নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ইকবাল সুমন। মাঝে মাঝে টুকটাক লিখা লিখি করি। এছাড়া কোন কিছু করি না।
হোম মিনিস্টার সমাচার
লিখা এবং প্রকাশকালঃ ২১-০৪-২০১৫
-ভাইরে মহা মুসীবতে আছি। মাথার উপর ঠাডা পড়লেও এত বিপদ মনে হয় হত না।
-মন খুইলা কইয়া পালান কি হইছে।
বউরে নতুন ফেইজবুক চালানো শিখায়ে দিছি। ভাবলাম সারাদিন ফেইজবুক নিয়ে থাকবে, আমি তার নানাবিদ ঘ্যানর ঘ্যানর থেকে বেঁচে যাব। কিন্তু আমার কপালে সুখ সইল না। গোসল করার সময় গায়ে সাবান থাকা অবস্থায় বাড়িওয়ালা চাচা যদি টেপের পানি বন্ধ করে দিত, তাতেও আমি এত বিরক্ত হইতাম না।
এই ধরেন, গতকাল দুপুরের দিকে বউকে ফোন দিছি, জিজ্ঞাসা করলাম, “ভাত খাইছ?”
বউ বলল, “Facebook আস, Inbox এ বলতেছি, চেক inbox”.
মাথায় মড়ার উপর ডাইরেক খাজিলিক পড়ল। এই অফিস এর নিদারুণ ব্যস্ততার মধ্যে আমাকে তখন facebook এ লগিন করতে হয়েছে। নতুবা রাতে আর বাসায় ফিরতে হত না। হোটেলে থাকতে হত।
-এই ধরেন, গত পরশু রাতে আপনার ভাবি স্বপ্ন দেখছে, আমি নাকি 'কলার চামড়ায় স্লিপ কাইটটা পইড়া গেছি'। আর কি, সারারাত জামাই মরা কান্না। নিজেও ঘুমায় নাই, আমারেও ঘুমাতে দেয়নি। সকালে মুসীবতটা আরও ব্যাপক আকারে রূপ ধারণ করেছে।
বউ বলল আমাকে অফিসে যেতে দেবে না।
আমি মিনতি নিয়ে বললাম, "কেন, জান!!!"।
বউ বলল, "পথে তোমার বিপদ হবে, তুমি যে কোন জায়গায় উশটা খেয়ে পড়বা"।
আমি বললাম, “যে জিনিস পালতেছি। এর থেকে আর বড় বিপদ আর কি থাকতে পারে, যেখানে আমি প্রতি সেকেন্ডে ৩ বার করে উশটা খাচ্ছি”।
বউয়ের পেজটিজ হঠাৎ করে খাঁড়া হয়ে গেল। ১ মিলি সেকেন্ডে গালটারে রেডিম্যাট আড়াই ইঞ্ছি ফুলিয়ে ফেলল।
এবার দেখি আমার মাথায় ঠাডার উপর বিদ্যুৎ চমকায়।
তাড়াতাড়ি বললাম, “বাসায় যে ৬ টা love bird পালতেছি, সেগুলোর কথাই তো বললাম, জান”।
কিন্তু যেই লাউ, সেই কদু। গাল ফুলাটা কিঞ্চিৎ কমেও না, বাড়েও না। পরে আমার সার্ধের বাহিরে অনেক কিছু দেব প্রমিস করে বহু কষ্টে জলন্ত আগ্নেগিরির উপর কিঞ্চিৎ জল ঢালতে সক্ষম হলাম।
তারপর ভয়ে ভয়ে বললাম, “এখন office এ যেতে হয় যে জান!!!”
কিন্তু কোন মতেই বউকে অফিসে যাব বলে রাজী করাতে পারলাম না।
-"না , তোমাকে যেতে হবে না। তোমার ফোনটা দাও তো"। এই বলে আমি ফোনটা তাকে দেয়ার অপেক্ষা না করে, আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিল। ফোন নিয়েই কারে যেন ফোন দিল। আমি একটু দূর থেকে বউকে দেখছিলাম। ফোনে কার সাথে যেন হেসে হেসে কথা বলছে”।
কথা শেষ করে এসে আমাকে বলল, "তোমাকে যেতে হবে না। আমি শিপু ভাইয়ের সাথে কথা বলে নিয়েছি"।
আমি নির্বাক হয়ে থাকলাম।
শিপু ভাই এর প্রথম পরিচয় হল, উনি আমার অফিসে আমার ইমেডিয়েট বস। তার থেকে বড় পরিচয় হল, শিপু ভাই আমার বউ এর বান্ধবীর মামাতো বোনের জামাই। বউয়ের জ্বালায় আমার সব সময় শিপু ভাইয়ের ২য় পরিচয়টাই মাথার ভিতর রাখতে হয়। আর এই জন্য অফিস এ গেলে আমার জ্বালাটা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। শিপু ভাইকে আমি মাঝে মাঝে যখন ভুলে সবার সামনে “শিপু ভাই” বলে ডেকে ফেলি, শিপু বস আমার দিকে তখন কটমট করে তাকায়। কখন যে এই বেটা আমার চাকুরী খাই ফেলে টেন্সানে আছি।
-এই শুন”, বউ আমাকে ডাকল।
-আমি বললাম, “বল জান”
-আমি কিন্তু শিপু ভাইদের সবাইকে দাওয়াত করেছি। তুমি কিন্তু না করতে পারবে না।
আমি আসমান থেকে ডাইরেক জমিনে পড়লাম।
খাইছে!! কয় কি!!! মনে মনে বললাম দাওয়াত তো কইরাই পেলছ। এখন “না” করমু ক্যামনে!!!
