নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইসতিয়াক অয়নের ব্লগ

হাসন রাজায় কয়, আমি কিছু নয় রে আমি কিছু নয় !

ইসতিয়াক অয়ন

আমি কে ? কেউ না ...

ইসতিয়াক অয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

চক্ষে আমার তৃষ্ণা (প্রথম পর্ব)

০৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ৩:১০

ছেলেবেলায় একবার কিছুদিনের জন্য অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম । এখন বলতে খুব সাধারন লাগলেও ঐ দিনগুলি ছিল ভয়াবহ রকমের দুঃসহ । মাঝে মাঝে মনে হতো অন্ধ হয়ে বেঁচে থেকে কি লাভ ? কোনভাবে যদি চোখগুলো আগের মত হয়ে যেতো ! অলৌকিক ভাবে ! হেন ‘মানত’ নেই যা তখন করা হয় নি । একসময় ধীরে ধীরে চোখের আলো ফিরে আসতে শুরু করল । আমার বুকের উপর থেকে ‘আল্পস পর্বত’ সরে গেল । কবি জন মিল্টনের সনেটে একটা অনবদ্য লাইন আছেঃ They also serve who only stand and wait । আমি সার্ভ করলাম ।



ভালো কথা, কবি মিল্টনও কিন্তু একবার অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন । বিয়াল্লিশ বছর বয়সের এক বসন্তে তিনি খেয়াল করলেন তিনি আর আগের মতন দেখতে পাচ্ছেন না । পরের বছর ফেব্রুয়ারীতে তিনি পুরোপুরি অন্ধ হয়ে গেলেন । অন্ধত্ব নিয়ে সনেটের এই লাইনটি তখনকার লেখা । সনেটের নাম ‘On His Blindness’ । অপেক্ষারত কবি যদিও আর কখনোই তাঁর চোখ ফিরে পান নি । তাঁকে মারা যেতে হয়েছে অন্ধ কবি হিসেবে । মিল্টনের মতো মৃত্যুকালে অন্ধ ছিলেন বাঙালি কবি হেমচন্দ্র বন্ধোপাধ্যায়ও । বিজ্ঞানী গ্যালিলিও’ একইভাবে মারা গেছেন ।



‘চোখ’ নামের ছোট্ট আলাদীনের প্রদীপটি আমরা জন্মানোর সময় হেরিডিটির সূত্রে বিনামূল্যে সাথে করে নিয়ে এসেছি, এটা ভাবতেই আমার কাছে বড্ড অবাক লাগে । তা-ও আবার একটি নয়- দু-দুটি ! বিজ্ঞানীদের মতে, আজ থেকে প্রায় ৫৪০ মিলিয়ন বছর আগে এই প্রদীপটি প্রানীর শরীরে পরিপূর্নভাবে বিকশিত হয়েছিল । আজ চোখকে আমরা যেমন পাচ্ছি, তা হয়তো সভ্যতার প্রথমদিকে এমন ছিল না । ইভোলিউশনের কারনেই এই প্রদীপের সৌন্দর্য ও কার্যক্ষমতা দুই-ই একইসঙ্গে বাড়ছে । কষ্টকর ব্যাপার হচ্ছে, সবাই এই প্রদীপ জ্বেলে রাখতে পারে না । দেব-দেবীরাই পারেন নি, মানুষের কথা ছেড়েই দিলাম ।



গ্রীক দেবতা প্লুটাস’কে দেবরাজ জিউস অন্ধ করে দিয়েছিলেন । কারন প্লুটাস ছিল ঐশ্বর্যের দেবতা । প্লুটাস যাতে ঐশ্বর্য বন্টনে পক্ষপাতদুষ্টতা না করতে পারে তার জন্যেই এই ব্যবস্থা । জিউসের অবশ্যি যাকে-তাকে অন্ধ করে দেবার একটা প্রবনতাও আছে । নিজের বজ্রের তীব্র আলোকচ্ছটায় তিনি টাইটান দেবতাদেরকেও অন্ধ করে দিয়েছিলেন ।



