নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পোড়া কাঠ আর শুকনো পাতার গন্ধ

ফা হিম

আমি হাত পেতে রই এ বৃষ্টি ছোব বলে/রাশি রাশি বৃষ্টির ফোটা ধুয়ে যায় আহত আমায়/তবু কখনো ধরা দেয় না।/www.facebook.com/imfaahim

ফা হিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার কতটা মারাত্মক হতে পারে বলে মনে করেন??

২৩ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৮

জনৈক রোগী তার সমস্যা নিয়ে গেলেন এক ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরিক্ষার পর একখানা প্রেস্ক্রিপশন দিলেন। কিন্তু রোগীর সেটা মনপুত হল না। তিনি ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলেন, -একটা এন্টিবায়োটিক দিলেন না? রোগীকে যতই বলা হোক, তার এন্টিবায়োটিক চাই-ই চাই। অগত্যা ডাক্তার তাকে একটা এন্টিবায়োটিক দিয়েই দিলেন। তাতে উনার তো কোন ক্ষতি নেই, বরং তার পরিচিত কোম্পানীর একটা ঔষধ বিক্রি হলে তার-ই লাভ ;)



কিন্তু এর মাধ্যমে আমরা নিজেদের কতটা ক্ষতি করছি তা কি জানি?







যেকোন ঔষধ মানেই এমন রাসায়নিক বস্তু যা আমাদের শরীরে থাকার কথা না। উল্টো সময়মত সেগুলো বের করে দেবার জন্য বিশাল কলা-কৌশল বিদ্যমান রয়েছে। যার আবার Xenobiotic বলে আলাদা একটা নামও আছে। তাই ঔষধের যথেচ্ছ ব্যবহার করা অনুচিৎ। আর এন্টিবায়োটিকের বেলায় তো সেটা আরো বেশি মারাত্মক। আমাদের এক শিক্ষকের ভাষায় যারা এমনটা করে, তারা "সমগ্র মানবজাতির শত্রু"। কিসের ভিত্তিতে এ কথা তিনি বললেন, সে নিয়েই একটু আলোচনা করছি।



এন্টিবায়োটিক মূলত প্রাকৃতিকভাবে মানে বিভিন্ন ফাঙ্গাস কিংবা ব্যাক্টেরিয়া থেকে পাওয়া কিংবা ল্যাবে সিন্থেসিস করা এমন কিছু ঔষধ যেগুলো বিভিন্ন জীবাণু (সাধারণত ব্যাক্টেরিয়া) ধ্বংস করে বা তাদের বৃদ্ধিকে থামিয়ে দেয়। অন্য ওষধের সাথে এর একটা তফাৎ হল এগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিয়মিত খেতে হয়, যেমন ৩-৫ দিন, কোনটা আবার ১৪ দিনও খাওয়া প্রয়োজন হয়। আর এর ভিতর যদি একটা ডোজ নিতে ভুল করা হয়, তবে মহাবিপত্তি। আবার অপ্রয়োজনে এন্টিবায়োটিক সেবন করাও ঠিক না। বাইরের অনেক দেশেই ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রি করা হয় না। অথচ আমাদের দেশে মোড়ের সেই ছোট দোকানটাতেই সুলভ মূল্যে তা পাওয়া যাচ্ছে এই জিনিস।



এন্টিবায়োটিকের ভুলভাবে সেবন করা যেই সমস্যা তৈরি করে তা হল antibiotic resistance সৃষ্টি হওয়া। প্রতিটি জীবেরই নিজস্ব survival techniques আছে। ছোট ছোট জীবাণুর সেই survival technique হল mutation করা। আর এই মিউটেশনের মাধ্যমে এরা নিজেদের ভিতর এমন ক্ষমতার সৃষ্টি করতে পারে যে তখন এন্টিবায়োটিকে এরা আর মরবে না বা ধ্বংস হবে না। এটাই antibiotic resistance। আর এই সক্ষমতা এরা অন্যকে এমনকি অন্য প্রজাতির কোন ব্যাক্টেরিয়ার সাথে আদান-প্রদান করতে পারে। কথাটা আধ্যাতিক ধরণের মনে হলেও এটা সত্য। তবে সেই কলা-কৌশল এখানে আলোচনা করা সম্ভব না, শুধু জেনে রাখুন এমনটা হয় এবং হচ্ছেও।



















কিভাবে এই resistance এর সৃষ্টি হয়?

