নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইকবাল সুমন

"ঘোড়ার ডিমের খোঁজে নয়, ডিমওয়ালা-ঘোড়ার খোঁজে...

ইকবাল হোসাইন সুমন

আমি ইকবাল সুমন। মাঝে মাঝে টুকটাক লিখা লিখি করি। এছাড়া কোন কিছু করি না।

ইকবাল হোসাইন সুমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক মিনিটের গল্প

০১ লা জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৬



লাবিনে ‬- দ্যা কফি হাউজ

লিখা এবং প্রকাশঃ ২৫-০৫-২০১৫


পার্ক স্ট্রিট লেনের ঠিক উল্টো পাশে কফি হাউস-টা। নাম “লাবিনে”। বাহিরের দিক থেকে দেখতে খুব সাধারণ মানের একটা রেস্টুরেন্ট। ভিতরে ঢুকলেও যে খুব জাঁকজমকপূর্ণ এমনটিও নয়।কিন্তু খুবেই পরিপাটি এবং প্রশস্ত। অবশ্য ১৫ জনের উপরে বসা যায় না এখানে। ভিতরে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র মিলে বেশ কয়েকজন বিখ্যাত সাহিত্যিকদের ছবি টাঙ্গানো আছে। ‘লাবিনে’র ঠিক পাশে দিয়ে হেটে গেলে লাবিনের ভিতর থেকে খুব সুন্দর কিছু সফট মিউজিক শুনা যায়। সব কিছু মিলিয়ে অসাধারণ একটা রুচির পরিচয় পাওয়া যায় ছোট্ট এ রেস্টুরেন্ট জুড়ে।

শৈলী ২৫ মিনিট হল লাবিনের ভিতর বসে আছে। আজ তার জাহি’র সাথে দেখা হওয়ার কথা। প্রায় ৭ মাস হল তাদের ফেইজবুকে পরিচয়। তাদের সম্পর্কের গণ্ডি ইনবক্স পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। তাদের পরিচয়ের প্রথম দিক থেকে শেষের দিক পর্যন্ত তেমন কোন পার্থক্য নেই। পারস্পরিক শেয়ারিং ব্যাপারটাই প্রধানত হত।যেমন, জাহি আজ অফিস এ কি কি করেছে, শৈলী সারাদিন কিভাবে কাটিয়েছে, তাদের দুজনের ছোট ছোট কিছু মজার ঘটনা, যে কোন ঘটনার ছোট ছোট বিশ্লেষণ, মজা করে একে অন্যকে খোঁচা দেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। নিদিষ্ট একটা সময় ছাড়া তাদের প্রায় কখনই চ্যাট হত না। তাও রাত ১০ টার পরে। দুজন দুজনের জন্য ওই সময়টা অপেক্ষা করত। চ্যাট হয়নি এমন দিন তাদের খুব কমেই গেছে।

আজ জাহির সাথে শৈলীর যে দেখা হবে, এতে শৈলী যে অনেক উৎফুল্ল এমনটাও কিন্তু নয়। কিন্তু দেখা হওয়া ব্যাপারটা অনেকটা কাঙ্ক্ষিত ছিল দুজনের জন্যই। তাদের সম্পর্কের দৌড়ের মধ্যে অন্য কোন ব্যাপার না মিলে গেলেও, একটা ব্যাপার খুব কমন ছিল। তা হল, এই কফি হাউজ ‘লাবিনে’। তারা দুজন দুজনের সাথে পরিচিত হওয়ার আগে থেকে এই কফি হাউজ ‘লাবিনে’তে দুজনেই কফি খাওয়ার জন্য আসত। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে এই একটা ব্যাপার তাদের জন্য বেশ মজার ব্যাপার হয়ে উঠে। আর জাহি একটা ব্যাপার শৈলীকে প্রায় বলত, “আমাদের যদি কখনো দেখা হয়, তোমাকে আমি একটা সারপ্রাইস দেব”। শৈলীও মৃদু হেসে বলত, “তোমার জন্যও আমার একটা সারপ্রাইস আছে”।

