নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেটেছে একেলা বিরহের বেল, আকাশকুসুম-চয়নে। সব পথ এসে মিলে গেল শেষে, তোমার দুখানি নয়নে।

অন্তহীন পথিক

আগ্রহ মোর অধীর অতি—কোথা সে রমণী বীর্যবতী । কোষবিমুক্ত কৃপাণলতা — দারুণ সে , সুন্দর সে উদ্যত বজ্রের রুদ্ররসে , নহে সে ভোগীর লোচনলোভা , ক্ষত্রিয়বাহুর ভীষণ শোভা ।

অন্তহীন পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার নাম না জানা চাকমা প্রেমিকা

২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৩৮



আমার ছোট্ট একটা প্রেমের গল্প বলি...।। B-)

আমি তখন HSC পাস করেছি এক বছর হয়ে গেছে। প্রথম বার ভার্সিটিতে টিকি নাই বলে পরের বার পরিক্ষা দিয়ে বেড়াচ্ছি। পরের বার ও কোথাও টিকছিনা, মাথা আউনা। শেষে কোন উপায় না দেখে এমন সব জায়গায় পরিক্ষা দিতে গেলাম, যেখানে সচরাচর কেউ যায় না। এর মাঝে উন্নত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

আমার ধারনা ছিল, মানুষ হয়তো একটু কম হবে ওই দিকে। কিন্তু বাঙ্গালির যে মোটে হাতের সংখ্যা ৩২ কোটি আর মাথা তার অর্ধেক, আমি ভুলে গিয়েছলাম। যাই হোক, পরিক্ষা দেবার জন্য গিয়ে কয়েকজন বন্ধু মিলে এক অচেনা ভাইয়ের কাছে উঠলাম। শরীর এতই ক্লান্ত যে রাতে মরার মত ঘুমালাম। সকালে ভাই ই ডেকে দিল পরিক্ষা দেবার জন্য। মন মেজাজ খুব ই খারাপ, যদি টিকে যাই, বাসা থেকে এতো দূরে এসে থাকবো কিভাবে?

ভার্সিটির পরিবেশ ও আমার পছন্দ হয়নি। গেঁয়ো গেঁয়ো একটা ভাব। তবে আশপাশের পরিবেশ চমৎকার। পাহাড় আর পাহাড়ের মাঝ দিয়ে রাস্তা। ভার্সিটির বিল্ডিঙের ছাদ আর টিলার উচ্চতা সমান। মনে হয় ছাদে উঠলে পাশের টিলার উপর লাফিয়ে চলে জাওয়া যাবে।

প্রথম দিন-ই মনে হয় ইঙ্গিনিয়ারিং এর পরিক্ষা ছিল। আমার ততটা মনে নাই কিসের আসলে পরিক্ষা ছিল। তবে পরিক্ষায় মেথ, ফিজিক্স আর কেমিস্ট্রি ছিল। যথারীতি পরিক্ষার হলে ঢুকলাম। সব ছেলেমেয়ের চেহারায় একটা বোকা বোকা ভাব। আমার কোন কিছুই পছন্দ হচ্ছে না। পরিক্ষা শুরুর আর মাত্র কয়েক মিনিট বাকি, এই হবে ১৫-২০ মিনিট। আমরা যে রুমটাতে বসেছিলাম, সেখানে আমার ছিল ডেস্ক টাইপের চেয়ার। আমি বসে আছি আরাম করে। আর তাকিয়ে দেখছি আশপাশের সবাইকে। কিন্তু পাশে কে বসেছি তাকেই দেখি নি।

হুট করে পাশের জন আমাকে হলে হঠলো, hi, আমি জুই ( নাম ভুলে গেছি ) :( .........।। আমি তাকিয়ে দেখি একটা চাকমা মেয়ে। গোলগাল মুখ। শুদ্ধ বাংলা বলছে। আমিও বললাম, hi...........।। ও আমাকে বলল, তুমি ফিজিক্স কেমন পারো? আমি বললাম ভালো ভাবেই পারি.........।। কেন? ও বলল, আমিও ভালো পারি...।। আমি বললাম- হুম; পারই যখন তখন জিজ্ঞেস করলে কেন? আমি ভেবেছিলাম তুমি পারো না......।। ও বলল, তোমার সাথে কথা বলা শুরু করলাম আর কি! কিছু তো একটা বলে শুরু করা দরকার, নাকি? আমি অবাক হলাম, ও এমন ভাবে কথা বলছে মনে হচ্ছে আমি ওর কত চেনা। তুমি কই থেকে এসেছ? আমি বললাম রংপুর। ও অবাক হয়ে গেলো এতো দূর? তোমাকে আসতে দিলো? আমি বললাম, কি করবো, কোথাও টিকছি না......।। পড়তে তো হবে নাকি? বলেই আমি চুপ হয়ে গেলাম। সামনের দিকে তাকিয়ে আছি আর ওর ব্যাপারটা চিন্তা করছি। ও মনে হয় একটু বেশিই কথা বলে, তবে আমি এই বিষয়ে নিশ্চিত হলাম যে সে আর যাই হোক, তার স্মার্টনেস সম্পর্কে কোন সন্ধেহ নেই।

