নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

I n c o g n i t o

যতোবার আমি শান্তি খুঁজেছি, ঠিক ততোবার আমার মাথায় শুধু একটি চিন্তাই এসেছে। সেটা হচ্ছে একটা ড্রিল মেশিন দিয়ে মাথার খুলিটা ফুটো করে দেওয়ার চিন্তা।

ইনকগনিটো

যতোবার আমি শান্তি খুঁজেছি, ততোবার শুধুমাত্র একটা চিন্তাই আমার মাথায় এসেছে। সেটা হচ্ছে একটি ড্রিল মেশিন নিয়ে নিজের মাথার খুলিটা ফুটো করে দেওয়ার চিন্তা।

ইনকগনিটো › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি ছোট ঘটনা।।

১৭ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৫১

গ্রীষ্মের এক সন্ধ্যায় যখন সমস্ত শহরের মানুষ গরমে অতিষ্ঠ, তখন তাকে আমি প্রথম দেখি। রাস্তার ধারে সে একটা ম্যাচের বাকশো হাতে নিয়ে সেটার কাঠিগুলো জ্বালানোর চেষ্টা করছিলো। তার অভিব্যক্তি ছিলো অদ্ভুত; বলা চলে- এমন নির্লিপ্ত চোখ আমি অনেকদিন দেখি নি। খুব ভালো করে খেয়াল করলে তার ঠোঁটের কাঁপুনি টের পাওয়া যায়, সম্ভবত সে বিড়বিড় করছিলো কিছু। যদিও অনেকক্ষণ ধরে, সেটা আমি বুঝলাম তার পায়ের কাছে জমে যাওয়া ম্যাচ বাকশোর কাঠির সংখ্যা দেখে।

সমস্ত দিনের তপ্ততা শেষে সেই পরিশ্রান্ত সন্ধ্যায় আমার আসলে তেমন কোনো কাজ ছিলো না, একটি বার এ গিয়ে আকণ্ঠ মদ্যপান করা ছাড়া। তবু এই লোকটির কাজকর্ম আমার কাছে হঠাৎ করে যথেষ্ট উপভোগ্য মনে হতে থাকে; এতোটাই, যে আমিও অপেক্ষা করতে থাকি, কখন একটা কাঠি পরিপূর্ণ ভাবে জ্বলে উঠবে। কিন্তু তারপর একবার মনে হলো লোকটা হয়তো অন্য কিছু করতে চাইছে, অথবা এটা অর্থহীন; কিন্তু সেটা আসলে কী- আমার কাছে ঠিক পরিস্কার নয়। তবে তার ছেড়া বেশভুষো, জট পাকানো দাড়ি, এবং এহেন কাজকর্ম দেখে রাস্তার বাকি সবাই যে তাকে পাগল ঠাউরে বসেছে, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। দেখা গেলো পথচারীদের কেউ কেউ খুব হাসলো তাকে দেখে, কেউ কেউ গালি দিলো, কেউ কেউ বিরাট ভ্রুকুটি করে হেঁটে গেলো, কেউ বা তাকে মারধোর করতে চাইলো কোনো কারণ ছাড়াই। কিন্তু তাতে তার কোনো ভাবান্তর হলো না। সে আগের মতোই বিড়বিড় করে চলেছিলো আপনমনে। আমি কিছুটা কাছে থেকে সেই বিড়বিড়টুকু বুঝবার চেষ্টা করলাম; বলা বাহুল্য এই কাজটি আমি মোটামুটি দীর্ঘদিন সাধনা করে আয়ত্ত করেছিলাম। তবে তার ঠোটের কাঁপুনি পুরোপুরি না বোঝা গেলেও সম্ভবত সেটি- "আগুন জ্বালাবো" ধরণের ছোট, অস্ফুট একটি বাক্য।

আমি জানি না, আমি কেন দাঁড়িয়ে ছিলাম ওখানে। সম্ভবত আমিও আসলে উদ্দেশ্যহীন একজন। অবশ্য, জগতে দেখে যাওয়াও এক ধরণের কাজ। যেমন পাগলটা ম্যাচ বাকশোটার কাঠিগুলো জ্বালানোর চেষ্টা করে জ্বলন্ত কাঠি গুলো ছড়িয়ে দিচ্ছে রাস্তায়। আর ভুমি স্পর্শ করতে না করতেই যারা নিভে যাচ্ছে বারবার।

খুব নির্লিপ্তভাবে, অথবা খুব অবহেলায় আমি অর্ধ-জ্বলন্ত কাঠিগুলো ঝরে যেতে দেখলাম রাস্তায়। কিন্তু আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম, শুধুমাত্র একটি 'তারপর' দেখার জন্য। আমি দেখতে চেয়েছিলাম সব কাঠিগুলো ফুরিয়ে যাবার পর সে কী করে!