কিন্তু মুখে মিষ্টি হাসি টেনে বললাম, “তা, উনারা কয়জন আসবেন?”
-এই, ধর ১৫ জনের মত তো হবেই। আমার বউ ও মিষ্টি করে বলল।
আমার জমিনে পতনের আর কিছু বাকি থাকল না।
এবার মনের বিরুদ্ধে জোর করে আবার মিষ্টি করে হেসে বললাম, “শিপু ভাইয়েরা তো ২ জন। তো, ১৫ জন হল কিভাবে?”
ওমা, সেকি গো!!! সে কি তুমি জান না! শিপু ভাইদের পাশে আরও ২ টা ফ্লাট আছে তো। আমি যখন গতবার শিপু ভাইদের বাসায় গেছিলাম। তখন তাদের পাশের সবার ফ্লাটে গেছিলাম। ভাবি-গুলো না যা ভাললল। তারা আমাকে জ্বাল-মুড়ি খেতে দিয়েছে!!, লেমন টি খেতে দিয়েছে!!!। তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না, তারা কত ভাল!!!। এখন তুমিই বল, আমি যদি তাদের একসাথে দাওয়াত না করি, ব্যাপারটা অনেক খারাপ হয়ে যায় না। সন্মান কি আমাদের থাকবে, বল বল?
আমার হঠাৎ করে যেন পানির তৃষ্ণা বেড়ে গেল।
অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করে হাসিমুখে বউকে জিজ্ঞাসা করলাম, তা, হঠাৎ করে তাদের দাওয়াত করলে কেন গো?”
ওমা!!!, সে কি বল গো। দাওয়াত না করলে কি আজকে তোমার ছুটিটার ব্যবস্থা করে দিতে পারতাম? - এই বলে আমার বউ একটা বিজয়ের হাসি দিল।
এবার আমার শরীর গরম হয়ে জ্বর আসার অবস্থা হল। মনে মনে বললাম, "ও মোর গিন্নিরে (OMG!), আজ অফিসে গেলে আসা-যাওয়া, খাওয়া-দাওয়া বাবদ সর্বোচ্ছ যেখানে আমাকে ৩০০ টাকা গুনতে হত, সেখানে তুমি মিনিমাম ৫০০০ টাকা ইনস্ট্যান্ট গযব করার ব্যবস্থা করে আসছ"।
আমি অনেকটা জোর করে হেসে বউকে জিজ্ঞাসা করলাম, “তোমাকে কি একটা প্রশ্ন করতে পারব?”
-yes, of-course . – বউ বলল। বউকে ব্যাপক খুশি মনে হল।
আমি একটু আশার সঞ্চার করে, অনেকটা রিস্ক নিয়ে বউকে জিজ্ঞাসা করলাম, “তুমি যে আমাকে নিয়ে ‘কলার চামড়ায় স্লিপ খেয়ে পড়া’র স্বপ্নটা দেখেছো, সেটা কি আজকের দিনে কলার চামড়ায় স্লিপ খেয়ে পড়ে গেছি, সেটা দেখেছো, নাকি আগামীকাল পড়ে যাব, সেটা দেখেছো? –
বউ তো মহা টেন্সানে পড়ে গেল।
“সেটা তো পরিষ্কার কিছু দেখিনি। শুধু দেখলাম, কলার চামড়ায় স্লিপ খাইছ” – বউ আমার দিকে অনেকটা টেন্সান নিয়ে তাকিয়ে বলল।
-তাহলেও তো আমি আজ উশঠা না খেয়ে, কালও তো অফিসে যাওয়ার সময় উশঠা খেতে পারি। - আমি অনেকটা টেন্সানে আছি, এমন ভাব করে বললাম।
মনে হল আমার কথাটায় কিছুটা কাজ দিয়েছে।
আমি দেখলাম, আমার বউ হঠাৎ করে আমার প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে গেল।
-"তোমাকে আজ ছুটি কাটাতে হবে না। এখনি রেডি হও। তাড়াতাড়ি অফিস এ যাও। এমনিই অনেক দেরী হয়ে গেছে"।, বউ বলল।
তাহলে যে শিপু ভাইদের দাওয়াত দিয়েছ, সেটা কি এখন ‘না’ করে দেবে? – আমি অনেকটা সাহস এবং রিস্ক নিয়ে বউকে আবার জিজ্ঞাসা করলাম।
-"না, সেটা না করতে যাব কেন!!! তারা তো শুক্রবারে আসতেছে। আমি এখনই ওদের পাশের ফ্লাটের সবাইকে ফোন করে দাওয়াত দিয়ে দেব। এই নিয়ে তোমাকে টেন্সান করতে হবে না", আমার দায়িত্বশীল বউ আমাকে আশ্বস্ত করল।
আর কি, মনের দুঃখ মনে রেখেই আগামী শুক্রবার আমার বাসায় একটা মিনি-মেজবান দেয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিলাম।
২ কুল হারানোর শোক নিয়া অফিসের পথে রওয়ানা করলাম।
বুঝলেন ভাই, টেন্সানে আছি...
©somewhere in net ltd.