শৈলীই প্রথম জাহি’কে দেখা করার ব্যাপারটা বলে পরিচয়ের প্রায় ৭ মাস পরে। জাহি এক কথায় রাজী হয়ে যায়।

শৈলী দেখল, কিছুক্ষণ পরে রেস্টুরেন্টে ২ জন মানুষ ঢুকল। একজন মহিলা, মনে হল অন্ধ। আর অন্য জন নিঃসন্দেহে “জাহি”। কারণ জাহিকে চিনতে পারার ব্যাপারে শৈলীর ভুল হওয়ার কথা না। ফেইজবুকে জাহি যে ছবিটা দিয়ে রেখেছিল। হুবহু সে ছবির সাথে মিলে যায়। একটুও পরিবর্তন নেই।
একটু দূরে জাহি সেই মহিলাকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে সোজা শৈলীর দিকে আসল এবং মৃদু হেসে শৈলীর টেবিলের ঠিক সামনে থাকা চেয়ারে বসলো। জাহি কিছু বলছে না। শুধু মৃদু মৃদু হাসছে।
এই মৌনতা ভেঙ্গে হটাত শৈলী বলে উঠল, “হাসছ কেন?”
এর পরেও জাহি মৃদু মৃদু হাসতে লাগল। কিছু বলল না।
-“কিছু বলবে না?”, শৈলী জিজ্ঞাসা করল।
-বলব তো। আমি তোমাকে একটা গল্প বলব, জাহি বলল।
শৈলী কিছু বলল না। নীরবে জাহির দিকে তাকিয়ে থাকল।

“ছেলেটার নাম জাহি। বিয়ে করেছে “অভয়ি” নামের একটা মেয়েকে। দুজনে আগে থেকেই পরিচিত হয়েই বিয়ে করেছে। কিন্তু বিয়ের মাত্র ৫ মাস পর থেকে অভয়ি’র দৃষ্টিশক্তি কমে আসতে শুরু করে। অনেক অনেক চিকিৎসার পরেও মাত্র ১ বছরের মাথায় প্রায় পুরো দৃষ্টিহীন হয়ে পরে অভয়ি। ডাক্তার সরাসরি বলে দিয়েছে , কোন মতেই চিকিৎসা করে তার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব না। একটা সময় অভয়ি পুরো দৃষ্টিহীন হয়ে পড়ে। আজ প্রায় ৩ বছর হল অভয়ি জাহির সাথে দৃষ্টিহীন অবস্থায় আছে। পারিবারিক সূত্রে অভয়িদের সবাই অস্ট্রেলিয়া থাকে। অভয়ির এই দুর্ঘটনার পরে তার বাবা-মা চেয়েছিল অভয়িকে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাবে। অভয়ির ও সেই রকম একটা ইচ্ছে ছিল। অভয়ি জাহিকে বলেছিল, জাহি যেন আবার নতুন করে সব কিছু শুরু করে, অন্য কাউকে বিয়ে করে নতুন সংসার শুরু করে। কিন্তু জাহি এতে রাজী হয়নি। কারণ জাহি জানত অভয়িকে ছাড়া তার সারভাইভ করা সম্ভব না। কিন্তু অভয়ি ছিল নাছোড় বান্দা। জাহি অভয়িকে দেশে থেকে যেতে এই মর্মে রাজী করিয়েছে যে, সে জাহির কোন একটা ব্যবস্থা করে তারপর সে তার মা-বাবার কাছে অস্ট্রেলিয়া চলে যাবে। এর পর থেকে অভয়ি বিভিন্নভাবে জাহিকে অন্য কোথাও একটা ব্যবস্থা করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু কোন না কোনভাবে সেটা সফল হয় না। সর্বশেষ শুধুমাত্র অভয়ির অনুরোধে জাহি শৈলী নামে এক অসাধারণ মানুষের সাথে ফেইজবুকে একটা মায়ার সম্পর্কে গড়ে তোলে। শৈলীর সাথে জাহির প্রতিটা কথা, প্রতিটা পদক্ষেপ অভয়ি জানত। কারণ শৈলীর সাথে জাহিরের প্রত্যেকটা আচরণ অভয়ির শিখিয়ে দেয়া বুলি ছাড়া অন্য কিছু ছিল না। আজ জাহি শৈলীর সাথে দেখা করতে এসেছে। তার সাথে জাহি তার স্ত্রী অভয়িকেও নিয়ে এসেছে। জাহি শৈলীকে বলেছিল, একটা সারপ্রাইস দেবে। হ্যাঁ, অভয়িই শৈলীর জন্য আমার দেয়া সে সারপ্রাইস”