এরপর, একটা সময়ে বাকশের সব কাঠি শেষ হয়ে গেলো। শেষ হয়ে গেলো। এতক্ষণ ধরে যা চলছিলো; থেমে গেলো তা একটা সময়ে। আর তখন শুধুমাত্র এই ছোট বাক্যটিই হয়ে উঠলো মুখ্য। শেষ হয়ে গেলো একটা কিছু, কোনো শেষ ছাড়াই। কেমন একটা অদ্ভুত শূন্যতা টের পেলাম আমি তার চোখে মুখে। না, এখন আর করার কিছুই নেই। না তার, না আমার। এখন আমাকে আবারও যেতে হবে সেই পুরনো পথে। আকণ্ঠ মদ্যপান শেষে বাসায় পৌঁছে আমি আমার গা এলিয়ে দেবো সোফাতে। পরদিন সকালে আমার কিছুই মনে থাকবে না এসব।

আর সে? সে যে এখন কী করবে, বুঝতে পারছে না। রাস্তার ধারে সে দাঁড়িয়ে থাকলো জড় কোনো মূর্তির মতো। আমি চলে আসার আগ পর্যন্ত।

এরপর প্রতি সন্ধ্যায় তাকে এই পুরনো রাস্তার পাশে দেখা যেতে লাগলো। ম্যাচের কাঠি দিয়ে আগুন ধরানোর চেষ্টা করে চলেছে। লোকজন প্রথম প্রথম গালি গালাজ করতো; শেষে সবাই হতাশ হয়ে সেটি করাও ছেড়ে দিলো।

এভাবে অনেকদিন পর দেখা গেলো পুরো রাস্তাটাই ভরে গেছে ম্যাচের কাঠিতে। পাগলকে একদিন আর দেখা গেলো না।

তারপর একদিন, কোত্থেকে জানি না- হয়তো কারো আধপোড়া সিগারেট, অথবা কোনো উঁচু বাড়ির জানালা থেকে পড়ে যাওয়া মোমবাতি হতে পারে; কিংবা হতে পারে হয়তো এইসবও কিছু না, কিন্তু সবাইকে খুব অবাক করে কাঠি দিয়ে ভরা রাস্তায় আগুন জ্বলে উঠলো দাউদাউ করে।

মন্তব্য ৩৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৯

রাশেদ অনু বলেছেন: একটি ছোট ঘটনায় অনেক কতা বলে দিয়েছেন ।
ভালো লাগলো।
শুভেচ্ছা সতত।

০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৪১

ইনকগনিটো বলেছেন: রাশেদ অনু

ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।

২| ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:০০

রাশেদ অনু বলেছেন: একটি ছোট ঘটনায় অনেক কথা বলে দিয়েছেন ।
ভালো লাগলো।
শুভেচ্ছা সতত।

০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৩

ইনকগনিটো বলেছেন: আবারো ধন্যবাদ।

৩| ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:০০

বৃষ্টিধারা বলেছেন: বাহ......।

ভালো লাগলো ।

ভালো থাকবেন ।

০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৫

ইনকগনিটো বলেছেন: বৃষ্টিধারা,


আপনিও অনেক ভালো থাকুন। নিয়মিত হাসিখুশি থাকুন। তবে দুষ্টামি কম করুন।

শুভকামনা। :)

৪| ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:১৪

সংগ্রামী বালক বলেছেন: খুবই ভালো লাগলো।

০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৫০

ইনকগনিটো বলেছেন: সংগ্রামী বালক

অনেক ধন্যবাদ, পাঠের জন্য।

শুভকামনা।

৫| ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৫১

মামুন রশিদ বলেছেন: দারুণ! খুব সুন্দর ।

০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৫২

ইনকগনিটো বলেছেন: মামুন রশিদ ভাই,

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন ভাই।

:)

৬| ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:২৫

নাহিদ রুদ্রনীল বলেছেন: সুন্দর লেখনি।

০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৮

ইনকগনিটো বলেছেন: নাহিদ রুদ্রনীল

পাঠের জন্য ধন্যবাদ।

৭| ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৫

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: ভাল লিখেছেন।

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১২

ইনকগনিটো বলেছেন: বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায়

ধন্যবাদ আপনাকে।

৮| ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:১২

পিয়ালী দও বলেছেন: ভাল লাগল...

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৪

ইনকগনিটো বলেছেন: পিয়ালী দও


ধন্যবাদ আপনাকে।

৯| ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৫৫

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
বাহ! সুন্দর লিখেছেন তো :)

আগুন ‘একটি ছোট্ট ঘটনা’ থেকে পুরো এক সভ্যতাকে পুড়িয়ে দিতে পারে।
মনের আগুন তো আরও বিধ্বংসী!

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৭

ইনকগনিটো বলেছেন: মাঈনউদ্দিন মইনুল


আপনার উপলব্ধির জন্য ধন্যবাদ। শুভকামনা রইলো।

১০| ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৪৭

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: চমৎকার লেখা!

