নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেটেছে একেলা বিরহের বেল, আকাশকুসুম-চয়নে। সব পথ এসে মিলে গেল শেষে, তোমার দুখানি নয়নে।

অন্তহীন পথিক

আগ্রহ মোর অধীর অতি—কোথা সে রমণী বীর্যবতী । কোষবিমুক্ত কৃপাণলতা — দারুণ সে , সুন্দর সে উদ্যত বজ্রের রুদ্ররসে , নহে সে ভোগীর লোচনলোভা , ক্ষত্রিয়বাহুর ভীষণ শোভা ।

অন্তহীন পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

"পিগ (pig) উপাখ্যান"

২১ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:১৬

একটা সময় ছিল, সেই ১৯৯৮-৯৯ সালের কথা, আমরা একটা বেড়ার বাসায় থাকতাম। আমাদের বাসায় কারেন্ট ছিলনা। আমাদের দুই ভাইবোনের পড়ার টেবিল ছিলনা। আমরা মাটিতে মাদুর/শপ/কাশের পিছানা পেতে পড়তে বসতাম।



আমি তখন রংপুর জিলা স্কুলে ভর্তি হয়েছি মাত্র। আমার বড় বোন ৯-১০ এ পড়ে হয়তোবা। আমরা হ্যারিকেন অথবা ল্যাম্প জ্বালিয়ে পড়তাম। আমি আমার স্কুলের অনেক বন্ধুর বাসায় যেতাম। কি সুন্দর সাজানো গোছানো বাড়ি। পড়ার টেবিল। বই রাখার র‍্যাক। মাথার উপর ফ্যান। আমার অনেক কষ্ট হতো। আমি ভাবতাম, ইস, আমি যদি এই বাসাটায় থাকতে পারতাম।



আফসোসের আক্ষেপ গিয়ে পড়তো আমার আব্বার উপরে। আমরা কেউ হয়তো মুখ ফুটিয়ে কিছু বলতাম না, কিন্তু পরিবারের সবাই আব্বার উপর অখুশি ছিলাম। আমার আম্মা ছিল চরম পর্যায়ের অখুশি। মাঝে মাঝেই ঝগড়া ঝাটি লেগে থাকতো। অভাবে স্বভাব নষ্ট আর কি!



আমার বাবা ছিলেন (এখনও আছেন) রংপুরের কুখ্যাত একটা স্কুলের প্রধান শিক্ষক। আমরা গ্রাম থেকে রংপুরে আসার পরে আব্বা নতুন চাকুরী নেন। আব্বার বেতন বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকায় নাকি টাকা দিয়ে (ঘুষ) নতুন ভাবে বেতন করে নিয়ে যেতে হবে। আমার আব্বার এতো টাকাও ছিল না, পরিচিত লোকও ছিল না। তাই দীর্ঘদিন আব্বা বেতন তুলতে পারেন নাই।



আমার স্কুলের বেতন ছিলও মাত্র ২১ টাকা। আমি সেই ২১ টাকাই দিতে পারতাম না। তিন মাস পরপর দিতাম। আমার বোনের একটাই মাত্র জামা ছিলও, যেটা পরে সে বাইরে যেত। থাক সে সব কথা......।।



আব্বা করত কি, মাঝে মাঝে উপদের দিত। বলত- "আমি শিক্ষক, আমার কাজ শিক্ষা দেয়া, শিক্ষা বিক্রি করা না। আর এই জন্যই আমি প্রাইভেট পড়াই না"। আব্বার উপদেশ শুনে আমার গায়ে রাগে কাঁটা দিয়ে উঠত। আমি সেই ছোট বয়স থেকেই টাকার কদর টা বুঝতাম। বুঝতাম সংসার কি জিনিস।।



" আজ ২০১৪ সাল। আমার সেই বোন ইসলামী ব্যাংক এর অফিসার। আমি নাম করা একটা প্রাইভেট ভার্সিটির ছাত্র। আমার ছোট বোন এখন শুধু চোখ বুজে চাবে, ভাইয়া কি আপু, আমি এইটা চাই। সাথে সাথে সে সেটা পেয়ে যাবে।"



আমি এখানে অহংকার প্রকাশ করছি না। আমি এখানে বলছি আশার কথা। "Hope" শব্দটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা বোঝাচ্ছি। আমরা জীবন যুদ্ধে জয়ি, শুধু মাত্র আমাদের আশা ছিল বলে। আমাদের পরিশ্রম আর ধরজ ছিল বলে। আর আমাদের বাবার সততা ছিল বলে।।



আমারা যখন মাদুরে বসে পড়তাম, তখন আব্বা বলত, ছোট থেকেই বড় হতে হয়। অমুক ল্যাম্প পোস্টের আলোয় পড়ছে, তমুক এই করে পড়ছে, ওই করে পড়ছে।।



প্রুচুর অভিমান হতো আব্বার উপর। বলতাম- "দিতে পারে না, খালি উপদেশ।"



এখন বুঝি, আমি যতটা না কষ্ট পেতাম, আমার আব্বা আমার চেয়ে বেশি কষ্ট পেত। আমাদেরকে ঈদ এ নতুন জামা না দিতে পারার গ্লানি আমার বাবাকে কোথায় নিয়ে যেত, কতটা ছোট করত আমাদের চোখে, আমি এখন বুঝি।



কিন্তু তাতে কি, যে ভাবেই হোক, দিন তো কেটে গেছে। থেমে থাকেনি। ওই পিগটা (pig) যদি আমার বাবার বেতন আটকিয়ে না রাখতো, সামান্য কয়েকটা টাকার জন্য, তাহলে হয়তো আমার বাবার চেহারাটা সব সময় দুখী থাকতো না। আমার বাবা ugly face নিয়ে বাসা থেকে বের হতো না, সৎ হবার জন্য পদে পদে নিজেকে ধিক্কার দিত না।



হয়তো ওই pig টা সমাজে success. ওর মুখটা হয়তো happy থাকে সব সময়, কিন্তু তাঁর ছেলে মেয়ে যদি কোন একদিন জানতে পারে- "An unhappy Socrates ugly face is better than thousand of happy pig", আর হাঁসতে হাঁসতে ওই pig টাকে বলে, - "বাবা, নিশ্চয়ই তুমি Socrates, নিশ্চয়ই তুমি pig নও, তাইনা?" তখন ওই pig টা কি উত্তর দিবে??



তাদের জন্য দুঃখ হয়, যারা জানে তাঁর বাবার রোজগারের উপায় কি, আর যেনেও তাদের বাবাকে নিষেধ কেরনা, বরং সেই কালো টাকার অহংকার দেখায়, নিজেদের success ভাবে। What a shame, এবং স্বাগতম কারন তুমিই এই সমাজের পরবর্তী pig.

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৩

আদম_ বলেছেন: "এখন বুঝি, আমি যতটা না কষ্ট পেতাম, আমার আব্বা আমার চেয়ে বেশি কষ্ট পেত।"
আই এম ক্রাইং..............
আপনার বাবার কাছে মাফ চেয়ে নেবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.