নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন বিশিষ্ট সাইকো

আবু রায়হান ইফাত

একজন বিশিষ্ট সাইকো, নির্জনতা প্রিয় অদ্ভুত প্রকৃতির একজন মানুষ, মাঝে মাঝে আত্মমস্তিষ্কে এমন কিছু কল্পনা করি যা হয়তো কারো নিকট ভিত্তিহীন, কিন্তু আমার নিকট মহামূল্যবান ।

আবু রায়হান ইফাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্যগল্প - স্বপ্ন

১৫ ই মে, ২০১৮ রাত ১০:০১


দিনটা পুরাই বিদঘুটে আজ, ক্যাম্পাস অফ । ভেবেছিলাম অফডে যেহেতু তাই ফার্মগেট থেকে ঘুরে আসবো। ভার্সিটি এডমিশন নিতে আসা কিছু ছোট ভাই ফার্মগেটে কোচিং করতে এসেছে, তাদের নিকট যাবো যাবো বলে আর যাওয়া হয় না সময়ের অভাবে।

ছোটবেলায় যখন প্রাইমারিতে পড়তাম তখন ভাবতাম হাইস্কুলে হয়তো পড়াশুনার চাপ নেই, হাইস্কুল মানেই ঘুরে বেড়াও আড্ডাবাজী আরও কত কি।
হাইস্কুলে আসার পর নিমিষেই হারিয়ে গেলে সেই ধারণা, প্যারা ইজ অন।
ভাবলাম হাইস্কুলের হয়তো নিয়ম পাল্টে গেছে তাই এমন মনে হয়। কলেজে উঠলে হয়তো জীবনধারা পাল্টে যাবে আহা কত স্বপ্ন তখন মনে। রাজনীতি করবো, বাইকে কলেজ ক্যাম্পাসে যাবো আর সুন্দরী রমনীরা প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়বে। কেউ গোলাপ নিয়ে সামনে এসে বলবে ভালোবাসি, আবার কেউ করবে চিরকুটের আদান প্রদান।
মাধ্যমিক শেষ করে একসময় সেই অপেক্ষার অবসান ঘটলো, আহা গেবন সুন্দর ।

বেশ সেঁজেগুজেই প্রথমদিন কলেজ ক্যাম্পাসে যাওয়া তার উপর সাথে এপাচি আর টি আর ১৫০ সিসি বাইক। ভাবে তখন চুলগুলো আকাশে উড়ে।
কিন্তু ক্যাম্পাসে গিয়ে এতটাই নিরাশ হতে হবে যা কল্পনাতীত।
একটা কাকপক্ষীও তাকিয়ে দেখলো না, সুন্দরী রমনী তো দূরে থাকুক।
হতাশ হলাম না, নিজেকে মানিয়ে নিলাম প্রথমদিন তো তাই আরকি এমন। দ্বিতীয়দিন থেকে ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু সেই একই হাল।
নিজেকে প্রতিদিনই মানিয়ে নিতাম আজ হয়নি তো কি হয়েছে কাল হয়ে যাবে ।

এরই মাঝে চোঁখে বাধে এক অনন্য সুন্দরী রমনী, একই বর্ষের তবে বিভাগটা ভিন্ন ছিলো। সে ছিলো বিজ্ঞান বিভাগের আর আমি মানবিকের ।
ছোট বেলা থেকেই ইচ্ছে মানবিক নিয়ে পড়ার কেননা অনেক বড়ভাইরা বলতো মানবিকে নাকি পড়তে হয় না ।
যদিও বড়ভাইদের কথার মিল পরে আর পাওয়া যায়নি। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা ব্যাংক কর্মকর্তা হওয়ার ইচ্ছে আমার ছিলো না।
আমার চিন্তা ছিলো উড়ে বেড়ানো, তাই মূলত মানবিক নিয়েছি। যদিও ফ্যামেলির এতে আপত্তি ছিলো। পড়াশুনা না করলেও খারাপ ছাত্র ছিলাম না কখনো, বরাবরই রেজাল্ট প্রথমসারির দিকে ছিলো। আর ভালো রেজাল্টে বাবা মায়ের আত্মবিশ্বাসও দিন দিন বাড়তে লাগলো ছেলে একদিন ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবে।
কিন্তু বাবা মায়ের স্বপ্ন সেদিনই মাটির সাথে বিলিয়ে গেলো যেদিন ক্লাশ নাইনে উঠে বাবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে মানবিকে ভর্তি হলাম।