আগেই বলেছি এর উপায় হল mutation বা নিজের ভিতর একটা পরিবর্তন আনা।



আর এমনটা ঘটে প্রথমতঃ এন্টিবায়োটিকের ডোজে অনিয়ম হলে কিংবা তা সম্পূর্ণ না হলে। একটা জীবাণু শুধু তখনি রোগ সৃষ্টি করে যখন তা থেকে তৈরি হইয়া কোন ক্ষতিকর পদার্থ অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায় শরীরে। এখন এন্টিবায়োটিক দিয়ে এই জীবাণুর সংখ্যা ফেললে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষতিকর পদার্থের পরিমাণও কমে যাবে। রোগী তখন হয়তো নিজেকে সুস্থ ভেবে আর এন্টিবায়োটিক নেবে না, আর এখানেই মস্ত ভুলটা করে। কারণ, জীবাণু তখনও রয়েছে, তবে পরিমাণে অল্প বলে কোন উপসর্গ দেখাচ্ছে না। এগুলো সুযোগ পেলেই আবার বংশবৃদ্ধি করে ফেলবে। এর জন্য চাই জীবাণুকে এন্টিবায়োটিক দিয়ে মাইরের উপর রাখা যাতে একটাও শেষ পর্যন্ত বেঁচে না থাকে।



একই ব্যাপার ঘটে যদি ভুল করে এক বেলা ট্যাবলেট না খায়। এতে করে জীবাণু যে বংশবৃদ্ধির সুযোগ পাচ্ছে তার মধ্যেই কোন একটা প্রজন্ম resistance দেখানো শুরু করে। অর্থাৎ তাদের আর সেই এন্টিবায়োটিকে মারা যাবে না। প্রয়োজন হবে নতুন এন্টিবায়োটিক ডিজাইন করা যেটা কতটা সময়-সাপেক্ষ তা না হয় না-ই বা বললাম।









যারা ভাবছেন এমনি এমনি এন্টিবায়োটিক খেলে কিছু হবে না, তাদের ভুলটাও ভেঙ্গে দিই।
আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে হাজার রকম ব্যক্টেরিয়া বিদ্যমান থাকে সব সময়। এগুলো খারাপ নয়, বরং সুস্থ স্বাভাবিক জীবন-যাপনে এদেরও অনেক ভূমিকা আছে। এন্টিবায়োটিক অনেক সময় এইসব ব্যক্টেরিয়ার উপরও প্রভাব ফেলে, এই কারণে আমাদের দেহের সিস্টেম আপসেট হয়ে যায়।



অকারণে এন্টিবায়োটিক খেলে তা সরাসরি এ জাতীয় ব্যক্টেরিয়ার উপর কাজ করলে তারাও survive করার চেষ্টা করে। ফলে resistant strain এর উদ্ভব হয়। এই ব্যক্টেরিয়া মল-মূত্র বা অন্যভাবে যখন প্রাকৃতিক পরিবেশে কোন ব্যক্টেরিয়ার সংস্পর্শে আসলে সেটাকে resistant করে ফেলতে পারে। আবার শরীরে কোন ব্যক্টেরিয়ার ইনফেকশন হলে সেটাকেও resistant করে ফেলতে পারে, কারণ আগেই বলেছি এটা আদান-প্রদান করা যায়।



সুতরাং, এখানে নিজের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি অন্যদেরও ক্ষতির কারণ হচ্ছে।







