নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

হজ্ব এবং কিছু পদযাত্রা

২৮ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:২৪

প্রতি বছর হজ্বের সময় নীরবে কিছু ঘটনা ঘটে। প্রভাবশালী নেতা ও প্রশাসনের হর্তাকর্তাদের আশেপাশে চিকিৎসকদের সরব/নীরব আনাগোনা শুরু হয়। একান্তে মাটির সাথে প্রায় মিশে গিয়ে তারা কাঙ্ক্ষিত কথাটি বলে ফেলেন। কথায় চিড়ে ভিজলে ভালো, না ভিজলে নানা প্রকার বিকল্প ব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশে রাজনীতি ছাড়া সর্বত্র বিকল্প ধারাই অগ্রগণ্য। তাছাড়া একবার হজ্বে যেতে পারলে তো সব গুনাহ মাফ, বইপত্রে তো সেরকমই লেখা আছে!

লিস্টে নাম আসার পর 'হজ্বযাত্রীদের সেবার জন্য মনোনীত' চিকিৎসকগণ ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্যের সাথে কেনাকাটা শুরু করেন। চেনাজানা সবার কাছে দোয়া নিতে থাকেন, হজ্বে যাবার আগে সেরকমই রেওয়াজ। অবশেষে একদিন বিমানে চড়ে সরকারী খরচে আরবের পথে যাত্রা শুরু করেন। এয়ারপোর্টের বাইরে এক শ্রেণীর মানুষ তখন প্রতারকদের হাতে সব খুইয়ে কাঁদতে থাকে। তাদের সর্বস্বান্ত হওয়ার বেদনা এবং আকাশে উড়ন্ত সরকারী চিকিৎসকদের আনন্দ নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুসারে সমান ও বিপরীত।
এই হাজী সাহেবেরা সৌদি আরবে পৌঁছামাত্র তাদের পবিত্র দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ঈশ্বরের ডাকে সাড়া দেয়া ছাড়া একজন ধর্মপ্রাণ মানুষের আর কী দায়িত্ব আছে! তারা সাগ্রহে হজ্ব পালন করেন, ছবিটবি তুলেন। খেজুর, তসবীহ, জায়নামাজ খরিদ করেন। দেশে ফিরে আত্মীয় স্বজনকে তো কিছু দিতে হবে!

এদিকে শেষ বয়সে হজ্বে যাওয়া অনেক অসুস্থ মানুষ যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন। আরবের অন্যতম ব্যবসা এই হজ্ব, তাদের ব্যবস্থাপনাও যে খুব নিখুঁত তা নয়। প্রতি বছরই প্রচুর মানুষ পদদলিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সেই মৃত্যু সংবাদ আমাদের কানে আসে, সাথে সহকর্মী চিকিৎসকদের অনেকেই ‘সাফল্যের সঙ্গে’ হজ্ব করে এসেছেন- এমন সুখবরও শুনি। হাসবো নাকি কাঁদবো বুঝতে পারি না। সব চিকিৎসকই কর্তব্যচ্যুত, তা বলছি না। তবে এরাই সিংহভাগ, কর্তব্যপরায়ণেরা ছাগলভাগ। হজ্বে এদের কারণে সাধারণ হজ্বযাত্রীরা তাদের প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এদের পরিবর্তে অমুসলিম চিকিৎসক পাঠালে হয়তো চিকিৎসাসেবা নিরবচ্ছিন্ন হত। কিন্তু মক্কা-মদিনায় যে এ যুগে অমুসলিমদের প্রবেশ নিষেধ! খোদ রাসূলের জমানায় যেখানে অমুসলিমরা নির্ভয়ে থাকতে পারত, সেই আরবে এখন অধিকতর সহীহ ইসলাম কায়েম আছে, ফলে অমুসলিম ডাক্তার পাঠানোর কোন সুযোগ নেই। যদি সে সুযোগ থাকতো, তাহলেও বাংলাদেশ থেকে অমুসলিম চিকিৎসক পাঠানো সম্ভব হত না। এদেশের বিপুল সংখ্যক মুসলিম চিকিৎসক আছেন, যাদের কর্তব্যবোধের চেয়েও ধর্মবোধ প্রখর, তারা এই বাজে সিদ্ধান্ত মেনে নিবেন কেন?

কাজেই আমার চেনা এবং অচেনা যেসব ধর্মপ্রাণ চিকিৎসক হজ্বে যাচ্ছেন, তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। সরকারী পয়সায় বিদেশ সফর চিকিৎসকদের কপালে দুর্লভ- কাজেই অভিনন্দন তাদের প্রাপ্য। তবে তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই- খেজুর, জমজমের পানি, সুরমা,আতর ইত্যাদি কেনাকাটায় সময় নষ্ট করবেন না। হজ্ব হচ্ছে প্রেমের সফর, ফায়দাসর্বস্ব বাণিজ্যযাত্রা নয়। যাদের সেবার জন্য যাচ্ছেন, তাদের শিয়রে আপনার ঈমানের পরীক্ষা হবে। আপনার পরীক্ষা অন্যদের মতো সাফা-মারওয়ার প্রান্তরে নয়, ক্বাবা প্রদক্ষিণে নয়। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ পরীক্ষক আপনার পরীক্ষা নেবেন রোগীর শয্যাপার্শ্বে, হেলথ ক্যাম্পে।

যেহেতু একসময় আপনারা ভালো ছাত্র ছিলেন,
পরীক্ষার সঠিক ভেন্যু চিনে যথাসময়ে উপস্থিত থাকবেন- এটুকুই কাম্য।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.