নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইকবাল সুমন

"ঘোড়ার ডিমের খোঁজে নয়, ডিমওয়ালা-ঘোড়ার খোঁজে...

ইকবাল হোসাইন সুমন

আমি ইকবাল সুমন। মাঝে মাঝে টুকটাক লিখা লিখি করি। এছাড়া কোন কিছু করি না।

ইকবাল হোসাইন সুমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গিনিপিগদের সুখ দুঃখ (‪পর্ব-৮‬)

২৮ শে জুন, ২০১৫ রাত ২:৩৭


কয়েকদিন ধরে নীলা জ্বরে ভুগতেছিল। তাই প্রায় প্রতিদিনই তাদের বাসায় যাওয়া হয়েছে। অবশ্য কোন কাজ ছাড়া কোন দিনই নীলাদের বাসায় আমার যাওয়া হয়নি এর আগে। নীলার বাবা মাকে আমি আঙ্কল-অ্যান্টি বলেই ডাকি। নীলার বাবা সব সময় হাসিখুশি একজন মানুষ। অনেকবার উনার সাথে কথা হয়েছে। কিন্তু কথা বলার সময় কোথায় যেন একটা ভয় কাজ করে। প্রফেশনাল কথা ছাড়া উনার সাথে আমার মনে হয় না কোন দিন কোন কথা হয়েছে। তবে আমি কোন দিনও বুঝতে পারিনি উনি আমাকে পছন্দ করে কিনা। নীলাকেও আমি মজা করে কয়েকবার জিজ্ঞাসা করেছি, তার বাবা আমাকে পছন্দ করে কিনা। নীলাও আমাকে কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। নীলার মা আমাকে পছন্দ করে সেটা জানি।

আজ সকালে নীলা আমাকে ফোন করেছিল। বলল, “শরীরটা এখন অনেকটা ভাল। বিকেলে একটু হাটতে বের হবে?”।
আমি বললাম, “কোন সমস্যা নাই বের হও”।
নীলার অসুস্থতার কথা রহিমকে জানানো হয়নি। নীলাই আমাকে জানাতে নিষেধ করেছে। আমি রহিমকে বলেছি, নীলা বেড়াতে গেছে। অবশ্য নীলা ফোনে কয়েকবার রহিমের সাথে কথা বলে নিয়েছে। এতে আর কোন সমস্যা হয়নি। রহিম যে কোন অসুস্থতাকে কি কারণে জানি খুব ভয় পায়। তার ধারণা, অসুস্থ হওয়া মানে মরে যাওয়া। নিশ্চয় সে ধরণের কোন স্মতি তার মধ্যে আছে। সুতরাং নীলার অসুস্থতার কথা শুনলে রহিমকে কন্ট্রোল করা যেত না। রহিম নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ত।

বিকেলে আমরা বাসা থেকে বের হয়েই রহিমের দোকানের দিকে আসলাম। দোকানটা যত বড়, তার থেকে আরও প্রায় রাস্তার আরও ডবল জায়গা নিয়ে দোকানটা জন্য দখল করা হয়েছে। ওখানে ওখানে অনেকগুলো টেবিল চেয়ার সাজানো। আমরা সেই বাহিরে রাস্তায় সাজানো চেয়ারে অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি। রহিম আমাদের খেয়াল করেনি। আমরা বসে বসে রহিমের কাজ কর্ম দেখছিলাম। তার মালিক যেন কোথায় গেছে । এখন দোকানের পুরো দায়িত্ব তার ঘাড়ে। আরও ২ টা ছেলে দোকানে কাজ করে। ২ টা ছেলেই রহিম থেকে বড়। অনেকক্ষণ ধরে রহিমের কাজ কর্ম খেয়াল করার পর বুঝলাম, তার মালিকের পরে দোকানকে মূলত ওই লিড করছে।