সাইন্সে পড়ুয়া মেয়ে ভাব একটু বেশিই থাকে, তাই কৌশলে আগাতে হবে বুঝলাম।
কয়েকদিন লাইন মারালাম কোনো গতি হলো না। এরই মাঝে শুনতে পেলাম কলেজ ভিপির সাথে মেয়েটির চলছে। আকস্মিক এমন বজ্রপাতে হৃদয়টা ভেঙ্গে দিলো, আহা জীবন এতো কষ্টের কেনো. ?

রাগে ক্ষোভে মাথা দিয়ে আগুন বেরুতে লাগলো, শালার কলেজ ভিপি না বলে আজ পর্যন্ত একটা প্রেম করতে পারলাম না ।
কলেজ ভিপি হতে হবে আমাকে, যেহেতু কলেজে ইন্টারমেডিয়েট পর্যন্তই আছে সেহেতু সেকেন্ড ইয়ারের কেউই কলেজ ভিপি নির্বাচিত হয় সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের ভোটে।
লক্ষ্য এখন কলেজ ভিপি হওয়া, কলেজের সাবেক বড় ভাই একসময় তিনি কলেজ ভিপি ছিলেন, তিনি এলাকার বড় হওয়ায় তার দারস্থ হলাম কিভাবে ভিপি হতে পারবো ।
তার পরামর্শক্রমে একটা সার্কেল তৈরি করলাম আর বাংলা স্যারের খুব অনুগত হয়ে গেলাম ।
বাংলা স্যারই কলেজ ভিপি নির্বাচনের কাজ করে থাকেন।
স্যারের নিকট সার্কেল নিয়ে বাংলা প্রাইভেট পড়তে যাওয়া এবং স্যারের নানাবিধ কর্ম করে দেওয়া সবকিছুতেই আমার এবং সার্কেলের অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকতো। স্যার ও মহা খুশি আমাদের পেয়ে। কিন্তু বেচারা হয়তো বুঝতে পারেনি এতো অনুগত হওয়ার পিছনের রহস্য কি.?

যাই হোক সেকেন্ড ইয়ারে উঠে গেলাম, বর্তমান ভিপির কার্যকাল শেষ। এইচএসসি এক্সাম শুরুর এক মাস আগেই ভিপিকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হয়।
ভিপি নির্বাচনের সময় আসলো মানবিক থেকে আমি একাই প্রার্থী হলাম, বাকীদের সিঙ্গারা ভোজনে প্রার্থী হওয়া থেকে ধমিয়ে রাখলাম।
বিজ্ঞান থেকে দুইজন তার মধ্যে ওই মেয়েটিও ছিলো, কোন উদ্দেশ্যে মেয়েটি প্রার্থী হলো তা আল্লাহই ভালো জানে। ভোটে জয়লাভ করলেও ভিপি যে সে হবে না তাতে শিউর ছিলাম। তার উপর সাইন্স থেকে প্রার্থী দুইজন তাই তাদের ভোট ভাগ হয়ে যাবে সুতারং সাইন্স থেকে আর ভিপি হবে না নিশ্চিত।

ব্যাবসা শিক্ষা বিভাগ নিয়ে সমস্যার তৈরি হলো, সে বিভাগ থেকে একজন প্রার্থী এবং তাদের বিভাগে স্টুডেন্ট সংখ্যাও বেশি।
তাতে দমিয়ে না রাখতে পারলে আমার ভিপি হওয়ার স্বপ্ন শেষ।
খুঁজতে লাগলাম দূর্বলতা কোথায়।
টানা তিনদিন তারার পিছনে গোয়ান্দাগিরি করার পর জানতে পারলাম তার দূর্বলতা দুইটি জায়গায়।
প্রথমত আমাদের মানবিকের সুস্মিতা নামের মেয়েটি আর দ্বিতীয়ত ছেলেটি বাইকের প্রতি দূর্বল কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত ছেলেটি বাইকই চালাতে পারে না।