দেবতার চোখ উপড়ে নেয়ার কারনে অনেকে ঈশ্বরের অভিশাপে অন্ধ হয়ে গেছেন এমন অতিকথন প্রচলিত আছে । গল্পটা বলা জরুরি । তবে সমস্যা হচ্ছে, এই গল্পের ক্ষেত্রে ‘লাড়কা সে লাড়কে’কা গু ভারী’ কথাটা প্রযোজ্য । মূল গল্পের চেয়ে ‘পূর্বকথা’ বড় । পাঠকদের ধৈর্য্য ধরে পূর্বকথন’টা পড়তে অনুরোধ করছি । কারন গল্পটা মজার ।



এটা সেইসময়কার গল্প যখন মুঘলদের ঠিক সম্রাট বলা চলে না । সম্রাট বাবরের পর মুঘল সাম্রাজ্যে পরপর পাঁচজন বিখ্যাত সম্রাট এসেছিলেন । তারা উত্তরাধিকারসূত্রে একের পর এক রাজাসনে বসলেও নিজের মেধা ও মন সঁপে দিয়েই হিন্দুস্তানকে বশ করেছিলেন । ইতিহাসের ছাত্র যারা, তারা প্রায় সবাই-ই কম বেশি নিচের সূত্রটি জানেনঃ

বাবার হইলো একবার জ্বর সারিলো ঔষধে

এটি হচ্ছে শাসনামল অনুযায়ী মোঘল সম্রাটদের অনুক্রম মনে রাখবার সূত্র । বাক্যের ছয়টি শব্দ ছয়জন সম্রাটের নাম । বাক্যে যার নাম আগে এসেছে, সে আগের শাসক । যার নাম পরে এসেছে, সে পরবর্তী শাসক । এখানে,

বাবার = সম্রাট বাবর

হইলো = সম্রাট হুমায়ূন

একবার = সম্রাট আকবর

জ্বর = সম্রাট জাহাঙ্গীর

সারিলো = সম্রাট শাহ্‌জাহান

ঔষধে = সম্রাট ঔরঙ্গজেব

কিন্তু পাঠকরা কি এর পরের কোন সম্রাটের নাম জানেন ? এদের পরও কিন্তু মুঘল সাম্রাজ্য বারো বার হাতবদল হয়েছিল । যারা জানেন না তাদের জন্য নীচের লিস্টঃ



মোয়াজ্জেম → মুয়েযযুদ্দীন জাহান্দার শাহ্‌ → ফারুক্‌শিয়ার → রফি-উদ্‌-দৌলা → রফি-উদ্‌-দরাজাত → মহম্মদ ইব্রাহীম → মহম্মদ শাহ্‌ → আহম্মদ শাহ্‌ → দ্বিতীয় আলমগীর → দ্বিতীয় শাহ্‌ আলম → দ্বিতীয় আকবর শাহ্‌ → দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ্‌



আমার গল্পের সময়কাল হচ্ছে মহম্মদ শাহের আমল । মুঘল সম্রাটের মাথায় তখন দুশ্চিন্তার ঝড় । চারদিকে শত্রু । কে যে শত্রু, কে যে মিত্র বোঝা কঠিন । তার বিশ্বাসভাজন সায়াদাত খাঁ পর্যন্ত তার সাথে বেঈমানী করেছে । শুধু কি বেঈমানী ? ইরানের নাদির শাহ্‌ কে সে আমন্ত্রন জানিয়েছে দিল্লী আক্রমন করার জন্যে ।

নাদির শাহ্‌ প্রচন্ড দাপটে হিন্দুস্তানে প্রবেশ করলেন । সে যেন এলেন, দেখলেন, জয় করলেন । কাবুল, সিন্ধুসহ পাঞ্জাবের কিছু অংশকে অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ধ্বংসস্থুপে পরিণত করলেন । মন্দির-মূর্তি-স্থাপত্য সব ভেঙে চূর্নচার করে ফেললেন । অনেক মন্দির ভেঙে অবশেষে এসে পৌঁছুলেন ভারতের তামিলনাড়ুর একটি ব্রহ্মমন্দিরে । ব্রহ্মমন্দিরের নাম শ্রী রঙ্গনাথস্বামীর মন্দির । এখানে যাওয়াটাই তার জীবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো ।





(নাদির শাহ্‌)



মন্দিরে ঢুকেই তার চোখ পড়ল একটি দেবতার মূর্তির উপর । মুর্তিটির চোখে একটি বৃহদাকার হীরকখন্ড লাগানো আছে । নাদির শাহ্‌ তৎক্ষনাৎ হীরাটিকে দেবতার চোখ ভেঙে বের করে আনতে বললেন । অনিন্দ্যসুন্দর হীরাটি দেবতার চোখ ফুঁড়ে বের করে আনা হল । ঠিক মুরগির ডিমের আকৃতির হীরাটিকে ওজন করিয়ে অবাক হয়ে গেল সবাই । ওজন কোহিনুরের চেয়েও বেশি !





