নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুজিব থেকে হাসিনা এবং ছাত্র-আন্দোলনের ইতিবৃত্ত

২২ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:১২

বহুকাল আগের কথা। দেশ সবে স্বাধীন হয়েছে। খাদ্য সংকটে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। আবাসিক হলের ছাত্রদের খাদ্যাভ্যাসেও তার প্রভাব পড়েছে। ভাতের বদলে তিনবেলা রুটি দেয়া হচ্ছে। ছাত্রদের অনেকেই যুদ্ধ থেকে ফিরে ক্লাসে যোগ দিয়েছে। সবারই তরুণ বয়স, এই বয়সে মা খাবার দিতে দেরী করলে ছেলে রাগারাগি করে বসে, সেখানে হলের ডাইনিংয়ের শক্ত, মজবুত ও টেকসই রুটি ছাত্রদের মুখে সহ্য করার কথা না।

ছাত্ররা আমরণ অনশনের ডাক দিল।

এক দফা, এক দাবি।
রুটির বদলে ভাত চাই, ভাত ছাড়া কথা নাই।

শিক্ষকরা এসে যতই বোঝান ছাত্ররা ততই গোঁয়ারের মত শক্ত হয়ে বসে। ভাত না দেয়া পর্যন্ত কথা হবে না। শিক্ষকরা ঘোরতর বিপাকে পড়লেন। তাঁরা ভাত দেবেন, সেই অর্থ কোথায়, চালই বা পাওয়া যাবে কীভাবে?

দেশের সকল সমস্যার শেষ ভরসা বঙ্গবন্ধু। তাঁকে জানানো হল। নিজের পরিবার কি খায় না খায়- এটা নিয়ে মাথা না ঘামালেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা না খেয়ে আছে, এটা মেনে নেয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। বঙ্গবন্ধু ছুটে এলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনশনরত ছাত্রদের পাশে গিয়ে বসলেন, নরম গলায় পিতৃসুলভ গলায় বললেন, 'কী রে ব্যাটা! খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিস নাকি?'

ছাত্ররা উর্দুতে জবাব দিল, 'হা, হামনে খানা ছোড় দিয়া'।

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতির সামনে উর্দুতে জবাব! মার খেয়ে তব্দা হবার মতো কাজ! কী দুঃসাহস!

কিন্তু মানুষটা যে বঙ্গবন্ধু! তিনি বাবুর্চিদের হুকুম দিলেন, 'রুটি সবজি যা আছে তাই রান্না করো, আমি ছেলেদের সঙ্গে নিয়ে খাবো'। এবার ছাত্রদের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বললেন, 'কেন? খাওয়া ছেড়েছিস কেন? খাবার কী দোষ করেছে? আর উর্দুতে কথা বলছিস যে!'

ছাত্ররা পূর্ববৎ শক্ত গলায় বলল, 'হাম তিন বেলা রোটি খা খাকে পাকিস্তানি হো গেয়া, ইসি লিয়ে উর্দুমে বাত কাররেহে হ্যায়'।

মুজিব আহত গলায় বললেন, 'দ্যাখ বাবারা, দেশের মানুষ খেতে পায় না দু'বেলা। এতো কষ্টের মধ্যেও তোদের তো রুটিটা অন্তত আছে! অনেকের যে তাও নেই! আপাতত একটু কষ্ট কর বাপ, আমি কথা দিচ্ছি চালের ব্যবস্থা করতে পারলেই তোদের জন্য ভাতের ব্যবস্থা করব। আমার জন্য না, অন্তত দেশের কথা ভেবে রাগ করিস না বাপ'।

ছাত্ররা মুজিবকে জানতো, বুঝতো। নিঃস্বার্থভাবে দেশের জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত তরুণ প্রাণগুলো হৃদয়ের গহীনে কোমল অথচ অটল সত্যকে ধারণ করত, সেই সত্যের দর্পণে দেশ ও মুজিব যুগপৎ প্রতিফলিত হত। পরশপাথরের ছোঁয়ায় পাথরও সোনা হয়, দেশের ভালোবাসা তেমনই এক পরশপাথর, যাকে ছুঁয়ে যায় সেই হয় সোনার মানুষ, আলোকিত মানুষ, একেকটা শেখ মুজিব।

মুজিব ছাত্রদের বললেন, 'চল বাপ, দুইটা খাবার মুখে দে। আমিও তোদের জন্য না খেয়ে বসে আছি'।

ছাত্ররা পিতৃতুল্য মুজিবের সঙ্গে বসে খাওয়া-দাওয়া করল। সেই ছাত্রদের একজন অধ্যাপক গাজী আজমল পরিণত বয়সে তাঁর ছাত্রদের কাছে হীরকতুল্য এই ঘটনা বর্ণনা করেন। স্যারের কাছে শোনা এই গল্পের অবতারণার কারন, দেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল নেই, ছাত্ররা মেসে-বোর্ডিংয়ে থেকে পড়াশোনা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। জগন্নাথ হচ্ছেন বিষ্ণু বা কৃষ্ণের রূপ। জগন্নাথ জগতের দেখভাল করলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে দেখার কেউ নেই। ছাত্ররা নিজেদের অধিকারের আওয়াজ তুললে খোদ শিক্ষকরাই ছাত্রদের 'স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি' বলে জেলে পুরে দেয়ার হুমকি দেন। শিক্ষকদের কাছে বিমাতাসুলভ আচরণ পেয়ে ছাত্ররা মাতৃতুল্য শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানাতে রওনা হন।

পথিমধ্যে সরকারের সুযোগ্য ও দক্ষ পুলিশবাহিনী ছাত্রদের উপর রাবার বুলেট, জলকামান ও কাঁদুনে গ্যাস ছোঁড়ে, লাঠিপেটা করে।
ন্যায্য অধিকারের জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের 'সফলভাবে' নিয়ন্ত্রণ করার জন্য হাসিনা সরকারকে অভিনন্দন। মুজিব ছাত্রজনতাকে নিজের সন্তান ভাবতেন। আজকের হাসিনাও হয়তো তা-ই ভাবেন।

মা সন্তানকে পেটাতেই পারে, এতে দোষের কিছু নেই।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৮

সাকিব৭৮৯ বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.