নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেটেছে একেলা বিরহের বেল, আকাশকুসুম-চয়নে। সব পথ এসে মিলে গেল শেষে, তোমার দুখানি নয়নে।

অন্তহীন পথিক

আগ্রহ মোর অধীর অতি—কোথা সে রমণী বীর্যবতী । কোষবিমুক্ত কৃপাণলতা — দারুণ সে , সুন্দর সে উদ্যত বজ্রের রুদ্ররসে , নহে সে ভোগীর লোচনলোভা , ক্ষত্রিয়বাহুর ভীষণ শোভা ।

অন্তহীন পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আপনের সংজ্ঞা

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২০

খুব ছোট থেকেই জানি, আমার অনেক গুলা ভাই। তখন নিজের ভাই, খালাতো ভাই, চাচাতো ভাই, ফুপাত ভাই......এই সব বুঝতাম না।
একটু যখন বড় হলাম, তখন দেখলাম, জানলাম, বুঝলাম, এরা আসলে আমার নিজের ভাই না। কেউ খালাতো ভাই কেউ বা চাচাতো, আর কেউ বা ফুপাত। কিন্তু আমি এই তফাতটাই বুঝলাম না, নিজের ভাই কি জিনিস, খালাতো ভাই কি জিনিস।

ঈদ আসলেই দেখতাম আম্মা নিজে শাড়ি নিতো না। সেই টাকা দিয়ে ভাইদের জন্য শার্ট প্যান্ট কিনে দিতো। আব্বা ও আমাদের কিছু কিনে দিয়ে বলত, এর জন্য একটা শার্ট দেখত! আমরা পছন্দ করতাম, আব্বা কিনত। খাবার বেলায় দেখতাম আম্মা মাছের বড় পিচটা ভাইদের প্লেটে তুলে দিচ্ছে।

থাকতাম এক যায়গায়, খেতাম এক ই প্লেটে, পরতাম এক ই কাপড়। আমি ক্লাস নাইনে উঠে প্রথম পাঞ্জাবী কিনেছিলাম। তাঁর আগে ভাইদের যে পাঞ্জাবী ছোট হয়ে যেতো, সেটাই আমার জন্য ফিক্স হয়ে যেতো। তাহলে তফাৎ কোথায়? বাবা-মায়ে?

মাঝে মাঝে দেখতাম, আমার এক ভাই চলে আসতো রাজশাহী থেকে। তাঁর সাথে থাকতো বিশাল একটা বক্স। সেখানে তাঁর পরিধিয় সকল জিনিস। সে এসেই ঘোষণা দিতো, খালা এইবার এসেছি, আমি কিন্তু আর ফিরছি না। আমি আগ্রহ নিয়ে থাকতাম, তাঁর বক্সে কি আছে। সে আমার জন্য নিয়ে আসতো T&T এর বিশাল লম্বা লম্বা কাগজ। আমি সেই কাগজে সারাদিন লিখতাম। কি যে জোস ছিল দিন গুলো, উফ...।। কিছু দিন যেতে না যেতেই দেখতাম, ভাই কেঁদে চোখ লাল করে তাঁর পুটলি গুছাচ্ছে। সে চলে যেতো। এমনি ভাবে আসতো আরেক ভাই......সে তো যেতো......।। তারপরে আরেক ভাই......।।

আমাদের কোথাও ঘুরতে যাওয়ার অর্থই হচ্ছে, খালা বাসা। আমি মেঝো খালার বাসায় মাসের পর মাস কাটিয়ে দিয়েছি। খালার বাসা মানেই আনন্দ। আমি জানতাম, আমার ভাই, দুইজনের আব্বা-আম্মা হচ্ছে আমার এই খালা খালু। কিন্তু এইটা আমার জানা ছিল না, এরা আমার খালাতো ভাই।

খালাতো ভাই, মামাতো ভাই, ফুপাত ভাই; ভাইয়ের মাঝে এতো তফাৎ কেন? এইটা আমার বুঝতে সময় লেগেছে অনেক।
আমার এই খালার বড় ছেলে, আমরা ডাকি বড় ভাই......। ও আর আমি রংপুরে এক খাটে ঘুমাতাম। আমি তখন পুচকি। একদিন সকালে উঠে দেখি আমি আর ও এক লুঙ্গীর ভিতরে। রাতে ঠাণ্ডা লেগেছে, আমি ঢুকে গেছি, আমার কি দোষ। ওকে আমরা সবাই একটু ভয় ই করতাম। ও আমাদের মারত না, কিন্তু থেকেনা কিছু ছেলে, দেখলেই মনে হয় ভদ্র! ও আসলেই অনেক ভদ্র ছিল। আর আমাদের ভয় ছিল ওর ওই গাম্ভীর্যতাকে। তাছাড়া ও ভালো ছাত্র ও ছিল। আমারা সবাই ছিলাম লেদা গোদা। ও আমাদের পড়াত। সেটাও একটা ফ্যাক্ট। ও আবার কবিতা লিখত। বিশাল বড় বড় কবিতা। ওর একটা কবিতার লাইন আমার এখনও মনে আছে, "............... হে কম্পিউটার, তোমাকে আমি করবই জয়।" ভাই এখন ইতালি প্রবাসী। java developer. ও যখন ডাকায় CSE নিয়ে পড়াশুনা করে, তখন বাংলা মানব নামে একটা রোবট বানিয়েছিল। পেপারে ওর ছবি এসেছিলো। আমার এখনও মনে আছে, আম্মা সেই ছবি পুরা মহল্লায় কেঁদে কেঁদে দেখিয়ে বেড়িয়েছিল।

