নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি খুব সাধারন ভাবে চলাফেরা করতে ভালোবাসি। আর নিজের সম্পর্কে এর চেয়ে বেশী কিছু বলার নেই। কারন প্রতিনিহিত নিজের মাঝে কিছু না কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করি।

মোঃ হৃদয় শেখ

স্বপ্ন দেখি নিজ চোখে......... আকাশ দেখি আপন মনে। আমি হে আমি আমার কৃতিকরমের জন্য গর্বিত।

মোঃ হৃদয় শেখ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুসংস্কার নিয়ে বসবাস !

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৪

আমরা একটা কাজ খুব ভালো পারি, আর সেটা হচ্ছে অন্ধবিশ্বাস। সেটা যদি হয় কুসংস্কার তাহলে তো বলার কিছু রাখেনা। আমরা নিজেদের চেয়ে বেশী বিশ্বাস করে থাকি সমাজের তৈরি কিছু কুসংস্কার গুলকে। যুগ যুগ ধরে শুধু আমরা শুনেই আসছি যার সঠিক কোন বিশ্লেষন নেই।

পরীক্ষার পূর্বে ডিম খাওয়া যাবেনাঃ ছাত্রজীবনের পঞ্চম শ্রেনী থেকে প্রতি শনিবার পরীক্ষা। এর মাঝে ক্লাস টেস্ট, মাসিক পরীক্ষা, সেমিস্টার পরীক্ষা। জীবনটাই একটা পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়ে। আর এর মাঝে আমাদের সমাজে একটা মজার সংস্কার আছে থুকু কুসংস্কার আছে পরীক্ষার পূর্বে ডিম খাওয়া যাবেনা, তাহলে নাকি পরীক্ষা ডিম পাবে।

দোকানের প্রথম কাস্টমারঃ ছাত্রজীবনে পড়ালেখার পাশা পাশি বাবার দোকানে বসে তাকে সাহায্য করতাম। আমার কাজ ছিল শুধু প্রতিদিন সকালে দোকান খুলে দিয়ে আশার। বাবা প্রাই একটা কথা বলতেন “দোকানের প্রথম কাস্টমার ফেরত দিতে নেই”। সকালে প্রাই এমন হয়েছে প্রথম যে কাস্টমার এসেছে তার চাহিদা অনুযায়ী পন্য দেওয়ার সামর্থ্য আমার ছিলনা। তাই আমি তাকে নিরাস করেছি, কিন্তু এতে আমার ব্যবসার কোন ক্ষতি হয় নি।

হাতের তালু চুলকানো : ডান হাতের তালু চুলকালে টাকা আসবে। আর বাম হাতের তালু চুলকালে বিপদ আসবে। এটা হচ্ছে মানুষের একটা অন্ধবিশ্বাস। এমন যদি হত তাহলে মানুষ অনেক অসাধ্যকে স্বাধ্য করতে পারতো। তাহলে হয়তো আজ আমি বিলগ্রিড এর চেয়ে বেশী ধনী থাকতাম।

পিছন থেকে ডাকা : ঘর থেকে বের হলে পেছন ফিরে তাকানো নিষেধ। তাতে যাত্রা ভঙ্গ হয় বা অশুভ হয়। আমার ছোট বোনের একটা মুদ্র্যা দোষ আছে। যখনি ঘর থেকে বের হতে নিবো তখনি কিছু না কিছু মনে পরবে আর ডাকা ডাকি শুরু হবে, আজ পর্যন্ত আমার যাত্রা অমঙ্গল হয় নি। আর অনেকে নাকি পিছন থেকে ডাকার কারনে যাত্রা বন্ধও করে দেন।

কথার মাঝে টিকটিকি ডাকা : এখনো মনে আছে যখন ক্লাস সিভেনে পড়ি গনিতে আর বিজ্ঞানে রেজাল্ট অনেক খারাপ হয়েছিল। রাতে মা পড়ার টেবিলে এসে জিজ্ঞাস করলেন, “কিরে খাতা দেই নি” ? না মা খারা দেই নাই। এমন সময় টিকটিকি ডাকা শুরু করলো ঠিক ঠিক ঠিক। মা আর কিছু বললেন না চলে গেলেন। টিকটিকির আওয়াজ “কথা সত্য” এমন সাক্ষ্য হিসাবে ধরা হয়। তাই মনে হয় সেদিন প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলাম।

রাতে ঘরের বাইরে পানি না ছোড়া : আমরা খুব কমি গ্রামে যেতাম। গেলেও শুধু ঈদের ছুটিতে গ্রামে যাওয়া হত। আমার দাদু খুব রাগি আর অন্ধবিশ্বাসি লোক ছিলেন। গ্রামের অনেক কুসংস্কার তিনি বিশ্বাস করতেন। রাতে খাওয়াদাও করতাম আমরা গেটের সাথেই টেবিল আমি খাওয়ার পর পর হাত ধুয়ে থালার পানি বাহিরে ছুড়ে দেয়ার সাথে সাথে বিকট এক চিৎকার দিয়ে উঠলেন। আমি এ কি করলাম। শহরে থেকে থেকে আমি সব কিছু খেতে বসেছি। হাত ধোয়ার পানি ঘরের বাইরে ছুড়ে ফেলা হয় না। সংস্কার আছে, রাতে এভাবে পানি ফেলা ঠিক না। এতে নাকি অমঙ্গল হয়।

মরা গাছে কাক ডাকা : কাক হচ্ছে কুশ্চিত প্রাণী। কাক কারো সু-সংবাদ বয়ে নিয়ে আসতে পারেন না। কাককে নিয়ে অনেক ধরনের কুসংস্কার আছে। মরা গাছে কাক ডাকা মানে নাকি কারও মৃত্যু সংবাদ নিয়ে আশা। কাককে নিরগাত যমধূত বলা যায় তাহলে। আর এর পর থেকে এই যমধূতকে তাড়ানোর প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন সবাই আসলেই ঝাটা পেটা হবে। কিন্তু যমধূতকে তাড়িয়ে কি আর মৃত্যুকে ঠেকিয়ে রাখা যায় !

