় বসে থাকতে থাকতে আমার কাছে কথাটা ‘ডাহা মিথ্যে’ বলে মনে হল। আমি কী চাইলেই এখন বাসটাকে হাজির করতে পারব? কিংবা যথাসময়ে ঢাকায় পৌঁছাতে পারব? হেলিকপ্টার থাকলে হয়তো পারা যেত। আসলে মানুষ তার সীমার মধ্যে চাইলে সব পারে, অসীম চাওয়াগুলো পূরণ হয় কালেভদ্রে। ব্যতিক্রম থেকে উৎসাহ নেয়া চলে, কিন্তু সেটাকে উদাহরণ ভাবলে ভুল হবে।

আমি বাসের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধারে ব্যস্ত, এমন সময় পেছন থেকে কে যেন আমার নাম ধরে ডাক দিল। ঘাড় ফিরিয়ে তাকালাম। জামশেদ ভাই, শহরের দুইপ্রান্তে বাড়ি হলেও একই কলেজে পড়তাম, সেই সূত্রে পরিচয়। বয়স বাড়লেও কিছু মানুষের চেহারা বেশি একটা বদলায় না, জামশেদ ভাইয়ের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। দীর্ঘদিন পর প্রিয়জনকে কাছে পেলে যে আন্তরিক আলিঙ্গনে মানুষ এগিয়ে আসে, ঠিক তেমনিভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরে জামশেদ ভাই বললেন, ‘ভালো আছিস দেখছি! আগের চেয়ে মোটা হয়েছিস!’

হাসিখুশি মানুষটার কথা শুনে মনে হল, বয়স বৃদ্ধির ছাপ তার চেহারায়ও পড়েনি, মনেও। দিব্যি আগের মতো আছেন। আমি তো বদলেছি বটেই, জগতের অমোঘ নিয়মে পেটের আকাশে অশনি বার্তাবাহী মেঘের ভেলা হয়ে দশাসই একখানা ভুঁড়ি গজিয়েছে। ভুঁড়িমাত্রই খারাপ ভাবার কোন কারন নেই। জামশেদ ভাইয়ের কথা শুনে মুখের সাথে তাল মিলিয়ে ভুঁড়িটাও হাসছে, নড়ছে। এটা কী ভুঁড়ি থাকার একটা অনন্য সুবিধা নয়?

- দিনকাল কেমন যাচ্ছে তোর? জামশেদ ভাইয়ের গলায় স্নেহ।
: ভালো ভাই। আপনার কী অবস্থা? আমি পাল্টা জানতে চাইলাম।
- ভালোর চূড়ান্ত। আপাতত বেকার।

জামশেদ ভাইয়ের গলায় কোন উদ্বেগ নেই। বাংলাদেশে গণিকাবৃত্তিরও যা সম্মান আছে, বেকারত্বের মাঝে তাও নেই। কিছুকাল বেকার থাকার সুবাদে সেই সামাজিক অসম্মান ও বঞ্চনার স্বাদ আমার ভাগ্যেও জুটেছে। হাজার রকমের সৎ অর্থোপার্জনের উপায় ছেড়ে তৃতীয় শ্রেণীর চাকুরিও এদেশে সম্মানের, ফলে নতুন উদ্যোক্তার মাধ্যমে অনেক কর্মীর কাজের সুযোগ সৃষ্টি না হয়ে চাকরিপ্রার্থীর লাইন দীর্ঘতর হচ্ছে। জামশেদ ভাই একটা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজে ভালো বেতনের চাকরি করতেন শুনেছিলাম। আজ তিনি বেকার, তাতে যতটা অবাক হয়েছি, তারচেয়ে বেশি অবাক হলাম উনার নির্বিকার হাবভাবে।

- কিন্তু কীভাবে? কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করে বসলাম।
জামশেদ ভাই উত্তর না দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোর গাড়ি আসতে কতক্ষণ?’
- আরও ঘণ্টাখানেক।
: তাহলে চল, পাশেই জালালের চায়ের দোকান। ভালো চা বানায় ছেলেটা। খালি গলায় ওসব আলাপ জমবে?

জামশেদ ভাইকে দেখে হালকা পাতলা একটা ছেলে হাসিমুখে এগিয়ে এলো, বেঞ্চ পরিষ্কার করে দিল। বুঝলাম এরই নাম জালাল। জামশেদ ভাই চায়ের ফরমায়েশ দিয়ে গল্প শুরু করলেন।