এই দুই দূর্বলতা আমার ভিপি হওয়ার পথ আরো সুগম করে দিলো, প্রথমেই সুস্মিতা কে বললাম চল তোরে আজ বাইকে ঘুরাবো । সুস্মিতা প্রথম দিকে অবাক হলো, মাত্র কয়েকদিন আগে বলছিলো ক্যাম্পাসে মাঠের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে বাইকে করে ঘুরাতে কিন্তু নির্দয়ের মতো তাকে সেদিন পারবো না বলেছিলাম।
সুস্মিতা বললো তুই বাইকে ঘুরাবি আমারে.? কাহিনী কি এর পিছনে ..?
আমি বললাম : দোস্ত তুই আমারে একটু হেল্প করতে হবে
সুস্মিতা বললো : কি..?
আমি বললাম : ব্যাবসা শিক্ষার মেহেদিকে তো চিনিস.? ( ছেলেটির নাম মেহেদি ছিলো)
সুস্মিতা বললো : হ্যাঁ, তোর প্রতিদন্ধী। বল কি করতে হবে. ?
আমি বললাম : মেহেদি যে তোর প্রতি দূর্বল তুই জানিস.?
সুস্মিতা বললো : হ্যাঁ, তাতো প্রথম বর্ষ থেকেই জানি, এখন কি করতে হবে বল. ?
আমি বললাম : দোস্ত, তুই মেহেদির সাথে দেখা করবি এবং বলবি নির্বাচনের দিন যাতে সে ভোট চলাকালীন সময়ে ভোট বর্জন করে আর তার সমর্থকদের বলে দিবে আমাকে ভোট দিতে এটুকো করতে পারবি.?
সুস্মিতা বললো : এটা কোনো ব্যাপার হলো , আজকেই ডিল ফাইনাল। এখন আমারে ঘুরাতে নিয়ে যা।

এক ঢিলেই কাবু মেহেদি, দ্বিতীয় ঢিলটা আর ছুড়তে হয়নি। ভোট গ্রহনের দিন ভোট গ্রহন শুরু করার ত্রিশ মিনিটের মাথায় মেহেদি ভোট বর্জন করে আর বিশাল ব্যাবধানে জয়ী হয়ে আমি কলেজের ভিপি হই।
তবে মজার কথা হলো সুস্মিতা আর মেহেদির রিলেশন এর বয়স এখন চারবছর, এমনকি দুই পরিবারের সমতাতে তাদের বিয়েও ঠিক।
এখনো তাদের সাথে ফোনে কথা হলে বলে- তোর ভিপি হওয়ার ফন্দিতে আমাদের আজ বিয়ে পর্যন্ত ঠিক। তুই পারিস মামা ।
যাই হোক ভোটে জয়ের পর শপথ গ্রহন করে কলেজ ভিপি হলাম, নতুন ব্যাচ ও আসলো কিন্তু কপাল আর খুললো না।
জুনিয়র মেয়েগুলা যখন ভাইয়া ভাইয়া ডাকে তখন হৃদয়ের মাঝে তীর বিঁধে যায় ।
পড়াশুনার চাপও বাড়তে লাগলো, বিন্দাস লাইফ শেষ।
এলাকার বড় ভাইরা বলে কষ্ট করে ভার্সিটিতে এডমিশন নে তার পর তুই পুরাই স্বাধীন।
কলেজ শেষ করে ভার্সিটিতে এসে এখন মন চায় সেই বড় ভাইদের মনভরে গালি দিতে, কোনো লাইফেই শান্তি নাই শুধু প্যারাটাই সত্যি। কোন মুখে তারা বলছিলো ভার্সিটিতে যাওয়ার পর মানুষ স্বাধীন।
এখন সময়ও পাওয়া যায় না ঠিক মতো, ক্লাশ, এসাইনমেন্ট , আর এক্সামের পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে জীবন শেষের পথে।

