নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেটেছে একেলা বিরহের বেল, আকাশকুসুম-চয়নে। সব পথ এসে মিলে গেল শেষে, তোমার দুখানি নয়নে।

অন্তহীন পথিক

আগ্রহ মোর অধীর অতি—কোথা সে রমণী বীর্যবতী । কোষবিমুক্ত কৃপাণলতা — দারুণ সে , সুন্দর সে উদ্যত বজ্রের রুদ্ররসে , নহে সে ভোগীর লোচনলোভা , ক্ষত্রিয়বাহুর ভীষণ শোভা ।

অন্তহীন পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

শূল

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:৩০

প্রতিবার বাড়ি যাওয়ার আগে একটা করে গল্প বলে যাই। এ বার কেন তাঁর বেতিক্ক্রম হবে? ছোটবেলার কয়েকটা টুকরো গল্প বলি। ছোট বেলায় আমরা ছেলেপেলেরা যে সব দুঃসাহসিক কাজ মানে যুদ্ধ করতাম, সেই সব কাজের/ যুদ্ধের গল্প।

আমার জানা মতে পৃথিবীতে মোটে তিনটা শূল আছে।
- পিতৃ শূল।
- স্ত্রী শূল।
- দন্ত শূল।

পিতৃ শূল আমি পাইনি। উল্টা আব্বাকেই সব সময় ঝাড়ির উপর রাখতাম এবং রাখি। স্ত্রী শূল পাওয়ার সৌভাগ্য হয় নাই (লজ্জা লজ্জা ভাব tongue emoticon )। আর শেষে থাকলো দন্ত শূল। আমার কাছের লোকেরা জানে, আমি এই জিনিস (শূল) এতো বেশি পেয়েছি যে আগের শূল গুলো না পাওয়ার ফলে যে খালি জায়গাটা সৃষ্টি হয়েছিলো, তা পূরণ হয়ে গেছে। শূলের কথা কেন বললাম, সে রহস্য শেষে উন্মুক্ত হবে আশা রাখি।

চলে যেই শৈশবে।।

আমার ছোটবেলা কেটেছে অজ পাড়াগাঁয়ে। এমন ই অজ যে, দেশের এহেন উন্নতি ক্ষণে আমার গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। আমি সেই গ্রামেই রাজার মতো হয়তোবা রাজার চেয়ে বেশি দাপটে বড় হয়েছি। এতো দাপট থাকার কারন, আমাদের সম্পদ। গ্রামের সবাই কোন না কোন ভাবে আমাদের উপর নির্ভরশীল। '৯৪ সালের দিকের কথা এই গুলো। আমি নিজ চোখে দেখেছি মানুষের কষ্ট। একবেলা খাবার জন্য গ্রামের প্রায় অর্ধেক বাচ্চা কাচ্চা, যারা আমার বয়সী, সবাই আমার পিছন পিছন ঘুরত। কি যে কষ্ট ছিল মানুষের। বলার মতো না। এখন অবশ্য ভিন্ন কথা। এখন ইরি ধানের সময় ১০০ মণ ধান পায়না, এমন মানুষ খুব কম ই আছে।

ওই ছেলেপেলে গুলো কি জন্য আমার পিছনে ঘুরত, সেটা আমি বুঝতাম ও না, বোঝার চেষ্টাও করতাম না। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাডুডু খেলে দুপুরে এক পাল ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাসায় আসতাম। আম্মা সবাইকে গোসল করিয়ে দিতো। তারপরে লাইন ধরে বারান্দায় সবাইকে পাটি বিছিয়ে খেতে দিতো কামলাদের সাথে। সবার জন্য যে থালা, আমার জন্যও সেই থালা। সবাই যে গামলা থেকে ভাত নিত আমিও সেখান থেকেই ভাত নিতাম। সবাই যে তরকারি খেত, আমিও সেই তরকারিই খেতাম।

সেই ছেলে গুলোর মাঝে যেমন আমাদের বাসার কাজের মহিলার ছেলেও ছিল, তেমনি আমাদের ক্ষেতে যে কাজ করে, তাঁর ছেলেও ছিল। এখনও যদি গ্রামে যাই, সবার সাথে আড্ডা দেয়ার সময় সেই ছেলেগুলো আমাকে বলে, "সোমন(সুমন) তোমার বাড়িত খায়া মানুস। তোর মাও যদি হামাক না খিলাইল হয়, হামরা গুলান বুজি মরি......ই গেইনো হয়।"