অনেকক্ষণ পরে রহিম আমাদেরকে খেয়াল করল। দেখেই দৌড়ে এলো।
এসেই অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল, “মামা, আপনারা কখন আইলেন?”
আমি বললাম, “কখন আইছি সেটা বাদ দে। আগে চা খাওয়া"
রহিম শুনেই অস্থির হয়ে গেল। দৌড়ে গিয়ে আমাদের জন্য ২ কাপ চা বানিয়ে আনল।
আমাদের বলল, “খেয়ে দেখেন কেমন হইছে। আমি নিজ হাতে বানাইছি”
নীলা চায়ে চুমুক দিয়েই বলল , অনেক ভাল হয়েছে রহিম।
আমিও চায়ে চুমুক দিলাম। দেখলাম বেশ ভাল হয়েছে চা টা।
রহিমকে বললাম, “আগে তো তোদের চা টা খাওয়াই যেত না। এখন তো অনেক ভাল।
রহিম বলল, “মামা, আগে তো আমি চা বানাইতাম না। তাই এত খারাপ ছিল। এখন আমিই বানাই। সন্ধ্যার দিকে থাইকেন। দেখবেন, চা খাওয়ার জন্য সবাই লাইন ধরছে।
আমরা তো রহিমের এত আত্মবিশ্বাস দেখে অবাক।
কিছুক্ষণ রহিমের সাথে কাটিয়ে আমরা উঠে পড়লাম।
রহিম আমাকে জিজ্ঞাসা করল, “কই যাইবেন মামা?”
আমি বললাম, “এইতো রহিম। আমরা একটু ঘুরে আসি”
আমার মনে হল, রহিমের মনটা কিছুটা খারাপ হয়ে গেছে। কারণ রহিম আমাদের সঙ্গটা সব সময় আশা করে। আমরাও রহিমকে নিয়ে যেতে পারতাম। তাছাড়া নীলা এবং আমার পথচলার যে কোন সময় একটা আসন রহিমের জন্য সবসময় সংরক্ষিত থাকে। সুতরাং আমাদের রিক্সার ২ টা আসনের মধ্যেও আরেকটা অদৃশ্য আসন তার জন্য বরাদ্দ থাকে।
কিন্তু এখন ওকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। কারণ তার দোকানে অনেক কাজ। তার মালিকও দোকানে নাই। দোকানের দায়িত্বটা এই মহুরতে বলা যায় তার উপরই।
আমি রহিমকে একপাশে টেনে নিয়ে গিয়ে বললাম, “আমি আর তোর মামী কোথায় যাচ্ছি জানোস?
রহিম আমার দিকে তাকিয়ে থাকল।
আমি বললাম, “ভালবাসা-বাসি করতে।”
এবার রহিমের মুখে হাসি ফুটে উঠল।
রহিম তার ২৮ টা দাঁত প্রদর্শন করে বলল, “তাইলে যান”

আমি আর নীলা ধানমন্ডি লেকের দিকে হাটতে লাগলাম। আমি নীলাকে রিক্সা নেয়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু নীলা বারণ করল। বলল, “হাঁটার উদ্দেশেই তো বের হয়েছি। এখন হাটতে বের হয়ে কি রিক্সা নেব?!!!!”
আমি নীলাকে আর কিছু বললাম না। দুজনেই হাটতে লাগলাম। কিছুক্ষণ হাঁটার পরে নীলা আমাকে বলল, “তোমার হাতটা কি ধরতে পারি?”
আমি নীলার দিকে খুব অবাক হয়ে তাকালাম। কারণ রাস্তায় নীলা আমার হাত ধরে হেঁটেছে, এই ধরণের ঘটনা কখনও ঘটছে বলে মনে হয় না। আমারও ব্যাপারটা খুব পছন্দ না। নীলা সেটা জানে।
আমি নীলার দিকে তাকিয়ে হাসলাম। নীলাও হেসে আমার হাত ধরল। নীলার শরীরটা এখনো অনেক দুর্বল। না হয়, মনে হয় না ও আমার হাত ধরে হাঁটত। আমরা দুজন পাশাপাশি হাটতে খুব পছন্দ করি। একই রকম ভাবে। একই তালে। কিন্তু হাত ধরে হাঁটার অভ্যাসটা কেন জানি আমাদের মাঝে কখনো গড়ে উঠেনি।