(অরলফ)



হীরাটি বর্তমানে ‘অরলফ’ নামে পরিচিত । নাদির শাহ্‌ হীরাটি সহ আরও অনেক লুটের মাল ( এর মধ্যে কোহিনুর, দরিয়ায় নূর, ময়ুর সিংহাসনও ছিল ) , অনেক হাতি-ঘোড়া-উট নিয়ে ইরানে ফেরার আগে মহম্মদ শাহের সাথে একটি চুক্তি করে গেলেন । তারিখটা ২৬ মে । ১৭৩৯ সাল । চুক্তি অনুযায়ী হিন্দুস্থানের একটি অংশ নাদির শাহের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হল । অংশটি বর্তমানে আফগানিস্তান নামে পরিচিত ।



বলা হয়ে থাকে, ইরানে ফিরেই নাদির শাহ্‌ ক্ষমতাচ্যুত হন এবং অন্ধ হয়ে যান । দেবতার চোখ উপড়ে নেবার কারনেই নাকি তার এই করুন পরিনতি !

অরলফকেও তিনি ধরে রাখতে পারেননি । বিশ্বের ইতিহাসে তৃতীয় বৃহৎ এই হীরাটি কেমন করে যেন সম্রাট নেপোলিয়ান পর্যন্ত চলে যায় । নেপোলিয়ান তার তরবারীতে এটিকে যত্ন করে লাগিয়ে নেন । হীরাটি এখন আছে রাশিয়ার ট্রেজারীতে । আরেকটি ইন্টারেস্টিং তথ্য হচ্ছে নাদির শাহের বংশের পরবর্তী যিনি রাজা – শাহরুখ – তাকেও নাকি পরবর্তীতে অন্ধ করে দেয়া হয়েছিল ।



দেবতাদের কেউ কেউ আবার নিজের চোখ নিজেই উপড়ে নিতে চেয়েছেন । রামায়নে এর বর্ণনা আছে । শ্রী রামচন্দ্রকে রাবনের রাজ্য লঙ্কায় ঢোকার জন্য সমুদ্র পাড়ি দিতে হবে । সমুদ্র দেবতা তাঁকে স্বপ্নের মাধ্যমে অনুরোধ করলেন তিনি যেন দেবী দূর্গার আরাধনা করেন । তাহলেই তিনি সমুদ্র পার হবার উপায় খুঁজে পাবেন । পূজার নিয়ম অনুসারে দরকার ১০৮ টা নীলপদ্ম । তিনি খুঁজে-পেতে ১০৭ টা জোগাড় করলেও শেষ একটি নীলপদ্ম কোথাও খুঁজে পেলেন না । মহা আক্ষেপে তিনি তাঁর নিজের চোখেই ছুরি চালাতে উদ্যত হলেন, কেননা তার চোখকে নীলপদ্মের সাথে তুলনা করা হতো । দেবী দূর্গা শ্রী রামের দৃঢ়তা দেখে স্বয়ং নেমে এসে তাঁকে রক্ষা করলেন । প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি’র একটি বিখ্যাত পংক্তির মূল সূত্রও এই ঘটনাটি –



“ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়েছি

দূরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়

বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীল পদ্ম

তবু কথা রাখেনি বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ

এখনো সে যেকোন নারী ।”



রামচন্দ্রকে অন্ধ হতে না হলেও প্রায় সব দেশের উপকথাগুলোতেই সৌভাগ্য, বিচার আর ঐশ্বর্যের দেব-দেবীদের হয় অন্ধ, নয়তো আজন্ম নিজেদের চোখ বেঁধে রাখতে হয়েছে । উদাহরন দেইঃ



১। রোমান দেবী জাস্টিসিয়া – ন্যায় বিচারের দেবী – চোখ কালো কাপড় বাঁধা, হাতে দাঁড়িপাল্লা । (এর চোখ বাধা শ্বেতপাথরের মূর্তি ইউরোপের অনেক আদালতেই ব্যবহৃত হয়)



