নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইসতিয়াক আহাম্মদ

ইসতিয়াক আহাম্মদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

"\'মুক্তিযুদ্ধ অবমাননা আইন\' এবং কেন আমি এর ঘোর বিরোধী"

২৬ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৩৭

সেদিন দেখলাম 'মুক্তিযুদ্ধ অবমাননা আইন' আসতে যাচ্ছে। এই বিষয়ে কিছু বলা দরকার। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি মাঝে মধ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে জানার চেষ্টা করি। কারন নিজের দেশের ইতিহাস না জানার মত অশিক্ষিত কোন নাগরিক হতে পারে না সে যত বড় পণ্ডিতই হোক।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হল মুক্তিযুদ্ধের সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতীয় চার নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর এমন সব সরকার দেশ চালিয়েছে যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করেছে বা মুছে ফেলেছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী এবং গণহত্যায় অংশগ্রহণকরী দল জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতির লাইসেন্স দিয়ে বহুদলীয় গনতন্ত্রের বাহবা কুড়ানো হয়েছে। এ যেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাড়ে তিন বছর পর জার্মানিতে নাৎসি পার্টিকে আবার রাজনীতির লাইসেন্স দিয়ে বাহবা কুড়ানোর মত।

তো এই ২১ বছরে অন্তত ২ টা জেনারেশন তৈরি হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আজগুবি সব আইডিয়া নিয়ে। এরা ভবিষ্যতে এদের সন্তানদেরও সেই লাইনেই বড় করেছে। এইসবের ফলাফলস্বরূপ মাঝে মধ্যে কম্পিউটারের স্ক্রিনে মাঝে মধ্যে কারো কারো এমন সব মন্তব্য চোখে যে পড়ে মনে হয় এইগুলাকে ধরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানীদের বানানো কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের মত ক্যাম্পে রেখে টর্চার করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শেখানো উচিৎ। কিন্তু তা সম্ভব না।

'মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা আইন'টা বানানো হচ্ছে ইউরোপের প্রায় সব দেশে করা 'নাৎসি গনহত্যা অস্বীকার আইন (হলোকস্ট ডিনায়াল ল)' এর আদলে। এই বিষয়ে কিছু খোঁজখবর রাখার কারনে জানি সেখানে এই আইনের অহরহ অপব্যাবহার হচ্ছে। হলোকস্টে নিহতদের নিয়ে বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু একাডেমিক স্টাডিও ভুলভাবে খড়গের নিচে পড়ছে। যে কারনে এই বিষয়ে কথা বলতেই এখন ইউরোপীয়রা ভয় পায়। আমার ভয় 'মুক্তিযুদ্ধ অবমাননা আইন'ও এরকম পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ একবারই হয়েছে। কিন্তু এর খুঁটিনাটি নিয়ে ভবিষ্যতে আরো শ শ বছর ধরে আরো অনেক বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা ইতিহাসবিদরা করবেন। না জানা অনেক অধ্যায় তুলে আনবেন। এক হিসেবে আমরা খুব ভাগ্যবান যে মুক্তিযোদ্ধারা এখনো আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন। তাদের মুখ থেকে আমরা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের গল্পগুলো শুনতে পারছি। তবে এর একটা অসুবিধাও আছে। অনেক বিষয়ে এখন খোলামেলা আলোচনা করা সম্ভব না যা হয়তো ১০০ বছর পরের বাংলাদেশীরা করতে পারবে। খুব সহজ একটা উদাহরণ- বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সিরিয়াস কোন সিনেমা বানাতে বাংলাদেশের সব পরিচালকই ভীত কাকে না কাকে চটিয়ে ফেলে তাই কিন্ত আমি খুব করে চাই জনএফকেনেডি, আব্রাহাম লিংকনকে নিয়ে হলিউডে যেভাবে মুভি বানানো হয়েছে তেমনটা আমাদের দেশেও হোক। হয়তো ১০০ বছর পরে যখন আমরা জাতি হিসেবে আরো পরিণত হব, দলীয় সংকীর্ণতার উর্দ্ধে উঠতে পারব, তখন এগুলো সম্ভব হবে। 'মুক্তিযুদ্ধ অবমাননা আইন'এর মত জিনিষ এতে একটা বাঁধা ছাড়া আর কিছু না।

শুনতে হয়তো সেকেলে শোনাবে কিন্তু একজন আধুনিক মানুষ হিসেবে আমি মানুষের বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করি তা আমার পছন্দ না হলেও। তাহলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকারী জ্ঞানপাপীদের নিয়ে আমরা কি করব? হ্যা, তাদেরকে অবশ্যই মোকাবেলা করতে হবে। তবে তা সত্য ইতিহাসকে আরো ছড়িয়ে দিয়ে। আইন করে নয়। যেখানেই তারা তাদের উদ্ভট প্রশ্নগুলো তোলে সেখানেই তার জবাব দিয়ে। সবচেয়ে বেশী যা দরকার তা হল নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানানো। এইজন্য আমি খুব করে চাই স্কুল পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নামে একটা বিষয় বাধ্যতামূলক করা হোক। সরকারের বলে দেয়া উচিৎ বাংলা মিডিয়াম, ইংরেজী মিডিয়াম, মাদ্রাসা সব জায়গায় এটি পড়াতে হবে না হলে বাংলাদেশের মাটিতে তারা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাতে পারবে না। একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে এইটুকু অধিকার তো আমরা চর্চা করতেই পারি, তাই না?

অপরদিকে 'মুক্তিযুদ্ধ অবমাননা আইন' শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকারীদের গোপনে আরো জোরেশোরে তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরনা দেবে কারন আমরা সবাই জানি যেকোন বইকে নিষিদ্ধ করার পরপরই তা বেস্ট সেলার হয়ে যায়। এ ছাড়া আগেই যা বলেছি, মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে ইতিহাসবিদ, গবেষক এবং সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক এবং খোলামেলা আলোচনা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে গল্প, উপন্যাস, সিনেমা সকল মাধ্যমে আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার স্বার্থেই এই ধরনের আইন না করাই যুক্তিযুক্ত।

আমার প্রথম ব্লগ পোস্ট। যারা ধৈর্য ধরে পড়েছেন তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.