নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সময়ের চিঠিঃ যাত্রা

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২২

‘আমি আর আমি নেই, কি হয়েছি জানা নেই’ - এই লাইনটি কোথায় দেখেছি বা পড়েছি, ঠিক মনে করতে পারছি নে। আজকাল এই এক সমস্যা হয়েছে, যা দেখি দু’দিন বাদে ভুলে যাই। হুটহাট করে মনে পড়ে। তখন মাথায় তীব্র যন্ত্রণা হয়, কোথায় দেখেছি এটা? কোথায় যেন শুনেছি? তোমার জানা আছে? আমার কিন্তু সহজে মনে পড়ে না। তারপর হয়তো হাল ছেড়ে দিয়ে অন্য কিছু করছি, তখন মনে পড়বে সবকিছু। আপনমনেই হাসি তখন, হায় রে বয়স! বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। বার্ধক্য কেবল দেহের নয়, মনেরও অবস্থা বটে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার নিজেকে তরুণ বলে দাবি করেন, আক্ষেপ করেন যে সমাজের অধিকাংশ তরুণ নাকি অকালবৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমার ধারনা আমিও সেই অকালবৃদ্ধের দলে, বোধকরি অকালকুষ্মাণ্ডও বটে। তুমিই বল, কাজের কাজ কিছু করছি? বকুলকন্যাকে নিয়ে উপন্যাসটা শাহবাগ থেকে রমনা অব্দি এলোমেলো পায়ে হেঁটে বেড়ায়, আমার সঙ্গে ওর আর দেখা হয় না। তুহিনের স্ক্রিপ্টটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ির জানালা দিয়ে বিষণ্ণ দৃষ্টিতে হাতিরঝিলের দিকে তাকিয়ে থাকে, খুব কাছাকাছি কোথায় মেঘ হয়ে উড়ে যায় রবির কবিতা। দাদা আজও বেখেয়ালে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তা পার হয়, তন্ময় একের পর এক ফোন ধরে বলতে থাকে হয়ে যাবে সব- কারো বিরুদ্ধে তার অনুযোগ নেই একবিন্দু। পৃথিবীর সুন্দরতম দেশটিতে বিশ্বের সেরা মানুষদের ক’জন মাটির খুব কাছাকাছি বসে আছে, অথচ এই বিশ্ব তাদের খবর জানে না, আসলে তারাও জানাতে চায় না। জীবনে কিছু না পারলেও অন্তত এই মানুষগুলোর গল্প লিখে রাখা যেত, সেটাও বা পারলাম কোথায়! একটা ব্যাপার জানো, গল্পের চরিত্রগুলো মাঝেমধ্যে বাস্তবে এসে দেখা দেয়। হাসে, কাঁদে, মুখের অভিব্যক্তির দিকে তাকিয়ে ওদের কথা বুঝতে চেষ্টা করি, কিন্তু হায়! একটা কথাও বলে না! কেন এই চুপ থাকা? অভিমান? নাকি পুরোটাই আমার কল্পনা?

‘স্যার, কফি দেব?’