২। গ্রীক দেবী টাইকি – সৌভাগ্যের দেবী – চোখে কালো কাপড় ।



৩। গ্রীক দেবী থেমিস – ন্যায় বিচারের দেবী – চোখে কালো কাপড় ।



৪। রোমান দেবী ফরচুনা – ভাগ্যের দেবী – চোখে কালো পট্টি ।



মহাভারতে পড়েছি, গান্ধারী মৃত্যু-অবধি স্বেচ্ছায় তার নিজের চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে রেখেছিলেন । কারন তার স্বামী ধৃতরাষ্ট্র ছিলেন জন্মান্ধ । তার ভাষ্য ছিল, ‘অন্ধ পতিকে আমি অতিক্রম করতে পারি না ।

ধৃতরাষ্ট্রের জন্মান্ধতার কারন জিজ্ঞাসা করলে ব্যাসদেব উত্তর দেন, ‘সঙ্গমকালে ধৃতরাষ্ট্রের মা চোখ বন্ধ করে রেখেছিলেন বলেই ধৃতরাষ্ট্র জন্মান্ধ ।’



এ প্রসঙ্গে বাইবেল থেকে একটা কাহিনী বলি । যীশুকে একবার তার অনুসারী এক জন্মান্ধ ভিক্ষুককে দেখিয়ে প্রশ্ন করেছিল, ‘রাব্বি, একটি শিশু কেন অন্ধ হিসেবে পৃথিবীতে জন্মাবে ? তার তো কোন পাপ থাকার কথা নয় । জন্মান্ধরা কি মা-বাবার পাপের ফল ভোগ করে ?’

যীশু উত্তর দিয়েছিলেন,



Neither this man nor his parents sinned, but he was born blind so that the acts of God may be revealed through what happens to him’ ।



জন্মান্ধতা কি সত্যিই স্রষ্টার ইচ্ছা নাকি মা-বাবার কর্মফল ? আধুনিক বিজ্ঞান কি বলে ? চিকিৎসা বিজ্ঞানে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ‘রেটিনিটিস পিগমেন্টোসা’ নামের সমস্যাকেই এর জন্য দায়ী করা হয় । আগেই বলে রাখি সমস্যাটা জেনেটিক । এর মানে হচ্ছে, আপনার বাবা-মা দুজনের কেউ জন্মান্ধ না হলেও আপনি জন্মান্ধ হতে পারেন যদি বাবা-মা’র কেউ একজনের শরীরে তার পূর্ব-পুরুষ থেকে প্রাপ্ত একটি বিশেষ জীন চলে এসে থাকে । আরেকটু পরিষ্কার করে বলি । প্রত্যেকটি শিশুই জন্মের সময় তার মায়ের কাছ থেকে তেইশটি এবং বাবার কাছে থেকে তেইশটি ক্রোমোজোম নিয়ে জন্মায় । ক্রোমোজোম হচ্ছে কিছু DNA এবং প্রোটিনের সুসজ্জিত একটা স্ট্রাকচার । DNA’র বর্ধিত অংশকে আমরা ‘জীন’ বলে চিনি । মূলত কোষ গঠন এবং রক্ষনাবেক্ষনের যাবতীয় যত তথ্য, সবকিছু এই জীনের মধ্যেই সংরক্ষিত থাকে । চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জীনের উপরই নির্ভর করে । চোখের অবস্থা এরকম ৩২ টি ভিন্ন-ভিন্ন জীনের সাথে জড়িত । এদের যে কোন একটির কিছুমাত্র পরিবর্তন হওয়া মানে চোখের স্বাভাবিক চরিত্র বদলে যাওয়া । রেটিনিটিস পিগমেন্টোসা বা আর.পি. আক্রান্ত জীনগুলো চোখের রেটিনার কোষগুলোকে (রড এবং কোন) মেরে ফেলে । আর রড ও কোনের মৃত্যু মানে পুরো দৃষ্টিশক্তির মৃত্যু । ফলে মায়ের গর্ভে থাকা শিশু পরিনত অবস্থায় আসতে আসতেই অন্ধত্বকে আপন করে নিতে থাকে । জেনেটিক কারনে তো অবশ্যই, মাঝে মাঝে প্রিমেচিউর বার্থের কারনেও সন্তান অন্ধ হিসেবে জন্ম নেয় ।