Antibiotic resistance বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান সমস্যা। এর কারণে কিছুদিন পর পর নতুন এন্টিবায়োটিকের ডিজাইন করতে হচ্ছে। অনেক এন্টিবায়োটিক বাজার থেকে উঠে গেছে তাদের কার্যকারীতা নষ্ট হয়ে গেছে বলে। সেই ঐতিহাসিক পেনিসিলিনও এখন আর নেই। একের পর এক জেনেরেশন পার করছে এন্টিবায়োটিক। নতুন জেনেরেশনে অনেক শিল্প বন্ধ করে নতুন শিল্প গড়ে তুলতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল অনেক মানুষ বিনা-চিকিৎসায় মারা যাবার মতও অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।







তাই আমাদের সকলের উচিৎ যত্রতত্র এন্টিবায়োটিক সেবনের এ প্রবণতা পরিহার করা। এতে যেমন নিজে সুস্থ থাকবেন, অন্যরাও সুস্থ থাকার সুযোগ পাবে, পকেটের পয়সাও বাঁচবে।





ছবিঃ গুগল থেকে

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৭

আহমেদ জী এস বলেছেন: ফা হিম ,




সচেতনতামূলক এই পোষ্টটির জন্যে ধন্যবাদ । শিক্ষনীয় তো বটেই ।

বহু আগেই ওয়র্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশান এব্যাপারটি নিয়ে সারা বিশ্বের চিকিৎসকদের কাছে আবেদন জানিয়ে রেখেছেন এই বলে যে , ---" যে দ্রুত হারে ব্যাকটেরীয়াগুলো এন্টিবায়োটিকের প্রতি রেজিষ্ট্যান্ট হয়ে পড়ছে আমরা ততো দ্রুততার সাথে নতুন নতুন এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার করতে সক্ষম নই। তাই আপনারা সাবধানতার সাথে এন্টিবায়োটিকের প্রেসক্রিপশান করুন । বাজারে আসা নতুন এন্টিবায়োটিকের প্রয়োগ
সীমাবদ্ধ রাখুন যাতে মারাত্মক মারাত্মক সব ব্যাকটেরীয়াজনিত রোগে এন্টিবায়োটিকগুলো কার্য্যকর থাকে । "

২৪ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:৩৬

ফা হিম বলেছেন:
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। ডাক্তারদের পাশাপাশি আমাদেরও সচেতন হতে হবে। সবশেষে ক্ষতিটা কিন্তু আমাদেরই হচ্ছে, তাই না?

২| ২৩ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:৪৫

আদনান শাহ্‌িরয়ার বলেছেন: শিক্ষণীয় পোষ্ট । ভালো লাগলো ।

২৪ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:৩৭

ফা হিম বলেছেন: ধন্যবাদ তপু ভাই

৩| ২৩ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:১৫

হৃদয়ের স্পন্দন বলেছেন: শিক্ষনীয় পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ

২৪ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:৩৭

ফা হিম বলেছেন: ধন্যবাদ দোস্ত।

৪| ২৪ শে মে, ২০১৪ ভোর ৪:৫৭

সায়েদা সোহেলী বলেছেন: যে জিনিসের এফেক্ট আছে তার অবশ্যই সাইড এফেক্ট তা এন্টিবায়োটিক হোক আর সাধারণ পেইন কিলার যা সচারচর সবাই নিয়ে থাকি । যে কোন মেডিসিন নেওয়ার আগে আমাদের এটা মাথায় রাখা উচিত ।


আপনাকে ধন্যবাদ

২৪ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:৪২

ফা হিম বলেছেন:
সাইড এফেক্ট অবশ্যই খারাপ, তবে রেজিস্টেন্‌স্‌ জিনিসটা ঠিক সাইড এফেক্টের ভিতর পরে না। সাইড এফেক্ট এক সময় ধীরে ধীরে কমে আসে। কিন্তু একটা ব্যক্টেরিয়া কোন একটা এন্টিবায়োটিকের প্রতি রেজিস্টেন্‌ট্‌ হয়ে গেলে সেটাকে আর ধ্বংস করা যাবে না। অর্থাৎ, রোগীর কোন উন্নতি হবে না।