ডাক শুনে সম্বিৎ ফিরে পাই। বেয়ারা গরম পানি ঢেলে দিচ্ছে কাপে, আমি হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ি। কফির কাপ নিয়ে সবুজ লনে ফিরে যাই, পৌষের মিষ্টি রোদ সেখানে। প্রফেসর বিবেক একের পর এক গল্প বলতে থাকেন, খেটে খাওয়া মানুষের গল্প, স্যুট পড়া বেনিয়াদের গল্প, দুই গল্পের মাঝখানের মস্ত এক বেদনার্ত মহাকাব্য। উইকিপিডিয়ায় প্রফেসরের নামে পেইজ আছে, একাডেমিশিয়ানরা সচরাচর বৈষয়িক পৃথিবী থেকে দূরে থাকেন, ইনি তার ব্যতিক্রম। আমি একটু উসকে দিয়ে জিজ্ঞেস করি, কেমন লাগে বেনিয়াদের সঙ্গে মিশতে? প্রফেসর হাসেন, কথার স্রোতে তিনি আমায় নিয়ে যান অভিজাত এলাকা থেকে বহুদূরে সেই অবহেলিত মানুষটির কাছে, যার সামনে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই। সেই মানুষটির কাছে ধনতন্ত্রের লুণ্ঠিত সম্পদ পৌঁছে দেয়ার স্বপ্নটি তাঁর চোখে জ্বলজ্বল করে। রিলায়েন্স ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া মিলে ভারতের সর্ববৃহৎ পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ গড়েছে, তাদের লক্ষ্য ভারতের দরিদ্রতম মানুষটির কাছে তথ্য-প্রযুক্তি ও আর্থিক সুবিধা পৌঁছে দেয়া, সেই বোর্ডের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি গল্পের কোন পাশে দাঁড়িয়ে আছেন সেটা দেখে স্বস্তি পাই। রাস্তার ধারে কোন দোকানে ভালো চা কিংবা অমলেট মেলে- আলোচনা সেদিকে গড়ায়। সকালের রোদের উষ্ণতা আমাদের ঘিরে রাখে। আলো ছুঁয়ে যায় তনুমন, সেই আলোকে বলি, একদিন তোমার সঙ্গে আমিও যাবো। আলোর পথ ধরে জগতের সবটুকু আনন্দ যেন অন্ধকারের তিমিরে বসে থাকা মানুষটির কাছে পৌঁছে দিতে পারি, সেই আশাতেই তো বেঁচে থাকা! পারব না বলে স্বপ্নটুকু দেখবার সুখ ছেড়ে দেবো, এমন নির্বোধ আমি নই।
অতীত ও বর্তমানকে সঙ্গে নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকাই। আমার পুরু চশমা তো দেখেছ, খালি চোখে আমায় অন্ধ বললে খুব একটা ভুল হবে না। ভাসা ভাসা চোখে পথ দেখি, পথ চলি। মন মাতানো সৌরভ নাকে এসে আছড়ে পড়ে, আমি থমকে দাঁড়াই। নাম না জানা একটা বিশাল গাছে হালকা বেগুনী রঙের ফুল ফুটেছে। ওহ, কী অসহ্য সুন্দর! আমি চুপচাপ গাছটির নিচে দাঁড়িয়ে থাকি। জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক পূর্ণিমা কোথায় যেন যাচ্ছে, আমায় দেখে মাথা নাড়ল, আমি হাসলাম। হঠাৎ একটা ফুল গাছ থেকে খসে পড়ল, আমি ফুলটা তুলে হাতে নিলাম। ঘ্রাণ শুঁকে অবাক হলাম। একদম ঘ্রাণ নেই। তাহলে এতো সুন্দর ঘ্রাণ কোত্থেকে আসছে? আশেপাশে তো আর কোন গাছে ফুল দেখছি না! কিছুক্ষণ চিন্তা করে দেখলাম, ঘ্রাণটা আসলে ঐ গাছ থেকেই আসছে। একটা ফুলের ঘ্রাণ বোঝা যায় না, কিন্তু হাজারটা ফুল মিলে যে ঘ্রাণ হয় তা অতুলনীয়, অভাবনীয়। আচ্ছা বলো তো, জগতের সব ভালো জিনিসই কী এরকম প্রচ্ছন্ন? একা থাকলে ভালোর শক্তি বোঝা যায় না, অনেকে মিলে যখন প্রকাশিত হয় তখন সেই ভালোর ভুবনমোহিনী সৌন্দর্যে জগত বিস্মিত হয়, পরাভূত হয়। কিন্তু এই সম্মিলনী বড় দুর্লভ, তাই আমরা চারপাশের ভালো মানুষগুলোকে চিনতে পারিনে, ভালো ব্যাপারগুলোকে বুঝতে পারিনে।

নশ্বর এই পৃথিবীতে সবকিছু মন্দ নয়, আজ তোমায় এটুকু নিশ্চিত করে বলতে পারি। চারপাশে তাকালে অনেক ভালোমন্দ তুমি দেখবে। তার মাঝে কেবল ভালোটুকু তুমি চিনে নিও, বুকের গহীনে পুষে রেখো। অন্যের মন্দ নিয়ে ভাববে না, কথা বলবে না, সেটা অনুসরণ করবে না। এতো সুন্দর সুন্দর জিনিস রেখে ওসব ঘেঁটে কী আনন্দ আমায় বলতে পারো? ছোট্ট একটা জীবন, সুন্দর কিছু দিয়েই সেটাকে সাজাও। কেউ হাত বাড়ালে তাকে সেই সুন্দরটুকু নিংড়ে দাও। জগতের কিছুই তোমার নয়, আমার নয়, অন্যের নয়। সূর্যের আলোর মতো কিংবা শীতের উত্তুরে বাতাসের মতো সবকিছু সবার, সব মানুষের সবকিছুতে সমান অধিকার।

এই সাম্যের অভিযাত্রায় আমরা সবাই সহযাত্রী। পথচলায় কখনো অবসর পেলে মেঘের ছায়ায় কিংবা উড়ে যাওয়া প্রজাপতির মায়ায় অবাক দৃষ্টি মেলে ভেবে দেখো, সুন্দরের অন্বেষণে নির্মোহ এই যাত্রাটিও কিন্তু কম সুন্দর নয়!

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৪১

একজন নিশাদ বলেছেন: মস্ত ঘোর

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.