নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেটেছে একেলা বিরহের বেল, আকাশকুসুম-চয়নে। সব পথ এসে মিলে গেল শেষে, তোমার দুখানি নয়নে।

অন্তহীন পথিক

আগ্রহ মোর অধীর অতি—কোথা সে রমণী বীর্যবতী । কোষবিমুক্ত কৃপাণলতা — দারুণ সে , সুন্দর সে উদ্যত বজ্রের রুদ্ররসে , নহে সে ভোগীর লোচনলোভা , ক্ষত্রিয়বাহুর ভীষণ শোভা ।

অন্তহীন পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

চোখে দেখা আগামীকাল

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:৪০

অনেক পরিশ্রমের পরে বাগান বাড়ির সীমানা প্রাচীরটা দেয়া শেষ করলাম।।।



সিমেন্টের পিলার দশ হাত পর পর পুতে দিয়ে কাঁটা তাঁরের বেড়া লাগালাম। ভালই হয়েছে। আম গাছ গুলো যেমন রক্ষা হল, তেমনি দেখতেও ভালো লাগছে। আমার ইচ্ছা ছিল, ইটের প্রাচীর দেয়ার। কিন্তু তাতে দুর্গ দুর্গ মনে হতো। এখন বাগানবাড়ি এর মতো লাগছে।

কাজ শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। গরু গুলোর দিকে খেয়াল করার সময়ই পাইনি। গ্যাস চেম্বারটাতেও গোবর দেয়া হইনি। আজ আমার খবর আছে। রানা করার সময় গ্যাস না থাকলে মাথা কাজ করেনা। গ্রামের সব কিছুই ভালো হলেও, এই পাতা দিয়ে রান্না করাটা আমার সহ্য হয়না। যখন জ্বলে তো জ্বলে, আর যখন জ্বলে না, ধোয়াতে এলাকা গরম করে দেয়। এখনি গ্যাস চেম্বারে গোবর দিতে হবে। না হলে আর রক্ষা নেই।



আমি লুঙ্গি টার ল্যাঙটির (কাঁচিকাটা) বাঁধন খুলে দিয়ে একটু জোরেই হাটা শুরু করলাম। আর ডাক ছাড়লাম- বাঁটুল ভাই, ও বাঁটুল ভাই। গোয়াল ঘরত আয় তো।

আমাদের গ্রামে বড় হোক আর ছোট, সবাই সবাইকে তুই করেই ডাকে। এটা অপমানের প্রতীক না, আপন মনে করার প্রতীক। হুট করে কেউ শুনলে মনে করবে আমাকে দাম দিচ্ছে না।



গোয়াল ঘরে ধুকেই আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। সবগুলো গরু গোবরে মাখা মাখি হয়ে আছে। আমার মাথা কাজ করছে না। আমি এখন কি করবো?? বিদেশী গরু, এখন যদি গোসল দেই, যদি ঠাণ্ডা লেগে যায়? বাঁটুল ভাইয়ের উপর মেজাজ চরম গরম হল। একটা দিন আমি না দেখলে কি হবে না নাকি?? আমি কি শালা মানুষ না??



