নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হোয়াটসিন টুটুল

হোয়াটসিন টুটুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

চুনীবালা দেবিঃ আশিতিপর কৃতিমান

২১ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৪৩


বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পথের পাঁচালী” সত্যজিৎ রায়ের ১৯৫৫ সালে বড় পর্দার উপস্থাপন দশকদের আফসোস আর হ্রদয়গ্রাহ দুর্দশাগ্রস্ত গ্রামবাংলার অবস্থান নিয়ে এক নব্য চিন্তার অবতার করেছিল আরো ভালোভাবে বললে মোহগ্রস্ত করেছিল। অবশ্য এই ঘোর প্রমাণের জন্য এতো পুরনো কাসুন্দি ঘাটার দরকার নেই, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার নিজের দেখা পথের প্যাচালি মোহগ্রস্ত করেছিল বেশ কয়েক সপ্তাহ। আমার আধুনিক যুগে এতো পুরনো চলচ্চিত্র তেমন একটা দেখা হয়না। তবে গদফাদার ট্রিলজি, চ্যাপলিন সিরিজ, কিংবা মারলন ব্র্যান্ডও, এল প্যাসিনো, মাইকেল ডগলাস আরো অনেক হলিউড প্রচার প্রায় দেখা হতো।

যাইহোক ইন্দর ঠাকুরন চরিত্রে অবসর প্রাপ্ত থিয়েটার অভিনেত্রী চুনিবালা দেবী আমার কাছে তৎকালীন সমাজের সম্পূর্ণ এক রুঢ় বাস্তবতার প্রতিছবি। মনে হলো যেন আমার গ্রামের পাশের বাড়ির গপ্পো। গুগল নথি ঘেঁটে যতটুকু জানতে পারি এই চলচ্চিত্র তৈরি করতে সময় লেগেছিল পাক্কা তিন বছর। কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায় একজন আশিতিপর অভিনেত্রীর খোঁজ করছিলেন কিন্তু কাউকে সেভাবে মেলাতে পারছিলেন না। শেষে অভিনেত্রী রেবা দেবি যাকে ছবিতে মুখার্জি বাড়ির অধিকত্রি চরিত্রে দেখানো হয়েছে তিনি কলকাতার রেড লাইট ডিস্টিকের সাবেক অভিনেত্রীর নাম প্রস্তাব করেন আর পরিচালক প্রথম সাক্ষাতেই ইন্দ্রর ঠাকুরন পেয়ে যান। এরপর নুজ্জদেহী এক বৃদ্ধার সমস্ত অভিনয় সত্ত্বার এক অনবদ্য উপাখ্যান। সেটা সুরভিত হয়েছে বেঁচে থাকার জন্য দূর সম্পকের ভাইপো হরিহর পুরোহিতের বাড়িতে শত টানা পোড়নেও অটুট আটকে থাকা, দুর্গার পাশের বাড়ির ফল চুরির মিষ্টি হাসি, অপুকে আতুরপর দেখাশোনা আর সবশেষে বাশবাগানে নিদারুণ মৃত্যুর উপস্থাপন একবারের জন্য বুজতে দেয়নি উনি জীবিত আশিপর বৃদ্ধা।