জন্মান্ধতা আরোগ্যের কোন উপায় এখনও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বের করে দিতে পারেনি । কিছু কিছু ট্রিটমেন্ট অবশ্যি আছে (যেমন, আরগাস টু-রেটিনাম ইমপ্ল্যান্ট, ভিটামিন এ পালমিটেট ইত্যাদি) । সেগুলির মাধ্যমে ক্ষেত্রবিশেষে প্রশমন সম্ভব হলেও জন্মান্ধতা রোধ করা সম্ভব নয় ।



অন্ধত্ব ভালো করবার কিছু আধ্যাত্মিক গল্পও আছে । সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের ধর্মযাজককে নিয়ে যে গল্পটা প্রচলিত আছে সেটা আগে বলি (এর নামেই বর্তমানে ১৪ ফেব্রুয়ারী ভালবাসা দিবস পালিত হচ্ছে) । ধর্মীয় মতবাদ প্রচার করবার শাস্তি হিসেবে তাকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল এবং ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল । কথিত আছে কারাগারে থাকাকালীন সময়ে তিনি এক কারারক্ষীর অন্ধ মেয়ের প্রেমে পড়ে যান । সেন্ট ভ্যালেন্টাইন আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়ায় চিকিৎসা করে ঐ মেয়ের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনেন । যদিও গল্পটা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় নি ।



তবে আজ থেকে প্রায় দু’হাজার বছর আগে এক ব্যক্তি জন্মান্ধতা সারানোর অপূর্ব অলৌকিক ক্ষমতা নিয়ে সত্যি সত্যি এই পৃথিবীতে জন্মেছিলেন । তিনি নাকি মাটিতে নিজের তাজা ষ্ঠীবন ফেলে দিয়ে তা থেকে কাদা তৈরী করতেন । সেই কাদা তৎক্ষনাৎ রোগীর চোখে মেখে দিয়ে রোগীকে ‘ব্রেইখাৎ হাশিলোয়া’ নামের পাথরে বাঁধানো জলপূর্ন খাঁড়ির পানিতে চোখ ধুয়ে আসতে বলতেন । রোগী চোখ ধোয়ামাত্র নিজের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতো । ব্যক্তিটি আর কেউ নয়, যীশু খ্রীষ্ট । মুসলমানদের মতে, ঈসা (আ) । ষ্ঠীবন বা মানুষের থুতুতে কি ম্যাজিক আছে জানি না । মাঝে মাঝে সাধারন কিছুর মধ্যেও তো ‘অসাধারন’-এর অবস্থান হয় । There are many things in heaven and earth । একটা সাধারন গানের মন্ত্রও আমাদের মন খারাপ করিয়ে দিতে পারে- কাঁদিয়ে দিতে পারে, তাই না ?



এইচ এস সি’র সময় জুওলোজি বইতে পড়েছিলাম থুতুতে নাকি ‘টায়ালিন’ নামক এক বিশেষ এনজাইম আরও কি সব হাবিজাবি আছে । এসব নিয়ে কি কখনও কেউ পরীক্ষা নীরিক্ষা করেছে ? করা অবশ্যই উচিত । পাঠক, আমাকে কি এখন পাগল মনে হচ্ছে ? মনে হওয়াটা অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত । কারন আমি ইংরেজীতে জ্ঞানগর্ভ কথার সমাবেশ না ঘটিয়ে বাংলা আর্টিকেলে হাবিজাবি বক্‌ছি । এজন্যেই সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে বলতে হয়েছে, “যাঁরা বলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান হয় না, তাঁরা হয় বাংলা জানেন না, নয় বিজ্ঞান বোঝেন না।” যারা পাগল ভাবছেন তাদের জন্যে নিচের ব্রাকেটভুক্ত অংশ জুড়ে দিলাম । যারা ভাবছেন না, তাদের এগুলি পড়ার দরকার হবে না । তারা এই স্টেজ অনেক আগেই পার করে এসেছে । B-)



[ মাইক্রো-ফ্লুইডিক্স কিংবা Molecular biology – থুতু গবেষনার উপর নির্ভর করেই অনেকখানি দাঁড়িয়ে আছে । ২০১১ সালের জুন মাসে এক সফল গবেষনায় থুতুর নমুনায় প্রাপ্ত DNA থেকে ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা ৮৮ রকমের মিথাইলেশন সাইট সনাক্ত করেছেন, যা কিনা নিঁখুত ভাবে মানুষের বয়েস নির্ণায়ক । ঘুরে আসুনঃ ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা ৮৮ রকমের মিথাইলেশন সাইট সনাক্ত করেছেন