গভীর রাতে পেঁচার ডাকঃ আমরা সবাই জানি পেঁচা দিনে দেখেনা রাতে দেখে। তাহকে পেঁচা রাতে ডাকবে এটাই স্বাভাবিক। এই কথা জানার পরেও অনেকে গভীর রাতে পেঁচার ডাককে ঝগড়া-বিবাদের সংকেত মনে করেন। পেঁচা রাতে মাটি কামড়ে নাকি ঝগড়া বাড়িয়ে দিতে চায়। বাস্তবে ইঁদুর শিকারের জন্য রাতে পেঁচা মাটিতে নেমে আসে।

রাতে বিশেষ কিছু হস্তান্তর না করা : রাতের বেলা কাউকে সুই-সুতা, টাকা, চুন, হলুদ জাতীয় কিছু না দেওয়ার রেওয়াজ আছে। তাই গেঞ্জি ও গামছা ছিঁড়ে গেলে রাতে সেলাই করেন না অনেকে। রাতের বেলা কাউকে চুন ধার দিলে চুন না বলে দই বলা হয়।

জোড়া কলাঃ কলা প্রাকৃতিক সম্পদ। জোড়া কলা হওয়া এটা পকৃতির ইচ্ছা। আর আমরা বিশ্বাস করি যে জোড়া কলা খেলে নাকি জোড়া সন্তান জম্ম নিবে। তাহলে মানুষ সুখী দাম্পত্তি হওয়ার আশায় জোড়া কলা খেয়েই পরিবার পরিকল্পনা করতেন।

চোখের কোনে গোটা ওঠাঃ চোখ উঠলে কিংবা চোখের কোনে গোটা ওঠলে নাকি ছোট বাচ্চাদের নুনু লাগাইলে সুস্থ হয়ে যাবে আস্তে আস্তে। তাহলে কি বড় বাচ্চাদেরটা লাগালে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে ?

ব্যাঙের ডাকঃ ব্যাঙ ডাকলে নাকি বৃষ্টি হয়। আমি আজও বৃষ্টি হওয়ার আগে ব্যাঙের ডাক শুনিনি বরং বৃষ্টির পরে খালে বিলে ব্যাঙের ডাক অনেক শুনেছি !

বিধবা নারী চোখে পড়াঃ ঘর থেকে বের হওয়ার সময় যদি বিধবা নারী চোখে পরে তাহলে যাত্রা অশুভ হবে। বিধবাদের চলার জন্য নতুন রাস্তা করতে হবে না হয়, বাড়ীর সামনে বিলবোর্ড কিংবা সাইন বোর্ড টানাতে হবে এই পথ দিয়ে বিধবা হাটা নিষেধ ( সকাল ৮ ঘটিকা হতে ১০ ঘটিকা অবধি)।

নতুন কাপড়ঃ নতুন কাপড় পরিধান করার পর পিছনে তাকাইতে নাই। এই ধরনের কুসংসার দিয়ে বরে আছে আমাদের সমাজ। যেখানে নতুন কাপড় কেনার আগেই দুশ্চিন্তা চলে আসবে।

খানার পর গাঁ মোচড় দিলেঃ খানার পর যদি কেউ গা মোচড় দেয়, তবে বলা হয় খানা না কি কুকুরের পেটে চলে যায়। এটা নতুন টেকনোলজির কোন বিশেষ ডাটা প্রসেসিং সিস্টেম নাকি বাংলাদেশে বসে ক্লিক করলাম চীন গিয়ে পৌছাবে।

যাত্রা সময় খালি কলস দেখাঃ কোন ব্যক্তি বাড়ি হতে বাহির হলে যদি তার সামনে খালি কলস পড়ে যায় বা কেউ খালি কলস নিয়ে তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করে তখন সে যাত্রা বন্ধ করে দেয়, বলে আমার যাত্রা আজ শুভ হবে না।

মাথায় শিং ওঠাঃ একজন অন্য জনের মাথায় টোকা খেলে দ্বিতীয় বার টোকা দিতে হবে, একবার টোকা খাওয়া যাবে না। নতুবা মাথায় ব্যথা হবে না হয় শিং উঠবে।

চুন না বলে ধই বলাঃ রাতের বেলা কাউকে চুন ধার দিলে চুন না বলে ধই বলতে হয়।

বালা বা চুড়ি না পড়াঃ মহিলাগণ হাতে বালা বা চুড়ি না পড়লে স্বামীর অমঙ্গল হবে।

বেচা কেনা বিজোড় সংখ্যায়ঃ বেচা কেনার সময় জোড় সংখ্যা রাখা যাবে না। যেমন, এক লক্ষ টাকা হলে তদস্থলে এক লক্ষ এক টাকা দিতে হবে। যেমন, দেন মোহর (কাবীন) এর সময় করে থাকে, একলক্ষ এক টাকা ধার্য করা হয়।

আমাদের দেশের বহু গ্রামে এই ধরনের আরো অনেক কুসংসার প্রচলিত আছে। যা প্রতিদিন তাঁদের দৈনিক কাজের সাথে ব্যবহার করে থাকে। মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সমাজে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য কুসংস্কার থেকে এখানে কয়েকটি মাত্র উল্লেখ করা হয়েছে। কুসংস্কার থেকে আমরা দূরে থাকি। সুন্দর কুসংস্কার মুক্ত জাতি হয়ে উঠি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.