সে আমার দিকে তাকিয়েই আছে......।। আমি বললাম কিছু বলবা? ও আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল, একটা কথা বলি কিছু মনে করবে না তো? আমি বললাম, না করবো না...... বলও...।। ও বলল তুমি মনে হয় ভালো ভাবে কারও take care করতে পারো না.........।। আমি আবাক হয়ে গেলাম! চেনা জানার বয়স ০৫ মিনিট। আর ও আমাকে চিনে ফেললো? আমি বললাম কেন? কিভাবে বুঝলে? এই যে তুমি আরাম করে চেয়ারে বসে আছো, একটা হাত রেখেছ তোমার চেয়ারের হাতলে, আরেকটা রেখেছ আমার চেয়ারের হাতলে......।। আমি তো হাত রাখতে পারছি না......।। তুমি আমার কথা খেয়াল করবা না?
আমি কি বলবো, ভেবে পেলাম না......।। বোকার মত হেঁসে দিলাম। বললাম, আমি আসলে খেয়াল করি নি......।। দুঃখিত। ও বলল, কিছু আবার মনে করনিতো? আমি বললাম, নাহ নাহ, এটা আমার ই খেয়াল করা উচিৎ ছিলো।

ভিতরে ভিতরে মেজাজ গরম হয়ে গেলো। ছিঃ আমি কি বোকা! এই একটু কথায় ই আমি ঘামে ভিজে গেলাম। কিছু বলা দরকার, নাহলে এই লজ্জা নিয়ে সারা জীবন পার করা সম্ভব না। তাই টুকটাক কথা চালিয়ে গেলাম। শুনলাম জাফর ইকবাল ওর পেন ফ্রেন্ড। ও নিয়মিত চিঠি লেখে। জাফর ইকবাল ও দেয়......।। সময় কেটে গেলো, পরিক্ষা শেষ হয়ে গেলো...।। ও চলে গেলো, আমি লজ্জায় ওর ফোন নম্বর নিতে পারলাম না...... পাছে ভেবে বসুক, আমি যেমন কারও যত্ন নিতে পারি না, সেই সাথে আমি একটা অভদ্র ও। আমার কাছে ওর দুইটা জিনিস থেকে গেলো, এক ওর দেয়া শিক্ষা, আর দুই ওর পরিক্ষার রোল।

সময় কেটে গেছে পাঁচ বছর। আমি যখনি আমার ভার্সিটির ডেস্ক গুলোতে বসি, পাশে কোন মেয়ে বসলে ইচ্ছে করেই পাশের চেয়ারের হাতলে হাত রাখি। ভাবি এই বুঝি মেয়েটা আমাকে বলে উঠবে, এই তুমি না কারও take care করতে পারো না মনে হয়...।। তুমি দেখেবে না, আমার অসুবিধা হচ্ছে।। আমি যে হাত রাখতে পারছি না......।। কিন্তু কেউ বলে না। লজ্জা পায়।।
আমার সেই এক ঘণ্টা বিশ মিনিটের পরিচিতার কথা আমি এখনও মনে রেখেছি। আমি অনেক মানুষের কাছে তাকে নিয়ে গল্পও করেছি। আফসোস, সে কোনোদিন জানতেও পারবে না, তার সেই এক ঘণ্টা বিশ মিনিটের পরিচিত কেউ তার কথা এতো যত্ন করে, তার কথা মনে রাখবে, লিখবে।। অবসরে তাকে নিয়ে ভাববে...।। তার কথা মনে করে মন খারাপ করে থাকবে...তাকে নিয়ে দুঃখ বিলাস করবে। আকাশের দিকে মাঝে মাঝে তাকিয়ে বলবে, হে আমার চাকমা বন্ধু, যেখানেই থাকো, ভালো থেকো তুমি।। :( :(

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৫২

আলভী রহমান শোভন বলেছেন: ভাল লেগেছে।

২| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৫২

এম. আরাফাত মাহমুদ বলেছেন: আপনি ভালো করে খোজ নিলে আবার ফিরে পাবেন। অবশ্যই।

৩| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৫৮

অন্তহীন পথিক বলেছেন: অবাক হয়ে গেলাম, আমার এক ছোট ভাই একটা ইভেন্ট খুলেছে এই নিয়ে। হা হা হা B-)

৪| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:০০

গর্বিত মুসলিম বলেছেন: খুব ভাল হয়েছে

৫| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:০৭

সুমন কর বলেছেন: হাহাহা.........স্মৃতিচারণ ভালো লাগল। !:#P

আমার চাকমা বন্ধুর জন্য রইলো শুভকামনা।

৬| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:১৪

বাউন্টি হান্টার বলেছেন:
দারুন মেয়েতো !

২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:১৮

অন্তহীন পথিক বলেছেন: সত্তিই দারুণ

৭| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:১৭

sunny09 বলেছেন: ভাল লেগেছে

৮| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:১৫

সৌমিক হাসান জয় বলেছেন: আমার এক হারানো বন্ধুর কথা মনে পরে গেল.... :((

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৪

অন্তহীন পথিক বলেছেন: আপনিও লিখে ফেলুন তার গল্পও। আমাকে ট্যাগ করে দিয়েন :)

৯| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:৫৫

মানবী বলেছেন: সুন্দর অভিজ্ঞতা!
পোস্ট পড়ে মনে হলো মেয়েটি শুধু স্মার্ট আর বুদ্ধিমতি ছিলেননা, ভদ্রও ছিলেন।

পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।



২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৫৬

অন্তহীন পথিক বলেছেন: অবশ্যই :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.