মাস্টার্স সেরে সেই যে চাকরিতে ঢুকলাম, তারপর তরতর করে দুটো প্রোমোশন। চাকরি পেয়ে জাগতিক লাভ হল বটে, কিন্তু মহাজাগতিক পর্যায়ে বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল। কবিতা লিখে মহাজগতের যেটুকু অনিষ্ট করতাম, সেটুকু করা কঠিন হয়ে পড়ল। দু’চার লাইন লিখি বটে, কিন্তু একটা কবিতাও শেষ করতে পারি না। বাড়িতে সবাই খুশি, কিন্তু আমার মনে স্বস্তি ছিল না। প্রথম প্রথম চাকরিতে যা কিছু উদ্যম ছিল, আস্তে আস্তে তা ক্ষীণ হয়ে এলো। একই ধরনের গৎবাঁধা কাজ, ফাইলপত্র সাইন করা, মিটিং করা- এসবে আগ্রহ পেতাম না। তবু অর্থনীতিকে তো আর অস্বীকার করা চলে না, কাজ করে যেতাম। ভেতরের কষ্ট বাইরে প্রকাশ পেতে দিতাম না। পত্রিকায় কত লোকের কবিতা পড়তাম, হাবিজাবি কাব্য লিখবার লোকের অভাব নেই, সেগুলো ছাপাবার মতো সাহিত্য সম্পাদকও দেশে যথেষ্ট আছে। নিজের অপ্রাপ্তিকে ঢাকার জন্য তাদের গালাগাল করতাম, সময় কেটে যেত। দিনশেষে বাড়ি ফিরে কিছু লিখব, ক্লান্ত দেহ সে সুযোগ দিত না। পেশাদার জীবন যেন বৃত্ত হয়ে আমার উপর চেপে বসল, নিজেকে আটকে যেতে দেখছি সেই বৃত্তের পাকেচক্রে, অথচ কিছুই করার নেই! এভাবে দিন কেটে যাচ্ছিল। এরমধ্যে এক ঘটনা ঘটল। আমাদের কোম্পানির একজন বড় ক্লায়েন্ট ইমেইলে জানালেন, উনার মেয়ে বাংলাদেশে বেড়াতে আসবে। এদেশের কালচার দেখবে, মানুষের জীবন দেখবে- এইসব। বিদেশীদের শখ হলে তারা অনেক কিছুই করতে পারে, অন্তত মনের সুখের কথাটা ভেবে যা ইচ্ছা করবার সাহস ওদের আছে। সেই মেয়ের আগমন উপলক্ষ্যে অফিস থেকে আমাকে নিযুক্ত করা হল, আমি যেন তাকে সময় দিয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে সামান্য এবং আমাদের কোম্পানি সম্পর্কে প্রচুর ধারনা দিই, ক্লায়েন্ট যেন খুশি থাকেন ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি খানিকটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। আগে কখনো বিদেশীদের সাথে সামনাসামনি কথাবার্তা বলিনি। একে তো অতিথি বিদেশী, তার উপর নারী। যে প্রজাতিকে স্বয়ং বিধাতা বুঝতে ব্যর্থ, সেখানে আমি কতদূর কী করতে পারব! তবু অফিসের হুকুম। আমি দিনক্ষণ মেপে এয়ারপোর্টে চলে গেলাম।

এয়ারপোর্টের যেদিক দিয়ে যাত্রীরা বের হয়ে আসে সেদিকে ঢুকতে গেলাম, নিরাপত্তারক্ষী আটকে দিল। ‘এখানে ঢোকা নিষেধ’, ‘প্যাসেঞ্জারের প্রাইভেট কার ছাড়া কেউ এলাউড না’ এরকম নানা বক্তব্য শুনতে হল। আমি ঘুরে এসে অফিসের গাড়ি নিয়ে এলাম, এবার ঢুকতে দিল। দেশের এই হচ্ছে অবস্থা, মানুষের দাম নেই কিন্তু গাড়ির আছে। ভেতরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে আমি অতিথির জন্য অপেক্ষা করলে লাগলাম। আমার হাতে অতিথির নাম ক্যামিলি হ্যামিল্টন।

দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। একদফা যাত্রী বের হল, ছেলেবুড়ো নানা বয়সের। অফিস থেকে আগেই বলে দেয়া ছিল, অতিথির বয়স বাইশ। আমি তেমন বয়সের নারীচরিত্রের সন্ধানে এদিন ওদিক তাকালাম। একজনকে মনে হল বয়স ওরকমই। কিন্তু নাক খানিকটা সমতল। নাম শুনে তো চৈনিক বা জাপানী মনে হচ্ছিল না। নাকি ফরাসী পিতা ও পূর্ব এশিয়ান মাতার মিশ্রণ? আন্তর্জাতিক ব্যাপার স্যাপার, আমার যেহেতু এসব ব্যাপারে তেমন কোন ধারনা নেই সেহেতু কোন সম্ভাবনাই উড়িয়ে দেয়া যায় না। আমার আন্তর্জাতিক জ্ঞান প্রথম প্রকাশিত হয় ম্যাট্রিক পাশ করার পর। তখন কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেয়া লাগতো, সেই পরীক্ষায় জার্মানির রাজধানী লিখেছিলাম ‘লন্ডন’। পাশের জন জিজ্ঞেস করেছিল, ‘এইডা কী লেখলা? লন্ডন! তুমি জানো তো ঠিকঠাক?’ উত্তরে আমি অর্থপূর্ণ হাসি দিয়েছিলাম, সে হাসির নানা অর্থ বের করা সম্ভব। আসল ব্যাপার হচ্ছে আমি ঐ বয়সে একটাই ইউরোপীয় শহরের নাম জানি। যেটুকু জানি, ওটুকুই লিখেছি- এই ছিল যুক্তি।