আব্বা মাঝে মাঝে বলতো, "বাবুকে সবার সাথে বসাও কেন?" আম্মা বলতো, "দেখুক, মানুষ কত কষ্ট করে খায়। বুঝুক মানুষের সাথে কিভাবে চলতে হয়।"

আমার সেই সকল বন্ধুদের সাথে দেখা হয় বছরে একবার বা দুই বার। সবাই বিয়ে করে ফেলেছে। এদের মাঝে দুইজন দুইবার করে বিয়ে করেছে। ওদের বাচ্চারা আমাকে চাচা-আব্বা বলে ডাকে। কি যে কিউট বাচ্চা গুলা। smile emoticon wink emoticon

এ বার সত্যি সত্যি শৈশবে চলে যাই। tongue emoticon

আমরা সারাদিন এমন কোন বাঁদরামি নাই, করতাম না। এর মাঝে বিশেষ বাঁদরামি ছিল ক্ষেত থেকে আলু চুরি করে এনে চুলায় পুড়িয়ে খাওয়া। পোড়া আলুর টেস্ট সত্যি অসাম। ইস, তখন যদি সস নামের জিনিষটা চিনতাম frown emoticon । একদিনের ঘটনা, আমি আমার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে আমাদের জমি থেকে আলু তুলতেছি। জমিটা আদি দেয়া। মানে খরচ আমাদের, চাষ করে আরেকজন। ফসল ভাগা ভাগি করে নেই ২/১ পদ্ধতিতে।

আলু চুরি করে তুলতেছি। তুলতে তুলতে দেখি, আদিয়ার লাঠি নিয়ে তেড়ে আসতেছে। আমি কি আর আছি। আমি তো সেই দৌড়। দৌড়ে গিয়ে সোজা বাসার খাটের নিচে ঢুকেছি। আদিয়ার আমার পিছনে পিছনে সেই দৌড়। গিয়ে আমাকে ধরে ফেলে সেই এক ঠাডানি মার্কা চড়।

আব্বা-আম্মা আর নানির সামনে ঘটেছে ঘটনাটা। সবাই তো স্তব্ধ। চড়টা মনে হয় বেশিই জোরে মেরেছিল। আমার এখনও মনে আছে। যাই হোক, আমার নানি আদিয়ারকে বলল, "তোর এতো বড় সাহস? তুই এইটা কি করলি?" ততক্ষণে আদিয়ারের রাগ গেছে পড়ে। সে আমতা আমতা করতে লাগলো। বাধ সাধল আমার আম্মা। আম্মা বলল,"কি হইছে দা (ভাই)? অক কেন মারলু?" আদিয়ার বলল, "আলু গুলা কেবল হওচে, অনেক গুলা গাচ তুলি ফেলাইচে।" বলেই সে বুঝে গেছে তাঁর খবর আছে। কারন আমার আম্মা মানুষ ভালো না। হুট করে আম্মা নানিকে বলল, "অপরাধ করচে মাইর খাইছে। এই নিয়ে কেউ আর কোন কথা কবার নেন। যাও, যার যার কামত যাও।"

আমি এতো বেশি মন খারাপ করেছিলাম যে, এখনও মাঝে মাঝে মনে মনে প্রশ্ন করি, আম্মা তাঁর বাচ্চার পক্ষ নিলো না? রাগে গা পুড়ে যায়। আম্মাকে একদিন বললাম, "আপনি কিছু বলেন না কেন আম্মা?" আম্মা বলল, "বলেছিলাম তো! শুধু তোর সামনে বলিনাই। বললে তুই আস্কারা পাইতি। বুঝতিনা দুনিয়া কাকে বলে। আর আদিয়ারকে কিছু না বললে ও আস্কারা পেত, তোকে ভয় পেত না। ভয় খুবি মূল্যবান জিনিস। smile emoticon " তখন বুঝিনাই, এখন বুঝি। পরিবার আসলে এই ভাবেই আমাদের মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়।