ক্যাম্পাসে অফডে যাবো ফার্মগেট কিন্তু আকাশের অবস্থা গুরুতর,
ভীষণ মেঘাচ্ছন্ন, অন্ধকার নেমে এসেছে। ধানমন্ডি থেকে ফার্মগেট যেতে হবে লেগুনা দিয়ে । বাসা থেকে বের হয়ে স্টার কাবাবের দিকে যাবো সিড়ি বেয়ে তিনতলা থেকে নিচে আসার পরই বৃষ্টি নামা শুরু করলো। কি করবো আর সিড়ি বেয়ে আবার তিনতলায়।
বাসায় পৌঁছে দেখি বিদ্যুৎ অক্কা পেয়েছে, তার মানেও নেট ও নাই। মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে হুমায়ূন আহমেদ স্যারের মধ্যাহ্ন পড়তে বসলাম। দেখতে পেলাম বিংশশতকের সামাজিক বৈষম্য। মুসলিম শিশু জহিরকে কোলে নেওয়ায় হরিচরণের সমাজচ্যুত হওয়ার গল্প।

হঠাৎ মাথায় বিয়ের ভুত চেপে উঠলো, বিয়ে করবো। জীবনে ২২ বছর অতিক্রম করে আসলাম অথচ এখনো একটা রিলেশন করতে পারি নাই, তাই শেষ ভরসা বাবা মা। যদিও ইচ্ছে ছিলো পালিয়ে বিয়ে করার কিন্তু পালাবো কাকে নিয়ে তাকেই তো পেলাম না। তাই বাবার শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া আর উপায় নাই।

খুব ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুকে নিয়ে ছুটে গেলাম বাবার নিকট, খুব সুন্দর করেই বন্ধু বাবার নিকট উপস্থাপন করলো ব্যাচেলর জীবনের গল্প। বাবা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লো। বললো আগে বলি নাই কেনো।
মনে মনে বলি এমন যদি জানতাম তাহলে কি আর না বলে থাকতাম।
বাবা বললো চল এখনই মেয়ে খুঁজতে যাবো।
দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমে আসলো কিন্তু মেয়ের খোঁজ আর মিললো না।
ব্যার্থ হয়ে বাসায় ফিরতে যাবো এমন সময় বাবার এক বন্ধুর সাথে দেখা মিললো, বাবা তার বন্ধুকে বললো ছেলের ব্যাচেলর লাইফের গল্প। বাবার বন্ধু বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো আরে চিন্তা কিসের.?
তুই কি ভুলে গেছিস তোর ছেলের সমবয়সী আমারও একটা মেয়ে আছে।
বাবাও খুশি, বাবার বন্ধুও খুশি আর আমি তো মহাখুশি এবার বুঝি সিঙ্গেল জীবনের অবসান ঘটবে। সিঙ্গেল থেকে মিঙ্গেল হওয়ার জন্য জীবনে কত কিই না করলাম কিন্তু ফলাফল শূন্য।

বাজার থেকে মিষ্টি কিনে সোজা বাবার বন্ধুর বাড়িতে। আবেগাপ্লুত হয়ে আমি গিয়ে দরজায় নক দিলাম আর বাবার বন্ধুর মেয়ে এসে দরজা খুলে বললো আরে ভাইয়া আপনি..?
কোন কপাল নিয়ে জম্মালাম মাইরি, কনে দেখতে আসলাম আর কনেই বলে ভাইয়া আপনি এখানে.?
ভাইয়া ডাকটা জীবনটাকে ত্যানাত্যানা করে দিসে, ভাইয়া ডাকের কারণে আজ পর্যন্ত মিঙ্গেল হতে পারি নাই। আর এখানেও মেয়েটা ভাইয়া বলে ডাকলো কলিজাটা ছিড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো।