অন্যান্য ঔষধের বেলায়ও এরকম সমস্যা হতে পারে, তবে সেটার মেকানিজম ভিন্ন।

ভালো থাকবেন।

৫| ২৪ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:৪৭

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: শিক্ষনীয় জনসচেতনতামূলক পোস্ট।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

২৫ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:১৩

ফা হিম বলেছেন:
আপনাকেও ধন্যবাদ পড়া এবং মন্তব্য করার জন্য।

৬| ২৪ শে মে, ২০১৪ সকাল ১১:২৮

রাতুলবিডি৪ বলেছেন: আমাদের দেশে ঔষুধ ও চিকিৎসা নিয়ে যা হয় তা পরোক্ষ হত্যার শামিল।


জনসচেতনতামূলক এই পোস্ট স্টিকি করার জন্য মডারেশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

২৫ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:১৭

ফা হিম বলেছেন:
তবে আমরাও দায় এড়াতে পারি না। আসলে অন্যসব সেক্টরের মত এটাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে কিছু প্রাইভেট মেডিকেল ও মেডিকেল কলেজের তো কথাই নেই.।

৭| ২৪ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:১৬

আমি নী বলেছেন: স্টিকি করা হোক।

২৫ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:২০

ফা হিম বলেছেন:
না রে ভাই, এমন বড় কিছু লিখি নাই স্টিকি হওয়ার মত। আমি আপাতত আম ব্লগার হিসেবেই খুশি। লোকে পড়লেই হইল।

৮| ২৫ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:১৬

পংবাড়ী বলেছেন: এখন কি অবস্হা কে জানে, আগে ঔষধ বিক্রেতা নিজেই এন্টি বাইওটিক প্রেসক্রাইভ করতো।

২৫ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:২৩

ফা হিম বলেছেন:
এখনো তো তাই করে উনারা। সুযোগ পেলেই গছিয়ে দেয়। আর এক নাগাড়ে কয়েকদিন খেতে হয় বলে বিক্রিও বেশি। ব্যবসা আর কাকে বলে।

৯| ২৭ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৪

সায়েদা সোহেলী বলেছেন: রেজিস্টেন্‌স্‌ জিনিসটা ঠিক সাইড এফেক্টের ভিতর পরে না। সাইড এফেক্ট এক সময় ধীরে ধীরে কমে আসে। কিন্তু একটা ব্যক্টেরিয়া কোন একটা এন্টিবায়োটিকের প্রতি রেজিস্টেন্‌ট্‌ হয়ে গেলে সেটাকে আর ধ্বংস করা যাবে না

---- জি সেটা না বোঝার ত কিছু নেই , আর রেজিস্টেন্‌স্‌ ব্যাপার টা শুধু এন্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রেই নয় অন্য যে কোন মেডিসিন এর বেলায়ও প্রযোজ্য এমন কি একটা ছোট বাচ্চা কে মারের ভয় দেখিয়ে অনেক দুষ্টুমি থেকে বিরত রাখা যায় , কিন্তু যে বাচ্চাকে প্রতিদিন মার খেতে হয় সে কিন্তু আর মার টাকে ভয় পায় না , ব্যাথাও অনুভব করে না /:)

৩১ শে মে, ২০১৪ সকাল ১১:০৩

ফা হিম বলেছেন:
সহমত।

যেকোন মেডিসিনের ক্ষেত্রে সহনশীলতা আছে। তবে সেগুলোর মেকানিজমটা একটু ভিন্ন। যেমন ধরুন মেডিসিন কাজ করার আগেই তা শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এটা নিয়েও কিঞ্চিত আলোচনার ইচ্ছে আছে।

ভালো থাকুন সব সময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.