মেথড অভিনয়ের কোন পর্যায়ে গেলে এমনটা সম্ভব তা আমার জানা নাই। চুনীবালা দেবী চলচ্চিত্রে অভিষেক হন ১৯৩০ সালে বিগ্রহ ছবিতে। এরপর দুএকটা চলচ্চিত্র করলেও তেমন নাম শোনা যায়নি। এমনকি উনি নিজে পথের পাঁচালী জীবিত অবস্থায় দেখে যেতে পারেনি। তবে সত্যজিৎ রায় প্রজেক্টরের মাধ্যমে উনার বাড়িতে পুরো ছবিটি দেখিয়েছিলেন কিন্তু চুনীবালা দেবীর জানা হলো না কি ইতিহাস বা কৃতিই না করেছেন। ভারতীয় তথা সমগ্র বাংলার প্রথম অভিনেত্রী হিসেবে আন্তজাতিক পুরষ্কার জিতেন (ম্যানিলা ফিল্ম ফেস্টিবাল)। শুধু বাংলায় তার দ্রুতি ছড়ায়নি কানসহ নামকরা সব ফেস্টিবালে পথের প্যাচালির সাথে চুনীবালার অভিনয়ের মোহ সকলকেই গ্রাস করে, সত্যিই এটা সত্যজিৎ রায়ের অপরূপ সৃষ্টি। ১৯৫৮ সালে নিউইয়কে মুক্তির পর নিউইয়ক হেরাল্ড ট্রিবিউন চুনীবালাকে শ্রদ্ধায় লিখেছিল “fantastically realistic and effective as the ageing crone”। চুনীবালা দেবী মারা যান ১৯৫৫ সালে কিন্তু তার ব্যাপারে জানার জন্য সত্যজিৎ রায়কে প্রায় প্রতিটি ইন্টার্ভিউতে বলার জন্য বলা হতো। এটা যেন একটা রূপকথার চরিত্র যেটা মনে গেথে গেছে অভিলাষ হয়ে না তাও পথের পাঁচালীর ৬০ বৎসর পর।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৫৬

নিকোলাস- রাহাদ বলেছেন: :(

২| ২১ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:২৬

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: “পথের প্যাচালি" নয় নামটা (পথের পাঁচালী(চলচ্চিত্র) - উইকিপিডিয়া) হবে।

পথের পাঁচালী গল্প পড়ে খুব একটা খারাপ লাগেনি কিন্তু ছবিটি দেখে চোখে পানি চলে এসেছিল।

৩| ২১ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৫১

আখেনাটেন বলেছেন: শেষের ছবিটা তো মারাত্মক। আগের যুগে চলচ্চিত্রে মেয়ে অভিনয় শিল্পিরা সমাজে খুব একটা ভালো পর্যায়ে ছিল না। সে জন্যই বোধ হয় চুনীবালার এই...।

৪| ২২ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:১২

পার্থ তালুকদার বলেছেন: ছবিটা মনে গেঁথে আছে ...
আরেকটু বিস্তারিত লিখলে আরো জানতে পারতাম।
ধন্যবাদ

৫| ২২ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:১৯

হাসান রাজু বলেছেন: মনে করিয়ে দিলেন ।

মনে হলো যেন আমার গ্রামের পাশের বাড়ির গপ্পো। - সত্যি, একটু চোখ খুলে দেখলেই আমাদের আশেপাশে এমন কি ঘরে ও আজও আছেন এই বৃদ্ধা ।

৬| ২৪ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:০৯

ফাহমিদা বারী বলেছেন: আহারে জীবন! সিনেমাটা দেখে কাঁদেনি কিংবা বুকে হাহাকার জাগেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বোধকরি দুষ্কর।
অসাধারণ! অসাধারণ এক সৃষ্টি!
একটা বিষয় কি জানেন? সিনেমাতে সর্বজায়া (অপু দুর্গার মা) আর দুর্গার ছবিতে রূপদানকারী দুজনে কিন্তু বাস্তবেও মা মেয়ে। একটা দূর্লভ আর্টিকেল পড়েছিলাম তাদের নিয়ে। দুর্গা সম্ভবত আর কোন চলচ্চিত্র করেননি। সর্ব্জায়া চরিত্রে রূপদানকারিনী অভিনেত্রী আরো দুএকটিতে অভিনয় করেছেন। বাস্তবে খুবই আধুনিক একজন রুচিসম্মত মানুষ ছিলেন তিনি।

৭| ২৫ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:৩২

তারেক ফাহিম বলেছেন: শেষের কয়েক পৃষ্ঠা এখনও পড়তেছি, ৩য় বারের মত।

ভালোলাগে পড়তে।

৮| ২৫ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৮

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: আমি তখন ক্লাস ফাইবে পড়ি,পথের পাঁচালী দেখে প্রচন্ড কেঁদেছিলাম।বাড়ির লোকেদের হাজার বোঝানোতেও মন বোঝেনি।সেদিনের সেই কিশোর মনে সিনেমা ও বাস্তবের মধ্যে পার্থক্য বোঝার ক্ষমতা ছিল না।আজও সেই ছবি প্রসঙ্গে উদাস হয়ে পড়ি। ফিরে পাই যেন নিজের কৈশরকে।ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা অনন্ত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.