নীলার শরীরের অনেকটা ভর আমার উপর পড়ছে। একটু হেটেই সে হাঁপিয়ে গেল। কিন্তু মুখে কোন ক্লান্তি নাই। অনেকটা হাস্যজ্জল।
আমাকে জিজ্ঞাসা করল, “তোমার কি কষ্ট হচ্ছে”?...
আমি বললাম, “হ্যাঁ অনেক কষ্ট হচ্ছে। একটা আটার বস্তাকে নিয়ে কি হাঁটা যায়?”
নীলা বলল, “দেখ, একটা মেয়ের যেটুকু ওজন থাকতে হয় আমার তো তাও নাই”।
আমি অনেকটা উচ্চস্বরে হেঁসে উঠলাম। নীলাও হেঁসে উঠল।

বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে অনেক মানুষের আনাগোনা। আমরা ওখান দিয়েই যাচ্ছিলাম। মনে হয় না নীলা আর হাটতে পারবে। অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে তাকে। হঠাৎ সে পাশেই বসে পড়ল। আমার দিকে তাকিয়ে একটু হেঁসে বলল, “আর পারব না। এবার বসো”।
আমরা ওখানেই বসলাম। নীলার ক্লান্তির প্রকাশটা আমি সব সময় ২ টি উপসর্গ দিয়ে বুঝতে পারি। যেমন ও ক্লান্ত হলে, ওর নাকের উপর এবং নাকের ঠিক নিচের দিকটা ঘাম জমে থাকে। আজো তার ব্যতিক্রম হয়নি।
আমি অনেকটা ইচ্ছে করে আমার একটা আঙ্গুল দিয়ে নীলার নাকের উপর থাকা ঘামের ছোট ছোট বিন্দুগুলো স্পর্শ করলাম। নীলা আমার দিকে তাকাল। মৃদু হেঁসে আমাকে জিজ্ঞাসা করল, “কি?”
আমি বললাম, “কিছুই না। এতগুলো বছর তোমাকে দেখছি। অনেক কিছুর পরিবর্তন দেখেছি। কিন্তু এই নাকের ডগায় ঘামের কোন পরিবর্তন দেখিনি”, এই বলে আমি একটু হাসলাম।
“পরিবর্তন অনেক কিছুই হয়নি। তুমি সেটা ভাল করেই জান”। , নীলা বলল।
আমি বললাম, “হুম হুম, আরেকটা পরিবর্তন হয়েছে। আগে আমি কথা বললে, তুমি বসে বসে ভাবতে, কোন কথা বলতে না। আর এখন তুমি বললে আমি বসে বসে ভাবি, তেমন কিছু বলি না”...
নীলা একটু করে রহস্য করে হাসল। কিছু বলল না। কিছু এই হাসির মধ্যে আমি অনেকগুলো রহস্য পূর্ণ শব্দমালা ভাসতে দেখলাম।

