নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেটেছে একেলা বিরহের বেল, আকাশকুসুম-চয়নে। সব পথ এসে মিলে গেল শেষে, তোমার দুখানি নয়নে।

অন্তহীন পথিক

আগ্রহ মোর অধীর অতি—কোথা সে রমণী বীর্যবতী । কোষবিমুক্ত কৃপাণলতা — দারুণ সে , সুন্দর সে উদ্যত বজ্রের রুদ্ররসে , নহে সে ভোগীর লোচনলোভা , ক্ষত্রিয়বাহুর ভীষণ শোভা ।

অন্তহীন পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

-পাপ মোচন-

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:০৫

(এক)

জ্যৈষ্ঠ মাস।
কালামের বউয়ের প্রসব বেদনা উঠলো মাগরিবের আযানের পরপরই। পৃথিবী নাকি ধ্বংস হবে এই মাগরিবের পরেই। সেই ধ্বংস কতটা ভয়াবহ হবে তা কালামের বউয়ের জানা নেই। কল্পনাও করতে পারে না সে। গ্রাম্য এই অশিক্ষিত গরীব গৃহিণীর সেটা কল্পনা করতে পারার কথাও না। কিন্তু সে যে যন্ত্রণা অনুভব করছে, তাতে তাঁর মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে আল্লাহ্‌ কেন পৃথিবী ধ্বংস করছে না? পৃথিবী ধ্বংস না হয় অনেক বড় ব্যাপার, অন্তত তাঁর মৃত্যু দিক। এই যন্ত্রণার চেয়ে মৃত্যু নিশ্চয়ই অনেক সহজ হবে। জান কবজ করার জন্য আজরাইল (আঃ) যখন বুকের উপর তাঁর হাত রাখবেন, তখন নাকি উহুদ পাহাড় চাপিয়ে দেয়ার মত কষ্টকর হবেন। সে সেই ছোট্ট বেলায় তাঁর নানির কাছে এই গল্প শুনেছিলো। আহা, কি সুন্দর ই না ছিল ছোট বেলা। খেলা ধুলার সময় কোথাও কেটে গেলে কালো কচুর একটা ডাল ভেঙ্গে আঠা লাগিয়ে দিলেই রক্ত বন্ধ হতো। চোখে অনেক জোরে আঘাত পেলে জামা পলটিয়ে মুখের গরম ভাপ নিয়ে চোখে লাগিয়ে দিলে সব কষ্ট পানি হয়ে যেত। অথচ এখন সে অমানুষিক কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু কষ্ট কমার কোন উপাই ই নেই। কি জানি আছে হয়তো। কারও বোধয় সেটা জানা নেই। কেন নেই(?), সেই কথা মনে করে সবার উপর অভিমানে কালামের বউ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। ক্ষণিকের জন্য সে প্রসব বেদনার কথা ভুলেই গিয়েছিলো। আহিলা আম্মার কথায় তাঁর হুস ফিরে এলো। আহিলা আম্মা বলে উঠলেন, “কি বউ কান্দ কেন? আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। আল্লাহ্‌র রহমত, সব ঠিক ঠাক ই আছে। তুমি খালি আল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌ কর।”

আহিলা আম্মা এই এলাকার প্রসিদ্ধ দাই। এখন আর আগের মত গ্রাম্য দাই নেই কোথাও। এনারা সবার শহর থেকে কাজ শিখে এসেছেন। ইনি নিজের ইচ্ছায় ই এই কাজ করে বেড়ান। এই কাজে টাকা পয়সা না থাকুক, সম্মান আছে অনেক। কত জনের ভাগ্য তিনি নিজ হাতে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। কত গর্ভবতীকে খালাস করেছে তাঁর এই দুই হাত দিয়ে। এই দুই খানা হাতের উপর তাঁর অগাধ বিশ্বাস। তিনি এই অঞ্চলে অত্তান্ত বিখ্যাত। এতোটাই বিখ্যাত যে লোকে বলে, তাঁর হাত পোয়াতির পেটে পড়লে উল্টা হয়ে থাকা বাচ্চাও নাকি সোজা হয়ে যায়। আর এখানে সব কিছুই তো ঠিকঠাক আছে।

আহিলা আম্মা মনে মনে ভয় পাচ্ছেন। সময় পার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো বাচ্চা বের হবার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বাচ্চাও আগের চেয়ে অনেক কম নড়াচড়া করছে। সমস্যাটা কথায়? তিনি আবার কালামের বউয়ের পেটে হাত রাখলেন। বাচ্চা কি উল্টা হয়ে আছে নাকি? নাহ, ঠিক ই তো আছে সব কিছু। তিনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, আর এক ঘণ্টা দেখবেন। কিছু না হলে রংপুরে নিতে হবে। যোগাযোগ ভালো। কোন সমস্যা নাই। আধা ঘণ্টার মাঝেই শহরে নেয়া যাবে। তিনি মনে মনে আল্লাহ্‌কে ডাকা শুরু করলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে শুকনা আকাশে চড়চড় করে শব্দ করে একটা বাজ পড়লো। কি যেন একটা অজানা ভয়ে তাঁর মনের মাঝে কু- ডাক দিয়ে উঠলো। তিনি নিজের অজান্তেই কালামের বউয়ের হাত শক্ত করে চেপে ধরে জোরে জোরে আয়াতুল কুরসি পাঠ করা শুরু করে দিলেন। ভয়ে কালামের বউয়ের মুখ রক্ত শূন্য হয়ে গেলো। সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে উঠলো, “খুব ভয় লাগতাছে গো আম্মা, আমারে বাঁচান গো আম্মা”। আহিলা আম্মার এক দৃষ্টিতে পোয়াতির দিকে তাকিয়ে রইলেন। তাকে ভরসা দেবার জন্য কিছু বলতে গেলেন। তাঁর ঠোঁট নড়ে উঠলো ঠিকই, কিন্তু মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হল না। তিনি এক দৃষ্টিতে ফেলফেল করে শুধু তাকিয়েই রইলেন............।।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.