নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইকবাল সুমন

"ঘোড়ার ডিমের খোঁজে নয়, ডিমওয়ালা-ঘোড়ার খোঁজে...

ইকবাল হোসাইন সুমন

আমি ইকবাল সুমন। মাঝে মাঝে টুকটাক লিখা লিখি করি। এছাড়া কোন কিছু করি না।

ইকবাল হোসাইন সুমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

নোটঃ‪‎আমার মা‬...

১০ ই মে, ২০১৫ রাত ১২:২৮

আমার আম্মুর ভাষ্য হচ্ছে, “আমি আমার ৬ ছেলে-মেয়েকে কোনদিন "A,B,C" কিংবা "অ,আ,ই" কিছুই শিখাইনি”। আমার নিজেরও মনে পড়ে না, কে আমাকে এগুলু শিখিয়েছে। এটাই আমার মা, যে কখনই আমাদের সাহায্য ছাড়া ঘরের বাহিরে এক পা দেয়নি। আম্মুর ডায়াবেটিস ধরা পড়ার পরে অবশ্য মাঝে মাঝে আমার ছোট বোন কিংবা ছোট ভাই আম্মুকে ছাদে নিয়ে যায় হাঁটানোর উদ্দেশে।

আমার আম্মুর জীবনে এমন একটা ঘটনা আছে, যারাই আমার ‘নোট’টা পড়ছেন অন্তত কারো আম্মুর জীবনের সাথে এটা মিলবেনা না। ঘটনাটি সবার পরেই বলছি।

আমার আম্মুকে একজন আদর্শ গৃহিণী বলতে যা বুঝায়, পরিপূর্ণভাবে তাহাই বলা যায়। কারণ একমাত্র গৃহস্থালি কাজ ছাড়া অন্য একটা কাজের সাথেও তাঁর কখনই সংযোগ ছিল না।

আমরা ভাইবোনরা খুব সহজে একসাথে হতে পারি না। বছরে হয়তো দুই-একবার ৫ ভাইবোন একসাথে হই(বড় আপু ছাড়া কারণ উনি শ্বশুর বাড়িতে)। আমরা যখন বিভিন্ন বিষয়ে গল্প করি, তখন একজন নীরব দর্শক আমাদের মধ্যে থেকে যায়। উনি আর কেউ নন, আমার আম্মু। আমরা যেই কথা বলে উঠি, উনি সেই দিকেই তাকাবেন। আবার অন্যজন কথা বলে উঠলে ঐদিকে তাকাবেন। ঠিক একটা বাচ্চা ছেলে টিভিতে যেভাবে কার্টুন দেখে সেই রকম। কার্টুন কিডসটা যেদিকে যাচ্ছে তাঁর দৃষ্টি যেন সেদিকে চলে যাচ্ছে, ঠিক এইরকম। আমাদের সব কথা যে আম্মু বুঝতে পারে, সেটা কিন্তু না। কিন্তু আমরা যখন হেসে উঠি, উনিও আমাদের সাথে বিনা কারণে হেসে উঠেন।

ছোট বোন, ছোট ভাই আম্মুকে নিয়ে প্রায় দুষ্টামি করে বলে, “আমার বাবা ঠকে গেছে, তোমার বাবা-মা আমার বাবাকে কোন সম্মান করেনি। এখনি যাও, তোমার বাবার বাড়ী থেকে জিনিস-পত্র নিয়ে আস”।
আমার আম্মু মুস্কি মুস্কি হাসেন এবং বলেন, “আমার তো বাবা-মা কেউ নাই। কিভাবে নিয়ে আসব। তোমরা আমার বাবা-মা। তোমরাই দিও”।
একবার ছোট ভাই আম্মুকে নিয়ে দুষ্টামি করে বলল, “তুমি আর আমাদের কোন কাজেই আসতেছনা। তোমাকে তোমার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেব”। আমার আম্মু মৃদু হেসে বলল, “পাঠিয়ে দাও কিন্তু পাঠানোর সময় আমাকে ১ লক্ষ টাকা দিতে হবে”। কিন্তু আমার আম্মু জানেন না যে, এখনকার ১ লক্ষ টাকার অর্থমূল্য কতটা কম।

