নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেটেছে একেলা বিরহের বেল, আকাশকুসুম-চয়নে। সব পথ এসে মিলে গেল শেষে, তোমার দুখানি নয়নে।

অন্তহীন পথিক

আগ্রহ মোর অধীর অতি—কোথা সে রমণী বীর্যবতী । কোষবিমুক্ত কৃপাণলতা — দারুণ সে , সুন্দর সে উদ্যত বজ্রের রুদ্ররসে , নহে সে ভোগীর লোচনলোভা , ক্ষত্রিয়বাহুর ভীষণ শোভা ।

অন্তহীন পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

খিলখিল প্রজাপতি

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ২:১০

খিলখিল প্রজাপতি (ছদ্দনাম) নামের একটা মেয়েকে চিনতাম।
মেয়েটা নানা ভাবে আমাকে মুগ্ধ করেছিল। প্রথম মুগ্ধ হয়েছিলাম তাঁর অংক প্রতিভা দেখে। আমি যেখানে এক্সট্রা উপপাদ্য গুলো গাইড দেখে বুঝে বুঝে হাজার চেষ্টা করেও মনে রাখতে পারতাম না, সেখানে মেয়েটা কেমন করে যেন বুদ্ধি খাটিয়ে করে ফেলত। আর আমি অবাক হয়ে যেতাম!
মেয়েটার সাথে পরিচয় হবার পর থেকে প্রতিটা পদে পদে সে আমাকে মুগ্ধ করে চলেছে। সে আমাকে নানা ভাবে দীর্ঘ আট বছর ধরে মুগ্ধ করে চলেছে।
যত কঠিন পরিস্থিতিই হোক না কেন, সে হাঁসি মুখে দাঁত কেলিয়ে আমাকে বলেছে এটা কোন ব্যাপার? তারপর সে কেমন কেমন করে যেন সমাধান করে ফেলত। এমনও পরিস্থিতি গেছে, আমি চিন্তায় বিভর হয়ে জেগে জেগে রাত কাটিয়েছি, আর অমন পরিস্থিতেও সে হাসিমুখে বলেছে, তুই অযথা চিন্তা করিস!
আমি মনে মনে বলতাম, মেয়ে সংসার বোঝে না!
সে কিন্তু সংসার ঠিক ই বুঝত। কতো দূর হেটে গিয়ে একটা টিউশনি করাতো, বাসা থেকে টাকা যেন কম নেয়া লাগে। অনেক সময় বাসে করে ফেরার সময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ত। রাতের পর রাত জেগে মানুষের খাতা লিখে টাকা কামাত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটারের সামনে বসে থেকে নেটে কাজ করত কতো যে, তাঁর হিসেব নেই।
তারপরও তাঁর মুখে কোনোদিন ক্লান্তি দেখি নাই আমি। খুব অবাক হতাম। ভাবতাম, আমাকে মনে হয় বুঝতে দিতে চায় না।
এতো কিছু করার পরও আমি যখন তাঁর সাথে দেখা করতে আসতাম, সে আমার সাথে ক্লান্তিহীন ভাবে ঘুরে বেড়াতো। আমার পকেটে টাকা পয়সা কম থাকে বলে সেই সব সময় খাবার বিল দিতো। আর আমাকে বলতো, একদিন তো আর এই রকম দিন থাকবে না আমাদের, তাই না?
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম, আর ভাবতাম, মানুষ এমন হতে পারে কিভাবে? আমি ভার্সিটির পাশেই থাকি। দিনে হয়তো দুইটা ক্লাস থাকে আমার। তাতেই আমার ক্লান্তির শেষ নেই। আমি মাঝে মাঝে ওর সাথে দেখা করতে আসতে চেয়েও এই ক্লান্তির ভারে আসতে পারতাম না। তখন ও ই যেতো আমার সাথে দেখা করতে। আমরা হাতিরঝিলে বসে গল্প করতাম, হাঁটতাম, বাদাম খেতাম। তারপরে ও আবার এই রাস্তা পাড়ি দিয়ে আসতো।
তারপরও তাঁর মুখে ক্লান্তির ছাপ দেখতাম না। দেখতাম না কোন দুঃখবোধ। আমার মনে হত, সে মনে হয় ক্লান্ত হতেই জানে না। আমি আরও অবাক হতাম!
একটু কেনাকাটা করতেই আমি হাপিয়ে যেতাম। পায়ে মনে হয় খিল ধরে যাবে, এমন লাগতো। অথচ সে, এই নিউমার্কেট, এই নুরজাহান, এই বসুন্ধরা.........গাড়ি তাঁর চলছেই। কোথায় কমদামে ভালোটা পাওয়া যাবে। আমি বলতাম, এইটা নিলেই তো হয়, ও বলে, নাহ, চল ওইখানে যাই। ওখানে মনে হয় ভালো টা পাবো! আমি হাল ছেড়ে দিয়ে ওর পিছু পিছু চলতাম। বারবার পানি কিনে খেতাম। আর ও চলছেই তো চলছেই।
অনেকের মনে হতে পারে, প্রেমে পড়লে এমন ভালো ভালো তেল দেয়া কথা সবাই বলে। কিন্তু আমার মনে হয়, দীর্ঘ আট বছর প্রেম করার পরে তেল দেয়ার কিছুই থাকে না। যা থাকে, তাঁর নাম তিক্ততা।
কতো উৎসব যায় আসে। কোনোদিন কিছু কিনে দিতে পারি না তাকে। তাকে নিয়ে ভালো কোথাও খেতে পারি না কোনোদিন। ঘুরতে যেতে পারিনাই কোন ভালো জায়গায়। কতো মানুষ স্টার সিনেপ্লেক্সে অমুকে তমুকে সিনেমা দেখতে যায়। অথচ তাকে নিয়ে কোনোদিন সেই সব জায়গায় পা ও দিতে পারি নাই।
তারপরও সে হাঁসি মুখে বাদাম আর ফুটপাতের চা খেতেখেতে বলেছে, জীবনটা কিন্তু অনেক সুন্দর, তাই না? আমি আফসোসের নিশ্বাস ফেলেছি আর বলেছি, হুম।
কিন্তু হঠাৎ করে কি হল, বুঝতেই পারলাম না। মেয়েটা কেন জানি সব কিছুতেই হাল ছেড়ে দিল। আগে যেখানে তাঁর ল্যাপটপ নষ্ট হলে সে বলতো, নষ্ট হয়েছে ঠিক হবে, না হলে নাই। ল্যাপটপ ই তো! আর আজ; সে একটা কীবোর্ড নষ্ট হবার ভয় পায়!
আগে তাঁর সাথে ফোনে প্রথম কথা শুরু হত তাঁর হাঁসি দিয়ে, আজ শুরু হয় ক্লান্তি দিয়ে। আমি অবাক হই আর তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি। ভাবি, কোথা থেকে এলো এতো ক্লান্তি? কোথায় এই ক্লান্তির জন্ম? মাঝে মাঝে ভাবি, আমিই আবার এর জন্য দায়ি না তো! কি জানি হতেও পারে!
আমার চোখের সামনেই খিলখিলিয়ে হাসা মেয়েটা হুট করেই যেন গায়েব হয়ে গেলো। আমি বুঝতেও পারলাম না একবারের জন্য।
খুব মিস করি খিলখিল প্রজাপতি মেয়েটাকে। আর তাঁর খিলখিলিয়ে দাঁত বের করা হাসিটাকে।
সত্যি বলছি বড্ড, বড্ড মিস করি তাকে আজকাল! :(

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.