“মামা ২ টা টাকা দেন”, ৭/৮ বছরের একটা বাচ্চা আমাদের কাছে ভিক্ষা চাইল।
নীলা আমাকে বলল, “তোমার কাছে ১৫ টাকা ভাংতি আছে কিনা দেখ তো”
আমি কিছুটা অবাক হলাম। কারণ টোকাই বাচ্চাদের পথে ঘাঁটে এভাবে ভিক্ষা দেয়াটা নীলা কখনই পছন্দ করে না।
তাও আমি কিছু বললাম না, নীলাকে আমার মানিব্যাগটা বের করে দিলাম। নীলা ওখান থেকে ১৪ টাকা বের করে বাচ্চাটা হাতে দিল। বলল, যাও আমাদের জন্য ২ কাপ চা নিয়ে আস। চায়ের দাম ১০ টাকা। আর ৪ টাকা তোমার”
আমি নীলাকে বললাম, “তোমার কি মনে হয় বাচ্চাটা আমাদের জন্য চা নিয়ে আসবে, নাকি টাকাটা নিয়ে পালিয়ে যাবে?”
নীলা বলল, “হ্যাঁ, সে চা নিয়ে অবশ্যই আসবে। কিন্তু আমি যদি ওকে ১০ টাকা দিয়ে বলতাম ২ কাপ চা নিয়ে আসতে। হয়তো ও টাকাটা নিয়ে পালিয়ে যেত। কিন্তু এখন ও পালাবে না, আমাদের জন্য চা নিয়েই আসবে”
আমি এই ধরণের একটা কথাই নীলা থেকে আশা করছিলাম।
৩ মিনিট পরে দেখি পিচ্চিটা আমাদের জন্য চা নিয়ে উপস্থিত।
আমাদেরকে বলল, “চা খাইয়া কইয়েন মামা, চা কেমন হইছে” ভাবখানা এমন যে , সে নিজেই চা বানিয়ে আনছে। এই বলে পিচ্চিটা হাঁটা শুরু করল। আমরা দুজনে আবার পিচ্চিটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম, যতক্ষণ না পিচ্চিটা অন্য একজনের কাছে ভিক্ষা চাইতে থাকলো।

একটু পরে নীলা আর আমি হাটতে শুরু করলাম। পথে নীলা মুড়ি মাখানো, চানাচুর মাখানো এমন কিছু বাদ রাখল না। সবই একটা একটা খেল। নীলা স্বাভাবিকভাবে এইসব খাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ ছিল না। আজকে অনেকটা ব্যতিক্রম। আমরা হাটতে হাটতে রবীন্দ্র সরোবরের দিকে চলে আসলাম। কি যেন একটা অনুষ্ঠান হচ্ছিল রবীন্দ্র সরোবরে। ওখানকার চা টা বেশ ভাল। নীলা আর আমি বসে বসে চা খেলাম।

সন্ধ্যার পর ধানমন্ডি লেকের এলাকাটা বেশ ভাল অন্য এলাকা থেকে। অনেকটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। বসে আড্ডা দেয়ার জন্য পরিবেশটা খারাপ না। আমার পাশে নীলা আছে। কিন্তু নীলাকে আজ অন্য ধরণের মনে হচ্ছে। কেমন যেন বাচ্চা বাচ্চা। আচরণগুলো এমন যেন অনেকটা আবদার করছে আমার কাছে। সেই প্রথম থেকেই আমার হাত ধরে হাঁটছে। শরীরটা ক্লান্ত কিন্তু মনটা মোটেই ক্লান্ত না, ফুরফুরে।

আমরা চা খাওয়ার পর অনেকক্ষণ ধরে গান শুনলাম। বাংলা ফ্লক ধরণের কিছু গান হচ্ছিল ওখানে। পরিবেশের সাথে মিলিয়ে সব কিছু ভালই লাগছে। নীলা আমার পাশে বসে আছে অনেকক্ষণ ধরে, কোন কথা বলছিল না। খুব মনোযোগ সহকারে গান শুনছে। আর গুনগুন করে কি যেন গাইছেও। নীলার এ গুনগুন করে গান গাওয়া বা এত মনোযোগ সহকারে গান শুনার সাথে আমি কখনোই পরিচিত ছিলাম না। বুঝে নিলাম প্রত্যেকটা পরিবেশের আলাদা আলাদা সত্ত্বা আছে এবং এই সত্ত্বার সাথে তাল মিলিয়ে রাখার জন্য মানুষ নিজেকে পরিবর্তন করে নিতে প্রায় বাধ্য। নীলাও এই অবস্থায় তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমার এই ভেবে খারাপ লাগতো যে, নীলা নামের এ মানুষটা শুধু আমার সাথে জড়িয়ে নিজেকে কত কিছু থেকে যে বঞ্চিত করেছে, তার শেষ নেই। অবশ্য আমি কখনোই ওকে আমার মত হতে বলিনি বা বাধ্য করিনি। ও নিজে থেকেই যেন আমার সাথে তাল মিলাচ্ছে। কিন্তু গত ১ টা বছর আমিই যেন তার সাথে তাল মিলাতে হিমশিম খাচ্ছি, কিন্তু এই হিমশিম খাওয়াটার মধ্যেও আলাদা আনন্দ আছে, আলাদা শিহরণ আছে, আলাদাভাবে বেঁচে থাকার একটা অনুভূতি আছে।