কিছুক্ষণ পরে বাঁটুল ভাই এসে ঢুকল গোয়াল ঘরে। সে সেই একটা হাসি দিল। তারপর আমাকে বলল-"এই জন্যই তোক কছনু এগলে বালের গরু না নিবের। দেকতো এলা, গুয়ে গবরে লেটপ্যাঁটা হয়া আছে"। আমার মেজাজ আরও খারাপ হল, আমি ওকে বললাম-"ফলনার(একটা গালি, মানে জানি, কিন্তু বলা যাবে না :P) প্যাঁচাল না পাড়ি যা পানির পাইপ নিয়ে আয়। সউগ গুলেক গাও ধোওয়াইম।" বাঁটুল ভাই চলে গেলো পানির পাইপ আনতে। হুট করে মনে হল, Md Rokonuzzaman Rokon কে একটা ফোন করা দরকার। হাজারও হোক, গরুর ডাক্তার। রিস্ক নেয়া ঠিক হবে না। আমিও বাঁটুল ভাইয়ের পিছনে পিছনে গেলাম। টিউবওয়েলে কোন রকম হাতটা ধুয়েই রোকনকে ফোন করলাম। ও আমার গ্রামীণ নম্বরটা জানে, এয়ারেল নাম্বারটা জানেনা। ধরে কি না ধরে করতে করতে ফোন দিলাম। ও ফোন ধরেই বলল, হ্যাঁ ইমরান বল। আমি বললাম- দোস্ত বিদেশী গরুকে কি সন্ধ্যার সময় গোসল দেয়া যায় রে? ও বলল- যায়, সমস্যা নাই। আমি হাপ ছেড়ে বাছলাম। ওকে ধন্যবাদ দিয়ে ফোন রাখলাম। ও বলল, সমস্যা হলে জানাস। ভাজ্ঞিস বন্ধুরা ছিল, নাহলে আমার যে কি হতো? এই যে খামার বাড়ির নকশাটা, পুরোটা করে দিয়েছে Tonmoy Irtiza Anzum. যে কেউ দেখলে ভাববে, এটা বুঝি একটা সাজানো বাগান। পশ্চিম পার্শের খাড়া মিনারটা একটা আভিজাত্তের ভাব এনে দিয়েছে। বাগানের মাঝা মাঝি যে ট্রি হউস টা আছে, ওইটার নকশা করে দিয়েছে Nazmun Akter Pia. এতো সুন্দর, কি বলব! সকাল বেলা রোদ প্রবেশের যায়গা আছে ঘরটাতে। কিন্তু দুপুরে কোন রোদ ধুকতে পারবে না। আমার পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের মিষ্টি আলো ঢোকে। ঘরটার চারদিকেই বারান্দা আছে। তবে সামনের বারান্দাটা একটু বড়। সেখানে গোল একটা তি-টেবিল রাখা আছে। আমি সেখানে বসে বসে বিকালে বই পড়ি। আমার এই কৃত্তিম ত্রি-হাউজ টার মেইন বেজমেন্টটা ডিজাইন করেছে বন্ধু মোঃ ইফতেখারুল ইসলাম সৌরভ। এটার প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, রিমোট দিয়ে হউসটাকে উচু নিচু করা যায়। বাহির থেকে কেউ বুঝবেই না, এতো নিখুঁত কাজ করা আছে এখানে। শালা, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় পাশ করতে পারতো না, এখন কত্ত বড় ইঞ্জিনিয়ার। উফ।।



গরুর গোসল করানো প্রায় শেষ। আমি হাক ছেড়ে ডাক দিলাম, এই সাবানটা দিয়ে যাও তো। এখানেই গোসল করবো। আমার ডাকের উত্তর আসলো না। কিছুক্ষণ পরে ও এসে দূর থেকে সাবানটা একটা ঢিল মেরে দিয়ে গেলো। আমি প্রায় লাফিয়ে ক্যাঁচ ধরে ফেললাম। বললাম, কি হল আবার? ও চিল্লাই বলল, আজ যদি তোমাকে আমি ভাত দিছি, আমার নাম পালটিয়ে রেখো। গ্যাস নাই, আর তাঁর কোন মাথা বেথা নাই। হুহ।



আমি ব্যাপারটা মাথায় নিলাম না। মাথায় আমার অন্য প্লান। গ্যাস নাই, ভালো হয়েছে। আজ হবে আসল মজা। আমি গোসল শেষে লুঙ্গিটা হাঁটুর উপরে তুলে প্যাঁচ মেরে একটু চিপে পানি ঝরালাম। তারপর লুঙ্গিটা দিয়ে মাথাতা মোছার চেষ্টা করলাম। শুনি একটা বাচ্চা খিল খিল করে হাসছে। আমি একটা ধমক দিয়ে বললাম- ওই, কি হইচে তোর? ও সরাসরি বলল- "চাচা তোমার টিকরে দেকা জাওচে"। আমি তো পুরা অবাক, বাচ্চার সাহস কতো। :O