সরলতার একটা মডেল হিসেবে যদি ধরে নেয়া হয়, তাহলে আমার আম্মুকে তাতে প্রতিষ্ঠা করিয়ে দেয়া যাবে। তাঁর পৃথিবী হচ্ছে তাঁর ৬ সন্তান। অন্য কোন আবেগ উচ্চাকাঙ্ক্ষার সাথে উনার কখনো পরিচয়ই ছিল না। আমার আম্মু দান করতে অনেক পছন্দ করেন। আমি চট্টগ্রাম গেলে আমার পকেট থেকেও প্রায় টাকা সরাতেন। আমার কোন খবর থাকত না। কিন্তু পরে অবশ্য আমাকে টাকা সরানোর ব্যাপারটা বলে দিতেন।

আমার মনে পড়ে, ছোট বেলায় যখন রাতের বেলা ঘুমাতাম, অনেক বেশি ইলেক্ট্রিসিটি বিঘ্ন ঘটত। কিন্তু আমি খুব কমেই টের পেতাম, কখন ইলেকট্রিক পাখাটি বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ স্বয়ংক্রিয় কিন্তু মানব নিয়ন্ত্রিত আমার আম্মুর হাতপাখাটি ঘুরত সারারাত। আমার মনে হত, আম্মু মনে হয় ঘুমের মধ্যেও হাতপাখাটি ঘুরাতে পারতেন সারারাত। আমাদের ঘুমের কোন বিঘ্ন যেন না হয়।

ছোটবেলা মায়ের হাতে মাইর খায়নি এমন কোন দুর্ভাগা আছে কিনা আমার জানা নাই। কিন্তু আমি সেই দুর্ভাগা এবং আমার কখন মনেই পড়ে না যে, আমার আম্মু হাতে আমাকে মাইর খেতে হয়েছে। দুষ্টামি যে কম করতাম সেটা কিন্তু না।

প্রথমে যে বলেছিলাম আমার আম্মুর জীবনে এমন একটা ঘটনা আছে, যা অন্য কারো মায়ের সাথে মিলবে না। সেটাই বলছি। আমার আম্মুকে লালন পালন করেছেন আম্মুর জেঠাতো বোন। তাকেই তিনি মা বলে জেনেছেন। কারণ ‘আমার আম্মুর মা আম্মুকে ১৬ দিন রেখে মারা গেছেন’। সেই ১৬ দিন পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি মা ছাড়া বড় হয়েছেন। উনার বেড়ে উঠতে কোন সমস্যা হয়নি কারণ নানাদের অবস্থা অনেক ভাল ছিল। এই ব্যাপারটা নিয়ে আম্মু অবশ্য খুব বেশি দুঃখ প্রকাশ করেন না। কারণ আম্মু বলেন, “আমি মায়ের আদর পাইনি তো কি হয়েছে, এখন আমার আছে ৬ জন বাবা-মা”। হুম, আমরাই সেই বাবা-মা এবং আমাদের প্রতিজ্ঞাও এমন ছিল যে, অন্তত এই মানুষটাকে আমরা কখনই একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাসও ফেলতে দেব না। এখনো পর্যন্ত তাই হয়ে আসছে এবং ভবিষ্যৎ দিনগুলোতে ইন-শা-আল্লাহ তাই হয়ে থাকবে।

(আম্মু যখন একটু অসুস্থ হয়ে যায় তখন আমরা অনেক টেনশনে পড়ে যাই। কারণ আমাদের পৃথিবীটা আম্মুকে মাঝে রেখেই চক্রাকারে ঘুরছে। আমরা খুব ভাল বুঝি, অন্তত এই মানুষটাকে হারানো যাবে না আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে। কারণ এই মানুষটাই আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল।)

মা দিবসে সকল মায়ের জন্য শুভ কামনা...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.