নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইমরানন

কিছু কথা থাকনা গোপন..... https://www.facebook.com/imran.hossain.aamir

ইমরানন › বিস্তারিত পোস্টঃ

চ্যাপলিনের সিনেমা- দ্য আর্টিস্ট

২৩ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৪

The Artist


চলচ্চিত্র মূলত দুই প্রকার সবাক-নির্বাক... কিন্তু পিউর চলচ্চিত্র বলতে "নির্বাক" চলচ্চিত্রকে-ই বোঝানো হয়, যদিও এখন নির্বাক চলচ্চিত্র বলতে কিছু নেই... নির্বাক সিনেমা এখন শুধু-ই ইতিহাস... চ্যাপলিন নিজেও মনে করেন সিনেমার আসল স্বাদ নির্বাক সিনেমার মাধ্যমে-ই পাওয়া সম্ভব(চ্যাপলিন নিজেও সবাক সিনেমা খুব একটা পছন্দ করতেন না), চ্যাপলিনের কথায় এক হিসেবে খুব সুন্দর একটি যুক্তি আছে , সবাক সিনেমায় যেকোনো একটি সাইট দুর্বল হলে অর্থাৎ স্টোরিলাইন-স্ক্রিনপ্লে যেকোনো একটি দিক দুর্বল হয়ে গেলে অথবা খুব একটা স্ট্রং না হলেও অন্যান্য ব্যাপার যেমন ডিরেকশন-অভিনয়-মিউজিক-ডায়ালগ বা টেকনিক্যাল বিষয়গুলোর মাধ্যমে তা কাভার করে নেয়া যায়... যেমন, সিটি অফ গড অথবা দ্য গুড দ্য ব্যাড এন্ড দ্য আগলী সিনেমার কাহিনী খুব একটা আহামরি না কিন্তু জাস্ট ডিরেকশন-স্ক্রিনপ্লে-অভিনয়-মিউজিকের মাধ্যমে এই সিনেমা দুটি আজ মাস্টারপিস... এর জন্য সবাক সিনেমাকে পিউর সিনেমা বলা যায় না, কিন্তু অন্য দিকে একটি নির্বাক সিনেমায় সবকিছু পারফেক্ট ভাবে দেখানো প্রয়োজন হয়, কোনো একটি দিক একটু ঝুলে পড়লে অডিয়েন্স সিনেমাটি সেভাবে নিতে পারবে না... যদিও এখন আমরা সবাক সিনেমা দেখে অভ্যস্ত তাই নির্বাক সিনেমার নাম শুনলে কপালে কেমন জানি ভাজ পড়ে যায় ।




বর্তমানে নির্বাক সিনেমা থেকে সবাক সিনেমাগুলো একটু বেশি এন্টারটেইনিং... ১৯২৭ সালের পর থেকে যখন দর্শক ধীরে ধীরে সবাক(ডায়ালগ যুক্ত সিনেমা) পেতে শুরু করলো তখন থেকে শুরু হলো নির্বাক সিনেমার পতন । তখন চ্যাপলিন নিজেও না পেরে সবাক সিনেমা নির্মাণ শুরু করে দেন... আর এই নির্বাক থেকে সবাকে আসার গল্পকে পুজি করে মিশেল হাজানাভিসিয়াস নির্মাণ করেন "দ্য আর্টিস্ট" ।
যদিও এটি মূলত একটি রোমান্টিক-কমেডি মুভি কিন্তু এর মাঝেও লুকিয়ে ছিলো পুরোনো কিছু কথা, লুকিয়ে ছিলো নির্বাক-সবাকের মৌন লড়াই । যেখানে দেখানো হয়েছে একজন সুপারস্টারের প্রেমে পড়ার গল্প, দেখানো হয়েছে যুগের সাথে তাল না মিলিয়ে চললে একজন সুপারস্টারের কি পরিনতি হয় ।
একজন পরিচালকের পরিচালনা কখন সার্থক হয় ? যখন তার সৃষ্টি তার নির্মান দেখা পর দর্শকের চোখ জুড়িয়ে যায়... যেই নির্মান দেখার পর মনে হয় এইটাকে টপকে যাওয়া অনেক কঠিন, যেই সৃষ্টি দর্শকের মনে গভীর ভাবে গেথে যায়... দ্য আর্টিস্ট দেখার পর এমন-ই এক রকম অনুভূতির জন্ম নিয়েছে... খুব কম সিনেমা একটানা দুইবার দেখেছি... এমন কি ছিলো যা পরপর দুইবার দেখতে বাধ্য করেছে... ? এই প্রশ্নের জবাবে বলতে হয় কি ছিলো না এই সিনেমায়... সিনেমাটি দেখে Sunset Blvd এর একটি ডায়ালগের কথা মনে পড়ে গেলো " We didn't need dialogue. We had faces " এই সিনেমাটি হলো এই ডায়ালগের ভাব-সম্প্রসারণ...