গোসল শেষে বাসায় গিয়ে ওকে বললাম, চিন্তা কর না। তুমি বরং ৮-১০ টা মুরগি খোয়ার থেকে ধরে জবাই করার বেবস্থা কর। ও কিছু বলল না। গিজ গিজ করতে করতে বের হয়ে গেলো। আমি ফোনটা হাতে নিলাম, একে একে সাদা ক্যানভাস নাফ নাফিজ Julfikar Jony Najmul Hossan Marian Afia Islam এদেরকে ফোন দিয়ে বললাম- দোস্ত আমি অনেক অসুস্থ। তোরা কি একটু আসতে পারবি।? ওদের মাঝে এক প্রকার চঞ্চলতা খেয়াল করলাম। আমার বেশ মজাই লাগলো। আমি ঘর থেকে বের হতে হতে আমার ছোট মেয়েটাকে ডাকলাম। ও টুকুর টুকুর করে লাফাতে লাফাতে আমার কোলে চলে এলো। আমি ওকে ওকে কোলে নিয়েই গালে একটা কামড় দিলাম। ও ফোত ফোত করে উঠে বলল-"আব্বা, তুমি পচা ছেলে"। আমি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আদর করে দিলাম। তারপর হাসি মুখে বললাম-"যাও তো মা, তোমার মা কে বল, বাবা চা নাশতা নিতে ত্রি-হাউজে ডাকল"। বলেই আমি কেটে পড়লাম। আমি জানি, এইটা যদি আমি বলি কাজ হবে না। আমি দূরে থাকলেই কাজ হবে। ও ভাব্ববে, ইস না জানি মানুষটা কতো কষ্ট করেছে সারাদিন। এক কাপ চা'ই তো চেয়েছে। আর কাছে থাকলে, আর যাই হোক, চা টা পেতাম না। এই জন্যই হয়তো মানুষ বলে, কাছাকাছি থাকলে আর যাই হোক, ভালবাসার টান বোঝা জায়না।



আমি হালকা নীল রঙের একটা ফতুয়া পড়লাম, আর সাদা লুঙ্গী। তারপর হুমায়ূন এর "আজ আমি কোথাও যাবনা" বইটা নিয়ে ত্রি-হাউজে উঠে গেলাম। একটু পরেই সন্ধ্যা মিলাবে। আমি ত্রি-হাউজের বারান্দায় আরাম করে বসলাম। ঠিক আমার দৃষ্টির সোজা সুজি আমাদের গ্রামের নদীটা। আগে নদীর পাড়ে দুইটা গাছ ছিল। এখন একটা। চারিদিকের সবুজ আস্তে আস্তে আরও সবুজ হতে শুরু করলো। আকাশ এখনও পরিষ্কার। শরতের মতো ছেড়া মেঘ একটু পরে পরে ঊরে যাচ্ছে। শিরশির করে বাতাস বইছে। আমর শরীরের লোমকূপ গুলো সেই ঠাণ্ডা বাতাসে ফুলে ফুলে উঠছে। বাগানটা আজ যেন মায়াপুরি মায়াপুরি মনে হচ্ছে। যেন কিসের একটা মায়ায় আমি হারিয়ে যাচ্ছি। আমার দৃষ্টির যতদূর যেতে চায়, আমি নিয়ে যাচ্ছি। চোখের পাতা ফেলার ইচ্ছে করছে না। আমি এই মায়ায় ডুবে যেতে চাচ্ছি, চারিদিকে দেখছি আর মনে মনে বলছি,

" দেখা হয়নাই চক্ষু মেলিয়া

ঘর হৈতে শুধু দুপা ফেলিয়া

একটি ধানের শীষের উপর

একটি শিশির বিন্দু।"।।



ঘর থেকে মাটিতে নজর যেতেই দেখি ও আসছে। সাদা ধবধবে একটা সিল্ক এর শাড়ি, তাঁতে সবুজ পাড় আর সবুজ সুতার কাজ করা। ওর এক হাতে চায়ের কেতলি আর এক হাতে পানের বাটা। ওর আঁচল ধরে লাফাতে লাফাতে আসছে আমার ছোট মেয়েটা। মেয়েটার হাতে একটা বিস্কিটের প্যাকেট।