মেয়েটি দেখতে সুন্দরী ছিলো, অপরূপ রূপ তাহার। লম্বা এবং পাতলা দেহের মাঝে ছিলো একঝাঁক ঘন লম্বা কেশ। আমার দূর্বলতা মেয়েদের লম্বাকেশেই। জীবনে যতগুলা ক্রাশ খেয়েছি সবগুলা লম্বা কেশের উপরেই খেয়েছি। মেয়েটির পাশ কাটিয়ে বাসায় গেলাম বাবা, আমি এবং সেই বাল্যবন্ধু । আমার হবু শ্বশুর আইমিন মেয়েটির বাবাও বাসায় প্রবেশ করে ভিতরের দিকে গেলো। কিছুক্ষণ পরেই আবার ভিতরের রুম থেকে বেরিয়ে এলো। সাথে মেয়ের ছোট ভাইও আসলো হাতে পিঠা, শরবত আর মিষ্টির থালা নিয়ে। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যই পিঠা এবং মেহমানের খাতির করা।
মিষ্টি আবার আমার বেশ পছন্দের এমনও আছে একদিন বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডারএর ১৮টা কালোজাম একাই একবসায় খেয়েছি।
আমি মিষ্টিই খেতে লাগলাম, বাবা আর বাবার বন্ধু কথা বলতেছে এরই মধ্যে মেয়েটি নীল রঙের শাড়ী পরে কপালে কালো একটি টিপ দিয়ে আমাদের সম্মুখে হাজির।
অপশরীর মতো লাগছিলো তাকে, ওহ নাম বলতেই তো ভুলে গেছি মেয়েটির। মেয়েটির নাম তুর্না, বাবার বন্ধুর মেয়ে বিধায় পূর্বপরিচিত, আর সেই পূর্বপরিচিত হওয়াতেই ভাইয়া বলে ডেকে কলিজার ব্যাথা বাড়িয়ে দেয়া। আমার এক ব্যাচ জুনিয়র । ঢাকাতেই পড়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তুর্নাকে এই প্রথমই ভাবলাম ভীষণ পছন্দ হলো। আর আপসোস হলো আগে কেন তুর্না আমার ভাবনায় আসলো না।
আমার গুনধর বাল্যবন্ধু বাবাকে বলে, আঙ্কেল দুজনকে বলেন বারান্দা থেকে নিজেদের মধ্যে কোনো কথা থাকলে বলে নিতে, না হয় পরে সুযোগ পাবেনা।
বাবা বললো - তাইতো, যাও মা তোমরা দুজনে নিজেদের জানার জন্য একান্তে কিছু সময় কাটাও।
একি! একান্তে সময় কাটাতে বাবা বললো. ? এ দেখি মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। একান্তে সময় কাটানোতে বাবা কি বুঝিয়েছে আবার, অন্য কিছু না তো..?

তুর্না উঠে দাড়ালো এবং বললো - ভাইয়া এদিকে চলেন।
আবার ভাইয়া! এ কেমন কপাল আমার বিয়ের পরও হয়তো এই মেয়ে আমারে ভাইয়া বলে ডাকবে। এই ভাইয়া ডাকটা জীবনটা শেষ করে দিলো।
কি আর করার মেয়েটা সহ ভিতরের ঘরের বারান্দার দিকে গেলাম, ওয়েদারটাও তখন কেমন জানি আমাদের সঙ্গ দিলো, হালকা বৃষ্টি বর্ষণ, হিমেল হাওয়া আর আকাশের মাঝে বিদ্যুৎ চমকানোর খেলা। রাতের আকাশে আজ তারার অস্তিত্ব নেই কিন্তু বিদ্যুৎ চমকানো আছে। বিদ্যুৎ চমকানোর আলোতে তুর্ণাকে অপশরীর মতো লাগছে, মৃদু বাতাসে চুলগুলো উড়ছে, মাঝে মাঝে চুলগুলো আমার নাকের পাশ দিয়েও ঘুরে যাচ্ছে, নেশা লাগার মতো সু-ঘ্রাণ ।

নিরবতা ভেঙ্গে তুর্ণা বললো - ভাইয়া চুপ কেনো. ? কিছু তো বলেন
আবার ভাইয়া, এ কেমন মেয়ে। জানে দুজনের বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে তারপরও ভাইয়া।
বলেই ফেললাম - তুমি আমাকে ভাইয়া বলতাছো কেনো..?
সে বললো - কি বলবো
আমি বললাম - তাজিন বলবা (আমি তাজিন যদিও এতক্ষণ অপরিচিত ছিলাম এখন নিশ্চয়ই পরিচিত)
তুর্না বললো - আচ্ছা তাজিন ভাইয়া
রাগ সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে, মেয়েটা কি মজা নিচ্ছে আমার সাথে.?
আমি বললাম - থাকো তুমি এখানে আমি সামনে গেলাম।
আমি বারান্দা থেকে বেরিয়ে সামনের রুমের দিকে যেতে লাগলাম যেখানে বাবা, তুর্নার বাবা আর আমার গুনধর বন্ধু বসে আছে সেদিকে।
তুর্না পিছন থেকে বললো - তাজিন ভাইয়া চলে যাচ্ছেন কেনো.?