২০১১ সালে বেশ কিছু অসাধারণ সিনেমা নির্মিত হয়েছে , যেখানে ছিলো স্পিলবার্গের "ওয়ার হর্স", স্করসিসের "হুগো", এবং দ্য হেল্প-এর মত পিউর ড্রামা চলচ্চিত্র... কোনোটাই কোনটি থেকে কম না, সেখানে থেকে একটিকে বাছাই করা বেশ দূরুহ ব্যাপার... আর সেই সব সিনেমার ভীড় থেকে যদি কোনো নির্বাক সিনেমাকে বাছাই করা হয় আর সেই সিনেমাটি যদি হয় সাদা-কালো তাহলে হয়তো অনেকের ভ্রু কুচকে যাবে... যেহেতু স্পিলবার্গ-স্করসিস উনাদের কাজকে টপকে একটি নির্বাক সাদা-কালো চলচ্চিত্র সেরা চলচ্চিত্র খেতাব অর্জন করে ফেলেছে সেহেতু নিশ্চয়-ই এটি ঐ রকম একটি সিনেমা...
এখনকার পরিচালকগণ যেখানে নিত্য-নতুন প্রন্থা অবলম্বন করছেন, প্রতিনিয়ত নতুন কিছু করে দেখাচ্ছেন সেখানে মিচেল হাজানাভিসিয়াস দর্শকে নিয়ে গেছেন ৮৪ বছর পেছনে... যখন সবাক চলচ্চিত্র খুব একটা জোরে-সোরে শুরু হয়নি... সেই প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে এই সিনেমা গড়ে উঠে, এখানে-ই পরিচালক তার সাহসীকতার পরিচয় দিয়েছেন, তিনি এই সাহ্সীকতা দেখাতে পেরেছেন কারণ তিনি তার কাজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন... তিনি জানেন তিনি যা করতে যাচ্ছেন তা অডিয়েন্স পজিটিভ ভাবে-ই গ্রহণ করবে, এবং সেভাবে-ই তিনি দ্য আর্টিস্ট সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন... স্টোরিলাইন সিম্পল বাট চার্মিং... অসাধারণ লেগেছে ক্যামেরা ওয়ার্ক, খুব সতর্কার সাথে এই সিনেমার চিত্রায়ণ করা হয়েছে কারণ এই সিনেমার প্লট ১৯২৭ সালকে কেন্দ্র করে তখন ক্যামেরা ব্যবহার কেমন ছিলো তা এই সিনেমায় তুলে আনা হয়েছে... মজার ব্যাপার হলো এই মুভিতে কোনো প্রকার Zoom শট ছিলো না, কারণ সেই সময় জুম টেকনোলজির ব্যবহার শুরু হয়নি, তাই সিনেমাতেও কোনো প্রকারে জুম টেকনোলজি প্রয়োগ করা হয়নি, যদিও পুরো সিনেমার শুটিং হয়েছে নরমাল ভাবে-ই পরে তা সাদা-কালোতে কনভার্ট করে নেয়া হয়েছে । মুভির কাহিনী যেহেতু ১৯২৭ থেকে ১৯৩২ সালকে কেন্দ্র করে সেহেতু সিনেমাটিকে ঐ আঙ্গিকে-ই সাজাতে হবে, যেনো দর্শক সিনেমাটি দেখার সময় নিজেকে সেই সময়ে আবিষ্কার করে... এই ব্যাপারটি ফুটিয়ে তোলানোর দ্বায়িত্ব সেট এবং কস্টিউম ডিজানারে উপর নির্ভর করে । দ্য আর্টিস্ট সিনেমার আর্ট ডিরেকশনের কাজ চমৎকার হয়েছে, প্রতিটি মার্জিত কস্টিউম আর সুসজ্জিত সেট ডিজাইনিং-এর ফলে সিকুয়েন্সগুলো খুব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে...
নির্বাক চলচ্চিত্রের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে ব্যাকগ্রাউন্ড অন্যতম, কারণ নির্বাক সিনেমার ডায়াগের কাজ করতে হয় "ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিককে.... ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক খুব ভালো লেগেছে, কিছু সিকুয়েন্সে বার্নাড হারম্যান(মিউজিক কম্পোজার) এর love theme (ভার্টিগো সিনেমার) ব্যবহার করা হয়েছে, এর আগেও হাজানাভিসিয়াস তার একটি মুভিতে নর্থ বাই নর্থওয়েস্ট সিনেমার সাউন্ডট্রেক ব্যবহার করেছেন...