এই পর্যায়ের জ্ঞান নিয়ে রিস্ক নেয়া চলে না। আমি বিনয়ের সাথে সেই মহিলাকে বললাম, ‘হাই, আর ইউ মিস ক্যামিলি হ্যামিল্টন?’ যতদূর জানি প্রথম দর্শনে অভিবাদন হিসেবে এরকম কিছু বলতে হয়। উত্তরে তিনি সম্ভবত বলবেন, ‘হ্যালো’। কিন্তু তিনি তেমন কিছু বললেন না। বরং তার ছোট ছোট চোখ আরও ছোট করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন আমাকে। আমার পোশাকে আশাকে কী কোন ভুলভাল হল? শুনেছি ইউরোপীয় দেশগুলোতে প্রচুর এটিকেট আছে। পান থেকে চুন খসলেই বিপদ। অফিসের এক কলিগ একবার বেড়াতে গিয়েছিলেন এক বিদেশীর বাড়িতে। খাবার টেবিলে তিনি তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতেই সবাই খাওয়া বাদ দিয়ে হা করে উনার দিকে তাকিয়ে রইল। উনি তো অবাক হয়ে গেলেন। বাইরে এসে লোকজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন, এমন অজস্র নিয়মকানুন আছে, ওসব না মানলে নাকি সামাজিকতা রক্ষা হয় না। হায় সমাজ! দেশে দেশে কী বিচিত্র তোমার প্রকাশ! বাংলাদেশে খাওয়া সেরে একটা লম্বা ঢেঁকুর তো রীতিমতো গৃহনন্দিনীর রসনার সনদপত্রের মতো! একদেশে যা সচল, অন্যত্র তা বিকল। দেশান্তরে এই কী প্রকৃতির রীতি?
হয়তো আমার বেশভূষা কিংবা আচরণে বেখাপ্পা কিছু ছিল। নিজের ভুল নিজে ধরতে পারলে জগতে ভুল শুধরাবার কিছু থাকতো না, আমিও নিজের ভুল বুঝতে পারলাম না। কিছুটা লজ্জা ও যথেষ্ট ভুলভাল মিশিয়ে ইংরেজিতে যা বললাম, তার ভাবার্থ, ‘আমার কোন ভুল থাকলে নিজগুণে ক্ষমা করিবেন হে মহীয়সী!’ বাঙালী অন্য ভাষা বলবার সময় মাথায় ট্র্যান্সলেশন করে তারপর বলে, সবাই না হলেও আমার মতো দুর্বলেরা তো বটেই। আমি মহীয়সী নারীর ইংরেজি ‘হলি উম্যান’ বললাম, পরক্ষণেই মনে হল কাজটা ঠিক হল না। তিনি তো আর ধর্মপ্রচার করতে আসেননি। তার পরিবর্তে ‘গ্রেট উম্যান’ বললে আরেকটু ভালো হত। সঠিক হত কিনা জানি না, সে জানার বয়েসে বিস্তর ফুটবল খেলেছি, ইংরেজি শিক্ষা টেবিলে বিশ্রাম নিয়েছে।

