নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেটেছে একেলা বিরহের বেল, আকাশকুসুম-চয়নে। সব পথ এসে মিলে গেল শেষে, তোমার দুখানি নয়নে।

অন্তহীন পথিক

আগ্রহ মোর অধীর অতি—কোথা সে রমণী বীর্যবতী । কোষবিমুক্ত কৃপাণলতা — দারুণ সে , সুন্দর সে উদ্যত বজ্রের রুদ্ররসে , নহে সে ভোগীর লোচনলোভা , ক্ষত্রিয়বাহুর ভীষণ শোভা ।

অন্তহীন পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

তিনি আমার অতি পরিচিতদের মাঝে একজন......।।

১৯ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:০৭

আমার কাছে হুমায়ূন আহামেদের জন্মই হয়েছিলো মৃত ভাবে। আমি প্রথম যখন হুমায়ুনের “হিমুর হাতে পাঁচটি নীলপদ্ম” বইটা পড়া শুরু করি, তখন আমি জানতাম না, ইনি বেঁচে আছেন। বই হাতে নিয়েই মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। বন্ধু প্রেমিকার অনুরোধে জীবনে প্রথম পড়া বই, তাও আবার এতো মোটা! শালা বুইরা খাটাশ!



সে অনেক আগের কথা। সালটা ২০০৭।। ধিরে ধিরে হুমায়ূন আমার কাছে জীবন্ত হয়ে উঠলো। তাকে আমি অনুভব করা শুরু করলাম। সে তাঁর লিখনি দিয়ে আমাকে পরিচালনা করা শুরু করলো। মনে হতো, আমিও তাঁর পরিবারের একজন। শিলা, সে তো মনে হয় আমার কাছের কোন পরিচিতা নারী। মনে হতো, এই লোকটা আমাকেই উদ্দেশ্য করে তাঁর সব লেখা লিখত। আমি যেমন তাকে দেখতে পারি, সে ও আমাকে দেখতে পারে। আমার মনের শুভ্রতাকে অবলোকন করেই সে হয়তো “শুভ্র” লিখেছে। আমার প্রকাশ করতে না পারা আবেগ আনুভব ভালোবাসা গুলো দেখেই সে হয়তো নিখেছে “হিমু”।।



“তেঁতুল বলে জসনা” পড়ে, প্রথম বুঝলাম, ভালোবাসা মানে শুধু নেয়া নয়, যাকে ভালোবাসি তাকে অনেক কিছু দিতেও হয়। ভালোবাসা মানে শুধু নারীর সঙ্গ নয়, সেই নারীকে নিয়ে পরিবারের সবার সাথে পেয়াজ মরিচ দিয়ে মাখা মুড়ি খেতে খেতে আড্ডা দেয়ার মাঝেও ভালোবাসা বিরাজমান। নিজের বাবা-মা’কে সম্মান করার মাঝেও ভালোবাসা আছে। ভালোবাসা আছে বন্ধুত্বে, ভালোবাসা আছে নিজেকে ভালোবাসার মাঝে, একাকীত্বের মাঝে। কোথায় নেয় ভালোবাসা। যেখানে জীবন আছে, সেখানেই আছে ভালোবাসা।



অভাব- অনাটনে নিজের জীবন নিজের কাছেই যখন ভারি মনে হতো, যখন বেঁচে থাকার কারণ খুঁজে পেতাম না, তখন হুমায়ূন আমাকে আশা দিয়েছে। সুখ যে শুধু এসি লাগানো কামরায়, আর বিলাস বহুল গাড়িতেই যে শুধু সুখ নয়, বরং চিড়চিড়ে রোদে ঘামে ভেজা শরীরে নিয়ে অফিসে অফিসে চাকরি খোঁজার মাঝেও যে সুখ আছে, সারাদিন গাধার মতো খাটুনি খেটে, রিক্সা চালিয়ে ঘরে ফিরে ফুটফুটে মেয়ের মুখ দেখার মাঝেও যে সুখ আছে, বন্ধুকে পরীক্ষার খাতা দেখাতে গিয়ে নিজে অপমানিত হবার মাঝেও যে সুখ আছে, ছোট বোনের আবদার মেটানোর জন্য ভার্সিটির ইফাতার মাহফিলে না গিয়ে ২০০ টাকা জমানোর মাঝেও যে সুখ আছে, তা আমাকে প্রথম বুঝিয়েছিলেন এই মানুষটি।



কি লাভ, এই ক্ষণস্থায়ি জীবনে আরেকজন মানুষের সুখ নষ্ট করে নিজে সুখি হয়ে? ভোগে সুখ নাই, ত্যাগেই প্রকিত সুখ, প্রকিত ভালোবাসা। এই সহজ সুন্দর চিরস্থায়ী সত্য কথাগুলো আমি শিখেছিলাম এই মানুষটার কাছে।।



আমার আব্বা-আম্মা আমাকে প্রতিদিন খাইয়েছেন, আদর করেছেন, আমাকে শিক্ষিত করার জন্য জন্য স্কুলে পাঠিয়েছেন। তাঁরা আমার একটা একটা করে কোষ পরিপুষ্ট করেছেন। আমাকে ধিরে ধিরে বড় করে তুলেছেন। আমাকে মানুষের আকৃতি দান করেছেন। আমি ছোট্ট সুমন থেকে ধিরে ধিরে ইমরান হয়েছি।।



কিন্তু আমার সেই মানুষ আকৃতির খোলসের মাঝে মানুষ হবার উপাদান ঢুকিয়ে দিয়েছেন হুমায়ূন। আমাকে তিনি ধিরে ধিরে প্রকিত মানুষ করে তুলেছেন। শিক্ষিত কেন হবো, কেন নিজেকে সম্মান করবো, কেনই বা আরেকজনকে ভালবাসবো, সম্মান করবো এই শিক্ষা আমাকে দিয়েছেন হুমায়ূন।

হুমায়ূন ছিল, তাঁর বই ছিলও, আজ হুমায়ূন নেই, কিন্তু তাঁর সৃষ্টি রয়ে গেছে আমার মাঝে। আমি আফসোস করিনা এই ভেবে যে, তিনি মারা গেছেন। আমি আফসোস করি এই ভেবে যে হিমু, মিসির আলী, শুভ্র মারা গেছে। আর সাথে সাথে মারা গেছে তাদের জন্য অপেক্ষমান তাদের প্রেমিকারা।



সবাই চাইলেও আমি হুমায়ূন কে মরতে দিবো না। তাকে আমার কাছে আমি বাঁচিয়ে রাখবো আমার নিজের মতো করে। আমার অনুভূতিতে, আমার লিখনিতে। তাঁর মতো বস্তা পচা প্রেমের উপন্যাসের ভিতর দিয়ে।



সে আমার কাছে ধিরে ধিরে জীবন্ত হয়ে উঠেছে, আমার কল্পনায় সে সারা জীবন জীবন্তই হয়ে থাকবে। আমি সবার কথা জানি না, তিনি আমার অতি পরিচিতদের মাঝে একজন। আমি আমার জীবনের অতি পরিচিতদের খুব সহজে হারিয়ে যেতে দেই না। হোকনা, সেটা অতি একটা সামান্য “ফাউন্টেন পেন” কিংবা তোমার আমার দেখা অতি সামান্য অতি নগণ্য “জ্বলন্ত কোন মোম বাতির সিখা”।

আর হুমায়ূন, তুমি তো আমার কাছে আমার জীবনের চাইতেও অনেক অনেক বড় কিছু।।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.