আমি যখন রংপুরে স্থায়ী, এই; ক্লাস সেভেন কিংবা এইটের দিকের কথা...... তখন আমাদের বাসায় ঈদ মানেই বড়-ভাই, ছোট এর ঢাকা থেকে আমাদের বাসায় আসা। কি যে মজার ছিল সেই সব দিন গুলো। বড় ভাই অনেক কষ্ট করে শুধু আমার জন্য ওই কম্পিউটারটা নিয়ে যেতো। আমার জন্য গেম নিয়ে যেতো। সিনেমা নিয়ে জেত......আরও কত মজার জিনিস। ভাবতেই কেমন ভালো লাগে না, শুধু আমার জন্য।

বড় ভাইয়ের ছোট ভাই (আপন ভাই...) আমরাও ওকে ছোট ভাই বলেই ডাকতাম। বয়সের গ্যাপ একটু বেশি হলেও, ছোট ভাইয়ের সাথে আমার ভাব ছিল সবচেয়ে বেশি। আমার খেলার পার্টনার, গল্পের পার্টনার, গোপন পাপের পার্টনার বলতে ছোট ভাই...............।। ওর সাথে মিলে করি নাই, এমন কোন কাজ নাই। কি বললে বোঝা যাবে, ও আমার কত আপন ছিল(!) আমার জানা নেই। শুধু এইটা বলতে পারি, ভাই...।। সেই ভাই ও হুট করে পড়াশুনায় জ্বলে উঠলো। শাহজালাল থেকে পড়াশুনা করে সে এখন গ্যাসফিল্ডে চাকুরি করে। জোস লাইফ। ১৪ দিন কাজ, ১৪ দিন ছুটি। লাইক এ বস।

খুবি অবাক করার বিষয়, আমার এতো কাছে দুইজন ভাইয়ের সাথে আমার এখন বছরেও দেখা তো দুরের কথা, কথাই হয় না!
বেশ কিছুদিন আগে, বড় ভাইয়ের সাথে স্কাইপে কথা হচ্ছে। ও আমাকে সম্বোধন করছে "তুমি" বলে। আমি ওকে "তুই" বলে বলছি বলে কিছু মনে করছে কি না, বুঝতে পারলাম না। বড় ভাই বিয়ে করেছে অনেক আগে। আমি ক্লাস টেনের ছাত্র তখন। ভাইয়ের একটা ছেলে আছে। কি আশ্চর্য, ছেলেটার নাম ভুলে গেছি। অথচ ঠিক করা ছিল, আমি ওকে "বেটা" বলে ডাকবো, আর কোন ভাইয়ের ছেলে মেয়ে আমার চাচু ডাকতে পারবে না, বলতে হবে "ছোট আব্বা"। ভাইয়ের সাথে কথা বলছি স্কাইপে, হুট করে ভাইয়ের ছেলেটা সামনে চলে আসলো। আমাকে দেখে ওর আব্বুকে জিজ্ঞেস করল, -"বাবা, কে এটা?" ও বলল, -"এটাও তোমার এক চাচ্চু"। আমি অবাক নয়নে বাপ ছেলের কথপকথন দেখলাম, শুনলাম। পাছে না আবার চোখের পানি দেখে ফেলে তাই আড়াল হয়ে গেলাম............।।

ছোট ভাই বিয়ে করেছে দেখেছি ফেসবুকে। ভাবির নাম জানি, পরিচয় নাই। আচ্ছা কেমন হবে যদি আমি কোনোদিন হুট করে ওর বাসায় চলে যাই। ওর বউ আমাকে কিভাবে দেখবে আমি চিন্তা করি। ভাব্বে, ওও ও.........খালাতো ভাই! কই কোনোদিন দেখিনাইতো! তবে তোমার নাম শুনেছি অনেক ভাই। বস, চা খাও।