শৈলী জাহির দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল। যেন অনন্তকাল তার দিকে এভাবেই তাকিয়ে আছে।
“ঐ যে আমার স্ত্রী, অভয়ি। সে এখানে কেন এসেছে জান? তোমার আর আমার মিলনটা উপভোগ করার জন্য। কিন্তু সে জানে না। আমি তোমাকে সব কিছু বলে দিয়েছি। সে জানে, সে এখানে আসছে, তুমি তা জান না”।
শৈলী তখনো জাহির দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। এবার সে একটু চোখ নামিয়ে দূরে বসে থাকা অভয়ির দিকে তাকাল। দেখল, অভয়ির কি যেন একটা পরম প্রশান্তি নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু তার দৃষ্টিটা ভোতা। কিছুই দেখতে পারছে না সে সামনের দিকটায়।
শৈলী অভয়ির দিকে আরও গভীরভাবে তাকাল। মনে মনে চিন্তা করল, “ভালবাসার রূপগুলো কতই না ব্যতিক্রম। এক অভয়ি তার সবচে প্রিয় মানুষ জাহিকে ভালবাসার সর্বচ্ছ প্রকাশের জন্য অন্যআরেকজন মানুষের হাতে তুলে দিতে হাসিমুখে প্রস্তুত হয়ে আছে। শৈলী অভয়ির দিক থেকে দৃষ্টি নামাতে পারল না।
হটাৎ করে শৈলীর দৃষ্টিটা যেন ঝাপসা হয়ে আসল। চক্ষের কোনে কিছুটা অশ্রু এসে জমা হয়েছে অনুভব করল।
কোন কথা যেন শৈলীর মুখ দিয়ে বের হয়ে আসছিল না। মুখে অনেক কষ্টে হাসি নিয়ে এসে সে এবার জাহির দিকে তাকাল।

“ছোট্ট একটা ফুটফুটে মেয়ে । সে তখন ৯ম শ্রেণীতে পরত। একদিন স্কুলে যাওয়ার সময় পথে তার একটা দুর্ঘটনা হয়, তার দু’পায়ের উপর দিয়ে একটা মিনিবাস চলে যায়। তাকে বাঁচানোর জন্য তার দুটো পায়ের-ই হাঁটু থেকে কেটে ফেলতে হয়। সে থেকে মেয়েটি স্বাভাবিক মানুষের মত স্বপ্ন দেখা ভুলে গেছে”।
এই বলে শৈলী একটু থামল এবং স্থির দৃষ্টিতে জাহির দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি কি তোমার হাত দুটো একটু স্পর্শ করতে পারি?
জাহি কোন কিছু না বলে তার দুটি হাত শৈলীর সামনে টেবিলের উপর রাখল।
শৈলী তার দুটি হাত জাহিরের হাত দুটির উপর রাখল। মুখটাকে জাহিরের মুখের আরও কাছে নিয়ে এসে মৃদু হাসি নিয়ে বলল, “ঐ যে দেখতে পাচ্ছ দূরে বসে আছে, ওর নাম অভয়ি। আমি যেন কখনো না শুনি, একটি সেকেন্ডের জন্যও তুমি ওর হাত ছেড়ে দিয়েছ। ওকে ধরে রাখ, ওর মধ্যেই দেখবে তুমি শত শত শৈলীকে খুঁজে পাবে”।
এই বলে শৈলী কাকে যেন ফোন দিল। আর জাহিকে বলল, “আমার ছোট ভাই আমাকে এখানে নিয়ে আসে। ও এখন বাহিরে আছে। এখনই এসে যাবে। তোমার সাথে আমার কখনো দেখা হয় কিনা জানি না। কিন্তু মনে হয় দেখা হবে। অভয়ির জন্যই হবে”।