“চল, চা খাব”, নীলা হঠাৎ বলে উঠল।
আমি অনেকটা অবাক হলাম, বললাম, “এই মাত্র তো খেলে”।
-আবার খাব।
-ঠিক আছে তুমি বস। আমি আনছি।
এই বলে আমি নীলার জন্য চা আনতে গেলাম। একটু গিয়ে আবার পিছনের দিকে তাকালাম। দেখলাম, নীলা একটু একটু এদিক ওদিক দুলছে। মনে হচ্ছে এখনো কোন একটা গান গেয়ে চলছে। ভাবলাম ওর কাছে আমি একটু পরেই যাই। আমি তার পিছনের দিকে একটু দূরে অনেকক্ষণ বসে থাকলাম। ভাবলাম একটু পরেই চা নিয়ে আসি। তাকে একটা স্পেস দেয়া প্রয়োজন, কিছু সময় থাকুক একা।
আমি একটু দূরে তার পিছনে প্রায় ১০ মিনিট বসে আছি। কিন্তু নীলা একবারও আমি আসতেছি কিনা দেখার জন্য পেছনের দিকে তাকায়নি। বুঝে নিলাম নীলা এই মহুরতে একা থাকাকে খুব উপভোগ করছে। ১০ মিনিট পরে দেখলাম ও একটু নড়েচড়ে বসছে। তাও পেছনের দিকে একবারও তাকায়নি। প্রায় ১২ মিনিটের মাথায় আমি ওর জন্য চা নিয়ে আসলাম। কিন্তু নীলা আমাকে একবারও জিজ্ঞাসা করেনি আমার দেরী হল কেন। বুঝে নিলাম এই ১২ টা মিনিট ও তার নিজের মধ্যে ছিল।
“এখানকার চা টা দারুণ, না?” নীলা আমাকে জিজ্ঞাসা করল।
-হুম, সব সময় দারুণ।
-চল , এখন এখান থেকে উঠা যায়।
-কোথায় যাবা?, আমি নীলাকে জিজ্ঞাসা করলাম।
-চলো, শান্ত আর সাথিকে দেখে আসি। সাথির চুলে ক্লিপটা লাগে কিনা তাও দেখে আসি।
আমি কথাটা শুনে আঁতকে উঠলাম এবং বললাম, “দূর, এত তাড়াতাড়ি তার চুল বড় হয়েছে নাকি!, আজকে না অন্য একদিন যাওয়া যাবে। বাসায় ফিরতে অনেক রাত হয়ে যাবে”।
-তাও চল না, ওদের দেখে আছি। কিছু হবে না।

আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না। আমি গত পরশু কাঁটাবনের দিকে গিয়েছিলাম। ওখানে গিয়ে দেখলাম। শান্ত সাথিরা ফুটপাতে যে ঘর করে থাকত, সেটা পুলিশ তুলে দিয়েছে। আমি আসে পাশে অনেককে জিজ্ঞাসা করেছি, কেউ বলতে পারেনি তারা কোথায় গেছে। আশেপাশে আমি প্রায় হাফ কিলোমিটার ফুটপাতেও ওদের খুঁজেছি। কিন্তু কোথাও ওদের পাইনি। কারণ আমি জানতাম , নীলা সাথীর চুলগুলো বড় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। ও এখানে আসবেই।
আমি ভাবলাম, নীলাকে এটা জানানো প্রয়োজন। কারণ পরে জানলে ওর কষ্টটা হয়তো আরও বেড়ে যাবে। কারণ নীলা মানুষটা হল, খুব কম কিছু নিয়ে স্বপ্ন দেখা মানুষ। কিন্তু যে ছোট স্বপ্নটা দেখে সেটা পরিপূর্ণভাবেই দেখে। আমার একটা গুন হল, নীলার মোটামুটি কোথায় কোথায় আবেগ কাজ করে আমি সেটা বুঝতে পারি।

তাও আমার কোন উপায় ছিল না। সংক্ষিপ্ত করে নীলাকে ব্যাপারটা খুলে বললাম। নীলা যেন হঠাৎ চুপ হয়ে গেল।
অনেকক্ষণ পরে আমাকে বলল, “তাও এখানে একটু যাওয়া যায় না?”

