নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রজা থেকে রাজা

২১ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১:২৮

বড় সাহেব বিদেশ থেকে আসবেন। বাড়িতে হুলুস্থুল লেগে গেছে। সারাবছর কর্মচারীরা মাছি মারে, আলস্যে ওজন বৃদ্ধি করে। স্রেফ এই মাস দুয়েক একটু কষ্ট। বড়সাহেব এসে দেখবেন সব ঠিকঠাক আছে, অফিসের হিসেবপত্র দেখে চলে যাবেন বিদেশে। এই সময়টা সবাইকে একটু সাবধান থাকতে হয়। দারোয়ান কাদের মিয়া সাবধানতার অংশ হিসেবে তার বাঁশের লাঠি বদলে নতুন বেতের লাঠি এনেছে। সকাল-বিকাল হাঁকডাক দিচ্ছে কেয়ারটেকার আফজাল, সারা বছর চেঁচানোর দরকার হয় না বলে এখন গলা ভেঙ্গে গেছে, তবু সে থেমে নেই। বড় সাহেব আসছেন। রহিমার মা বাবুর্চি কদম আলীকে সাহায্য করছে। তার ছোট্ট মেয়ে রহিমা তার পেছন পেছন ঘুরছ টিভিতে শেখা গান গাইছে, 'আমরা সবাই রাজা'। শোনা গেছে বড় সাহেবের সাথে নতুন একজন মেহমান আসবেন। তার জন্য কী খানার আয়োজন হবে কেউ জানে না। কদম আলী চিন্তিত। চাইনিজের দু'চার পদ সে জানে, কিন্তু এর বাইরে কিছু রাঁধতে হলে? বাগানের ফুলের মালী পঞ্চানন কর্মকার ফুলের গাছে পানি দিতে দিতে হিসেব করছে, নতুন মেহমানের এসব ফুল পছন্দ হবে তো?


যথা তারিখে যথাসময়ে বড় সাহেবের ফ্লাইট এলো। আলিশান গাড়িতে চড়ে তিনি বাড়ির আঙিনায় এলেন, শাহী দর্পে গাড়ি থেকে নামলেন, সঙ্গে তার মেহমানও নামল। সবাই সীমাহীন আগ্রহে মেহমানের দিকে তাকিয়ে রইল। তারা যতটুকু অবাক হবে ভেবেছিল, তারচেয়ে বেশি অবাক হল। হয়তো বাক্যহারাও হয়ে গিয়েছিল সবাই। কেবল চার বয়সী রহিমা বলে উঠল, 'এইডা দেহি একটা কুত্তা!'


সত্যভাষণের পুরষ্কার তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া গেল। কেয়ারটেকার আফজাল কষে একটা চড় মারল রহিমার গালে। বড়সাহেবের কুকুরকে 'কুত্তা' বলে, এতবড় সাহস! এরচেয়ে বড় কথা, বড় সাহেবের সামনে কেয়ারটেকার হিসেবে তার কর্মোদ্দীপনার এরচেয়ে ভালো সুযোগ আর পাওয়া যাবে?

বড় সাহেব ফ্রেশ হয়ে বাগানে গেলেন। তার খুব প্রিয় জায়গা এই বাগান। আগে তার কুকুর পোষার খায়েশ ছিল না। এবার পুডলটা উপহার পেলেন এক ক্লায়েন্টের কাছে, অভিজাত কুকুর, দেখতেও সুন্দর। কিন্তু ও খাবে কী? বাবুর্চিকে ডাকা হল। তাকে কুকুরের খাবার প্রস্তুত করতে বলা হলে সে মাথা চুলকে বলল, আগে কখনো সে কুকুরের খাবার রান্না করেনি। কাঁচা মাংস দিলে কী চলবে?

কুকুরের উত্তর দেয়ার ক্ষমতা নেই। কুকুরের মালিকই যা বলার বললেন। বক্তব্যের ভাবার্থ- বাবুর্চির এই অদক্ষতায় তিনি বিরক্ত ও হতাশ। শিখে হলেও যেন কুকুরের স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের ব্যবস্থা করা হয়, নাহলে তার চাকরি থাকবে না।

এরপর হল আরেক সমস্যা। কুকুরটাকে রাখার জায়গা করতে হবে, বড়সাহেব আপাতত গার্ড রুম খালি করে কুকুরটাকে ওখানে রাখতে বললেন। শুনে দারোয়ান কাদের মিয়ার চেহারা শুকিয়ে গেল। কুকুর রাখার জায়গা ওটা হলে সে থাকবে কোথায়? তারচেয়ে বড় কথা, গার্ড হলেও তো সে মানুষ। তার জায়গায় কুকুর থাকবে?