এই সিনেমায় যারা কাজ করেছেন প্রত্যকের-ই এটি সেরা চলচ্চিত্র... বিশেষ করে মিশেল হাজানাভিসিয়াস(পরিচালক) আর মেইন প্রটাগনিস্ট জিন দুজারদিনের জন্য... এই সিনেমা তাদেরকে এনে দিয়েছে চলচ্চিত্র ইতিহাসের সর্বোচ্চ পুরস্কারটি... এই সিনেমা কাজ করার আগে খুব একটা নাম-ডাকও ছিলো না তাদের... বলতে গেলে দ্য আর্টিস্ট তাদেরকে এখন অন্য একটি পর্যায়ে নিয়ে গেছে... একটি সিনেমা দেখে কোনো পরিচালকের ভক্ত হওয়া না গেলেও একটি সিনেমা দেখে একজন অভিনেতার ভক্ত হওয়া যায়... হাজারো প্রশংসা বাক্য কম মনে হচ্ছে দুজারদিনের অভিনয় দেখে...দুজারদিনের হাটা স্টাইল থেকে শুরু করে তাকানোর স্টাইল জাস্ট আউট-স্ট্যান্ডিং বিশেষ করে তার হাসি... তিনি-ই প্রথম ফ্রেঞ্চ অভিনেতা যিনি প্রথম বার অস্কার পেয়েছেন, অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে এই সিনেমার জন্য, বিশেষ করে সেই নাচের সিকুন্সের জন্য একটু বেশি পরিমাণে অনুশীলন করতে হয়েছে... শুধুমাত্র এই নাচের সিকুয়েন্সটি পাচ মাস ধরে দুজারদিন আর বেজো রিহার্স করেন, এই নাচের সিকুয়েন্স এতো-ই কঠিন ছিলো যে, যখন-ই দুজারদিন শট ওকে করার পর ফ্রি থাকতেন তখন-ই নায়িকাকে নিয়ে রিহার্স করতেন... পুরো মুভিতে দুজাদিনের অভিনয় দেখে চ্যাপলিনের কথা মনে করিয়ে দিবে, এখানে-ই দুজারদিন সার্থক... কেন্দ্রীয় চরিত্রে Bérénice Bejo অসাধারন অভিনয় করেছেন। এই মুভিতে অভিনয় করেছে uggie নামে একটি কুকুর , প্রাণিদের জন্য যদি অস্কারে কোনো বিভাগ থাকতো তাহলে সিউর এই কুকুরটি অস্কার পেয়ে যেতো যদিও ট্রেনিং প্রাপ্ত তাতে কি পারফরমেন্স কেমন হয়েছে সেটা-ই বিষয় ।
Schindler's List এর পর মানে প্রায় ১৮ বছর পর কোনো সাদা-কালো সিনেমা সেরা চলচ্চিত্রের খেতাব পেয়েছে, এক-ই ব্যাপার ঘটেছে এই সিনেমার সিনেমেট্রোগ্রাফির বেলায়... ফরাসি ইতিহাসে সবচে বেশি পুরষ্কার প্রাপ্ত সিনেমা এটি...
আমার দেখা সেরা ক্ল্যাসিক সিনেমাগুলোর একটি, যারা সাদা-কালো সিনেমা দেখেন নাহ বা পছন্দ করেন না, তাদের অনুরোধ করবো একটি বারের জন্য সিনেমাটি দেখার, আশা করি এরপর থেকে নিজ উদ্যোগে বারবার দেখবেন...

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১:০০

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: চমৎকার লেখা! আপাতত চোখ বুলিয়ে গেলাম। পরে আবার ফিরে আসব।

২৮ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:৪১

ইমরানন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

২| ২৫ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৬

মায়াবী রূপকথা বলেছেন: সত্যি দারুন। অসাধারন

৩| ২৫ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:২৮

কাউন্টার নিশাচর বলেছেন: না পড়েই বলা যায়-------
ধুর বাল

২৮ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:৪২

ইমরানন বলেছেন: হয়তো লেখা ভালো হয়নি, তাই বলে না পড়ে কিভাবে বিচার করলেন #নিশাচর ভাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.