মেয়েটা ভীষণ পাজি, কিন্তু উপায় নেই বাবার বন্ধুর মেয়ে এবং আমারও ভীষণ পছন্দ হয়েছে। যাই হোক না কেনো বিয়ে তুর্না কেই করবো ।
কথা বার্তা ফাইনাল করে বাড়িতে ফিরলাম পরবর্তী শুক্রবার বিয়ে।
অানন্দের মহাঝড় তখন আমার অন্তরে, পরিশেষে সিঙ্গেল লাইফের অবসান ঘটতে যাচ্ছে।

বিয়ের দিন বর সেঁজে তুর্নাদের বাড়ির পথে আমরা । সবাই খুশি। বন্ধুরা তো খুশিতে মগ্ন হয়ে রাতে ওভার লোডেড হয়ে টাল। যদিও সকালে ঠিক হয়েছে।
তুর্নার বাড়িতে এসে সেখানকার দৃশ্য দেখে আমি স্তব্ধ। এতো আশা ভরসা সব এক নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে. ?
তুর্না হলুদের রাতে পালিয়েছে , তবে ছেলেটির পরিচয় এখনো অজানা। হয়তো এখানকার বাইরের কেউ হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে তার উপর ২০১৮ সাল বয়ফ্রেন্ড থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না।
আমার আর মিঙ্গেল হওয়া হলো না, সিঙ্গেলই রয়ে গেলাম।

তুর্ণার বাবা বিষণ্ন চেহারায় আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো এমন সময় স্যামসাং এর সুপরিচিত রিংটোনটা বেজে উঠলো।
ফোন রিসিভ করে কানের নিকট রাখলাম, ওপ্রান্ত থেকে ফ্রেন্ডের ভয়েজ ভেসে আসলো - তাজিন কই তুই..?
শাহবাগ না যাওয়ার কথা.?
আমি বললাম - দোস্ত তুর্না পালিয়ে গেছে
সে অবাক হয়ে বললো - কোন তুর্না.?
আমি বললাম - শালা, আমার বিয়েতো তুর্নার সাথেই হওয়ার কথা ছিলো, রাতে টাল হওয়ার ইফেক্ট কি এখনো রয়ে গেছে.?
সে বললো- তুই কি খাইছিস কিছু.?
আমি বললাম - তুই এখনো মাতাল হয়ে আছিস
ওপ্রান্ত থেকে কথা বন্ধ হয়ে গেলো আমি তাকিয়ে দেখতে পেলাম , আমি চারদেয়ালের মাঝেই আছি। সাথে হুমায়ূন আহমেদ স্যার এর মধ্যাহ্ন বইটা খোলা পড়ে রয়েছে। তাহলে এ কি স্বপ্ন ছিলো.?

মধ্যাহ্ন বইটি পড়তে ছিলাম, একসময় খোলা রেখেই নিদ্রা রাণীর ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম তার রাজ্যে, ভেসে উঠেছিলো আমার দৃষ্টি জৃড়ে তৃপ্ত নিদ্রা আর নিদ্রার জগৎে হারিয়েছিলাম হয়তো স্বপ্নরাজ্যে। আহা! সেই কি স্বপ্ন ছিলো , যদি শেষের অংশ আমার পক্ষে হতো ।
হয়তো কপালটাই এমন আমার মিঙ্গেল হওয়া ভাগ্যে নেই সারাজীবন সিঙ্গেলই থাকতে হবে।
না হয় কি আর স্বপ্নরাজ্য থেকেও আমার জন্য ঠিক করা বিয়ের কনে পালায় ....??

#চাইরচোখ

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:৫৭

মোঃ ফখরুল ইসলাম ফখরুল বলেছেন: সুন্দর গল্পটাতে কেউ কমেন্ট করল না ! :||

১৮ ই মে, ২০১৮ রাত ৯:২৭

আবু রায়হান ইফাত বলেছেন: হয়তো লেখকের ব্যর্থতা

২| ১৬ ই মে, ২০১৮ সকাল ১১:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: পাখি, তুমি আসমানের কোন রেখা ধরে
ফিরে আসো বারবার আমার নিশ্চুপ ছাদের আদরে।

১৮ ই মে, ২০১৮ রাত ৯:৩০

আবু রায়হান ইফাত বলেছেন: আবার আধারেই কেন যাও হারিয়ে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.