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৯

ইনকগনিটো বলেছেন: ধন্যবাদ, কাল্পনিক ভালোবাসা ভাই :)

১১| ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ২:৩৯

উদাস কিশোর বলেছেন: ভাল লাগা রেখে গেলাম :)

০৬ ই মে, ২০১৪ সকাল ৯:৩৭

ইনকগনিটো বলেছেন: উদাস কিশোর

অনেক ধন্যবাদ।

১২| ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:৫৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: চমৎকার একটা ফিবল। আমাদের সভ্যতার আড়ালে কেউ গোপনে ম্যাচকাঠি ফেলে যাচ্ছে, অপ্রকৃতস্থ কেউ, আমাদেরই কেউ, অথচ আমরা নিজেদেরই গালি দিই। তারপর... পুড়োনোর সব আয়োজন প্রস্তুত, শহর, গ্রাম, দেবালয়, মন, শরীর সবকিছুই পুড়বে ক্রমে ক্রমে।

০৬ ই মে, ২০১৪ সকাল ৯:৪১

ইনকগনিটো বলেছেন: সময় একটা পর্দা, যা কিছু ঘটনা আড়াল করে, এবং কিছু ঘটনা প্রকাশ করে। তবে বাস্তবতা; যা সামগ্রিকভাবে ঘটে, তা কালোত্তীর্ণ। যেটা আপাতভাবে বোঝা যায় না, কারন সামগ্রিকভাবে তা কখনো আমাদের সামনে আসে না।

ধন্যবাদ হামা ভাই।

১৩| ১৯ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৩৮

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন: দিস ওয়ান ওয়াজ গ্রেট। অবশ্য আমি যা বুঝেছি সেরকম হইলে গ্রেট বলা চলে! ফেবুকে নক দিমু, সারমরম বুঝায় দিয়েন কিন্তু।

০৬ ই মে, ২০১৪ সকাল ৯:৪১

ইনকগনিটো বলেছেন: ওক্কে! নো প্রব। B-)

১৪| ২৮ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৩

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: +++

০৬ ই মে, ২০১৪ সকাল ৯:৪২

ইনকগনিটো বলেছেন: রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

পাঠের জন্য ধন্যবাদ।

১৫| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৪

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ছোট এবং অন্তর্দৃষ্টি নিয়ে প্রশ্ন জাগায়। ভাল লাগল।

০৬ ই মে, ২০১৪ সকাল ৯:৪৩

ইনকগনিটো বলেছেন: প্রোফেসর শঙ্কু

ধন্যবাদ। তবে সবার অন্তর্দৃষ্টি জাগে না। কেউ কেউ হয়তো রচনার মতো করেই গড়গড় করে লেখা পড়ে।

কিন্তু আমি জানি আপনি তেমন নন। এই কারনেই আপনাকে আমার ভালো লাগে।

ধন্যবাদ।

১৬| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৮

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন: শিরোনাম দেখে অতি গতানুতিক মনে হলেও পাঠে ও বর্ণনায় কখনো মনে হল ব্যতিক্রমী কখনো মনে হল প্রবাহমান আবার কখনো জীবনের কথা বা দর্শন বা উপলব্দি ৷ বিস্তৃতি বা আয়তানুপাতিক বর্ণনা অনির্দিষ্ট দিকে নিয়ে ‘তারপর’ অথবা ‘এরপর’ শব্দগুলোর প্রবেশে ৷ স্পেনীশভাষা সাহিত্যের কয়েক লেখকের লেখায় এরূপ ধরে রেখে টেনে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা ক্ষণে ক্ষণে মনে হল ৷ শেষে এসে মনে হল কেন শেষ হল ৷ পাঠকের মতামত বলে ধরে নিবেন ৷ শুধু ভাল লাগল নয় অভিভূত হলাম ৷ ভাল থাকবেন ৷

০৬ ই মে, ২০১৪ সকাল ৯:৪৫

ইনকগনিটো বলেছেন: আলজাহাঙ্গীর

এমন মন্তব্য আমি খুব বেশি একটা পাইনি। আমিও অভিভূত। ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন অনেক।

১৭| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:১৯

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ভালো লাগলো কুশ

০৬ ই মে, ২০১৪ সকাল ৯:৪৫

ইনকগনিটো বলেছেন: ধন্যবাদ আপু! !:#P !:#P

১৮| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:৫০

হাসান মাহবুব বলেছেন: কমেন্টের রিপ্লাই দেস না ক্যান ব্যাডা!

০৬ ই মে, ২০১৪ সকাল ৯:৪৭

ইনকগনিটো বলেছেন: দিসি তো। :-P আমি ভাবসি, এইটা বেশি মানুষ পড়েনাই। আসলেই পড়েনাই।


আবার একদিন ঘুম থেইকা উইঠ্যা গল্প লেখা শুরু করমু।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.