নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিদায়

২৫ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৭

- তুই কী সত্যিই চলে যাবি?
: নাহ। দুষ্টুমি করছি। ঢাকায় গিয়ে কী হবে? পড়ালেখা, সে তো এই মফঃস্বলেও বেশ হয়, তাই না?
- সে কথা বলছি না। আসলে তোকে আর দেখব না, মানতে পারছি না।
: দেখবি তো। ফেসবুকে ছবি দেবো। লাইক দিবি। ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসব, তখন দেখবি।
- সেই দেখা আর প্রতিদিন সামনা-সামনি দেখা এক?
ফোনের চ্যাটবক্সে বীণা চুপ করে থাকে। এপাশে সুমন অপেক্ষায় থাকে। উত্তর আসে, তবে দেরীতে।
: ভালো রেজাল্ট করে দোষ হয়ে গেল রে। বাবা-মাকে ছেড়ে যেতে হচ্ছে, তোকেও।
সুমন বীণার দীর্ঘশ্বাস টের পায়। অনলাইনে অদেখা মানুষের আবেগ বোঝা কঠিন, কিন্তু যার সাথে দিনের বেশির ভাগ সময় হাসিকান্নায় কেটে যায়, তার শব্দ-বাক্যে আবেগের সুর হৃদয়ে আঘাত করে বৈকি। সুমন সান্ত্বনা দেয়,
- ধুর পাগলী। দোষ হবে কেন। ক'জন শহরের অমন প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পায় বল? ভালো কাজেই তো যাচ্ছিস।
: তাই বলে এতো কিছু হারাতে হবে?
- পাওয়ার জন্য হারানোই যে পূর্বশর্ত!
: আমি যে হারাতে চাই না!
- হুম।

সুমনের ইচ্ছে হয় লিখতে, 'সেই না হারাতে চাওয়ার তালিকা'য় সেও কী আছে? লেখা হয় না। সব কিছু লেখা যায় না। সুমন দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বীণা কী সেই দীর্ঘশ্বাস টের পায়?
: কী হল, চুপ করে গেলি যে!
- না, ভাবছিলাম। তোর ট্রেন কয়টায়?
: কাল সকালে। আটটায়।
- এগার সিন্ধু?
: হ্যাঁ। তুই আসবি?
- বাহ রে! আসব না? তুই হাতিঘোড়া মারতে শহরে যাবি, আমরা ঢাকের বাদ্য বাজাতে সদলবলে আসব না! তাই কী হয়!
: ফাজলামো করছিস?
- আরে না। আসব। তোকে বিদায় দিতে আসব।

সুমন অফলাইনে চলে গেল। আদৌ কী বীণাকে বিদায় দেয়া সম্ভব তার পক্ষে? ডিসট্রিক্ট রোডে বিকেল বেলায় কোচিং ফাঁকি দিয়ে ঘোরাঘুরি, শিল্পকলার সামনে ফুচকা, পাবলিক লাইব্রেরী হয়ে কোর্টের পাশে বৃষ্টিতে গান গাইতে গাইতে কৈশোর থেকে যৌবনে এগিয়ে চলা। একটা মানুষকে বিদায় দেয়া যায়, কিন্তু তার সঙ্গে মিশে থাকা সময়গুলোকে? জীবনের প্রস্তরখণ্ডে হীরকখচিত সেসব অনুভূতি তো জীবনের সারবস্তু! সেগুলোকে বিসর্জন দেয়া মানুষের পক্ষে সম্ভব?

পরদিন সকালে বীণা অপেক্ষায় থাকে ষ্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। বীণার বাবা ওর হাতে টিকেট দিয়ে বলেন,
- স্টেশনে তোর মামা আসবে। ভয় পাসনে যেন। কোন সমস্যা হলে ওকে ফোন করবি।
: আচ্ছা।
- আমি পরের সপ্তাহেই আসছি।
: আচ্ছা।
- পরশুদিন ভর্তি না?
: হুম।
- তোর মামা সঙ্গে যাবে। চিন্তার কিছু নেই।
: হুম।
- কিছু লাগলে আমাকে ফোন করবি কিন্তু।
: হুম।

বাবার কথায় দায়সারা জবাব দেয় বীণা। বাবার চাকরির আর এক বছর আছে, তারপর পুরো পরিবার ঢাকায় চলে আসবে। কিন্তু সুমন? ও কোথায়? যাওয়ার আগে কী ওর সঙ্গে দেখা হবে না?