জাহি দেখল, একটু পরে শৈলীর ছোট ভাই এসেছে। শৈলী এতক্ষণ হুইল চেয়ারে বসেছিল। কারণ তার ২ পায়ের হাঁটুর নীচ থেকে কাটা ছিল। নবম শ্রেণীতে থাকা কালে তার এ দুর্ঘটনাটা হয়েছিল। জাহি দেখল, শৈলীর ছোট ভাই হুইল চেয়ারে থাকা শৈলীকে আস্তে আস্তে করে কফি হাউজের বাহিরে নিয়ে যাচ্ছে।

শৈলী জাহিকে তার সারপ্রাইসটা দিয়ে গেল। কিন্তু মনে হয় একটু বেশীই দিয়ে গেল। জাহির হঠাৎ করে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে ইচ্ছে হল...

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৭

তৌফিক মাসুদ বলেছেন: ভাল ফিনিশিং। কাহীনি ভাল হয়েছে। ++++

০১ লা জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:১৩

ইকবাল হোসাইন সুমন বলেছেন: ৎসাহের জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই।
সব সময় পাশে থাইকেন

২| ০২ রা জুন, ২০১৫ রাত ১২:২৮

সুমন কর বলেছেন: শেষ চমৎকার হয়েছে। ১ম ভালো লাগা রইলো। !:#P

ফেজবুক ব্যাপারটা মাঝে মাঝে অনেক সুখি পরিবারেও অশান্তি নিয়ে আসে। কিন্তু আপনার কাহিনীটি ভিন্ন।

শুভ রাত্রি।

০২ রা জুন, ২০১৫ দুপুর ১:০৫

ইকবাল হোসাইন সুমন বলেছেন: মিতা ভাই, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। পড়ার জন্য। মাঝে মাঝে ছোট গল্প চেষ্টা করি। যা মনে আসে তাই লিখি। আমি কোন মতেই প্রপেসনাল না।
উৎসাহের জন্য আবার ধন্যবাদ.।

৩| ০৩ রা জুন, ২০১৫ রাত ১:৩৫

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: অভয়ীর ভালবাসার কোন মূল্যই নেই এই পৃথিবীতে।। আমার বাস্তব দেখা।। এই অভয়ীরা পরে আর নিজেকে ত্যাগের মহান আসনে সীমাবদ্ধ রাখতে পারে না।। বিভিন্ন ভবেই আত্মাহুতি দেয় নিজেদের।।
শেষের দিকটির চমক কল্পনাতেও ছিলো না।।
ভাললাগা আর .....।।

৩০ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৮

ইকবাল হোসাইন সুমন বলেছেন: দুঃখিত। প্রতিমন্তব্য করতে অনেক দেরী হয়ে গেল। পরীক্ষার নানা প্যাঁচালের মধ্যে ছিলাম।
অনেক ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য। আসলেই সমাজে এ অভয়ীদের পরিমাণ নেহাতেই কম না। তারা যারা বেঁচে আছে। আসলে তো বেঁচে থেকেই মরে আছে। আবার আপনাকে ধন্যবাদ।
আমার আরও ২/১ টা ছোট্ট গল্প আছে। পড়ার অনুরোধ রইল। :)

৪| ১১ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮

এহসান সাবির বলেছেন: বেশ!

৩০ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৯

ইকবাল হোসাইন সুমন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই । :)

৫| ১১ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:২১

কম্পমান বলেছেন: অনেক ভাল লাগল।।+++++++++++

৩০ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:০০

ইকবাল হোসাইন সুমন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
আমার আরও ২/১ টা ছোট্ট গল্প আছে। পড়ার অনুরোধ রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.