থুতু এমন এক ধরনের বাফার দ্রবন যা কিনা মুখের pH কে ক্ষারীয় রাখে । যদিও বয়সভেদে থুতুর গুরুত্বের বেশকম আছে । একদলা থুতু এইচ আই ভি (এইডস) ভাইরাসকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করে দেয়ার সামর্থ্য পর্যন্ত রাখে ! বিশ্বাস না হলে ডিসকভার ম্যাগাজিনের পেইজ থেকে ঘুরে আসতে পারেনঃ

ডিসকভার ম্যাগাজিনে]



SDOSCU এর প্রফেসরের কথাটা তো মাথা ঘুরিয়ে দেয়ঃ



Most people treat saliva with disdain, as a nuisance more than anything else, They don’t realize how important it is. Those who have an absence of saliva are miserable.”



মরালঃ থুতু কোন সহজ বিষয় না । থুতু হচ্ছে মহামূল্যবান ‘ছুপা রুস্তম’ । আপনার অমূল্য থুতু তাই মানুষের গায়ে ছিটিয়ে বেড়াবেন না । থুতু আপনার ! লস্‌ আপনার ! :P




থুতু ছাড়াও অন্ধত্ব দূর করবার আরেক উপায়ের কথা শুনেছি । ‘উপায়’ না বলে ‘বিশ্বাস’ বলাটাই ভালো বরং ! কাজাখিস্তান ও মঙ্গোলিয়ার কিছু লোকদের বিশ্বাস, গ্রিফিন নামের বিলুপ্ত এক প্রানীর পালকের মাধ্যমে প্রাচীন পৃথিবীর কোন কোন জায়গায় অন্ধত্ব দূর করা হতো । গ্রিফিনের শরীরটা সিংহের মত । মাথা, পা এবং ডানা ঈগল পাখির মত । এদের সঙ্গী অথবা সঙ্গিনী মারা গেলে অথবা হারিয়ে গেলে এরা বাকী জীবন বৈধব্য বরন করে একা একা কাটিয়ে দিতো । এভাবেই আস্তে আস্তে তাদের বিলুপ্তি ঘটে । ফিনল্যান্ডের সেনাবাহিনীর পতাকায় শক্তির প্রতীক হিসেবে একটি শাদা রঙের গ্রিফিন পাখির ছবি আছে । যদিও প্রাচীন বিজ্ঞান বিষয়ক ঐতিহাসিক আঁদ্রিনে মেয়োরের মতে, ঐ অঞ্চলের অধিবাসীরা ‘প্রোটোসেরাটপ্‌স’ ডাইনোসরের কংকাল দেখে ‘গ্রিফিন’ নামের প্রানীটি কল্পনা করেছে মাত্র ।



আধুনিক যুগে কিছু ধর্মীয় বিশ্বাস’ও বর্তমান । ইসলামী ভাবধারার কিছু বইয়ে চোখের চিকিৎসার অনেক মিস্টেরিয়াস উপায় বলা আছে । কার্ল সেগান পড়তে পারলে এগুলো মানতে দোষ কোথায় ? কয়েকটা অদ্ভুত ক্ষমতাবান আয়াত সম্পর্কে বলা যাক । ইহুদীরা বলে স্পেল । আমি জানি না এগুলির প্রয়োগ মানুষ কোথা থেকে জানতে পেলো । বেশিরভাগের বিশ্বাস রাসূল হযরত মুহম্মদ (স) এগুলো বিশেষ বিশেষ সময়ে অনুসারীদের চোখের প্রশস্তির জন্যে প্রয়োগ করেছিলেন । প্রমান চাইবেন না । দিতে পারবো না । আগেই বলেছি এই বিশ্বাসগুলি এক ধরনের মিস্টেরি । যাক্‌ ! মিস্টেরির মিস্টেরি না জেনে মিস্টেরিটুকুই আগে জানতে চেষ্টা করি ।