পরদিন সকালে দরজায় তালা ঝুললেও কাদের মিয়াকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না। কোথায় চলে গেছে কেউ জানে না। পুরো বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজেও কিছু হারিয়েছে- এমন প্রমাণ করা গেল না। বড়সাহেব ‘চোর’ বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু উপায় পাওয়া গেল না। গরীব হতচ্ছাড়াটাকে নিয়ে ভাবার সময় কোথায়? দেশে প্রচুর বেকার কাছে, একজন গেলে তিনজন মিলবে। দ্রুত নতুন গার্ড নিয়োগ দেয়া হল। সে কুকুরকে মনিবের মতো সম্মান করে চলতে লাগল, কারন সে কাদেরের ঘটনা শুনেছে। তার ঘরে কুকুরকে সে মহাযত্নে রাখত, নিজে ঘুমাত বাইরে। যতক্ষণ জেগে থাকত ততক্ষণ কুকুরের সাথে তার আলাপ হত। আলাপের নমুনা,

- স্যার, ভালা আছুইন?
- ঘেউ ঘেউ।
- স্যারের শইলডা আইজ ভালা তো?
- ঘেউ ঘেউ।

এলাকার ছেলেপেলে ব্যাপারটাতে বেশ মজা পেত। সময়ে অসময়ে তারা গার্ডরুমের ভেতরের তামাশা দেখতে আসত। রাস্তার ধারে বলেই ব্যাপারটা বেশ প্রসিদ্ধি পেয়ে গেল। ছেলেপেলের সাথে পাড়ার নেড়ি কুকুরগুলোও জড়ো হত, স্বজাতির সদস্যকে দেখে তারা তারস্বরে চিৎকার শুরু করে দিত। উত্তরে বিদেশী কুকুরটিও চেঁচামেচি করত।


বড়সাহেব একদিন এসব দেখে গার্ডকে কষে ধমক দিলেন। সে যেন বাইরে গিয়ে দাঁড়ায় এবং কাউকে পুডলের সামনে আসতে না দেয়। নতুন গার্ড আজ্ঞা পালন করল। এক পর্যায়ে সে বোধহয় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়েছে, এমন সময় রাস্তার ছেলেপেলে এবং নেড়ি কুকুরের দল ভেতরে ঢুকে সাহেবের কুকুরকে সাদর সংবর্ধনা দিল। গার্ড ফিরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। তার চাকরিটা বুঝি গেল।

বড় সাহেব ফিরে এসে গার্ডের বেত হাতে নিয়ে গার্ডকে পেটালেন। পেটের দায়ে সে সহ্য করল। বাবুর্চি মানুষের রান্না জানে, তার পেটের দায় থাকার কারন নেই। সে একটা অদ্ভুত কাণ্ড করল, বড় সাহেবের হাত থেকে বেত কেড়ে নিয়ে ফেলে দিল। তারপর সবার উদ্দেশ্যে বলল, ‘একটা কুত্তার লেইগা এতগুলা মানুষের কুত্তা সাজার দরকার নাই, যার কুত্তা হে বুঝুক, আমি গেলাম, তোমরা থাকবা না যাইবা তোমাগোর ব্যাপার’।

বলে সে গেট দিয়ে বের হয়ে গেল। চোখ মুছতে মুছতে নতুন গার্ডও বের হয়ে গেল, তার চাকরি তো এমনিতেই চলে যেত। রহিমার মা প্রথম দিনের কথা ভোলে নি, সেও রহিমাকে কোলে নিয়ে রওনা হয়ে গেল। আহত কুকুর, প্রভুভক্ত কেয়ারটেকার ও বড় সাহেব দাঁড়িয়ে রইলেন। স্থির। হতভম্ব।

ওরা হাঁটছে। রহিমা মায়ের কোলে, একটু পর পর মাকে বলছে, ‘মা, রাইতে খামু না।‘ রহিমার মা বিরক্ত হয়ে মেয়েকে থামিয়ে দিচ্ছে। থাকার জায়গা নাই, খাওয়া!

‘আরে, কদম ভাই নি?’, কে যেন চেঁচিয়ে উঠল। সবাই তাকিয়ে দেখল পুরনো গার্ড কাদের। সে এখানে কি করছে?

কাদের সলজ্জ হেসে জানালো, কাছেই একটা হোটেল খুলেছে। সেখানে সবাই গেলে সে খুশি হবে। অভুক্ত অবস্থায় এ প্রস্তাবে বরং ওরাই খুশি হল, চলে গেল কাদেরের হোটেলে।

‘ওই সবুইজ্যা, আমার আত্মীয়রা আইছে। হেগো লেইগা খাওন বহা, মুরগী রান্ধতে দে, লগে খিচুড়ি। তাড়াতাড়ি’। বাবুর্চি কদম আলীর চোখে পানি চলে এলো। সে সিদ্ধান্ত নিল সে এই হোটেলেই রান্না করবে। কাদের তাকে ফিরিয়ে দেবে না নিশ্চয়ই। রহিমার মাকে দেখা গেল কোন ঘোষণা ছাড়াই রান্নার কুটাবাছায় হাত লাগাচ্ছে। কাদের রহিমাকে কোলে নিয়ে বলল, ‘কি রে মা! হেইদিন থাপ্পড় খাইয়া কষ্ট হইছে খুব, না?’ রহিমা মাথা নাড়ে। তার কোন কষ্ট নাই। চারদিকে কত মানুষ, সবাই হাসিখুশি। কষ্ট কীসের তার? আপনমনে রহিমা গান গাইতে লাগল, ‘আমরা সবাই রাজা...’

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৩:২২

কানিজ রিনা বলেছেন: হি হি হি হি
হি হি হি

আঁসতে আঁসতে ফ্যাডে খিল
লাইগ্যা গেল। গল্পডা বালা
বড় বড় সায়েবগো কাচে
কুত্তা ছরি কুহুরই বালা
ধুন্যহউন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.