অনেক কঠিন কঠিন কথা বলেছি। দুইটা মজার ঘটনা দিয়ে শেষ করি............।।

ঘটনা একঃ
জন্ম নিয়ন্ত্রন কি জিনিস, আমার জানা ছিলনা সেই চার বছর বয়সে। জানার কথাও নয়। তখন ইন্ডিয়ান একটা জন্ম নিয়ন্ত্রন ট্যাবলেট নাম "মায়া" খুব চলতো। টিভিতে আমার দেখা প্রথম অ্যাড। tongue emoticon যাই হোক, এই জিনিস সবাই কেন খায় সেটা আমাদের জানা ছিল না। সফি নামে আমাদের একজন বন্ধু ছিল। সে তাঁর আম্মার ট্রাংক থেকে ওই ওষুধের পাতা চুরি করে এনেছে। আমরা সবাই বলতেছি এই এইটা খাইলে কি হয়? ও বলল, "হাগা ভালো হয়। pacman emoticon " দেকিস নে, পাপিয়ে খাইলে সল্লাত করি হাগা বেরায়, ঐ রমন।" আমরা খুশি মনেই খেয়েছিলাম নিশ্চই। grin emoticon

এখনও সেই ঘটনা মনে পড়লে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাই। আবার ভয়ও লাগে, (যদিও জানি থাকার কথা না) ইফেক্ট টা আবার থেকে যাইনি তো?? tongue emoticon tongue emoticon

ঘটনা দুইঃ
আমার আব্বা গুল লাগাত। সকালে আর সন্ধ্যায়। গুল দিয়ে দাঁত মাজত। এমন মজা নিয়ে চোখ বুজে দাঁত মাজত, আমার লোভ ধরে গিয়েছিলো। আব্বাকে একদিন বললাম, "আব্বা, গুল খাবো।" আব্বা কিছু না বলে দাঁত মাজতে মাজতে বাথরুম চলে গেলো। আর গুলের কৌটাটা বারান্দার উপরে তুলে রাখল। যেন আমি হাতে না পাই।

আমার আগ্রহ গেলো বেড়ে। সবাইকে বললাম, সেই একটা মিষ্টি জনিস আব্বা খায়। তোরা খাবি? সবাই এক পায়ে খাড়া। পরের দিন আব্বা স্কুলে যাওয়ার সাথে সাথে আমি সফির ঘাড়ে চড়ে গুলের কৌটা পেড়ে ফেললাম। পেড়েই নদীর দিকে সেই একটা দৌড়। সবাই আমার পিছনে পিছনে দৌড়। সাথে আমাদের পোষা কুত্তার বাচ্চাটাও।

আমাদের খুশিটা আকাশ চুম্বি। রবার্ট ব্রুস ও যুদ্ধে জয় লাভ করে এতো খুশি হতে পারেন নাই। নদীর ধারে বট তলায় পৌঁছেই আমরা সবাই গোল হয়ে বসে গুলের কৌটা খুললাম। গন্ধ ভালো না। তাতে কি? সবাই এক সাথে হাতের তালুতে গুল নিলাম। তারপরে এক দুই তিন বলে দিলাম মুখে পুরে। আহহহহ...............।।

এরপরে আমার জ্ঞান ফিরল পরের দিন সন্ধ্যায়। আমি জিভ নড়াতে পারি না। সব সময় লালা পড়তো মুখ দিয়ে। সে কি এক অভিজ্ঞতা। tongue emoticon tongue emoticon

এখন কেউ যদি আমাকে বলে শূল কয়টা? আমি বলবো, চারটা।

-পিতৃ শূল।
-স্ত্রী শূল।
-দন্ত শূল।
-গুল শূল।

পরিশেষে, আমি শেষের দুইটা গল্প জাস্ট মজা করার জন্য বললাম। আমি যে message টা আপনাদের দিতে চেয়েছি, নৈতিক শিক্ষা, সেটা অনেক আগেই দেয়া শেষ।

অনেকেই বলে আমাদের স্কুলে কলেজে নৈতিক শিক্ষা চালু করা উচিৎ। আমি তাঁদেরকে সহজ ভাবে বলতে চাই, ভাইরে, পরিবারের চেয়ে বড় স্কুল এখনও তৈরি হয়নি রে ভাই। আর বাবা-মায়ের মতো শিক্ষকও এখনও কেউ হতে পারেনি। যে পরিবার থেকে শিক্ষা নিতে পারবে না, নৈতিক শিক্ষা তাঁর জন্য নয়।

এতো বড় লেখা লিখলাম শুধু মাত্র এই লিখাটার জন্য। বলতে লজ্জা হয়, সে আমার ই বন্ধু। Click This Link

যাদের এই লেখাটি ভালো লাগবে সে লাইক দিতে পারেন, আর আমার মতো আমার বন্ধু বরনের মতো যার যার ভালো লাগবে না, তাঁরা শুধু একটাই কমেন্ট করবেন, "তুই গু খা" ।

কিছুদিনের জন্য বিদায় ঢাকা বাসি। টাটা

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.