আমি যেন না চাইতেই আমার সর্গ পেয়ে গেলাম। আমার ঢাকা শহরে একটা আধুনিক ফ্লাট নেই। নেই বড় কোন সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকুরি। আমার বিলাস বহুল কোন গাড়ি নেই। আমার বাচ্চারা নামি দামি কোন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে না। তাঁতে কি হয়েছে? আমি কি অসুখি? সুখ কি শুধু টাকায়? বিকেলে নাশতার পরে আমার বউ যখন আমার মুঝে জর্দা দিয়ে এক খিলি পান তুলে দেয়, সেটা কি সুখ নয়? আমার বাচ্চারা বুক ফুলিয়ে বলে, আমরা আমার বাবার হালাল টাকা খাই, সেটা কি সুখ নয়? কি জানি ভাই। আমার কাছে এইতো সুখ। সুখ যেহেতু আপেক্ষিক ব্যাপার, তোমাদের কাছে সুখের সংজ্ঞা ভিন্নও হতে পারে।



আমরা তিনজন মিলে নাশতা করলাম। সন্ধ্যা খনিয়ে আসছে। আর সাথে সাথে পুরোটা বাগানে লাইট জ্বলে উঠলো। এইটাও একটা অটোমেটিক সিস্টেম। রাত হলেই লাইট জ্বলে উথবে। প্রতিদিন এই লাইট জ্বলে ওঠে আর Raisa Abedin Disha এর কথা মনে পড়ে। ওর তৈরি সিস্টেমটা আসলেই কাজে দিচ্ছে। আমার জীবনটাকে আমি জতটানা রাঙ্গিয়েছি, আমার বন্ধু বান্ধবরা তাঁর চেয়েও বেশি রাঙ্গিয়ে দিয়েছে। ওরা আছে বলেই তো আমি নিশ্চিন্ত। বন্ধু Nazin Morshed এর সার্বক্ষণিক দেখাশোনায় কারও অসুখ বিসুখ নিয়েও চিন্তা নাই আমার। যার ভালো বন্ধু আছে তাঁর জীবনটা আসলেই রঙ্গিন।



বন্ধুদের কথা বলতে বলতে বড় রাস্তার উপরে চোখ যেতেই দেখি ৪-৫ টা সাদা গাড়ি সাই সাই করে ছুটে আসছে আমার বাড়ির দিকে। ওরা এসে যদি দেখে আমি সুস্থ, আমার খবর আছে। আমি বৌয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম- শুধু আজকের মতো। মুরগি কি রেডি? ওদের ডেকেছি। রাতে বারবিকিউ করবো। ও প্রথমে আমার দিকে রাগি চোখে তাকালো, তারপর ফিক করে হেঁসে দিলো। আমরা দুইজন প্রান খুলে হাসি শুরু করলাম। আর আমার বাচ্চা মেয়েটা আমার কোলে উঠে আমার গাল টানতে শুরু করলো। আমিও এখন ওর গাল টানছি, আর ও চিলাচ্ছে। হা হা হা।



আসলেই, জীবিত মানুষই শুধু জীবনকে উপভোগ করতে পারে।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:৪৫

অন্তহীন পথিক বলেছেন: Click This Link

২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৮:২৪

তানভীরএফওয়ান বলেছেন: Please upload some of ur gardenhouse image

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৪০

অন্তহীন পথিক বলেছেন: হা হা হা, সব কিছুই আমার কল্পনার রুপ। তবে কল্পনাকে বাস্তবে রুপ দেয়ার জন্য কাজ চলছে। বাড়ি তুলতেছি ভাই। এই বার বাড়ি গেলে ইন্সা আল্লাহ আপনার জন্য ছবি তুলে আনবো।

৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০২

আশিকুর রহমান টিংকু বলেছেন: আমারও দাওয়াত রইলো তোর এই অদেখা অবশ্যম্ভাবী আগামীতে । অন্তত তোর আম গাছের সর্বোচ্চ আম খাওয়া হয়ে হলেও একটা ভূমিকা আমি চাই সেই লেখাটায় যেটা এই আগামীর অতীত নিয়ে তৈরি হবে ।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৪১

অন্তহীন পথিক বলেছেন: অবশ্যই বন্ধু :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.