প্রথমতঃ

فَكَشَفْنَا عَنكَ غِطَاءكَ فَبَصَرُكَ الْيَوْمَ حَدِيدٌ

সূরা ক্বাফের ২২ নং আয়াতের উপরোক্ত অংশটুকু প্রত্যেক ওয়াক্তের ফরজ নামাজের পরপর ৭ বার পড়ে তিনবার ‘ইয়া নূরু’ আবৃত্তি করে বৃদ্ধাঙ্গুলিতে ফুঁ দিয়ে দু’চোখে তিনবার বুলিয়ে দিলে চোখের দৃষ্টিক্ষমতা আগের চেয়ে বেড়ে যাবে । ( সুবহানাল্লাহ ! )

দ্বিতীয়তঃ

كَشَفْنَا عَنكَ غِطَاءكَ فَبَصَرُكَ الْيَوْمَ حَدِيدٌ

এটি তিনবার পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে সেই হাত চোখের উপর বুলিয়ে দিলে দৃষ্টিশক্তি প্রখর হবে । ( সুবহানাল্লাহ ! )

তৃতীয়তঃ

একচল্লিশ বার ‘ইয়া শাকুরু’ আবৃত্তি করে পানিতে ফুঁ দিয়ে সেই পানির কিছু অংশ চোখে ছিটিয়ে বাকী অংশ পান করতে হবে । সাতদিনের মধ্যে দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন দেখা যাবে । অবশ্যই আগে নিয়্যত করে নিতে হবে । ( সুবহানাল্লাহ ! )



কিছু ব্ল্যাক ম্যাজিক আছে যা দ্বারা চোখের অন্য দৃষ্টি ( ? ) প্রাপ্ত করা যায় । সেগুলি সেন্সর্‌ড । তাই না লেখাই উত্তম বোধ করি । আর তাছাড়া শয়তানের উপাসনা কোন কাজের কথা নয় । শয়তানের কথা যখন এলো, তখন শয়তানের চোখ নিয়ে কিছু কথা লেখা যাক । হিব্রু ভাষায় একে বলে ‘আইন হার্‌আ’ (עין הרע) । আরবীতে আঈনাল হাসুদ ।



(চলবে)

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:৪০

ইলুসন বলেছেন: চমৎকার তথ্যবহুল একটা পোষ্ট, অনেক ভালো লেগেছে। চমৎকার তথ্যবহুল একটা পোষ্ট, অনেক ভালো লেগেছে। :)

০৮ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:৫৬

ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ রইলো । সাথে শুভকামনাও ! :)

২| ১৫ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৭:০১

খেয়া ঘাট বলেছেন: আমি আপনার পুরো লিখাটা কয়েকবার পড়ে বিস্ময়াবিভূত হয়ে গেলাম।
এতো সৃজনশীল চমৎকার লেখনি আপনার। শুধুই প্রতি প্যারা বারবার পড়ে মুগ্ধ হলাম। এ যেন মুগ্ধতার আর শেষ নাই।

আশাকরি আমাদের নিরন্তর মুগ্ধ করেই রাখবেন।

৩| ১৫ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৭:০২

খেয়া ঘাট বলেছেন: আপনি মনে হয় আগে অন্য নিকে লিখতেন। কারণ ব্লগ লিখার সূচনাতেই এমন যাদুকরী লিখা সত্যিই বিরল।

৪| ১৫ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৭:৩১

ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: খেয়াঘাট, আপনার চমৎকার ধনাত্মক সমালোচনাটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ । প্রত্যেক লেখকেরই এক একটা ডিপার্টমেন্ট থাকে । অন্য থিমে ভালো না লিখলেও তারা সেই ডিপার্টমেন্টে ভালো লিখে ফেলে । আমার ক্ষেত্রেও বোধহয় তাই হয়েছে । দর্শন আর বিজ্ঞানের ইলিউশন যেটা তৈরী করেছি স্কেচটাইপ লেখা হিসেবে সেটা আপনার ভালো লেগে গেছে ।...

আর 'সামু'তে আমার এই প্রথম ব্লগিং । আগে 'চতুর্মাত্রিক' এ লিখতাম । এখনও লিখি । আমার নিক একটাইঃ 'ইসতিয়াক অয়ন' । ছদ্মনামে লিখে কেমন যেন স্বস্তি পাই না । মনের মধ্যে খচখচ করে । কেবলই মনে হয়ঃ 'এটা কি আমিই লিখেছিলাম?' । হাহাহা ।

ভালো থাকবেন । শুভকামনা ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.