ফোন বের করে সুমনকে কল দেয় সে। রিং হচ্ছে, অথচ সুমন ফোন ধরছে না। তাহলে কী সুমন আসবে না? অতি আরাধ্য বিষয়গুলো মানুষের ছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায়। বীণার ইচ্ছেটাও কী তেমন কিছু হয়ে গেল?

ট্রেন শিস দিচ্ছে। নির্দিষ্ট বগিতে বীণাকে তুলে দিলেন বাবা। সিটে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়ে প্ল্যাটফর্মে তাকাল বীণা। বাবা হাত নাড়ছে, ট্রেন চলতে শুরু করেছে। সুমন শেষ অব্দি তাহলে এলোই না! বীণার বুকটা ভারী হয়ে এলো। চিরচেনা শহরটাকে ছেড়ে যাবার দুঃখ আঘাত করবে বলে ভেবেছিল সে, কিন্তু তার বদলে একটা মানুষকে না দেখার দুঃখ যেন জগদ্দল পাথরের মতো মনের উপর চেপে বসল। ট্রেন অবিরাম ডেকে চলেছে, নিজের যাত্রার জয়ধ্বনি করছে, ‘কু-উ-উ-শ-শ...’ বীণার মনে হল যেন শব্দটা তার শ্বাসের সঙ্গে বেড়িয়ে আসছে, মিশে যাচ্ছে ট্রেনের সঙ্গে। বাইরে যেন শহরটা ছুটে যাচ্ছে বিপরীত দিকে, সেই ছবি নিজের অজান্তেই ঝাপসা হয়ে আসছে বীণার চোখে।

- দেরি করে ফেললাম বুঝি?

বীণা হতবাক হয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে, একটা ব্যাগ কাঁধে সুমন দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাগটা রেখে বসতে বসতে ও বলল,
- মাকে বললাম ঢাকায় গিয়ে একটু ঘুরে আসি। ভালো ছাত্র না হলেও মোটামুটি কোথাও পড়া যাবে নিশ্চয়ই। প্রথমটায় রাজি হচ্ছিল না, আমার চাপাচাপিতে বলল, বেশ দেখে আয় যদি কিছু হয়। এসে দেখি ট্রেন ছুটতে শুরু করেছে। দৌড়ে শেষ বগিটায় উঠলাম। কতগুলো বগি পার হয়ে তবেই তোর দেখা মিলল।

বলে সুমন হাঁপাতে লাগলো। বীণা একদৃষ্টে ওর দিকে তাকিয়ে রইল। সুমন জিজ্ঞেস করল,
- তোর চোখে পানি কেন?
: এমনিই। ট্রেনের বাইরে তাকিয়ে ছিলাম তো, বাতাসে চোখে পানি চলেছে।

বলে সে সুমনের বিপরীতে ট্রেনের জানালায় তাকালো। ট্রেনের গতি বাড়ছে তো বাড়ছেই, সেই সঙ্গে বাতাসের গতিও। বাতাসের তোড়ে সেই কান্না যেন আরও বেড়ে যাচ্ছে, সিক্ত চোখে সেদিকে তাকিয়ে প্রাণপণে কান্নাটাকে থামাতে চাইছে বীণা। যতই চেষ্টা করছে থামাতে, বেয়াড়া বাণের জলের মতো এ অশ্রুধারা যেন ততই বেড়ে চলেছে। কী অদ্ভুত!

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:৪২

নাঈম বলেছেন: অদ্ভুত সুন্দর লিখেছেন।

২| ২৫ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:১১

সিলা বলেছেন: valoi cheletake r harate holona ses pojjonto ...... :( ekta dirghossas er imo thakle valo hoto

৩| ২৫ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৬

অচল অধম বলেছেন: ভালই তো লাগলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.