আমার কথায় বরফ গলল না। বরং পরিস্থিতি সম্ভবত আরও ঘোলাটে হল। মেয়েটি চোখ আগের চেয়ে আরও সরু করে ফেলল। চোখের আরও কুঞ্চনে ভুরুও যোগ দিল। তার চোখেমুখে এখন সন্দেহ ভর করেছে। সে কী আমাকে এয়ারপোর্টের দালাদ গোত্রীয় কিছু ভাবছে? একটা সময় বিজ্ঞান নিশ্চয়ই এমন যন্ত্র বের করবে যা দিয়ে মানুষের ভাবনা পড়তে পারবে। হাতের ঘড়ি কিংবা মোবাইল টাইপের যন্ত্র হবে, যা দিয়ে কারো দিকে তাক করলে তার মাথার ভেতরের চিন্তা যন্ত্রের ডিসপ্লে’তে চলে আসবে। মিটিংয়ে বসে একজন আরেকজনের আইডিয়া দেখতে পাবে, প্রেমিক যখন প্রেমিকাকে বলবে, ‘ভালোবাসি’ তখন নিজের যন্ত্রে প্রেমিকা তাকাবে, ছেলেটার মস্তিষ্কের ঝংকারে সে প্রেমের সত্যতা ডিসপ্লে হয়ে প্রেয়সীর চোখে প্রবেশ করবে। প্রেয়সীর রহস্যময় হাসিতে নয়, প্রেমিকও হয়তো গভীর আবেগে নিজ যন্ত্রে তাকিয়ে দেখবে, প্রেয়সীর অন্তর ‘হ্যাঁ’ বলছে। ভাবের বিনিময় কত সহজই না হবে! আমার দুর্ভাগ্য এমন প্রযুক্তি আজও আসেনি, কাজেই এই তরুণীর সামনে কাঁচুমাচু করে থাকতে হল। আমাকে বেশ কিছুক্ষণ ‘চিড়িয়াখানার জন্তু কী না’ বিবেচনা করে এক পর্যায়ে সে একপ্রকার চেঁচিয়ে কী যেন বলল। আমি মফস্বলের মানুষ, কিছুদিন ঢাকায় আছি, বাংলা-ইংরেজির বাইরে দেশের টুকটাক আঞ্চলিক ভাষা জানি। চট্টগ্রামেরটা খানিকটা বুঝি, পুরো না। এসব ভাষাজ্ঞান সেই তরুণীর কথা বুঝতে তেমন কাজে এলো না। তবে কী এটা ফরাসী ভাষা? কে জানে!

আমি না জানলেও কেউ জানে না তা তো নয়। এক ভদ্রলোক এগিয়ে এলে সেই তরুণীর মতো ভাষায় কী যেন বললেন। তরুণীর মুখে হাসি ফুটল, সে একটা ট্যাক্সি ডেকে চলে গেল। আমি সেই ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভাই, ঘটনা কী?’ তিনি হাসিমুখে বললেন, ‘আপনি যে নামে ডেকেছেন, উনি সেই যাত্রী নন। কিন্তু তিনি ইংরেজিও জানেন না, জানেন মান্দারিন ভাষা। সেই ভাষাতে আপনাকে বলেছেনও, কিন্তু আপনি বুঝতে পারেন নি।‘ আমি নিজের অজ্ঞতা স্বীকার করলাম। কিন্তু ফরাসীর বদলে চৈনিক নারীকে সম্ভাষণ জানানো শুধুমাত্র ভাষাগত নয়, বুদ্ধিবৃত্তিক সীমাবদ্ধতাও বটে। নিজের নির্বুদ্ধিতা থেকে প্রসঙ্গ এড়িয়ে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি মান্দারিন জানেন কীভাবে?’ তিনি সহাস্যে উত্তর করলেন, ‘বেশ কিছুদিন চীন মঙ্গোলিয়ায় কাজ করেছি। সেই সুবাদে কিছুটা জানি’। এতক্ষণ অফিসের ড্রাইভার শামছু মিয়া চুপচাপ আমার কাজকর্ম দেখছিল। হঠাৎ শামছু মিয়া বলে বসল, ‘ওইসব দেশে ড্রাইভারের বেতন কেমুন?’

ভদ্রলোক উত্তরে কী যেন বলতে যাচ্ছিলেন, তাতে বাধ সেধে পাশ থেকে কেউ একজন শুদ্ধ ইংরেজিতে রিনিঝিনে গলায় বলল, ‘মিস্টার জ্যামসেইড?’ আমরা তিনজনই একত্রে তাকালাম। মাঝারি উচ্চতার শুভ্রবর্ণ ত্বক ও সোনালি চুলের এক তরুণী আমার হাতের প্ল্যাকার্ডের দিকে আঙ্গুল তুলে আছে। আমার নামকরণ করা হয়েছিল আকিকা করে, সেই প্রক্রিয়ায় কোন ‘জ্যাম’ কাজ করেনি, জন্মের পরপরই খাসি জবাই দিয়ে দ্রুতগতিতে নাম রাখা হয়েছে। ‘সেইড’ বলবার কারন কী? আমি কি কিছু বলতে চেয়েছি, কিংবা আমাকে কিছু বলা হচ্ছে? নামবিষয়ক এসব প্রশ্ন করার সুযোগ পেলাম না। তার অঙ্গুলিহেলন যেন প্ল্যাকার্ড নয়, খোদ আমাকেই নির্দেশ করছে। সেই অঙ্গুলিহেলন সামান্য কিছু নয়, শিল্পের নিখুঁত এক অভিব্যক্তির মতো যেন প্রস্ফুটিত হয়ে আছে তার দেহভঙ্গিমায়। আমি কোনোমতে হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লাম। এমন শিল্পের সামনে এই তুচ্ছ জামশেদ যদি ‘জ্যাম-সেইড’ হয়ে যায়, তাহলে ক্ষতি কোথায়!

( অসমাপ্ত )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.