সেই মেয়েটা কি কোনোদিন জানবে, বুঝবে খালাতো ভাই বলে দুনিয়াতে কিছু নাই। আমরা দুইজন ভাই। অবশ্য ভিন্ন চিত্রও হতে পারে। হতে পারে আমার ভাই কোন একদিন তাঁর হাত ধরে কেঁদে কেঁদে বলেছে, তুমি যে জানো আমার একটা শুধু বড় ভাই আছে, সেটা কিন্তু ঠিক না। আমার একটা ছোট ভাই ও আছে। ও কিন্তু একদিন আসবে! তুমি কিন্তু ওকে আসার সাথে সাথে চা দিয়ো না। নিজে হাতে রান্না করে খাইয়ে দিয়ো! ও চলে যেতে চাইলেও যেতে দিয়ো না, জোর করে হলেও আটকে দিয়ো ওকে। ও কিন্তু অনেক অভিমানি।

আবার এমনটা না ও হতে পারে। হয়তো তাঁর বউ এই অপেক্ষায় থাকবে আপদ কখন বিদেয় হয়! দুইটাই তো ধরে নিলাম, ভালোটাই ধরি।

মাঝে মাঝে আমরা বাসার সবাই মিলে বড় ভাইয়ের ছেলের ছবি বের করি......দেখি। হাসি কাঁদি। কার মত হয়েছে দেখতে সেটা নিয়ে গবেষণা করি। আমি মাঝে মাঝে ওর ছেলের ছবি কম্পিউটারের ওয়ালপেপার দিয়ে রাখি। কেউ যদি বলে কে রে এটা? আমি বলি, আমার আব্বা। কথাটা বলতেই কেমন জানি ভালো লাগে। আপন আপন লাগে।

এখন আমারও বয়স হয়েছে। অনেক বাচ্চা-কাচ্চা আমাকে চাচ্চু ডাকে। আমার বুকটা ফেটে যায়। আমি বাচ্চাটার দিকে ফিরে তাকাই। সম্ভব হয়ে কোলে নেই। কেন? নাহ, কোন স্বার্থের জন্য নয়............... ভালো লাগে বলে!
____________________________________________________
আমরা মাঝে মাঝে খুব সামান্য কারনে, খুব সামান্য স্বার্থের জন্য খুব কাছের মানুষ গুলোকে অনেক দূরে ঠেলে দেই। এক বারের জন্যও ভাবি না, সে আমার কত কাছের একজন ছিল। সম্পর্কের চেয়ে দামি জিনিস আর কি হতে পারে? টাকা জমি বাড়ি গাড়ি এই সব জিনিসের কি এতোই দাম যে সম্পর্ক ছিন্ন করে তাঁর মূল্য পরিশোধ করতে হবে?

পুনর্জন্মে বিশ্বাস নাই। কেউ কারো ভাই হয়ে, বাবা হয়ে মা হয়ে বোন হয়ে একবার ই আসে এই পৃথিবীতে। মাত্র ৬০-৭০ বছরের ই তো জীবন। অথচ আমরা কত নির্মম ভাবে সেই সব সম্পর্কের সিরচ্ছেদ করি সামান্য কিছু স্বার্থের জন্য। হায়রে মানুষ!

মানব জীবন, আসলেই বড়-ই রহস্যময়য়।।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২৫

বিপরীত বাক বলেছেন: ভাই বলে কিছু নেই। বন্ধু বলে কিছু নেই।।এসব অলীক কল্পনা।।

টাকাই সব। তা সে যেভাবেই আসুক। একমাত্র স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক ছাড়া পৃথিবী তে আর কোন সম্পর্ক নেই।। বাকি সব সম্পর্ক মিথ্যে।। মুল্যহহীন।।

আপনি বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন।।

জমি বাড়ী গাড়ী জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।। কেননা এগুলো আপনার সাথে কখনই বিশ্বাস ঘাতকতা করবে না।।

কখনও কারও জন্যে কিছু করতে যাবেন না। পুরোটাই লস।। ৬০-৭০ বছরের জীবনই তো। পুরোটাই নিজের জন্যে শুধু নিজের জন্যে ব্যয় করুন।

আপন বলতে কিছু নেই এদেশে এ জাতি তে। তবে বউ ই সব।

আমার এক মামা একবার বলেছিল," তুমি কারও জন্যে কিছু করবে না, কেউ তোমার জন্যে কিছু করবে না। এটাই বাস্তবতা
"""

অপরের সাফল্য কখনই আপনার নয়। তাই অন্যের সাফল্যে খুশি হওয়া থেকে বিরত থাকুন।। পারলে ডাউন দেয়ার চেষ্টা করবেন।।

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:১৫

অন্তহীন পথিক বলেছেন: বাবা-মাকেও বউ ছাড়াই গেছে? :/

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.