আমরা কাঁটাবন শান্ত-সাথিরা যেখানে থাকত সেখানে পৌঁছেতে আরও ১ ঘণ্টা লেগে গেল। দেখলাম জায়গাটা খালি পড়ে আছে।
নীলা সেখানে ৫ মিনিট স্থির দাড়িয়ে থাকল। এরপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “রিক্সা নাও। বাসায় যাব”।
রিক্সার মধ্যেই নীলার অনেক জ্বর আসল। মোটামুটি তাকে জড়িয়ে ধরেই বাসা পর্যন্ত নিয়ে আসতে হল। তাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে মোটামুটি ১১ টার দিকে আমি বাসায় পৌঁছলাম।
রাত ২ টার দিকে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। দেখলাম নীলার মা ফোন করেছে। বলল, “নীলার অনেক জ্বর। কোন মতেই জ্বর কমছে না। এখনি হসপিটালাইজড করতে হবে”।
আমি সেলিম ভাইয়ের রুমের দরজায় নক করলাম। সেলিম ভাইকে বললাম, “নীলার জ্বর। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে, আপনি দরজাটা একটু বন্ধ করে দেন”।
সেলিম ভাই আমার দিকে এমনভাবে তাকাল যেন আমি এই কথাটা বলে অন্যায় করে ফেলেছি। আমাকে বলল, “আমি সহ যাচ্ছি। তুমি নিচে নামো। আমি এক মিনিটের মধ্যে আসতেছি।

আমরা গাড়ি নিয়ে ১৫ মিনিটের মধ্যে নীলাদের বাসায় পৌঁছে গেলাম। নীলাকে যখন গাড়িতে উঠালাম নীলা প্রায় চেন্সলেস। শেষ রাতের দিকে আমি সেলিম ভাইকে বাসায় পাঠিয়ে দিলাম।
নীলা এখন ঘুমাচ্ছে। আমি কেবিনের বাহিরে একটা চেয়ারে বসে আছি। ক্লান্তিতে কখন যে আমার একটু করে ঘুম চলে আসল আমি বলতেই পারলাম না। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল, তখন ফজরের আযান হচ্ছিল...

(চলবে)

লিখাঃ ২৫-০৬-২০১৫
প্রকাশকালঃ ২৬-০৬-২০১৫



http://www.somewhereinblog.net/blog/ihprithibi/30050112

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুলাই, ২০১৫ রাত ১:৪৩

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আগেই বলে নিচ্ছি আমি কিন্তু বোদ্ধা না।। আপনাকে আমার বাড়িতে দেখে পাল্টা বেড়াতে এসে গল্পটি পেয়ে শেষ করলাম।। মূল থিমটা কি না-খাওয়া বা খেটে খাওয়া শিশুদের নিয়ে??


























০১ লা জুলাই, ২০১৫ ভোর ৫:৪০

ইকবাল হোসাইন সুমন বলেছেন: হা হা.। এটার ৮ টা পর্ব পর্যন্ত লিখা হয়েছে। আর ২ টা লিখে শেষ করে দেব। আপনি কি ৮ টাই পড়েছেন?
যদি না পড়ে থাকেন, আপনাকে জোর করব না। পুরোটা পড়লে বুঝতে পারতেন।
ধন্যবাদ আপনাকে পড়ার জন্য

২| ০২ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ১:১০

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: না আপনার বাড়িতে কালই প্রথম ভ্রমন-তাই....।।

০২ রা জুলাই, ২০১৫ ভোর ৪:২২

ইকবাল হোসাইন সুমন বলেছেন: সব সময় আপনার জন্য শুভ কামনা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.